Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উটন দাদুর কাহিনী–পর্ব–১০-(শিশু ও কিশোরদের বনজঙ্গলের রোমাঞ্চকর উপন্যাস)

: | : ২১/১১/২০১৩

নৌকো আগের জাগা ছেড়ে বেশ কিছু দূরে ঘন জঙ্গলের পাশে গিয়ে ভিড়ল। এখানে নদীর পারে ঝোপ-ঝাড় কম—লম্বা,উঁচু গাছ বেশী। জঙ্গলের ভিতর অন্ধকার হয়ে আছে। জাগাটা কিছু নিরাপদ মনে হল উটনের,বলল,এবার আমাদের তৈরি হতে হবে,তার আগে জানাই তোমাদের দুগ্গল দাদা ঠাকুরের কিছু কথা।

উটন  কাসনি গ্রামের লোকদের থেকে কি ভাবে আত্মরক্ষা করা যেতে পারে সে কথাগুলি ছেলেদের সামনে বলে যেতে লাগলো। এ সব কথাই উটনের দুগ্গল থেকে জেনে নেওয়া। উটন বলল, কথাগুলি মনে রেখো–প্রয়োজনে এর সদ ব্যবহার করতে যেন ভুল না। ভগবান চাইলে হয় তো তোমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করলেও করতে পারেন।

বহু দূর থেকে একটা ক্ষীণ আওয়াজ ভেসে আসছিল। বহু লোকের জটলার আওয়াজের মত। উটন বুঝতে পারল,বলে উঠলো,দেখ বুনোরা আমাদের খোঁজে দল বেঁধে এসে গেছে। ওই মাছ খেকো লোকটা গ্রামে গিয়ে নিশ্চয় আমাদের আসার খবর দিয়েছে। এবার ওরা আমাদের খুঁজছে। আমাদের আর এখানে থাকা চলবে না–যার যার হাতিয়ার নিয়ে চল,আমরা ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে লুকিয়ে ওদের গ্রামের দিকে এগবো।

কিন্তু নেচু কি করবে ? ও নৌকোর কিনারায় হাল ধরে এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিল,বলল,আমিও তোমাদের সঙ্গে যাব,একা নৌকায় থাকতে পারব না।

কথা তো ঠিক ছিল। নৌকা ওরা যদি খুঁজে পায় তবে নেচুকে ওরা বাঁচতে দেবে না। নেচু একা তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারবে না। একে তো ও লেংড়া ,তার ওপরে একা,ও ভীষণ ভয়ে পাবে। আর আজও যদি ওরা মানুষ খেকো হয়ে থাকে তবে তো নেচুকে ওরা নির্ঘাত খেয়ে ফেলবে।

নেচুকে নিয়ে জঙ্গলে প্রবেশ করল ওরা। উটনের হাতে গাদা বন্দুক,ছেলেরা যার যার হাতিয়ার–বড় বড় ছোড়া,ভোজালি হাতে রাখে নিলো। দাদুর পরিকল্পনা মত ওরা আরও ঘন জঙ্গল পার করে সোজাসুজি গ্রামের দিকে না গিয়ে বেশ কিছুটা ঘুরে তবে গ্রামে প্রবেশ করবে ঠিক করল। সামান্য বেলা হলে গ্রামে লোকজন কম হবে। কারণ ওই সময়টা সবাই খাদ্যের তালাশে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াবে,বেশির ভাগ সময় ওরা দলবদ্ধ হয়ে শিকারে যায়। ওরা নারী,পুরুষ উভয়ে বেশ কর্মঠ। নারীও সব জাগায় পুরুষের মতই কাজ করে—মেহনতি,পারদর্শী।

উটন চলতে চলতে বলল,তোমাদের দুগ্গল দাদা ঠাকুর আজ থেকে পঞ্চাশ ষাট বছর আগের কথা বলেছে। হতে পারে এখন ওরা কিছুটা সভ্য হয়েছে। হতে পারে ওরা দেবী-দেবতার আরাধনা করে। আমাদের মত ওদের মন্দির বা গির্জাও থাকতে পারে। আমরা এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।

বনুই বলল,সভ্য হবে তো এখনও নাঙ্গা থাকে কেন ?

–হ্যাঁ,হয়তো কেউ কেউ এখনও নাঙ্গা থাকে। আবার কেউ কেউ সামান্য পোশাকও পরে হবে।

এবার জঙ্গল অনেকটা হালকা হতে লাগলো। ওরা আশ্চর্য হয়ে দেখল,অনেক দূরে পাথরের বড় বড় চাঁই যেন সাজানো সাজানো রাখা আছে। পাথরের চাঁই গুলি পাশাপাশি দাঁড় করানো মনে হল। হতে পারে ওগুলোই বুনোদের আস্তানা–ওটাই হতে পারে তাদের গ্রাম।

আরও কিছুটা এগিয়ে বোঝা গেল যে ওটাই ওদের গ্রাম। উটন দাদু বলল,এবার সবাইকে সাবধান হতে হবে। ছুরি,চাকু কেউ সামনা সামনি  রাখবে না–আমার বন্দুকটা কেবল আমার হাতে থাকবে, ওটা লুকবার জাগা নেই।

খুব বেশী জোরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না–মাঝে মাঝে বিশ্রামও নিতে হচ্ছিল,তবে সেটা নেচুর দিকে তাকিয়ে–ও খুঁড়িয়ে হাঁটছিল–ও যে হাঁটতে পারছে এটাই তো বেশী বলতে হবে। নেচু ব্যথা সহ্য করেও নির্ভীক চলেছে সবার সঙ্গে–যেন অনেকটা পাল্লা দিয়েই ! এবার ওদের চোখে পড়ল–বেশ কিছু দূরে দূরে বিটার খণ্ড খণ্ড পাথর দিয়ে ঘেরা জাগা—ও গুলোই ঘর হবে। তিন চারটে লম্বা চওড়া আয়তাকার বড় বড় পাথর ঝুঁকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা—তার ওপরের দিকটার মাথাগুলি একটা আর একটার সাথে ঠেকানো–নিচের দিকে মাঝখানে অনেক খানি ঘের জাগা। এমনি অনেকগুলি ত্রিকোণ আকারের পাথরের সারি যেন—নিশ্চিত ওগুলোই ওদের ঘর হবে !

উটনরা গ্রামের অনেকটা কাছাকাছি এসে গেছে–এ যেন ভয়ঙ্কর এক শত্রুর কবলে ওরা ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছে। কোন জনপ্রাণী এখনও দেখা যাচ্ছে না।

আরও কিছু পা এগিয়ে গেল ওরা।  এবার হঠাৎ ওদের চোখে পড়ল ছোট দুটো উলঙ্গ বাচ্চা এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে ! দু চারজন বড় লোকও থাকবে নিশ্চয়। অথর্ব,রোগী,বয়স্ক ওদেরই এ সময়টায় ঘরে থাকার কথা।

আরও একটু এগিয়ে গিয়ে দেখল কতগুলি ছেলে মেয়ে সে সঙ্গে এক বয়স্ক স্ত্রী,পুরুষ একটা জাগা ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা কিছু দেখছে মনে হল। ওরা বেশীর ভাগ উলঙ্গ–কেবল মেয়ে ছেলেটা একটু খানি ছোট্ট তালি দেওয়া মত পোশাক পরে আছে। লোকটাও ল্যাংটি থেকেও অনেক ছোট একটা নেকড়া জড়িয়ে আছে।

উটন মনে মনে বেলে উঠলেন,তার মানে ওরা সভ্যতার দিকে একটু একটু করে এগোচ্ছে ! লোকগুলো এখনও ওদের দেখতে পায় নি। দেখলে যে কি করবে বোঝা যাচ্ছে না। শুরুতে তো খুব ভয় পাবে–এমন পোশাকধারী লোকেরা ওদের শত্রু হবে এটা ভাবাই তো স্বাভাবিক।

প্রথমে দুটো বাচ্চা উটনদের দেখে নিলো। বাচ্চারা হঠাৎ ভূত দেখার মত চমকে থেমে গেল মনে হল। ওদের কিছুই বোধগম্য হল না, ভয় পেয়ে চীৎকার করে উঠলো। এবার ছোট বড় সবাই তাকাল উটনদের দিকে আর ভয়ে,বিস্ময়ে আওয়াজ করে উঠলো। যেন কোন বাঘ,ভাল্লুকের সামনা সামনি পড়ে গেছে ওরা ! ভয়ে সবাই চেঁচামেচি করে দৌড়ে নিজেদের পাথর ঘরের ভিতরে লুকিয়ে গেল।

উটন তার দলবল নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো। দেখল একটা আদমি মরার মত মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে,একেই ঘিরে একটু আগে এখানকার সবাই দাঁড়িয়ে ছিল। লোকটার অনেক বয়স হয়েছে–ওর কোন বিমার হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। ও গোলগোল আতঙ্কিত চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে উটনদের দিকে। ওর নড়াচড়ার ক্ষমতাও নেই।

বনুই লবু দেখতে পেল অনেক দূরে দু চারজন লোক ওদের দিকে উত্তেজনার দৃষ্টি নিয়ে দেখছে,আর নিজেদের মধ্যে কি যেন বলাবলি করে যাচ্ছে। উটন দাদু ব্যাপারটা দেখে নি হবে–সে ঘরগুলির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,বাদু,বাদু !–মানে বন্ধু ! বন্ধু ! বুনোদের দিক থেকে কোন প্রতিক্রিয়া বোঝা গেল না।

উটন এবার তাড়াতাড়ি শমীর হাত থেকে খাবারের থলি নিলো। তার থেকে দুটো কলা বের করে ছুলে বৃদ্ধ লোকটার মুখে ছুঁইয়ে দিল। প্রথমে লোকটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো। তারপর কি মনে হল কলাটা সে চাটতে লাগলো। ও মুখ ভাল করে খুলতে পারছিল না।

এবার কুন্তা,শমী দেখল,ওই পাথরের গুফাঘরের মধ্যে থেকে মেয়ে আর পুরুষ লোকটা বাইরে বেরিয়ে উঁকি মেরে দেখছিল যে বৃদ্ধ লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে উটন কি করছে ! বৃদ্ধের মুখের কাছে কলা দেখে ওরা মনে হল সামান্য আশ্বস্ত হল। কাছে না এসে দূর থেকেই ওরা উটনদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। উটন এবার গুহা ঘরের দিকে তাকিয়ে ঐ মেয়ে আর পুরুষটাকে বলে উঠলো,বাদু! বাদু !

বনুই,নবু,কুন্তা ওরা সবাই দেখল,দূরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকরা হাতে লাঠি আর পাথরের ঢেলা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওরা সংখ্যায় কম বলে বোধ হয় আক্রমণ করতে সাহস পাচ্ছে না। তবে নেচু,কুন্তা, শমী,ওদের দলের দিকে হাতের লাঠি পাথর উঁচিয়ে লোকগুলো ইশারা করছে যে ওদের ওরা মারবে।

ক্রমশ…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top