Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

অনেক কথা২৩

: | : ২৭/১১/২০১৩

আমিরাতে দুই হাজার বছর–

আইনের পর আইন–ভিনদেশিদের জন্যে প্রতিদিন একটার চেয়ে একটা কঠিন করে করে নতুন নতুন আইন জারি করা হচ্ছে! এবং এ আইনের বেড়িতে আবদ্ধ করতে করতে করতে ভিনদেশিদের অবস্থিতি এমন দুর্বিষহ করে তুলেছে জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ফাঁসির কারাবাস অনুভব করতে হচ্ছে! কোনো সুযোগসুবিধা গ্লাফদেশের প্রবাসীদের আছে বলে মনে হচ্ছে না। চার দিকে দেখলে শূন্য ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবু প্রবসীরা আশার  মশাল জ্বালিয়ে পথ চলছে। এ মশাল যেকোনো সময় খপ করে নিবে যেতে পারে, তার গ্যারান্টি আছে। এটা বড়ই দুঃখের কথা এবং সত্যকথাও বটে, মানুষ পৃথিবীতে আসে সুনাম অর্জনের জন্যে, যে সুনাম অর্জন করতে পারে না সে মানুষ হতে পারে না। হোকবা একটি দেশ। আমরা বহুজনের কথা শুনেছি এবং দেখেছি, শেষসম্বল ভিটেবাড়ি বিক্রি করে গুপ্তধনের আশায় উপসাগর পাড়ি দিয়েছে; এসব আশাবাদীজনদের গুপ্তধনপাওয়া ত দূরের কথা, অর্জিত ধনও পাওয়া হয় না! অনেকে অনেক জায়গায় চাকরি করে প্রতারিতও হচ্ছে অনেক। মাসের পর মাস শ্রম দিয়েও কানাকড়ি পাচ্ছে না! অনেকে কোম্পানির জন্যে মামলা ঠুকেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমন লোকেরা বাধ্য হয়ে পালাতে হচ্ছে, অন্যত্র কাজ করতে হচ্ছে এবং বাধ্য হয়ে অবৈধ হতে হচ্ছে।

 

এবার একটা সত্যকথা বলি, আমরা হুজুকে পথ চলি। নাটকে চরিত্রের ফাঁসি হলে আন্দোলন করতে পারি! কিন্তু বহুতল ভবন থেকে ছিটকে পড়ে শ্রমিক মরলে তার জন্যে ওহু শব্দও করতে পারি না! কারণ, সে ত বেনামি একজন সামান্য শ্রমিক মাত্র। আমার গরজ কি তার জন্যে আফসোস করা। ও ত আমার কেউ নয়, না আত্মীয়–না ভাইবেরাদর, না কোনো আপনজন–কেউ ত নয় আমার। তা হলে, আমি কেন বেনামি কারও জন্যে দরদ দেখাব! এখানে মনুষ্যত্বের খর্বতা। এখানে মানুষ-অমানুষের তফাৎ। বিখ্যাত কেউ হুঁ করলে ভুঁ হয়ে যায়, গরিব ডুবে মরলেও চোখ তুলে কেউ না চায়! এ পৃথিবী কি তা হলে গরিবদের বাসস্থান নয়? গরিব ডুবে মরে ত মরুক তাতে আমার কি, আমি তেতলায় আরামের ঘুমে ঘুমাতে পারলেই হয়! এ পৃথিবীতে বোধহয় তারাই মানুষ হতে পারে, যারা পিছনে পদাঘাত করে সামনে দাঁড়াতে পারে হাতজোড়ে।

 

এই ত সেদিনের কথা, বাংলাদেশ যখন জলোচ্ছ্বাসে ভাসছে; এদিকে আমিরাত ঘোষণা করল, অবৈধ প্রবাসীদেরকে দেশফেরত হওয়ার সাধারণ ক্ষমা। বাংলাদেশ প্লাবনে সমুদ্র হোক অথবা কাঠফাটা রোদে সাহারা মরুভূমি, তাতে তাদের কিছু যায়-আসে না। আর তাদের দরকারইবা কী, তারা ত বাংলাদেশের বন্ধুদেশও নয় এবং প্রতিবেশি দেশও নয়। তা হলে? কোন্‌‌ দুঃখে তাদের মাথাব্যথা হবে! আজকাল পাড়াপ্রতিবেশিও পাড়াপ্রতিবেশির জন্যে দরদ দেখায় না, সেখানে সুদূর একটি দেশ আরেকটি দেশের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে কোন্‌‌ আশায়। হাঁ তবে মানবতার কথা বলা যায়, দুনিয়ার সকল মানুষ ভাই-ভাই বলা যেতে পারে। কিন্তু তা দিয়ে নিষ্ফল কান্না চলে, আশা করা চলে না। তবে একটি দেশ যতই গরিব হোক কখনো আরেকটি দেশের মুখাপেক্ষী নয়। তার দেশে নাইবা থাকুক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিল্ডিংবাড়ি এবং বিলাসবহুল মোটরগাড়ি। তবু দেশটি ধন্য নিজের ক্ষুদ্রতায়–দীনতায়। ধুলাবালি কাদামাটি পাতার ঘরে যেই সুখ প্রাচুর্যের বিলাসভূমিতে বোধহয় সেই সুখ নেই। কারণ শৌখিনতায় দুঃখ না থাকলেও সুখের যে বড়বেশি অধিকার সেটা বলা যায় না। কথায় আছে, বড়বেশি সুখ কপালে সয় না। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই না, সুখের মোহে যারা অতীতের দুঃখের কথা ভুলে যায় তারাই একদিন বড়বেশি দুঃখ ভোগ করে। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সুখের সঙ্গে দুঃখের বড়বেশি সখ্যতা। তাই অসহায়ের কথা বিবেচনা করা সুখীজনদের কর্তব্য। পৃথিবীর যেসকল দারিদ্র্যদেশ থেকে দরিদ্র শ্রমিকেরা এসে এসব মরুভুমিকে আজ স্বপ্নভূমিতে পরিণত করছে, তারা কতটুকু স্বপ্নোত্তীর্ণ হতে পারছে? বিনিময়ে তারা যে অর্থ পাচ্ছে না এমন কথা নয়, অর্থ আর অধিকারের মধ্যে অনেক পার্থক্য। যেমন পার্থক্য দয়া আর সহানুভূতি মধ্যে। ভাবলে অবাক লাগে, যারা রক্ত পানি করে–মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এসব দেশকে শ্রম দিয়ে, মেহনত দিয়ে–রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, টওয়ার-ইমারত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বড় বড় উচ্চভবন নির্মাণ করে গেছে এবং করে যাচ্ছে তারা কী পেয়েছে বা পাচ্ছে, দুঃখবঞ্চনা হাহাকার ছাড়া? কী অধিকার মিলেছে তাদের? তুচ্ছ অপরাধে ফাঁসির সমান মৃত্যুরায়–আজীবন নিষেধাজ্ঞার একমাত্র লালসিল ছাড়া! কী পেয়েছে? সামান্য অর্থ, যা দিয়ে না তার ভাল জীবন গঠন করতে পারছে, না তার পরিবারের। গুলী মেরে বা গলাটিপে হত্যা করাকে শুধু হত্যা বলা হয় না, চক্রান্তে ফেলে আত্মহত্যা করাকেও হত্যা বলা হয়।

দ্বিতীয়পর্ব
চলবে…

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top