Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

প্রিয়ন্তী-২০ (সংস্কারের প্রাচীর ভাঙ্গা তরুণী)

: | : ২৩/১১/২০১৩

Priontiসকালবেলা দু’জনের কোন কাজ থাকে না, প্রতিদিন বিকেলে সুশান্ত কোচিং সেণ্টারেযায় আর প্রিয়ন্তী যায় প্রাইভেট টিউশনি করতে। দুজনের গন্তব্য দু’দিকে, সুশান্তর কোচিং তাদের বাসা থেকে কাছেই কিন্তু প্রিয়ন্তীর প্রাইভেট একটু দূরে, প্রায় দু’কিলোমিটার হবে। প্রিয়ন্তী এই দু’কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যায়, তবুও তার ক্লান্তি নেই। প্রিয়ন্তী ঘরে ঢুকতেই সুশান্তযখন একটা হাসি দেয় তখন তার সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।
বেশিরভাগ দিনই প্রিয়ন্তী প্রাইভেট পড়িয়ে আগে চলে আসে, কোন কোন দিন সুশান্ত আগে এলে প্রিয়ন্তীর জন্য বারান্দায় পায়চারি করে। প্রিয়ন্তীর বেলায়ও ঠিক তেমনি কোনদিন সুশান্তর ফিরতে দেরি হলে প্রিয়ন্তী বারান্দায় পায়চারি করে প্রথমে একবার মোবাইল করে জিজ্ঞেস করে, এই তোমার কি আসতে দেরি হবে?
সুশান্ত হ্যাঁ বা না বলে মোবাইল রেখে দেয় কিন্তু প্রিয়ন্তীর যেন তবুও অবসর নেই। সে বার বার মিস্ কল দেয়। একদিন বাসায় এসে সুশান্ত জিজ্ঞেস করল, প্রিয়ন্তী তোমাকে তো বললাম আমি আসছি। তুমি এত চঞ্চল কেন?
তাড়াতাড়ি এসো আমি একাই কী করব? বলো।
তিথির সঙ্গে গল্প করো।
প্রিয়ন্তী হেসে ফেলে, তিথির সঙ্গে গল্প করলেই যদি হতো তবে তো দু’জনে মেসে থেকে গল্প করতাম, তোমাকে আর বিয়ে করতে হতো না।
প্রিয়ন্তী যে ছেলেটিকে পড়ায় তার নাম অর্পন। সে খুব মিশুক প্রকৃতির। পড়ালেখায় ভালো কিন্তু পড়ার ফাঁকে ফাঁকে গল্প করে। তার গল্পের মধ্যে অনেকটা অংশ জুড়ে থাকে তার বাবা-মা এবং সংসারের কথা। এমন কথা বলে ফেলে যে প্রিয়ন্তীকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। একদিন বলল, জানেন ম্যাডাম কাল আব্বু-আম্মু অনেক রাত পর্যন্ত ঝগড়া করেছে।
প্রিয়ন্তী কোন আগ্রহ দেখাল না।
অর্পন বইটা বন্ধ করে বলল, আগে গল্পটা বলি তারপর পড়ব।
প্রিয়ন্তী বলল, না বাবা থাক, আরেকদিন শুনব আজ তুমি পড়।
না আপনাকে আজকেই শুনতে হবে। তারপর কী হলো জানেন?
প্রিয়ন্তী চুপ করে রইল।
তারপর আব্বু আম্মুর মোবাইলটা ভেঙ্গে দিয়েছে।
প্রিয়ন্তী কিছু বলল না।
কেন ঝগড়া হয়েছে জানেন? টাকা নিয়ে।
এবার প্রিয়ন্তী জিজ্ঞেস করল, কীসের টাকা?
টাকা নিয়ে আব্বু-আম্মু প্রায় ঝগড়া করে। প্রতিদিন আব্বুও অনেকগুলো টাকা নিয়ে আসে, আম্মুও টাকা আনে। আর আমি কিছু নিতে চাইলে বলে টাকা নাই, টাকা নাই।
প্রিয়ন্তী আপন মনে বলল, এত টাকা, গাড়ি-বাড়ি তবুও টাকা নেই। একটা মানুষের জীবন-যাপনের জন্য আর কত টাকা প্রয়োজন?
অর্পন এবার বই খুলল, আপনি আমার কথা শুনছেন না, আমার কথা কেউ শুনে না। আব্বুকে বললেও শুনে না, আম্মুও শুনে না, আপনিও শুনেন না। আমি আজই আব্বুকে বলে দিব, আপনি আমার কথা শুনেন না।
না বাবা, সব কথা আব্বু-আম্মুকে বলতে হয় না আর বড়দের সব কথা শুনতেও হয় না।
তাহলে আমি কার সঙ্গে কথা বলব? বলুন?
তুমি স্কুলে যাও, সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলবে। আমি পড়াতে আসি আমার সঙ্গে কথা বলছ আর কত কথা বলতে হবে। অন্য সময় তুমি নিজের পড়া পড়বে, টি.ভি দেখবে।
আমার তো তাড়াতাড়ি পড়া মুখস্থ হয়। আপনি বলুন আমি আপনাকে কোনদিন পড়া দিতে পারি না?
হ্যাঁ পারো।
সেজন্যই তো আপনি তাড়াতাড়ি চলে যান। কাল থেকে আমি আর তাড়াতাড়ি পড়া মুখস্থ করব না।
না বাবা, তুমি তাড়াতাড়ি পড়া মুখস্থ করবে আমি পড়া শেষে তোমার সঙ্গে গল্প করব, এখন পড়।
পরদিন থেকে পড়ানো শেষ করে প্রিয়ন্তী চলে আসতে চাইলে অর্পন একরকম মুখ ভার করতো কিন্তু প্রিয়ন্তীরও কিছু করার ছিল না। কারণ কোনদিন বেশি দেরি হলে সুশান্ত মন খারাপ করে, প্রিয়ন্তীর ওপর রাগ করে। প্রিয়ন্তী কোনভাবে চায় না সুশান্ত তার ওপর রাগ করুক।
সেদিন প্রিয়ন্তী অন্যান্য দিনের মতো প্রাইভেট পড়িয়ে বাসায় চলে এসেছে। আসার সময় সে লক্ষ্য করেছে অর্পন মুখ ভার করে আছে। প্রিয়ন্তী কিছু বলেনি, সে মোবাইলে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চলে এসেছে। রাত দশটায় তার মোবাইলের রিং বেজে উঠল। সে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখল একটা অপরিচিত নাম্বারথেকে রিং এসেছে।
সে রিসিভ করল, হ্যালো।
অপরিচিত কণ্ঠস্বর, হ্যালো আপনি কি প্রিয়ন্তী বলছেন?
প্রিয়ন্তী একবার সুশান্তর দিকে তাকাতেই তার চোখে চোখ পড়ল।
প্রিয়ন্তী মোবাইলে বলল, হ্যাঁ বলছি।
আমি অর্পনের আব্বা।
আপনি এত রাতে?
আপনি ভালো আছেন?
হ্যাঁ, আপনি?
ভালো আছি, আপনাকে এত রাতে বিরক্ত করছি কারণ আজ বাসায় ফিরে দেখলাম অর্পন মন খারাপ করে বসে আছে। জিজ্ঞেস করলাম তো আপনার কথা বলল।
কী বলল?
ও বোধ হয় আপনার কাছে আরেকটু সময় চাচ্ছে?
কেন আমার পড়ানো কি সে বুঝতে পারে না?
পড়ালেখার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই, এই ছোট মানুষ তো আর আমরাও কেউ বাসায় থাকি না, ছেলেটা খুব বোর ফিল করে।
কিন্তু-
না আপনি যদি কিছু মনে না করেন তবে অর্পনের জন্য আরেকটু সময় দিতেন। আমি আপনার টিউশন ফি বাড়িয়ে দিব।
আমি আপনার কথা বুঝতে পেরেছি। আমি না হয় আপনাকে আমার ডিসিশন দু’য়েকদিন পরে জানাবো।
আচ্ছা ঠিক আছে।
প্রিয়ন্তী মোবাইল রেখে দিল।
সুশান্তর চোখে কৌতুহল এবং কিছুটা সন্দেহ। তার চোখের দিকে তাকাতেই প্রিয়ন্তীর বুক কেঁপে উঠল। সে থতমত খেয়ে বলল, সুশান্ত বিষয়টা তোমার সঙ্গে শেয়ার করা দরকার।
কী বিষয়?
অর্পনের বাবা, মানে আমার ছাত্রের গার্জিয়ান অর্পনকে আরো একটু বেশি সময় পড়াতে বলে, মানে আমার টিউশন ফি আরো বাড়িয়ে দিবে।
সুশান্ত একটা শুষ্ক হাসি হেসে বলল, বেশ তো।
তুমি কী বলো?
আমি আর কী বলব? তুমি তো দু’য়েকদিন পর তোমার ডিসিশন জানাতে চাইলে।
হ্যাঁ আমি তো তোমার জন্য কিছু বললাম না।
সুশান্ত কিছু বলল না।
প্রিয়ন্তী বলল, সুশান্ত আমাদের বেশ টানাটানি যাচ্ছে। আমি আরো একটা টিউশনি করতে পারলে ভালো হতো কিন্তু দু’টা টিউশনির টাকা যদি একটা টিউশনি করেই পাই তবে খারাপ কী?
তুমি পারবে? তোমার কষ্ট হবে না?
কষ্ট হলে আর কি করা?
সুশান্ত গম্ভীর কণ্ঠেবলল, বেশ।
চলবে…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top