Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ছায়া চন্দ্রা ও সমুদ্রের সংসার-৪

: | : ২৫/১১/২০১৩

বছর দুয়েক পর।দেখতে দেখতে চন্দ্রার বয়স আঠারোর উপর।প্রকৃতি তার সকল রূপ সৌন্দর্য যেন মেয়েটিকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ভরিয়ে দিয়েছে।সবসময় হাসি হাসি মুখ,আনন্দের ঝলক লেগেই আছে মুখে।জীবনেও এসেছে বড় ধরণের পরিবর্তন।সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।থাকে সুফিয়া কামাল হলে।ক্লাস হয় মোকারম ভবনে।ক্লাস হতে বের হয়ে ডাইনেই চায়ের দোকান।ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে এখানে এসে বন্ধুরা আড্ডা মারে।শিলা বলে-একদম বোরড হয়ে গেছি।এরকম হাবার মত ক্লাস নিয়ে কোন লাভ আছে?
অলক বলে-বাদ দেতো।
এই বলে,রাসেলকে পাঁচটা চা দিতে বলে।বয়স বেশি হবে না,বার-তেরো।বেশ কয়েক বছর ধরে এখানে চা বিক্রি করছে।
মিলা হেসে হেসে বলে উঠে-দোস্ত আজ কি হয়েছে শোন?একটা সিগারেট ধরিয়েছি।দেখি হাবা টাইপের ছেলে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।যেন আমি মহাআশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটিয়েছি।আমি ছেলেটির কাছে গেলাম।বললাম-সিগারেট খাবি?
শিলা মৃদু হেসে বলে-আমিতো ভাবলাম অন্যকিছু,তোকে বুঝি প্রপোজ করে বসেছে।
-আরে শুন না,এরপর ছেলেটা বলল-আমিতো সিগারেট খাই না।আমি বললাম-এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন আমার দিকে?ছেলেটা বলল-আমার না আপনাকে খুব ভাল লাগে।আমি বললাম-দেখেই বুঝে গেছি,মজনু টাইপের ছেলে।মেয়ে দেখলেই ভালবাসতে ইচ্ছে করে।তো কানে ধরে উঠবস করেন।আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকার শাস্তি।ছেলেটা দেখি সত্যি সত্যিই কানে ধরে উঠবস করা শুরু করে দিয়েছে।
একথা বলার সাথে সাথেই সবাই একেবারে ফিক ফিক করে হেসে দিল।এমন বলদ টাইপের ছেলে যে থাকতে পারে বিশ্বাসই হচ্ছে না।আবার মিলা শুরু করল-শুন,একটা ছেলে সেদিন ফোন দিয়েছে।বলে-মিলা তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।তোমাকে ছাড়া সবকিছু কেমন শূন্য শূন্য লাগে।আমি বললাম-তাহলে মরে যান।দেশের যে অবস্থা,আপনে মরলে তাতে দেশের লাভই হবে।ঠিকানা বলেন।দড়ি কিনে পাঠিয়ে দেয়।ছেলেটা আমতা আমতা করে ফোন কেটে দেয়।
আবার কিছুক্ষণ সবাই হাসে।ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।তাই চটপট করে ক্লাসে ঢুকে পরে।ক্লাস মুনিটর এসে জানায়,আজ আর ক্লাস হবে না।সবাই খুব হইচই করে উঠে।চন্দ্রা আর কয়েকজন মিলে টিএসসির ভিতরে গিয়ে বসে।দুই একজন গান শুরু করে-ভাল আছি,ভাল থেকো।আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ……
একটার পর একটা গান চলতে থাকে।এরপর শুরু হয় জীবনের গল্প।কার কি দুঃখ ব্যথা আনন্দ আছে?প্রথমে শিলা শুরু করে-তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি।অংক স্যার ক্লাস নিচ্ছেন।কুত্তার মত সবসময় বগবগ করতেন।আমরা নাম দিয়েছিলেন লেডি ডগ।চেহারের মধ্যে মেয়ে মেয়ে ভাব ছিল।আমি স্যারকে ইনিয়ে বিনিয়ে চিঠি লিখেছিলাম।স্যারও দেখি কয়েকদিন পর বেশ আবেগসহ চিঠি লিখেছে।ক্লাসের সবাইকে দেখিয়েছি।স্যার অংক করে আর আমরা সবাই হাসি।তাকালেই সবাই চুপসে যায়।আবার অংক করে আবার হাসে।অবশেষে স্যার রেগে ক্লাস হতে বের হয়ে গেলেন।
একে একে সবাই যার যার গল্প বলে।চন্দ্রার পালা আসে।চন্দ্রা দূর অতীতে তাকিয়ে কোন গল্প খুজে পায় না।জীবনটা কেমন জানি অদ্ভূতভাবে চলেছে,কোন মজার কিছু খুজেই পাচ্ছে না।মিলা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে-কি রে কি হল?
-না রে আমার এমন কোন ঘটনা নেই।
এরপর অলক কার্ড বের করে।টুয়েনটি নাইন খেলবে।অলক আর মিলা,চন্দ্রা আর মোহিত।খেলা শুরু।চন্দ্রা কয়েকদিন হল শিখেছে।এখনো দক্ষ খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারেনি।অবনীলায় সে টাম কার্ড পাশিয়ে যায়।এক সিরিয়াল একই চারটা কার্ড থাকে তবুও সতেরো ডাকতে সাহস পায় না।যা ডাকার মোহিতকে একাই ডাকতে হচ্ছে।আর বারবার খেলা মরে যাচ্ছে।চন্দ্রা এটা খেলবি না,ওটা খেলবি না,এরপর এটা খেলতে হয়।বুঝাতে বুঝাতে দুইটা কালো সেট হয়ে গেল।লাল সেট খাওয়ার পথে।এরপর যখন টাম করতে পারত,তবুও যখন করল না,তখন মোহিতের মাথাটা কিছুটা গরম হয়ে গেল।
-না চন্দ্রা,এভাবে শুধু খেলার মত খেলে গেলেতো হয় না।একটু বুঝে খেলার চেষ্টা কর।
চন্দ্রার কান্না আসতে লাগল।বেশ কষ্টে তা থামাল।মিলা মোবাইলটা বের করে সময় দেখে।সময় দেখতো হতবাক।চারটা বেজে গেছে।কোথা দিয়ে সময় চলে গেছে কিছু বুঝতেই পারেনি।কারও তো খাওয়ায় হয় নি।
রাত্রি আটটা।রুমে বসে আছে।এক রুমে চার বেড।চার বেডে চারজন থাকে।শিলা,মিলা,নীলিমা আর ও।এরমধ্যে নীলিমার ফ্যামিলি সবচেয়ে ধনী,মিলা মিডিল ক্লাস।শিলার টাকা পয়সার সমস্যাটা একটু বেশি।একটা টিউশনি করে,তাতে বেশ চলে যায়।নীলিমার ল্যাপটপ আছে,মিলা কয়েকদিন হল ডেস্কটপ কিনেছে।চন্দ্রা তার বাবাকে বলেছে।কিছুদিন পর কিনে দিতে চেয়েছে।আর শিলা ভাবছে আরেকটা টিউশনি করাবে,সেই টাকা দিয়ে কিনবে।কবে নাগাদ কিনতে পারবে,কে জানে?সবাই মিলে মিলার ডেস্কটপে সিনেমা দেখছে।থ্রি-ইডিয়টস।দেখা শুরু হতেই মিলার ফোনটা বেজে উঠল।বারান্দায় গিয়ে কথা বলা শুরু করল।আর কিছুক্ষণ পর বাকি দুইজনও।চন্দ্রার আর একা একা মুভি দেখতে ভাল লাগছে না।এমনেতেই হিন্দি সে বুঝে না।তার উপর আবার সাবটাইটেল নাই।মুভিটা পস করে রাখে।কেমন কেমন যেন একা একা লাগে।তার এমন কেউ থাকলে খারাপ হত না।এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠে।আননোন নাম্বার।
-আপনি কি চন্দ্রা বলছেন?
-হু,আপনি কে বলছেন?
-আমি আপনার বিভাগের ই।মাস্টার্সে পড়ি।
-আপনি আপনি করে বলবেন না প্লীজ?
-ওকে ঠিক আছে।তোমার বাসাতো টাংগাইলে।
-জ্বি দাদা।
-চন্দ্রা তুমি আমাকে দাদা বলবে না।
-কি বলে ডাকব আপনাকে?
-অর্ণব।
-না তা কি করে হয়?ঠাকুর পাপ দিবে না?
-দিলে দিবে,তবে সবকিছু একরকম ভাবলে হবে না?বন্ধু ভাবলেই হয়ে গেল।
-না তা কি করে হয়?দাদা বলেই ডাকি না?
-না।
-আচ্ছা বরং আমি নাম ধরেই ডাকব।
-এইতো গুড।
-কেন?
-নাম ধরে ডাকবে তাই।আচ্ছা আজ রাখি।আবার কথা হবে।ভাল থেক।
-তুমিও।
এই বলে ছেলেটা ফোন কেটে দিল।চন্দ্রার ঠিক কেমন কেমন জানি লাগতে লাগল,বুঝতে পারল না।বিভাগে মাস্টার্সে অর্ণব নামে কেউ আছে কিনা,খোঁজ নিতে হবে।কেমন জানি বুকটা ধুরু ধুরু করছে।ফেসবুকে ঢুকে।ছয় মাসের মত হল আইডি খুলেছে।প্রোফাইল পিকচার দিয়েছে টুকটুকে লাল শাড়ি পড়া একটি ছবি।লাল টিপ,চুলগুলো বেণী করা।মুচকি মুচকি হাসছে।প্রায় সবসময়ই সুযোগ পেলেয় ফেসবুকে বসে।বন্ধুর সংখ্যা ১২০।পরিচিত না হলে রিকোয়েস্ট একসেপ্টই করে না।ঢুকলেই দু-চারটা রিকোয়েস্ট থাকেই থাকে।বেশিরভাগই অচেনা।ছেলেদের বুঝি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে মেয়ের আইডি দেখলেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়।অনলাইন চ্যাটে আছে বারজন।
-ওই চাঁদ
ওর মামাতো বোন মাম্পি।কৃষি ভার্সিটিতে ভ্যাটেনারিতে পরে।
-দিদি কেমন আছ?
-ভাল।
-তুই?
-এইতো চলছে।পেইনের উপর আছি।পরীক্ষা সামনে।
-ও।
সাথে দুঃখ সূচক চিহ্ন পাঠিয়ে দেয়।
-যাইরে পড়তে হবে।বাই।
-বাই।
ছেলেগুলো নিয়ে যত ঝামেলা।মেয়ে চ্যাটে দেখলেই হাই বুঝি দিতেই হবে।তিন চারজন নক করেছে।মোবাইলে এত জনের সাথে চ্যাট করা বেশ ঝামেলার।রেসপন্স না করলে আবার কেমন দেখা যায়?নীলিমা কথা শেষ করে রুমে প্রবেশ করে।
-কি চাঁদ,কার সাথে ডেটিং মারা হচ্ছে?
-কার সাথে মারব ভাই,আমাদের তো আর কেউ নেই।
-এমন করে মিথ্যা কথা বলে না চাঁদ,ঠিক দেখেছি,হেসে হেসে কার সাথে যেন কথা বললি?
-ও,আমাদের বিভাগের এক বড় ভাই ফোন দিয়েছিল।
-তাহলে তো আজ ঠিক ধরেছি,চুপি চুপি এমন ঘোলা পানি কত দিন ধরে খাওয়া হচ্ছে?
-না রে,আজকেই প্রথম।
-তো চালিয়ে যাও।
-তোর কি খবর?
-এইতো একটার সাথে কেবল চালালাম।আর তিন চারটার সাথে ডিল করতে হবে।
-সবার সাথে চালিয়ে যেতে খারাপ লাগে না?
-খারাপ কিসের,খুব ভাল লাগে।ছেলেরা মেয়েদের কাছে এসে যে কতটা বলদ হয়ে যায়,কথা না বলে বুঝবি না।এদের বলদামি দেখতে খুব ভাল লাগে।
এরপর নীলিমা একটা বেনসন সিগারেট ধরায়।আগে খাওয়ার অভ্যাস ছিল না।ভার্সিটি উঠার পর অভ্যাসটা হয়েছে।ছেলেরা যদি খেতে পারে,মেয়েরাও খেতে পারবে,সেই জিত ধরেই খাওয়া।মিলা এসে দুই টান দেয়।এরপর দুইজনে মিলে বেশ টানাটানি করে চন্দ্রাকে সিগারেট খাওয়ার জন্য।চন্দ্রা কিছুতেই সিগারেট খাবে না।
মিলা বলে-একটা টান দিলে কি হয় চাঁদ?

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top