Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

প্রিয়ন্তী-১৯ (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙ্গা তরুণী)

: | : ২১/১১/২০১৩

Priontiকয়েক মাস কেটে গেল। এ ক’মাসে তার সব সময় শুধু প্রিয়ন্তীর কথা মনে পড়েছে, চোখের সামনে সবকিছু আছে কিন্তু তবুও অন্তরটা সব সময় খাঁ খাঁ করছে। সব সময় মনে হচ্ছে কি যেন নেই। তার প্রিয়ন্তীর শৈশবের কথা মনে পড়ছে, তার মা একদিন বলেছে সে যখন প্রথম হাঁটতে শিখল তখন এক মুহূর্ত বসে থাকতো না, আঙ্গিনায় সব সময় হাঁটাহাঁটি করতো। ছোট্ট মেয়ে হাঁটতে হাঁটতে পড়ে যেত। কৈশোরে সে যখন স্কুলে পড়তো তখন তার রেজাল্ট সব সময় ভালো হতো। ক্লাসে শিক্ষকরা সবাই তাকে খুব স্নেহ করতো।
প্রিয়ন্তীর বাবাও তাকে খুব স্নেহ করতো, প্রথম সে যখন রাজশাহী ভর্তি হলো তখন সে প্রায়ই মেয়েকে দেখতে আসতো। প্রিয়ন্তী বাড়িতে এলে মেয়ে মানুষের মতো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব শুনতো। তার বাবা বেঁচে থাকলে প্রিয়ন্তীকে এভাবে ফেলে দিত না। কিন্তু প্রিয়ন্তীরমা’র শুধু চোখের জল ফেলা ছাড়া কিছুই নেই, স্বামীরমৃত্যুর পর মেয়েদের নিজেদেরই ছেলের সংসারে বোঝা হয়ে থাকতে হয়। তারওপর অবাধ্য মেয়েকে মেনে নিয়ে সংসারের বোঝা আরো বাড়ানোর মতো কথা অরুণকে সে কোনদিন বলতে চায়নি কিন্তু মায়ের মন শত বাধাতেও সে নিজেকে সামলাতে পারেনি।
একদিন অরুণকে বলল, অরুণ অনেকদিন তো হলো আমার প্রিয়ন্তীকে দেখতে খুব ইচ্ছা করছে, তুই আমাকে একবার রাজশাহী যাবার ব্যবস্থা করে দে বাবা।
মা এটা আসলে হয় না, বাবার নিষেধ আছে, প্রিয়ন্তীকে বাড়িতে আশ্রয় দিলে বা তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে বাবা স্বর্গেসুখে থাকবে না। তাছাড়া প্রিয়ন্তীকে মেনে নিলে সমাজে আমাদের মান-সম্মান বলে কিছু থাকবে না। তারপরও আমি তোমাকে রাজশাহী পাঠিয়ে দিতাম কিন্তু তুমি তো কোনদিন রাজশাহী যাওনি। শেষ পর্যন্ত তুমি কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলো।
মা জানে এগুলো অরুণের তাকে না পাঠানোর অজুহাত মাত্র। সে আর কিছু বলল না জল মুছল।
কয়েকদিন আগে অঞ্জনা এসেছিল, মা অঞ্জনাকে বলল, অঞ্জনা তোরা দু’বোন, তুই এসেছিস যদি প্রিয়ন্তীও আসতো তবে খুব আনন্দ হতো। তুই একটু অরুণকে বোঝা তো মা, অরুণ সম্মতি দিলে আমি মোবাইল করে প্রিয়ন্তীকে নিয়ে আসবো।
অঞ্জনা যেন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠল, মা তুমি আসলে বুঝতে পারছ না, তোমার জামাই আমাকে বলে দিয়েছে ঐ নিচু জাতের ছেলেকে ত্যাগ না করলে তোমার জামাই কোনদিন এ বাড়িতে তো আসবে না। আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিবে। তুমি কি চাও তোমার একটা মেয়েকে মেনে নিতে গিয়ে আরেকটা মেয়ের সংসার ভাঙ্গবে?
মা আর কিছু বলেনি। চোখের জল মুছে ভগবানের কাছে বিচার দিয়েছে।

সুশান্তর মা প্রায়ই তাকে মোবাইল করে, প্রিয়ন্তীর সঙ্গেও মোবাইলে কথা বলে। মোবাইলে যেন তার কথার শেষ নেই। কথা বলতে বলতে যেন তার কান্না জড়িত কণ্ঠস্বরভেসে আসতো, সুশান্ত সকালে নাস্তা খেয়েছিস? বউমা ভালো রাঁধতে পারে? শুনেছি তুই নাকি বাসা ভাড়া নিয়ে বউমাকে নিয়ে উঠেছিস? এত টাকা পাচ্ছিস কোথায়?
মা তুমি এত চিন্তা করো না তো, আমরা এখন বড় হয়েছি না। আমি একটা কোচিং সেণ্টারে চাকরি করছি, টিউশনি করছি, প্রিয়ন্তীও একটা টিউশনি করছে-
মা সুশান্তর কথা মাঝে বাধা দিয়ে বলল, বউমাও চাকরি করছে, তুই জানিস না এ বাড়ির বউরা কোনদিন চাকরি করে না, গৃহস্থ ঘরের বউ সংসার করে।
মা আগের দিনের বউরা তেমন লেখাপড়া জানতো না, অল্প লেখাপড়া শিখেই বাপ-মা বিয়ে দিয়ে দিত। এখন মেয়েরা লেখাপড়া শিখছে, সব মেয়েরাই কোন না কোন চাকরি করছে। সংসারে তারাও অবদান রাখছে। খারাপ কী?
তোর সব যুক্তি আমি মানছি কিন্তু তোর বুঝি টাকা-পয়সার অভাব যাচ্ছে তাই বউমাকে চাকরি করতে দিয়েছিস। টাকার অভাবটা না হয় বউকে চাকরি করতে দিয়ে মিটালি কিন্তু আমাকে দেখতে ইচ্ছা করে না, বলতে বলতে মায়ের কণ্ঠস্বরবুজে এলো।
সুশান্ত আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারল না। সে রুদ্ধ কণ্ঠে বলল, করে।
একবার আয় না বাবা বাড়িতে।
মা, তুমি তো জানো বাবা আমাকে বাড়ি যেতে নিষেধ করেছে।
বাবা না হয় নিষেধ করেছে কিন্তু আমি তো কিছু বলিনি।
মা, সংসারে আর তোমার অধিকার কতটুকু, আমাদের সংসারে তো বাবাই সব। অযথা আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে নিজে অপমান হবে কেন?
ঠিক আছে বাবা, তোকে আমার দেখতে ইচ্ছা করছে আমি ক’দিন পরেই রাজশাহী আসবো।
এসো মা।
সুশান্তদের বাড়ির পাশের গ্রামের এক ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, তাকে দিয়ে আগেও তার মা কয়েকবার টাকা পাঠিয়েছে। আজ কথা বলা শেষ করার পর সুশান্তর মনে হলো মা আবার টাকা পাঠাবে। হ্যাঁ সত্যি সত্যি পরদিনই সুশান্তর সেই প্রতিবেশী ছেলেটা তাকে মোবাইল করল, দাদা আপনি যে মেস চেঞ্জ করেছেন তা তো জানি না। আমি একবার আপনার সঙ্গে দেখা করব।
সুশান্ত তাকে তার বাসার ঠিকানা দিল।
প্রায় আধঘণ্টা পর ছেলেটি এলো। তাদের বাড়ির অবস্থা জানালো। তারপর সুশান্তর হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলল, মাসী দিয়েছে, আর বলেছে কয়েকদিনের মধ্যে তিনি রাজশাহী আসবেন।
সুশান্তর জিজ্ঞেস করল, মা ভালো আছে?
হ্যাঁ।
সুশান্তর চোখের সামনে মায়ের অশ্রুসজল মুখ ভেসে উঠল। সুশান্তর গণ্ডদেশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।
চলবে…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top