Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

নির্বাচিতা একজন

: | : ২৮/১১/২০১৩

নির্বাচিতা একজন
আমার প্রিয় উপজেলাবাসী ভাইবোনেরা ; আপনারা আমার সালাম নিবেন । আমি আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে নির্বাচন করতে যাচ্ছি । আপনারা ভাববেন , কেন এবং আমার স্বার্থ-ই বা কি ! এ-সমস্ত বলার জন্য-ই এই জনসভা । আপনাদের এই বাজার-স্টেশন চত্ত্বরে আমি এটা বলে যেতে চাই ।
আমাকে আপনাদের নতুন মনে হতে পারে , তবে আমি এই উপজেলার একজন মানূষ , এখানে আমার জন্ম । এখানে জন্ম নেয়া হিসাবে এই উপজেলার জন্য কিছু করা আমি আমার দায়িত্ব মনে করি । কেন কিছু করা দায়িত্ব মনে করি , কারন এই উপজেলা ভালো চলেনা এবং অধিকাংশ সময় ভালো চলেনি । এখানে অন্য অধিকাংশ উপজেলার মত সুশাসন চলেনি । এখানে শক্তির মহড়া চলেছে , এখানে সুবিধাবাদী গোষ্টীর শাসন ও গরীব মানূষের উপর শোষন চলেছে । তাঁদের নামে গমের বরাদ্দ এসেছে , মেরে খেয়েছে ক্ষমতাশালীরা ; দরিদ্ররা কিছু পায়নি । দরিদ্র-এলাকা বঞ্চিত হয়ে প্রভাবশালীদের এলাকা সুফল ভোগ করেছে । এলাকার প্রয়োজন হিসাবে এখানে চাল/গম অথবা টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি । বরং যে রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় থাকে , সেই দলের প্রভাবশালীদের কথামত সে-এলাকায় এসব বরাদ্দ হয়েছে । ফলে সুষম উন্নয়ন বলতে যা বোঝায় , তা এখানে কখনই হয়নি ।
সবসময় দেখা গেছে যে , এসব কাজে অফিসের কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ দিয়ে খারাপ কাজ করা হয় , অনেক সময় কাজই হয়না । কর্মকর্তারাও অনেক ক্ষেত্রে কাজ করতে নিষেধ করে ঘুষ দিতে বাধ্য করে প্রকল্প-সভাপতিকে । আবার দেখা যায় , প্রকল্পের কোন অস্তিত্ব নাই , অথচ প্রকল্পে অর্থ বা গম/চাল বরাদ্দ হয়ে তা উত্তোলন-ও হয়ে গেছে । এরকম উদাহরন একটা / দুটা নয় , ভূরিভূরি । এখানে সাধারন দরিদ্র মানূষগন বঞ্চিত হন , অথচ তাঁদের জন্যই বরাদ্দগুলো আসে ।
প্রিয় ভাই-বোনেরা , এখানে টেন্ডারবাজীর কথা আমরা সেই ১০/১২ বছর থেকে শুনে আসছি । টেন্ডারবাজীর কারনে সাধারন কন্ট্রাক্টরগনের অধিকাংশই কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন । টেন্ডারবাজীর কারনে নিয়ম-নীতির বরখেলাফ হয় এবং এতে কন্ট্রাক্টরগনের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি গোষ্টী লাভবান হন , বঞ্চিত থাকেন অধিকাংশ কন্ট্রাক্টর সাহেবগন । কেন এটা হবে , আমরা জানতে চাই । ইঞ্জিনিয়ারগন-ও এতে জড়িত থাকেন । আসলে তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া টেন্ডারবাজী করা অসম্ভব । তাঁরা করে থাকেন , ভয়েও হতে পারে , লোভেও হতে পারে । আমরা তাঁদের ভয়ের জায়গাটা দূর করতে চাই , অর্থাৎ তাঁরা যেন ভয়ের কারনে টেন্ডারবাজীতে সহযোগিতা করতে বাধ্য না হন , সে-ব্যাবস্থাটা আমরা করতে চাই । আমরা তাঁদের লোভের জায়গাটা-ও দূর করব , অর্থাৎ তাঁরা যেন ঘুষের বিনিময়ে এই টেন্ডারবাজীতে সহযোগিতা না করেন , সেজন্য তাদেরকে বাধ্য করতে চাই । এভাবে আমরা স্বচ্ছভাবে কাজ করে নিয়ম-নীতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং এভাবে প্রত্যেকটা অবকাঠামো অর্থাৎ ব্রীজ , কালভার্ট , রাস্তা-ঘাট সবকিছুর গুনগত মান ভালো করতে চাই , যাতে করে নির্মিত কাজগুলি সুন্দর হয় , শক্ত হয় , মজবুত হয় ।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা , শিরদাঁডা টান করে আবার বলতে শুরু করেন ইয়াসমিন , এই কাজগুলি-ই পরিষদের মূল কাজ এবং এগুলির সাথে কৃষি , মৎস্যসহ আরো যে সেক্টরগুলির কাজ রয়েছে , সেগুলিতেও স্বচ্ছতা , নায্যতা , সততা নিশ্চিত করা হবে বলে আমি প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলাম এবং আমাকে আপনারা নির্বাচিত করলে নির্ভিকভাবে এই প্রতিশ্রুতিগুলি পালন করতে আমি বদ্ধপরিকর থাকবো । নিশ্চিত থাকবেন কেউ অথবা কোন শক্তি আমাকে কোনভাবে টলাতে পারবেনা ।
ইয়াসমিন হক-এর এই ভাষনের পর আসলে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনের চিত্র পালটে যায় সারা উপজেলায় । ইয়াসমিন স্বামীর চাকুরীস্থল ঢাকায় থাকলেও মাঝে মাঝে বাড়ীতে আসেন । এখানে তাঁর মা ও বড় বোন থাকতেন । বর্তমানে তাঁদের পৈতৃক বাড়িটি থাকলেও তাঁর মা মারা গেছেন বছর দুই হয় । বড় বোনও চলে গেছেন ঢাকায় । তবুও ইয়াসমিন নাড়ীর টানে সময় সময় ছুটে আসেন এই শহরে ।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের অফিস , বাসা সবসময় সরগরম থাকে । আলোচনার শীর্ষে থাকেন ইয়াসমিন । মিটিংটি ডাকা হয়েছিলো প্রার্থী ইয়াসমিনের নামে । মিটিং শুরু হল অল্প কিছু মানূষ নিয়ে , ধীরে ধীরে মিটিংয়ে লোকসমাগম হতে হতে বিশালাকার সমাগমে পরিনত হয় মিটিংটি । আর মানূষও অত্যন্ত মনযোগ সহকারে ইয়াসমিনের প্রতিটি কথা শুনেছে এবং ভোট দিক বা না দিক , তার কথাগুলি মানূষ কিন্তু শুনেছে আকৃষ্ট হয়ে । দুটি দলের প্রার্থীদের ভয়ের জায়গা এটাই ।
ইয়াসমিনের এভাবে উত্থানকে অন্য প্রার্থীগন ভীতির চোখে দেখা শুরু করে দিয়েছেন । কারন গ্রামে-গঞ্জে সবখানেই ছুটে যাচ্ছেন তিনি এবং যেখানেই যাচ্ছেন মানূষের যেন সাড়া পড়ে যাচ্ছে ; বিশেষ করে মহিলারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন , তার গায়ে হাত তাঁরা এমনভাবে দিচ্ছেন যেন একান্তই নির্ভরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি । অথচ ইয়াসমিন কথা বলছেন খুব-ই কম , শুধু শুনে যাচ্ছেন অভিযোগ এবং তার সম্পর্কে মানূষ যা বলছেন তা । গ্রাম অথবা ইউনিয়ন-ভিত্তিক মিটিংগুলিতে তিনি যা বলার বলে দিয়েছেন , যেন তাই আর বেশী কিছু তার বলার নাই । এতো বড় উপজেলা প্রশাসন তিনি সামলাতে পারবেন কি-না , সময় সময় যদি কেউ এ-ধরনের কথা বলেন , তখন তিনি তাদেরকে বলেন , দেখেন যত বড় প্রশাসন-ই হোক না কেন , আপনার বিবেক যদি স্বচ্ছ থাকে এবং নায্যতা , ন্যায়পরায়নতা যদি আপনার মনে-প্রানে ধারন করা অবস্থায় থাকে , তবে সাহস আপনার এমনিতেই এসে যাবে এবং তাতেই সব হয়ে যাবে । একথা শুধু এই ছোট্ট প্রশাসনের ক্ষেত্রে নয় , বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও যদি এসব ধারন করেন , তবে তিনিও সারাদেশব্যপী , এককথায় যাকে বলে সুশাসন , তা নিশ্চিত করতে পারবেন ।
আচ্ছা , এতো টেন্ডারবাজ , গম/চাল মেরে দেওয়া , এসমস্ত বন্দ হয়ে গেলে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে , তারা নিশ্চয় বসে থাকবেনা । তাদের নিয়ে কি ভাবনা আপনার ?
তারা নিয়ম-নীতি মতে কাজ করতে দিবেন বলে আমার আশা । তবে তারা যদি তা করতে না দেন , সাধারন মানূষের বরাদ্দে কেউ জোর করে ভাগ বসাতে যান , তবে সাধারন মানূষই বাধা দিবে , প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াবে । আর টেন্ডারবাজীর ক্ষেত্রে সাধারন ঠিকাদারবৃন্দ রুখে দাঁড়াবেন । তারা যাতে প্রয়োজনে রুখে দাড়াতে পারেন , সে-ব্যাবস্থাটাই করে দেওয়া হবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে । আর সারা উপজেলাব্যপী আমাদের অনেক স্কুল-কলেজ আছে । এখানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছে , যারা প্রকাশ্যে না হলেও মনে মনে এমনই একটি প্রশাসন চায় । আমাদের কাজ হল শুধু তাদের এই চাওয়াটাকে এগিয়ে নেওয়া । তারা এগিয়ে এলে আপনারা যাদের নিয়ে শংকা করছেন , তারা কোথায় যাবে , ভেবে দেখবেন । আর ভয় ! অসাধারন এক দ্যুতি খেলে যায় তার চোখে ; বলেন , কয়দিন বাঁচি ভাই আমরা ? শোষন-বঞ্চনার অবসানের এই সংগ্রামে আপনারা থাকলে এই শক্তি এমনই জমাট বেঁধে যাবে যে , বন্ধুকের গুলি তাতে লাগলেও , তা না বিঁধে উষ্টে ফিরে যাবে বিপরীতে । জনতার শক্তি অসীম এবং এই অসীম শক্তির কাছে অপশক্তি অবশ্যই ব্যর্থ হবে ।
এভাবেই প্রচারনা এগিয়ে চলে ইয়াসমিনের । অন্য প্রার্থীরাও প্রচারের তুংগে । তাদের প্রচার-প্রপাগন্ডার মূল বিষয় – নির্বাচনী ওয়াদা এবং অন্য প্রার্থীদের , বিশেষ করে ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে বলা । কারন ইতিমধ্যে এই মহিলার বিরাট একটা ভাব-মূর্তি তৈরী হয়ে গেছে , যা তাদের অবশ্যই দুশ্চিন্তার বিষয় । কোন প্রার্থীর বিপক্ষে বলেননা শুধু ইয়াসমিন । দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে শুধু বলে যান নির্বাচিত হলে তার করনীয় ।
অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ হয়ে নির্বাচনের দিন আসে ।মানূষ ভোট দেন , প্রার্থীগনও নিজ নিজ ভোট দেন , ইয়াসমিনও দেন তার দু’একজন আত্মীয়-সহকারে । বেশীরভাগ সময়ই তাকে পরিবেষ্টিত করে রাখেন ইতিমধ্যে পরিগণিত হয়ে যাওয়া তাঁর অসংখ্য ভক্তকূল , মহিলারা তাঁকে দেখলেই গায়ে-মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দেন যেন তিনি তাঁদের অনেক আপনজন ।
আজ তাঁর অভিষেক । বাড়ীর সামনে মানূষের ঢল । সামনে , তার কাছাকাছি থাকার প্রতিযোগিতা চলছে সকাল থেকেই । ছোটখাটো টিনের বাড়ীটা থেকে সাধারন একটা শাড়ী পরা তিনি বের হয়ে আসলেন , যাবেন প্রশাসনিক ভবনটিতে , যেখানে মানূষ পরম নির্র্ভরতায় তাঁকে প্রবেশাধিকার দিয়েছেন । গনমানূষের প্রতি শ্রদ্ধায় এবং কর্তব্যে অবিচলিত থাকার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলেছেন তিনি , পেছনে হাজারো মানূষ ।
——————————– -সমাপ্ত————

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top