অপেক্ষায়
অপেক্ষায়
——————–
স্মৃতির আয়না মুচে তাকাই যখন
অস্পষ্ট হলেও আজও ভেসে উঠে শৈশব
কৈশোরের কথা ।
ছয় ছেলে তিন মেয়ে নয় সন্তানের সংসার
প্রাণ উষ্ঠাগত মার ।
বড় সঙসারে সংখ্যাধিক্য লোক,
বড় বাড়ি মেহমান সারি সারি
সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া দায় তাদের সাথে ।
সংসার কর্মের চাকা চালিয়ে নিতে
বাঁধা রাখাল, দিন মজুর নিত্য দিনই ।
রাবনের এ বংশধরদের রান্না , খাওয়ানো,
স্কুলের জন্য তৈরী করে স্কুলে পাঠানো,
নিত্য দিনের অসহনীয় কাজে
বিরক্তি বা ক্লান্তি দেখিনি কভু মায়ের মুখে ।
কাজের বুয়া যেন এত বড় সংসার চালিয়ে নেওয়ার
জন্যই জন্ম ।
দেহ দৈত্যের মতো বিরাটকায়,
শক্তি সামর্র্থ আন্দাজি অসুরের মতো ।
য়ৌবনে মুখে সৌন্দর্য ছিল কিনা বলা কঠিন,
অয়ত্নে মুখে বাসা বেঁধেছে মাইস্তা ,
তার উপর জল বসন্তের চিহ্ন, পানের রসে দাঁত লাল,
লম্বা তরমুজের বীচির মতো,
যতটা ভয়ংকর আকৃতি ততোধিক ভয়ংকর
তার কন্ঠস্বর, যেন চেড়া বাঁশের শব্দ
রুচিহীন বিভ্ৎস ।
স্বরগড়ম বাড়ি লোকে লোকারণ্য,
আজ মা একা, মেয়েরা শ্বশুড়ালয়ে, ছেলেরা ব্যস্ত কর্ম জীবনে,
শূন্য হাহাকার করা বাড়ি, যেন পতন ঘটেছে
এক শক্তিশালী সম্রাটের, পালিয়েছে
বা নির্বংশ হয়েছে সম্মুখ সমরে ।
যুদ্ধ শেষে শূন্য প্রান্তরে যেন স্বজনদের খুঁজে ফিরছে মা
একাকী । বাঁচার তাগিদে ব্যস্ত সবাই,
মা আকড়ে আছে স্বামীর ভিটা, আর
মাকে আকড়ে আছে সেই হত যৌবনা বুয়া,
যেন যৌবনের দাপটহীন শক্তিহীন
সম্রাট বাহাদুর শাহ ।
আম গাছে আম, বড়ই গাছে বড়ই
পেরে নিচ্ছে পড়শীর ছেলেরা,
তাকিয়ে থাকছে মা, হুংকার ছাড়ছে বুয়া, তেজহীন
রক্ষিতে আপ্রাণ চেষ্টা মার,
ছেলেরা আসবে , আবার নাতি নাতনীতে ভরে যাবে
বাড়ি, তারা খাবে ফল ফলাড়ি ।
আশায় বুক বেঁধে আজও রাস্তার দিকে তাকিয়ে মা,
তার আকুতি ভরা দৃষ্টি আছড়ে পরে কংক্রিটের
রাস্তায় মায়াহীন ।
দিন যায় রাত যায় কেটে যায় মাস ও বছরও,
মার অপেক্ষার চোখে গড়িয়ে পরতে থাকে জল,
কেউ আর আসে না । অপেক্ষা করতে করতে মা
একদিন জায়গা করে নেয়, রাস্তার ধারে,
বাবার পাশে, ছোট্ট মাটির ঘরে । ।