Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সন্তানকে দিকনির্দেশনা ।

: | : ২২/১১/২০১৩

চারিদিকে অবস্থা দিন দিন এমনই হচ্ছে যে সন্তানের সঠিক শিক্ষা দেওয়াই এখন কঠিনতম কাজ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আপনি স্কুল বলেন, খেলার মাঠ বলেন আর কোন নৈতিকতার জায়গার কথাই বলেন সব জায়গাই সামাজিকভাবে দুষিত হয়ে যাচ্ছে ।বিনোদণের জায়গাগুলো দখল করে ফেলছে এডাল্টদের অনুষ্ঠান এবং আচার আচরনের বহিঃপ্রকাশ দিয়ে । সবকিছুর পরও আমাদের ভাবতে হয় একটি শিশুকে ভবিষ্যতের জন্য সুন্দর করে গড়ে তোলার প্রক্রিয়া নিয়ে । কিন্তু কিভাবে এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করা যাবে তা নিয়ে কিন্তু এখনই বিস্তর ভাবার সময় এসে গেছে । প্রয়োজনের তাগিদে বাবা মা উভয়েরই অনেক সময় বাইরে থাকতে হয় । সন্তান ঘরে একা থাকে অথবা সন্তানকে একাই বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় পড়াশোনার কাজেই । তাই তার ভুল হতে পারে, শিশুটি ভুল পথেও যেতে পার, হয়ে যেতে পারে নেশায় আশক্ত ।কিন্তু এ থেকে আমাদের পরিত্রান পেতে হবে খুজেঁ বের করতে হবে সঠিক পথ যে পথ অনুসরন করলে ছেলেমেয়েরা পাবে তাদের জীবনের নিরাপত্তা, পাবে মানুষিক নিরাপত্তা । কিন্তু এই সভ্যতার নিরাপত্তা পাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারের মত প্রশাসনের সহযোগীতাও অনেক বেশী প্রয়োজন । আর এই প্রশাসন যেহেতু সরকারের প্রতিষ্ঠান সেহেতু একটি শিশুর অপরাধের সাথে জরিত হওয়া বা অপরাধের স্বীকার হওয়ার পিছনে সরকারের দায়বদ্ধতাও কম নয় ।এই দায়বদ্ধতার কথা আসছে এই জন্য যে আজ শিশুরা যেভাবে নেশায় আশক্ত হচ্ছে, নেশা দ্রব্য বহন করছে এবং তার সাথে যেভাবে মেয়ে শিশুরা পারিপার্শিক বখে যাওয়া মানুষ দ্বারা এমনকি শিক্ষক দ্বারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তা আইনের বিকারতারই বহিঃপ্রকাশ ।

 

কিছুদিন আগেই আমাদের এখানে ইন্টারমিডিয়েটের একজন ছাত্রকে ফেনসিডিল বহনের অভিযোগে পুলিশ হাতেনাতে ফেনসিডিল বিক্রির টাকাসহ গ্রেফতার করে এবং সে আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠান ছাত্রলীগের ইউনিয়নের কমিটির সদস্য হওয়ায় এলাকার একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদের রিকোয়েস্টের কারনে সেদিনই ছাড়া পেয়ে যায় !এরকম ঘটনা সারা দেশেই হচ্ছে । অনেক সময় ভালো মানুষ সাজা পেয়ে যাচ্ছে কিন্তু খারাপেরা পার্টির সমর্থনে বেরিয়ে আসছে । এটাই নিয়ম হয়ে দাঁড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত । ভাবতে আজ বড় বেশী অবাক লাগে যে, শিক্ষকেরা নাকি কোন মেয়ের আবার শ্লীলতাহানি করতে পারে ! আমরা অবাক হই আর যাই হই অপরাধ সংঘটিত হচ্ছেই । আর এজন্যই এখন প্রয়োজন অপরাধকে নির্মূল করার মন্ত্র আবিস্কার করা । কিন্তু যারা এগুলো নিয়ে কথা বলতে চায় তাদেরও কথা বলা বন্ধ করার জন্য শুরু হয়েছে নতুন কার্যক্রম । যারা ন্যয়ের পক্ষে, দিকনির্দেশনামূলক কাজে অংশগ্রহন করছে তারা হয়ে যাচ্ছে গুম অথবা শিকার হচ্ছে অপমানের।

 

এখন এতগুলো প্রতিকুলতা একজন সন্তানকে মানুষ করার পেছনে, যে অনেকেই খেই হারিয়ে ফেলে আসলে কোন পথে যাওয়া উচিৎ ।

 

ভালো বন্ধু পাওয়া যায় না, ভালো টিভি বিনোদন নেই, খেলার জায়গা নেই, ভালো আচরনের শিক্ষক পাওয়ার ক্ষেত্রেও বিরম্বনা, সবশেষে মা বাবার সময়ও হয়ত নেই যা কিছু পাওয়া যায় তা সবই শুধু টাকার বিনিময়ে, আর এতেই শিশুরা শিশুদের শিশুসুলভ আচরন হারিয়ে ফেলছে দিনদিন-ই ।

 

নিম্ন বিত্ত থেকে উচ্চ বিত্ত সব জায়গায়ই শিশুদের নিয়ে ভাবনা এখন ক্রমেই কমে যাচ্চে ।

 

একটি শিশুকে যদি তার সরম্পূর্ন বিকাশমান করতে হয় তবে সবার আগে প্রয়োজন মানুষ সম্পর্কে ভালো ধারনা দেওয়া এবং সেমত মানুষের আচরনীয় বৈশিষ্ট তার কাছে প্রমাণিত হওয়া ।

 

শিশুদের দৃষ্টি কোথায় বেশী যায় ? আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখবেন শিশুরা বেশী দেখছে প্রকৃতিকে আর চারপাশের অজানা বিভিন্ন বিষয়গুলোকে । কিন্তু এই দেখার সীমা আজ টেলিভিশনের কল্যানে এমন জায়গায় চলে যাচ্ছে যা আছে শুধুই অবাধ যৌনতা ছড়াছরি । শিশুরা যেভাবে দেখছে তাতে তাদের মানুষিকতা শুধুই দৃষ্টিতে সীমাবদ্ধ থাকছে না ছড়িয়ে পড়ছে তাদের পছন্দে জীবন চলার নিত্যনৈমিত্তিক চলাফেরায় । আজ মার্কেটে গিয়ে শিশুরা প্রথমেই বলছে আমি সানি লিয়নের জামা পড়তে চাই ! এর আগে কিন্তু তারা এটাও জানছে যে সানি লিয়ন একজন পর্ন তারকা । তাহলে তাদের মনে পর্ন সম্পর্কে ধারনা নেওয়ার প্রবনতা অতি উৎসাহের কারনে সৃষ্টি হতেই পারে !তবে ভেবে দেখুন কোথায় গিয়ে দাড়াচ্ছে আমাদের শিশুদের ধারনা ।

 

এই ধারনাগুলোই পরিবারের দিকনির্দেশনা হিসাবে প্রকাশ পায় । পারিপার্শিক অনেক অসামঞ্জস্য বিষয়গুলো নিয়েই আমাদের বর্তমান শিশুরা বেড়ে উঠছে । কোন উপায় ছাড়াই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হচ্ছে । শুধু বিদ্যালয়ে দৌড়াদৌরি করে ফাস্ট হওয়ার প্রবনতাকে উৎসাহিত করলেই হবে না তাদের মধ্যে নৈতিকতার সম্পূর্ন জ্ঞানকে প্রশারিত করতে হবে । ভালো খারাপের পার্থক্যকরন বোঝাতে হবে শিশুদের আজ থেকেই । প্রশাসনের উদ্যোগ নিতেই হবে অপরাধ কার্যক্রমগুলো বন্ধের জন্য । যে শিশু মাদক নিয়ে ধরা পড়ছে তাদের কিশোর অপরাধ কেন্দ্রে নিয়ে কাউন্সিলিং করা উচিৎ । শুধু মাদক কেন শিশুদের সব অপরাধের জন্যই তাদের কাউন্সিলিং প্রয়োজন । যদি অপরাধের পর তাদের বিনা শাস্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে অপরাধকে স্বীকৃতি দেওয়াই । একদিন সে ভাববে এই অপরাধই তার জীবিকা । এভাবে সামাজিক অবক্ষয় চরমে উঠে যাবে । কোনভাবেই তখন আর সভ্যতাকে ফেরানো সম্ভব হবেনা ।

 

আসুন সন্তানকে দিকনির্দেশনা দেই তোমার কোন পথে চলা উচিৎ, কোন কাজ করা উচিৎ আর কোন কাজ বাদ দেওয়া উচিৎ । তবে এটা বলে কয়ে শেখানোর চেয়েও জরুরী তাদেরকে বুঝিয়ে সঠিক পথে নিয়ে আসা ।যারা সুবিধা বঞ্চিত এবং শিক্ষার আওতাভুক্ত করা যাচ্চেনা অর্থাৎ ছিন্নমূল শিশু তাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট কার্যক্রম হাতে নিয়ে তাদের কাছে এই শিক্ষাগুলোকে পৌছে দিতে হবে । শুধু শিক্ষা পৌছে দিলেই হবে না নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাজ করার সুযোগ দিয়ে দিতে হবে আর্থিক সুবিধা । তবেই শিশু অপরাধ কমলে কমে যাবে সামাজিক অস্থিরতাও । যদি এখনই শিশু অপরাধ কমানো না যায় তবে এরাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এলার্জিতে পরিনত হতে পারে । সভ্য জাতি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে শিশুদেরই সবার আগেসব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে । এটা শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয় এটা নিজেদের সঠিকভাবে বাচিয়েঁ রাখার উপাও।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top