Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ছায়া চন্দ্রা ও সমুদ্রের সংসার-১

: | : ২২/১১/২০১৩

সকাল হতেই মৃদু বৃষ্টি হচ্ছে।বৃষ্টি ছাড়বে তার নাম গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে না।প্রকৃতি এত বেখালে কেন,ভেবে পায় না।এভাবে চলতে থাকলে অনুষ্ঠান কিভাবে সম্পন্ন হবে,তার কুল কিনারা ভেবে পাচ্ছে না সুশীল।মাথাটা ভন ভন করে ঘুরছে।এর মধ্যে হাই ভলিয়মে পুলায়পান গান চালাচ্ছে।মনে হচ্ছে গালের উপর ঠাস করে থাপ্পড় মারতে।পরক্ষণে ভাবল,আজ বিয়ের দিন,সবাই মজা করবে এটাই স্বাভাবিক।মেয়েটার কাছে গেল।মেয়েটা মুখ ভার করে বসে আছে।মেয়েটা এমন করে বসে আছে কেন,তার কি ছেলে পছন্দ না?বোধহয় ভুল হয়ে গেছে,মেয়েটাকে আগে জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিল।কেমন করে যে হুটহাট করে বিয়ে ঠিক হয়ে গেল,কিছুই বুঝতে পারল না।ছেলে খুব ভাল,বাপের টাকা পয়সা আছে।তবে একটা সমস্যা,ছেলের বয়স বেশি।তিরিশ হবে।মেয়েটা তো সে অনুযায়ী বাচ্চা,কেবল মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছে।এখনও রেজাল্ট বের হয় নি। বয়স আর কত হবে,ষোল-সতেরো।এটাতো আগে ভাবা উচিৎ ছিল।এরকম একটা বুড়ো ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,এটাতো মেয়ের উপর ঘোর অন্যায় হয়ে যাচ্ছে।মনটায় খারাপ হয়ে গেল।দুই একদিন আগে বিষয়টা মাথায় এলে,কিছু একটা করা যেত।আজ বিয়ের দিন,আজতো কিছু করার নেই।তার বুকফেটে কান্না আসতে চাইল।
-বুড়ি?
-হু বাবা।
-এমন মন মরা হয়ে বসে আসিস কেন মা?
-এমনেই বাবা।
-বিয়েতে তোর মত নেই?
চন্দ্রা কিছু বলল না।বাবার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকাল।সুশীল মেয়ের দিকে আর তাকাতে পারল না।বাড়ির এক কোণায় গেল,যেখানে লোকজন একদম নেই।চোখ হতে অবিরাম অশ্রু ঝরে পড়ছে।আজ পর্যন্ত এত কান্না করেছে কিনা,তার মনে নেই।
-এই,এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে?
সুশীল কোনমতে অশ্রু মুছে আনন্দির দিকে তাকাল।
-একি তুমি কান্না করছ?
-ও কিছু না।খুব খারাপ লাগছে তো।
-মেয়ে হয়ে জন্মেছে ,আগে পরে বিয়েতো দিতেই হবে।
একটু থেমে আনন্দি বলে-তবে চন্দ্রা আমাদের সুখেই থাকবে।ছেলেটা খুব ভাল।
-সবই ঠিক আছে।তবে বয়সটা একটু বেশি।
-ছেলেদের বয়স একটু বেশিই হয়।
-মেয়ে আমাদের সে তুলনায় একেবারে কম বয়সের।
-ও নিয়ে ভেব না,মা আমার ঠিক মানিয়ে নিবে।
-বোধ হয় অবিচার হয়ে গেল।তুমি বুড়িকে একবার জিজ্ঞেস করবে,বিয়েতে ওর মত আছে কিনা?
এবার আনন্দি কিছুটা রেগে বলল-অনেক কষ্টে ভাই আমার এমন পাত্র যোগাড় করেছে।শেষে এসে ঝামেলা পাকাবে না।এমন ছেলে হাত ছাড়া হলে আর একটা খোঁজে পাওয়া যাবে?
আনন্দি বুড়ির বাপের উপর বেশ মন ক্ষুণ্ণ হল।মেয়েকে নিয়ে বেশি চিন্তায় মাথায় গন্ডগোল পাকিয়েছে।চিন্তা হচ্ছে বিয়ে নিয়ে।ভালই ভালই বিয়েটা হলে ভাল হয়।তাহলে মাথা হতে মস্ত বড় বুঝা নামে।গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি থেমেছে।ঝকঝকে চকচকে আকাশ।কড়া রোদ উঠেছে।রোদের খুব দরকার ছিল।উঠানটা যত তাড়াতাড়ি শুকায়,তত ভাল।কাজের লোকটা যে কই,উঠানটা ভাল করে ঝাড়ু দেওয়া দরকার।এত লোকজন বাড়ির ভিতর,তবু কাজের লোকজন কমই আছে বলে মনে হয়।রান্নার দিকে গেল।এলাকার নামকরা বাবুর্চী ভাড়া করা হয়ছে।বরপক্ষ যেন খাবার মুখে দিয়েই বলে-এই প্রথম,জীবনে এমন খাবার খেলাম।
-আপনার সবকিছু রেডিতো?
-জ্বি মা।
-রান্না যেন কোনভাবেই খারাপ না হয়।
-ও নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না মা।দীর্ঘ দশ বছরের অভিজ্ঞতা বলে রান্না কোনভাবেই খারাপ হবে না।
আনন্দি নিজের ঘরে ঢুকল।চেয়ারের উপর বসল।তার কিছুক্ষণ একা একা থাকতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু বিয়ে বাড়ি।এমন পরিবেশতো পাওয়া যাবে না।বিছানায় শুয়ে পড়ে।বেশ ঘুম ঘুম ধরে।কিন্তু তার তো আজ ঘুমালে চলবে না।তার আজ মেয়ের বিয়ে।কত কাজ এখনও বাকি?অন্যরা কাজ কাম ঠিকমত করছে কিনা, সেগুলোও দেখতে হবে।সব আত্নীয় স্বজনের সাথে ভদ্রতা করতে হবে।আনন্দি দুই হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে।এত চাপে বুঝি পাগল-ই হয়ে যাবে।
-দিদি দিদি?
এই বলে আনন্দির বড় ভাই অনিমেষ ঘরে ঢুকল।আনন্দির পাশে বসল।
-দিদি,তোমার মেয়ের বিয়ে আর তুমি শুয়ে আছ?
-মাথাটা ঝিম ঝিম করছে রে ভাই।তোরা আছিস বলেই ভরসা পাচ্ছি।না হলে যে কি হত?
-আচ্ছা তুমি ঘুমাও।আমি দেখছি।
এই বলে অনিমেষ ঘর হতে বের হল।কুঞ্জের কাজ এখনো শুরু করেনি।কেবল বাঁশ কাটা শুরু করেছে।বেলা একটা বেজে গেছে।সাতটার লগ্নে বিয়ে।ছেলেগুলো কুঞ্জ বানানো শেষ করবে কিভাবে?
-তোমরাতো বিয়ের লগ্ন ক্রস করে ফেলবে?
-না মামা,শেষ করে ফেলব।
-কাজের যে অগ্রগতি তাতেতো মনে হচ্ছে না।ঠিক সময়ে বিয়ে না হলে বর কনের সাংসারিক জীবনে অশান্তি আসে সেটা জানোতো?
-তা জানব না কেন মামা?
-তাহলে হাত গুটিয়ে না থেকে জলদি কাজটা কর।
এই বলে অনিমেষ ব্যান্ড পার্টির কাছে গেল।এদের ভাড়া করা আনা হয়েছে বাড়িঘর মাতিয়ে রাখার জন্য।অথচ চুপচাপ হাত গুটিয়ে বসে আছে।লোকজনের মধ্যে এত ফাঁকি দেওয়ার টেন্ডিসি কেন,মাথায় ধরে না।
-কি আপনারা এভাবে হাত গুটিয়ে বসে আছেন কেন?আপনাদের কি শুধু শুধু ভাড়া করে আনা হয়েছে?
-জনাব বাজানো নিষেধ আছে।বিয়ে শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত নিষেধ।
-এমন আউল ফাউল কথা কে বলেছে আপনাকে?
-সুশীল সাহেব।
নাম শুনে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল।জামাই বাবুর এই বয়সেও আক্কেল জ্ঞান কিছু হবে না?আজ মেয়েটার বিয়ে,বাঁশি বাজবে,সানাই বাজবে।এসব ছাড়া বিয়ের অর্ধেক মজাতো এমনেতেই নষ্ট।
-আপনারা বাদ্য বাজান।বাকিটা আমি দেখতেছি।
সবগুলো বাদ্য একসাথে বাজা শুরু করল।অনিমেষের মনটা নেচে উঠল।তার কাছে এখন বাড়িটা মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি।
চন্দ্রা বারান্দায় বসে আছে।যে ছেলেটার সাথে বিয়ে,সে ছেলেটাকে লজ্জায় ঠিকমত দেখতেও পারে নি।চোখে একটি হাই ভোল্টেজের বলদ মার্কা চশমা ছিল।মুখের গঠন যে ঠিক কেমন,কিছুতেই মনে করতে পারছে না।তবে চেহারাটার মধ্যে হেবলা হেবলা ভাব আছে।দেখতে একেবারে হেংলা,ধাক্কা দিলেই পরে যাবে-এমন।এমন ছেলের সাথে বিয়ে,ভাবতেই যেন তার কেমন লাগে।এমন একটা ছেলের সাথে সারাজীবন থাকতে হবে;মনে হচ্ছে পুকুরে ঝাপ দিয়ে মরলে এর থেকে ভাল হত।বিয়েটা আটকাতে পারলে ভাল হয়।মাকে বললে কোন কাজ হবে না।বাবাকে বললে যদি কিছু একটা হয়।
-মা,কি এত ভাবছিস?
পেছনে তাকিয়ে দেখে অনিমেষ মামা।এই লোকটার প্রতি ওর সবচেয়ে বেশি রাগ।এই লোকটার জন্যই আজ তার এই ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।বিয়ের সম্বন্ধটা না আনলেই কোন ঝামেলা ছিল না।পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারত।কত শখ ছিল ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার।সব আশা নিভে গেল।তার উপর ছেলে সম্পর্কে এত ভাল ভাল কথা বলেছে,বিশেষ করে ছেলের বাবার অগাধ টাকা আছে-শুনে ওর মার চোখতো চকচক করছিল।যেন হাতের কাছে চাঁদর হরিণ পেয়েছেন।
অনিমেষ চন্দ্রাকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল-কিরে,কি হল?কথা বলছিস না কেন?
চন্দ্রা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল-ও মামা,বল।
-মন খারাপ নাকি?
-না মামা,মস্তবড় খুশি।
এই বলে চন্দ্রা হাসল।
-তুইতো রাজরাণী হবি মা,রাজরাণী।
-ছেলে যখন রাজা,তখন রাজরাণীতো হবই।
-দেখতে হবে না,কে এমন ছেলে খোঁজে বের করেছে?হাজারে এমন পরিবার আজ খোঁজে পাওয়া যায় না।
মামার সাথে চন্দ্রার আর কথা বলতে ইচ্ছে করল না।অনিমেষ কথা বলতেই লাগল।কিন্তু চন্দ্রা কিছু বলল না।ডান হাত দিয়ে মাথাটা এমনভাবে টিপতে লাগল যেন মামা মনে করে প্রচন্ড মাথা ব্যথা করছে।
-কিরে তোর মাথা ব্যথা করছে?
শুধু মাথা নাড়ল।
-মাথা টিপে দিব।
-মামা আমি একটু একা থাকতে চাই।
অনিমেষ বেশ চিন্তায় পড়ে গেল।হঠাৎ করে মাথা ব্যথা হবে কেন?বিয়ে

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top