একটি ক্লাসের গল্প
ম্যাডাম ক্লাস নিচ্ছেন।ম্যাডামের নাম যেন কী,মনে পড়ছে না।হয়তো হঠাৎ করে মনে পড়বে-অমুক ম্যাডাম।সামনের সারিতে মেয়েদের অবস্থান বেশি-মাঝে মাঝে দু-একজন ছেলে আছে।আর পেছনের সারিতে সবই ছেলে-আমিও তাদের মধ্যে আছি।ক্লাস একেবারে নীরব-ম্যাডামের কথা ছাড়া কোনও কথা হচ্ছে না।ভার্সিটির ৩য় বর্ষে উঠেছে বলে কথা-ম্যাচুরিটির ব্যাপার হয়তো একটা আছে।আমরা যে ম্যাডামের কথা শুনছি,তা না।আমার পাশের জন রাহুল-বসে ছবি আকছে।কোন এক মেয়ের ছবি।শুনেছি ওর এলাকার এক মেয়ের সাথে ভাব আছে-হয়তোবা তারই।প্রেম পর্যন্ত গেছে কিনা-তা জানা যায় নি।বারবার বলেছে-সময় হলে জানবে গুরু।
আমি ওর খাতা টেনে আনলাম-ও বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে।আমি ছবির নিচে লিখলাম-
সুরঞ্জনা ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি
বলো নাকো কথা ওই যুবকের সাথে
ফিরে এসে সুরঞ্জনা নক্ষত্রের আগুন ভরা রাতে।
দেখে রাহুল হাসল।কিছু বলল না।আমি ওর খাতা দিয়ে দিলাম।রাহুলের পাশে
যে বসেছে-ওর নাম রাতুল। মায়াবী মায়াবী চেহারা-সুদর্শন বলা যায়।চোখে চশমা পড়ে।যদিও চোখে কোনও সমস্যা নেই।এটি নাকি তার গ্লামার বাড়ায়।আমার কাছে কখনো তা মনে হয় না।চশমা ছাড়াই ওকে আমার কাছে হ্যান্ডসাম লাগে।সৌন্দর্যবোধ বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম থাকবে-এটাই স্বাভাবিক।আমার সামনে ডেস্কে যে জন বসে আছে-লুইস হিসেবে তার খ্যাতি আছি।মেয়েদের সে সহজেই পটাতে পারে।একসাথে তিন চারটা মেয়ের সাথে প্রেম করে।আর রাস্তায় সুন্দর মেয়ে দেখলেই বলে উঠে-ইস,এই মেয়েকে যদি পটাতে পারতাম!ক্লাসের মেয়েদের পর্যন্ত ছাড়ে না।যখন জানাজানি হল,ক্লাসের সেরা তিন সুন্দরী মেয়ের সাথে করে-তখন থেকেই সব মেয়েরা তার সাথে কথা বলা বাদ দিয়ে দিয়েছে।একটি মেয়ে নাকি থাপ্পড়ও মেরেছে,শুনা কথা।তারপরও তার মেয়ে পটানোর রোগ ভাল হল না।আজকে একটু ভিন্নতা দেখতে পাচ্ছি।একটি মেয়ে শাড়ি পরে এসেছে।অনুষ্ঠান ছাড়া মেয়েদের শাড়ি পড়তে তেমন দেখা যায় না।বেশ ভাল দেখা যাচ্ছে তাকে।আগে যখন দেখেছি-মেয়েটাকে কিছুটা ছেলে ছেলে মনে হয়েছে-মানে হাফ মেইল ।পোশাক যে মানুষকে এত চেঞ্জ করতে পারে,তা জানতাম না।আর কিছু কিছু ছেলে আছে,অধিকাংশ সময়-তিন চারটা মেয়ের সাথে ঘুরে।মাঝে মাঝে বন্ধুদের বলতে শুনেছি-পুরো হাফ লেডিস হয়ে গেছে রে।দু-একজনকে দেখা যায়,কারও সাথে তেমন কথাবার্তা বলে না।সবসময় মুখ ভার করে বসে থাকে।পড়াশুনায় যে ভাল,তা না।এমন সময় ম্যাডাম জিজ্ঞেস করলেন-এই,তুমি দাড়াও।
আমি মনে মনে বললাম-খাইছে আমারে।
-সেল মেডিয়েট ইমুনো সিস্টেম কী?
আমিতো পুরোপুরি হতবাক-হা করে তাকিয়ে আছি ম্যামের দিকে।ম্যাম কিছুক্ষণ পরে বললেন-বলতো কোর্স নাম্বার কত?
তাওতো জানি না।অনুমান করে বললাম-৩০৬।
শুনে সবাই সেকি হাসি।যেন এটা বিশাল হাসির কথা।ম্যামতো রাগে অস্থির-রাগে গাল দুটি লাল টকটকে হয়ে গেছে।সুন্দরী কোন মেয়ে রাগলে এওমন হয়-এই প্রথম দেখলাম।আমি ম্যামকে আরও রাগিয়ে দেয়ার জন্য বললাম-আইনস্টাইন একদিন নিজের রুম হতে বের হয়ে ঘুরতে বের হলেব।কিন্তু আসার সময় তার নিজের রুম কোনটা ভুলে গেলেন।
-চুপ।
আমি কথা বলা বন্ধ করলাম।ম্যাম চেয়ারে বসে পড়লেন,বললেন-সব ব্যাপারে এত উদাসীন হলে হয় না।আর কিছু বললেন না।নাম ডেকে চলে গেলেন।ম্যাম যাওয়ার পর ক্লাসে তুমুল হইচই হচ্ছে।মুনিটর বারবার ধমুক দিচ্ছে।তবুও ঠিক হচ্ছে না।হতাশ মুনিটর কান চেপে বসে পড়ে।কয়েকজন বন্ধু ম্যামকে রাগিয়ে দেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাল।তবুও কেন জানি,কিছুটা খারাপ লাগছিল।কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ক্লাস শুরু হবে।সেই ক্লাসে কি ঘটবে-কে জানে?হয়তো অন্য কোনও নতুন আনন্দ বা একঘেয়েমি শুধু ক্লাস ।