ভুতের গলির সেই ভূত কি ফিরে এলো???
পূর্ব প্রকাশের পর
আশফাক দোয়া ইউনুস পড়তে পড়তে ঘরে ঢুকল।ঘরের লাইট দেখি জ্বালানো হয়নি।লাইট জ্বেলে বারবার নীলুফার নাম ধরে ডেকে কোন সাড়া পেলনা। সে আজকে নীলুফার প্রিয় খাওয়ার নিয়ে ঢুকেছে।কোন গিফট কেনার সময় পায়নি।কেননা দেরী দেখলে নীলুফা আরও সন্দেহ করত।তাড়াহড়াতে সামনের দোকান থেকে নীলুফার পছন্দমত কড়াই চিকেন শিক কাবাব আর পরোটা কিনল।আর ফুলের দোকান থেকে কিনল তোড়া।
বেড রুমে ঢুকে বুঝল হাওয়া বেশ শীতল।অভিমানিনী বউ দেওয়ালের দিকে মুখ করে শুয়ে আছে।ঝপ করে বিছানায় বউ এর পাশে শুয়ে পড়ল বিছানা কাপিয়ে।
কি ব্যাপার সোনামনি রান্না বান্না করনি ভীষন হ্যাংরি হয়ে আছি।খুব ক্যাজুয়াল ভাবে কথা বলার চেষ্টা করল যেন কিছুই হয়নি।যদিও মনে মনে আল্লাহ্ র নাম নিচ্ছে শতবার ।
তারপরও নীলুফার কোন সাড়া না পাওয়াতে আয়নায় তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে ।বিছানার সামনে আয়না সেট করেছে আশফাক তার ফাজলামীর অংশ হিসাবে যাতে রাতের অন্তরঙ্গ মূহূর্ত গুলিকে আয়নায় দেখতে পায়।নীলুফা রাগ করে বকা দেয় লাইট নিভাতে চায়।ফাজিল আশফাক নীলুফার কথা কিছুতে কানে তোলেনা।
বউ এর পিঠে আঙ্গুলের টোকা বিয়ে দেখল দেখল কতখানি গরম।না গরম না অনেক বেশী ঠান্ডা ।কোন রাগ নাই ঝাঝ নাই।অবশেষে নীলুফাকে খেপানোর চেষ্টা করল। আহারে আমার বউটা এত হিংসুটে কেন?কেন যে কখন ও বোঝার চেষ্টা করলানা আমার সুন্দরী বউটা।
দুনিয়াদ্বারীর দূঃখ দূর্দশা থেকে
তোমার কোন ফুরসত এখন নেই
সবার সঙ্গে তোমার প্রীতি-বন্ধন।
শুধু আমি বাদ
আমি যে তোমার
এটাই তো আমার তরফে
শেষকথা।
তুমি ও যে আমার হবে?
এমনটা আশা করি কিসের জোরে?
আমাকে ভূলে যাওয়ার হক
তোমার আছে
আলবৎ
জানি।
জানি তা।
আমার কথা স্বতন্ত্র
আমি যে সত্যি তোমাকে ভালবাসি।(মূল কবিতার লাইনে আছে ভালবেসেছিলাম)
এক পারসী কবিতা।
আশফাক একটু পরিবর্তন করে বলল।
নীলুফা এতক্ষনে মুখ ফিরিয়ে তাকাল অবাক হয়ে।
এই কবিতা তোমার বানানো।আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল।
আশফাক হাসল মজা করে ।কথা ঘুরিয়ে বলল হ্যা তোমার জন্য পৃথিবীর যত সুন্দর জিনিস সব তোমার জন্য।
নীলুফা খুব স্বাভাবিক আর হাসিখুশী হয়ে গেল অল্প সময়ে।
না আল্লাহ্ র কালাম অনেক কাজের।দোয়া ইউনুস পড়াতে এই যাত্রা ইউনুস (আঃ)এর মত বিপদ থেকে পরিত্রান পেল।মনে মনে ভাবছে সে। আর কোনদিন কোন মেয়েদের দিকে মুখ তুলে ও তাকাবেনা। তার বউ ছাড়া অন্য মেয়েদের থেকে দশ হাত দুরে থাকব আল্লাহ এ যাত্রায় যখন দয়া করছ আমারে।
নীলুফা পাকঘরে ঘুনঘুন করে গান গাচ্ছে আর কিছু সম্ভবত রান্না করছে।
আশফাক ওয়াশ রুমে ঢুকল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।
সেল ফোনটা বেজে উঠল আশফাকের।এই সময়ে কার ফোন ভাবতে ভাবতে নীলুফা ধরল।
কিছুক্ষনের রহস্যময় নীরবতার পর ফোনের অপরপাশে থেকে অপরিচিত নারী কন্ঠের আওয়াজ পেল।
এটা তো আশফাক সাহেবের ফোন তাই না? ফোনের ওপাশের মেয়েটি জিজ্ঞাসা করে।
জ্বী নীলুফার গম্ভীর উত্তর।এই প্রথম রাত্রিতে আশফাককে কোন মেয়ে ফোনে চাইল।তার মনের কোণে মেঘ জমল।একটু আগের হাসিখুশী ভাব মন থেকে আবার চলে গেল।
মেয়েটি বলল নাথিং সিরিয়াস উনি আমাকে এই ফোন নাম্বার দিলেন তো জাষ্ট চেক করছি আর ওনাকে থ্যাংক্স জানানোর জন্য ফোন দেওয়া।
থ্যাংকস কেন নীলুফা জিজ্ঞাসা করতে বলল মেয়েটি বলল উনি আমাকে যথেষ্ট হেল্প করেছেন গাড়ী ঠিক করতে।
আপনার নামটা কে আপনি জিজ্ঞাসা করছে মেয়েটি। নীলুফা তা শুনে শুনলনা।মন খরাপ করে সে ফোনের লাইন কেটে দিল।
আশফাক বাথরুমে গলা ফাটিয়ে গান গাচ্ছে আর ভাবছে যেহেতু কালকে শুক্রবার কাজ নাই আজকে সারারাত প্রানভরে নীলুফার সাথে গল্প করবে ঘুমাবেনা সেই বিয়ের প্রথম দিকের মত। এই ভাবনায় আনন্দে ফুরফুর হয়ে সে গলা ছেড়ে গান ধরল।
নীলুফা বেবী কামঅন ওয়াশ রুম থেকে ডাকছে আশফাক আমার পিঠে সাবান লাগিয়ে দাও।
নীলুফা শুনে শুনলনা মুড অফ করে বিছানায় বসে রইল।চুলায় তরকারী পুড়ে কয়লা হয়ে যাচ্ছে তার কোন খবর নাই।
অনেকক্ষন নীলুফার খবর না পেয়ে আশফাক ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসল টাওয়েল পড়ে ।দৌড়ে পাকঘরে গিয়ে চুলা নেভালো।পাতিলে আগুন ধরে গিয়েছিল।উত্তেজনায় আশফাকের চিৎকার চলে আসল।
হলি কাউ তুমি এখানে আর চুলায় আগুন ধরে গেছে। কোন জগতে থাক তুমি?
নীলুফা সমান তালে চিৎকার করে জবাব দেয় তুমি কোন জগতে থাক কে জানে ।তোমার গার্লফ্রেন্ড রা এত রাতে তোমাকে ফোন করে? তারা কি জানেনা যে তুমি ম্যারেড?
গড হতাশায় আশফাক উচ্চারন করতে বাধ্য হল।গার্লফ্রেন্ড মানি গার্লফ্রেন্ড থাকলে কি তোনার মত ঝগড়াটে ছোটমনের মহিলার সাথে পড়ে থাকি উত্তেজনা রাগ ক্ষুধা সব মিলিয়ে তার মুখ থেকে বাজে কথা বের হয়ে আসল।
নীলুফা বেশ শব্দ করে কাদতে শুরু করল। হতাশভাবে বিছানায় বসে আশফাক ভাবল
কেন যে বিয়ে করলাম।
ফোন হাতে নিয়ে চেক করে বুঝল কি হয়েছে।
বউ এর মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে দিল নরম সুরে বলল সরি তোমার সাথে চিৎকার করার জন্য।আমি অনেক টায়ার্ড আর হাংরি।তুমি আমাকে এত ভূল বোঝ কেন সোনা। এই ভদ্রমহিলাকে আজকে মিট করছি।তার গাড়ী নষ্ট ছিল ঠিক করতে হেল্প করছি।ওই সময়ে তুমি আমাকে রাস্তায় দেখছ সোনা।আমি তোমাকে পিছনে পিছনে কত ডাকলাম ।তুমি যদি ওই সময়ে আমার কাছে আসতে গাড়ীতে একসঙ্গে যেতাম তোমার ভূল ভেঙ্গে যেত বলে স্ত্রীকে কাধ চাপড়ে শান্ত করার চেষ্টা করল।
এতক্ষনে নীলুফা লজ্জা পেল।নিজের ভূল বুঝতে পেরে সচেতন হয়ে হাসবেন্ডের বুকে মাথা রেখে বলল সরি।
দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল।
দুজনে একসঙ্গে কিচেনে চুলায় রান্না চড়িয়ে দিল।এখন শর্টকাট রান্না। খিচুড়ি একচুলায় আশফাক বসিয়ে দিল আরেকচুলায় গরুর মাংস বসিয়ে দিল নীলুফা।কেননা আগের খাওয়া সব পোড়া।
মনে মনে আজকে আবার প্রতিজ্ঞা করল নীলুফা আর কখন ও কোন ব্যাপারে স্বামীকে চার্জ করবেনা।
দুজন এখন দুজনের ছেলেমানুষী মনে করে মনে মনে হাসছে। আবার ভাবছে এই ছেলেমানুষী আছে বলে তো জীবনটা মধুময় মনে হয়।না হলে কি আমরা একঘেয়েমীতে ভূগতামনা জীবনে।এই ভুল বোঝাবোঝির কারনে দুজনের কাছে দুজনের ইম্পর্টেন্স ও জানা হল।জীবনটাতো আসলে এরকমই।
(পরবর্তীতে)