Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

গাদা ফুল

: | : ১৮/১১/২০১৩

একজন মানুষকে বেশ কিছু বিষয় শান্তিতে রাখে। সেগুলোর মধ্যে জীবনসঙ্গীর ভুমিকা প্রধান।

বাদলের জীবনসঙ্গীকে তার নিজের করে পাওয়ার সূচনা হয়েছিল শীতকালে। তাই শীতকাল তার জীবনের একটা স্মরণীয় সময়।

কৈশোরকাল থেকে সমবয়সী ফুপাতো বোন আফরোজাকে ভালোবাসত বাদল। তাদের বাড়ি একই গ্রামে। আফরোজা নাটোর তার ভাইয়ের বাসায় থাকতো।

ইন্টারমিডিয়েট পড়াকালীন একবার সিরাজগঞ্জের বাড়ি থেকে নাটোর যাওয়ার সময় ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে চিঠির মাধ্যমে বাদল আফরোজাকে নিজেদের বাড়িতে ডেকে এনে ভালোবাসার কথাটা জানিয়েছিল। সেদিন আফরোজার তাড়া থাকায় সে চিঠিটি একনজর দেখেই কামিজের ভেতর লুকিয়ে রেখে বলেছিল, আমি যাই।
বাদল জিজ্ঞাসা করেছিল, যাবে?
আফরোজা বলেছিল, হ্যাঁ।

কয়েকদিন পর আফরোজার ইমিডিয়েট বড় বোন কণা নাটোর গিয়েছিল। সেখান থেকে আসার পর সে বাদলকে বলেছিল, আফরোজা বলেছে যে বাড়ি এসে তার ফুল গাছের সবচেয়ে বড় ফুলটা নাকি একজনকে দেবে।

এ কথা শুনে বাদল প্রচন্ড দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল যে কাকে আফরোজা ফুল দিতে চাইতে পারে? আফরোজা কি অন্য কাউকে ভালোবাসে? বাদলের ফ্যাকাশে মুখ দেখে কণা গোপনে হেসেছিল।

আফরোজা তাদের বাড়িতে অনেক গাদা ফুল গাছ লাগিয়েছিল। সেই শীতে অনেক ফুল ফুটেছিল।

ডিসেম্বরের শেষ দিকে আফরোজা বাড়িতে এসেছিল।

একদিন আফরোজার ছোট ভাই ইকবাল বাদলকে বলেছিল, আফরোজা আপা আপনার কাছ থেকে গল্পের বই নেবে, তাই আপনাকে আমাদের বাড়িতে যেতে বলেছে।

চিঠি দেওয়ার পর সেবারই প্রথম আফরোজা বাড়ি এসেছিল। তাই লজ্জা ও অপমানের ভয় বাদলের সামনে দেওয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই সে গিয়েছিল না।

এক শীতের সকালে গায়ে চাদর জড়িয়ে আফরোজাই বাদলদের বাড়িতে এসেছিল। আফরোজাকে শিশিরের মতো নিষ্পাপ আর সুন্দর লাগছিল। সেদিন চাদরের ভেতর লুকিয়ে রাখা একটা গাদা ফুল বের করে সে বাদলকে দিয়েছিল। সঙ্গে দিয়েছিল একটি চিঠি।

ফুল আর চিঠি পেয়ে বাদলের শরীরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল।

আফরোজা লিখেছিল,
তোমার দেওয়া চিঠিটা পড়ে জেনেছি, তুমি আমাকে ভালোবাসো। সত্যি করে বলবে, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? ভালবাসলে তো কাছেই আসতে। কেউ যদি কাউকে ভালোবাসে অথচ কাছে না আসে তবে তার সঙ্গে ভালোবাসা করে কি লাভ?

তুমি যখন আমাকে ভালোবেসেছ তখন আমিও তোমাকে অবশ্যই ভালোবাসবো।

ইতি,
আফরোজা।

চিঠিটি পড়ার পর বাদল সেদিন স্রষ্টাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছিল।

সন্ধ্যার পর বাদল তাদের বাড়িতে গিয়েছিল। আফরোজা তার চুলগুলো পিঠের ওপর ছড়িয়ে দিয়ে লাল সোয়েটার পরে ছোট একটা টেবিলের সামনে বাদলের মুখোমুখি বসে শীতের পিঠা খাইয়েছিল। তখন আফরোজার গায়ে ওড়না ছিল না।

বাড়িতে আরো লোক থাকায় সেদিন আফরোজার সঙ্গে বাদলের বেশি কথা হয়েছিল না। কিন্তু আফরোজা তার পায়ের আঙ্গুল দিয়ে বাদলের পায়ে চাপ দেওয়ায় বাদলের শরীরের প্রতিটি রক্তবিন্দু টগবগ করে উঠেছিল। বাদলও চাপ দেওয়ায় আফরোজার ভরাট ফর্শা মুখটা লাল হয়ে ওঠায় বাদল বুঝেছিল আফরোজার রক্তবিন্দুও টগবগ করছে।

ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর আফরোজা ভর্তি হয়েছিল মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজে আর বাদল ঢাকায়।

এ সময় এক জায়গা থেকে আফরোজার বিয়ের প্রস্তাব এলে আফরোজাদের বাড়িতে তাদের প্রসঙ্গে কথা উঠেছিল।

ওর মেজ আপা বলেছিলেন, ওরা দুজনই পড়াশোনা করছে। পড়াশোনা শেষ হলে ওরা যদি বিয়ে করে তবে তো কোনো সমস্যা নেই।

ওর এক ভাই বলেছিল, আফরোজা যেন ও পথে না বাড়ায়।

কিন্তু আফরোজা বুদ্ধি খাটিয়ে পড়াশোনা শেষ না করে বিয়ে করবে না বলে অটল থাকায় বিয়ের প্রসঙ্গটা থেমে গিয়েছিল। বাদল তাকে বলেছিল, আমার কথা ভেবে তুমি বিয়েতে রাজি হলে না। আমাকে কেন এত ভালোবাসলে?

আফরোজা বলেছিল, এ জন্য যে, মেজ আপার সঙ্গে দুলাভাই খুব খারাপ আচরণ করে। কিন্তু তোমার ওপর আমার বিশ্বাস আছে, তুমি আমার সঙ্গে কোনো দিন ও রকম আচরণ করবে না।

পড়াশোনা শেষ করে কুয়েটে চাকরি পাওয়ার পর সব বাধা উপেক্ষা করে ওরা বিয়ে করেছিল।

তখন শীতকাল। খুলনায় খুব শীত পড়ছিল। লেখালেখির অভ্যাস থাকায় বাদল রাতে পড়াশোনা করতো। এ কারণে রাতে আফরোজাই সাধারণত আগে বিছানায় যেত।

লেপের নিচে ওর শরীর গরম হওয়ার পর বাদল বিছানায় গিয়ে ওর পায়ে বাদলের ঠান্ডা পা লাগালে ও বলতো, উহ, তোমার পা খুব ঠান্ডা, আমার পায়ের সঙ্গে লাগিয়ো না। তবু বাদল পা লাগিয়ে আদর করতো। কিছুক্ষণ পর বাদলের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে আফরোজা বলতো, না না, এই শীতে আমি গোসল করতে পারবো না।

বাদল বলতো, আমি তোমাকে পানি গরম করে দেব।

কোনো কোনো দিন আবার বাদলই আগে বিছানায় যেতো। সেদিন বাদলের গরম হওয়া পায়ের সঙ্গে ওর ঠান্ডা পা লাগাতে গেলে বাদল পা সরিয়ে নিতো। আফরোজা তখন আদুরে গলায় বলতো, তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না। এতো আবেগ দিয়ে বলতো যে, শুনে বাদলের মধ্যে শিহরণ জাগতো। বাদল তখন আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া জানাতো শীতকাল দেওয়ার জন্য। আর আফরোজাকে কাছে টেনে নিতো।

আফরোজার ভালোবাসার প্রকাশ বাদলকে এতটাই অভিভূত করে যে, তা বাদলের কর্মজীবন তথা বাস্তব জীবনের সব মানসিক চাপ দূর করে দেয়। তার মধ্যে বাস্তবতাকে মোকাবিলা করার নতুন উদ্যম ও শক্তি চলে আসে। তখন বাদল ভাবে, তার জন্য আফরোজার মতো জীবন সাথির বিকল্প জগতে ছিল না।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top