জাগ্রত জনতা
‘জাগ্রত জনতা’ পরিদর্শনে
অফিসের কাজের কারনে সারাদিন যেতে পারিনি ওখানে । কিন্তু যেতে আমি পারিনি বলে ক্ষমাপ্রার্থী । সকালে সংবাদটা পড়েছিলাম যে ডাঃ জাকিয়া নামের একজন মানুষ দেশবাসীকে ডেকে চলেছেন চলমান সহিংসতা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে । গত তিনদিন ধরে তিনি অনশন করে চলেছেন এজন্য । ‘জাগ্রত জনতা’ নাম নিয়ে সেই ব্যানারে তিনি এটা করছেন । খবরে প্রকাশ, তিনি ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিট পরিদর্শন করে মনে করেছেন যে, এভাবে হবেনা এবং সেকারনে মানবিকতার তাড়নায় তিনি এটা শুরু করেছেন । আমার মনে হয়েছিল, শুশীল সমাজের যেটা করার কথা, তা এই মানুষটি মহিলা এবং সম্পুর্ন একা হওয়া সত্ত্বেও তিনি তা করছেন । সন্মিলিত শুশীল সমাজের উদ্যোগটা একা নিয়েছেন ইনি । দুই দলের নেত্রীগনকে তিনি ‘মা’ বলে সন্বোধন করে বলছেন, আপনারা থামুন এবং সহিংসতা থেকে আমাদের মূক্তি দিন । এটা ভেবে আমার সংকোচ হচ্ছিল যে, আমি তার সহযাত্রী হতে পারছিনা ।
যাহোক সন্ধায় গেলাম, দেখলাম জাতীয় জাদুঘরের সামনে একটা সামিয়ানা পাতা । ওখানে ফুটপাতের উপর কয়েকজন ছেলে-মেয়ে বসে আছেন আর কথা বলে যাচ্ছেন ডাঃ জাকিয়া । অন্যতম যা – দেশব্যপী ককটেল হামলা, আগুনে মানুষ পুড়িয়ে মারা এবং যানবাহনে আগুন দেয়াসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানোর জন্য মানুষকে সংগঠিত হতে হবে । তিনি একটা ব্যপক জনমত সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, যে জনমত প্রতিবাদী হয়ে উঠবে এবং দুই পক্ষকেই বাধ্য করবে সহিংসতা বন্দ করতে । একটু দুঃখই লাগলো আমার, লোক সেরকম হয়নি বলে । এটার কারন আমি ভেবে পেলামনা, তবে এজন্য আমার সংকোচ হল । মনে হল যেন আমরা ব্যর্থ হচ্ছি, আমরা সেরকমভাবে সমবেত হচ্ছিনা । এখানে শুশীল সমাজের, কমপক্ষে দলীয়করনের পরও শুশীল সমাজে কিছু সন্দেহাতীতভাবে নিরপেক্ষ জ্ঞানীগুনীজন আছেন, যাঁদের উপস্থিতি ‘জাগ্রত জনতা’-র আকুল এই আহ্বানকে পরিনতির দিকে নিয়ে যেতে পারত । দেশব্যপী অবরোধও হয়ত একটা বড় কারন, তবে শুশীল সমাজের অনুপস্থিতি আরো হয়তো বড় কারন । যদি কোন কারন থেকে থাকে এর স্বপক্ষে তাঁদের, তবে তা তাঁরা বলবেন হয়ত ভবিষ্যতে । তবে জনমত সৃষ্টি হলে তা আগামীতে দেশে আক্ষরিক অর্থে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে ।
লোকজন এবং সাংবাদিকের উপস্থিতি কম বলে ডাঃ জাকিয়ার সাথে কথা বলার সুযোগ পেলাম । আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, বললাম তাকে এবং সময় কম বলে জরুরী কথাগুলোই শুধু বললাম । বললাম, দেখেন, দেশে তো কোন ক্ষেত্রেই সুশাসন বলতে কিছুই নাই, সবক্ষেত্রেই শুধু দুঃশাসন । আমি মনে করি বর্তমানের প্রধান দুটি দলই ক্ষমতায় থাকবে সবসময়, তবে তাদেরকে সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করার জন্যই শুধুনাত্র এদেশে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন করা প্রয়োজন, যে দল কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোন চেষ্টা কখনো করবেনা এবং যে দলের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেনা দুর্নীতিগ্রস্থ এবং এক্ষেত্রের সন্দেহজনকভাবে জীবনযাপনরত কেউ । সারা দেশব্যপী বিস্তৃত থাকবে এই সংগঠন এবং দেশের প্রতিটি দুঃশাসনের ক্ষেত্রে এই সংগঠন গর্জে উঠবে এবং প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠার । এ-সংক্রান্ত ‘একটি সাংবাদ সন্মেলন’ নামে আমার একটি লিখা আছে । নিয়ে গিয়েছিলাম সেটা তাকে পড়ানোর জন্য । কোথায় যাওয়ার জন্য যেন তিনি গাড়ীতে উঠেছিলেন ; কথাগুলি হচ্ছিল তার দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় । লিখাটা দিলাম তাকে এবং আসলে মনেও হচ্ছিল যে তাঁর মনোচোখে আগুন আছে, নতুবা কেন তিনি একাই লড়াই শুরু করেছেন ! আমি বিশ্বাস করি, আমার লিখাটায় সুশাসন প্রতিষ্ঠার সমাধান আছে এবং আমি যেহেতু এইমুহুর্তে পারছিনা আমার কিছু সীমাবদ্ধতার জন্য এটা নিয়ে সরব হতে, তাই তিনি এটা নিয়ে যাতে সরব হন, সেই উদ্দেশ্যে তাঁকে সেটা দিয়ে বললাম, অবশ্য অবশ্যই পড়ে দেখবেন এটা । উপস্থিত ছিলেন ‘জাগ্রত জনতা’-র সঞ্চালক মোঃ কুতুবুদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তিনি । মনে হল, আপাততঃ অক্ষম এই আমি সুশাসনের ঝান্ডা অর্পন করলান আজকের নবীনদের হাতে । প্রিয় পাঠক, ‘একটি সংবাদ সন্মেলন’ নামীয় আমার এই লিখাটা অনুগ্রহপুর্বক পড়ে দেখবেন ।
০২/১২/২০১৩ ।
একটি সংবাদ সন্মেলন
মাননীয় সম্পাদক/সাংবাদিকবৃন্দ,
আমার সালাম নিবেন । আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, চাকুরী করি । আমি দেশ-সমাজ সম্পর্কে আমার কিছু চিন্তা-ভাবনা আপনাদের মাধ্যমে দেশ-বাসীর সামনে তুলে ধরতে চাই । কারন আমি মনে করি এই চিন্তা-ভাবনা দ্রুত সমাজের সেই অংশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া উচিৎ, যে অংশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত দেশে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত হবে । মাননীয় সম্পাদক, আমি নিশ্চিত হয়ে বলছি ‘হবে’, ‘হতে পারে’ বলছিনা । মানে আমি বিশ্বাস করি, ছাত্রদল-যুবদল-ছাত্রলীগ-যুবলীগ ছাড়া বিরাট, বিশাল যে ছাত্র-ছাত্রী ,যুবসমাজ রয়েছে এদেশে এবং গায়ে মাখা আছে যাদের মা-মাটির সোঁদাগন্ধ, তারা শুধুই এখন আহ্বানের অপেক্ষায় । সুশীল সমাজের মধ্যকার আস্থাভাজন ব্যক্তিগন এবং দেশের বিবেকবান মানুষগণের ডাকের অপেক্ষায় রয়েছে এই বিশাল শক্তি । এই তরুনরা কোনদিন আওয়ামী লীগ করেনি, কোনদিন বিএনপিও নয় । এরা গ্রাম-বাংলার দরিদ্র সন্তান, এরা নিজেদের পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা, পাশাপাশি কিছু লোকের অবৈধ প্রাচুর্য দেখে এসেছে । দূর্নীতি-দুঃশাসনের মধ্যে কিভাবে দেশ চলছে, প্রত্যক্ষভাবে অবলোকন করেছে বিশাল এই শক্তি । স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসনের অভাবে কিভাবে মানুষে মানুষে আর্থিক ক্ষেত্রে, চিন্তা-চেতনার ক্ষেত্রে বিভক্তিগুলি অনেকদুর এগিয়েছে, তা-ও পরম বিস্ময় এবং ক্ষুব্ধতা নিয়ে দেখেছে তারা। আমাদের সকলের আসলে ধারনা নাই কতখানি ফুঁসছে এই শক্তি । সাথে সাথে বিক্ষুব্ধ হয়ে আছে সরকারী-বেসরকারী চাকুরীজীবিদের একটা অংশ । চোখের সামনে নানা রকম অন্যায়, অবিচার দেখে দেখে এই গোষ্টী প্রতিবাদ করার কোনরকম সুযোগ না পেয়ে চুপচাপ সময় পার করে যাচ্ছেন । দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার শক্তিশালী কোন উদ্যোগ গ্রহন করা হলে এই গোষ্টী চুপচাপতো বসে থাকবেইনা, বরং গোপনে হলেও এই উদ্যোগকে সহায়তা না করে তারা আসলে থাকতে পারবেননা ।
কিছু মানুষ মনে করেন যে, রাজনীতিবিদরা পরিবর্তিত হয়ে গেলে সুশাসন আপনা-আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে । এটাতো ঠিক, কিন্তু রাজনীতিবিদদের পরিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা আগামী ১০/১৫ বছরের মধ্যে নাই বলেই আমাদের মনে হয় । কিন্তু এতোটা সময় সুশাসনের জন্য অপেক্ষা আমরা কেন করবো ?
কিছু, এমনকি বিজ্ঞ ব্যক্তিও মনে করেন আগামীতে এদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং তা হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে । কিন্তু এটাও আমাদের অতীত অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করলে মেলেনা । কারন আমাদের দেশে আগে মাথাপিছু আয় কম ছিল, কিন্তু সুশাসন এখনকার তুলনায় ভাল ছিল । তাই মাথাপিছু আয় বাড়ার সাথে সুশাসনের সম্পর্ক আছে বলে মনে হয়না ।
মাননীয় সম্পাদক/সাংবাদিকবৃন্দ, সবদিক বিচার-বিশ্লেষন করে আমার মনে হয়, এদেশে সবসময় সরকারগুলোকে চাপে রেখে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে । এজন্য আমাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে হবে, যেদল রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা কোনদিন করবেনা । শুধু সরকারকে চাপে রাখবে, যাতে সরকার অন্যায় কোন কাজ করার আগে বারংবার ভাবে এবং অন্যায় কোন কাজ করে ফেললে, তা শুধরে নিতে বাধ্য হয় । সবচেয়ে ভালো একটি উদাহরন দেই । ভূতপুর্ব মহামান্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক লক্ষীপুরের ও নাটোরের কিছু প্রমানিত খুনীকে মাফ করা হয়েছিল । দেশে বর্নিত রকমের রাজনৈতিক দল থাকলে এটা শুধরানোর জন্য দলটি সরকারের উপর প্রচন্ডরকমের চাপ সৃষ্টি করতো এবং এমন চাপ সৃষ্টি করত যে, সরকার তখন উক্ত সিদ্ধান্ত বদল করতে বাধ্য হত । আবার বহুল আলোচিত টেন্ডারবাজীর কথা ধরা যাক । যে শহরে টেন্ডারবাজীর ঘটনা ঘটবে, সেই শহরের প্রেশার গ্রুপ ঘটনাটা ভালোভাবে তদন্ত করে প্রেশার গ্রুপের কেন্দ্রীয় অফিসে পাঠাবে । এই অফিস পুনঃরায় তদন্তের প্রয়োজনীয়তা অনূভব করলে তা করবে, না করলে উক্ত তদন্তের প্রেক্ষিতে গৃহীত সুপারিশমালা পাঠাবে সরকারের কাছে । সরকার তখন উক্ত সুপারিশমালা অনূযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করবে । না করলে প্রেশার গ্রুপ চাপ দিয়ে তা কার্যকর করতে সরকারকে বাধ্য করবে । আবার শোনা যায়, দেশে পৌনে তিনলাখ সরকারী পদ শুন্য রয়েছে । আমাদের অভিজ্ঞতা হল, যেখানেই সরকারী কোন নিয়োগের গন্ধ পাওয়া যায়, সেখানেই শুরু হয়ে যায় তদবীর । রাজনীতিবিদরা, এমনকি মন্ত্রীরাও নিয়োগকারীকে ঘুষ খেয়ে দলীয় লোকজনদেরকে নিয়োগ দিতে প্রকাশ্যেই বলে থাকেন । মাননীয় সাংবাদিক সাহেবগন, অতিশয় বেকারের এই দেশে এর চেয়ে নিকৃষ্ট আর কোন কাজ আছে বলে আমার জানা নাই । কেন দলীয় লোকজনকে চাকরী দেয়া হবে, মেধার ভিত্তিতে না দিয়ে ? চাকরীর মাপকাঠি হবে মেধা এবং শুধুই মেধা । নতুবা দেশ এগোবে কেমন করে মাননীয় সম্পাদক/সাংবাদিকবৃন্দ ?
একটু থেমে আবার বলেন আজিজ, আপনারা যেকোন পর্যায়ে আমাকে যেকোন প্রশ্ন করতে পারেন ।
একজন বলেন, দেখেন, সরকারকে বাধ্য করা কিভাবে সম্ভব সেটা সম্পর্কে শুনতে চাই ।
আজিজ বলেন, আমার মনে হয় এটা সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি এবং হয়তো অন্যতম । কেমন করে সরকারকে বাধ্য করা যাবে, সেটা বিভিন্ন পরিস্থিতিতে দলের সর্বোচ্চ ফোরাম সিদ্ধান্ত নিবে । তবে বাধ্য করার পথ সহিংস হবেনা । আবার বলা যায়, সহিংস না হলে সরকার সেটা শুনবে কেন ? তবুও আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে বলি, বাধ্য করার পথ অবশ্যই অহিংস হতে হবে । আর সরকার সেটা শুনবেও এবং বাধ্য হয়েই তা শুনবে । এটা তখনই সম্ভব হবে যখন এই সংগঠনের পক্ষে ব্যপক মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আসবে । এই সমর্থন যত বেশী হবে, সরকারও তত বেশী করে বাধ্য হবে । যেমন, নিয়োগের বিষয়ে সরকারকে চাপে রাখার ক্ষেত্রে সরকার সেই চাপ মেনে নিতে বাধ্য হবে খুব সহজে । কারন এতে এদেশের ব্যপক শিক্ষিত বেকার তরুন-তরুনীদের এবং ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকবে । অন্যান্য ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টিতেও এই শ্রেনীকে সংশ্লিষ্ট করতে পারলে অহিংস পথেই সরকারকে বাধ্য করা সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস । তবে সবই নির্ভর করবে সর্বস্তরের মানুষের কাছে এই দলের নেতৃত্বের গ্রহনযোগ্যতার উপর এবং নেতৃত্ব কিভাবে তরুন সমাজকে আহ্ববান করে, তার উপর । এজন্য দুর্নীতির সাথে সংশ্লিষ্ট কোন ব্যক্তি অথবা প্রশ্নবোধক জীবনযাপনে রত কোন ব্যক্তি এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবেননা ।
প্রশ্ন আসে — বিএনপি একটি বিরাট রাজনৈতিক দল এবং অনেকের ধারনা, এটি দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন । আর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী এদেশের অধিকাংশ জনগনের দাবীও বটে । কিন্তু এতোবড় দল হওয়া সত্ত্বেও এটার বাস্তবায়ন ঘটাতে সরকারকে বাধ্য করতেতো পারলনা বিএনপি । তবে কেমন করে নতুন একটা দল গঠন করলেই সরকারকে বাধ্য করে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে ?
দেখেন, বিএনপি যত বড় দলই হোক না কেন, আমি যে শক্তির কথা বলছি, সেই শক্তির আস্থা অর্জন করতে কখনও সফলতো হয়ইনি এই দল, সেই চেষ্টাও করেনি কখনও । এর অতীতের কথা বাদই দিলাম, বিগত পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অপশাসনের বিরুদ্ধে বিএনপি কোন কথাই বলেনি । বর্তমান সরকারের পুরো সময়টাতে দলীয় ক্যাডার দ্বারা টেন্ডারবাজী হয়েছে, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তিতে যাকে বলা হয় ‘ভর্তিবাজী’, তা হয়েছে, ছাত্র-ছাত্রীদের কেউ কেউ টাকা দিতে না পারায় তাদের সার্টিফিকেট প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, বিএনপি কিছু না করে চেয়ে চেয়ে দেখেছে শুধু । এতোবড় শেয়ারবাজার কেলেংকারী হোল, পুঁজি হারিয়ে কত লোক আত্মহত্যা করলেন, বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হোল, উপদেষ্টা, মন্ত্রীরা ঘুষ নিয়ে দলীয় লোকজনদেরকে চাকরী দেয়ার নির্দেশ দিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে, হলমার্ক, বিসমিল্লা, ডেসটিনি প্রভৃতি গ্রুপ কর্তৃক শত শত নয়, হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করা হোল, অথচ বিএনপি কোন আন্দোলন গড়ে তোলাতো দুরের কথা, সামান্য প্রতিবাদও করেছে বলে দেশের মানুষ দেখতে পায়নি । আপনি আমার কথা না বললে আমি আপনার পক্ষে কেন থাকবো ? এটাই হয়েছে এ-ক্ষেত্রে । আরো রয়েছে মানবতাবিরোধীদেরকে তথা জামাতকে সমর্থন করার বিষয়টি । এটা মানুষের একেবারে অপছন্দ । এদেশের অধিকাংশ মানুষ আসলে ন্যায়পরায়ন, অন্যায় অত্যন্ত অপছন্দ তাদের । —
কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে আরেকজন বলেন, এতোই যদি বিএনপি এদেশের মানুষের কাছে অপছন্দের দল, তবে কেন মানুষ তাদের মূল দাবী অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবী, সেই দাবীর পক্ষে ?
এটা ঠিক, আওয়ামী লীগের কিছু সফলতা আছে এবং গত পাঁচ বছরে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলিতে সরকার কোন হস্তক্ষেপও করেনি । তবুও কিসের জন্য তা কেউ জানেনা, হঠাৎ করে এই সরকার আদালতের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করেছে । মানুষ মনে করে, সংসদ নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিং জাতীয় কিছু করার উদ্দেশ্য থেকেই সরকার এটা করেছে । তড়িঘড়ি করে সংবিধান পরিবর্তনই এই কথাগুলির সত্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করে । নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা যেভাবেই এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকুক না কেন, এটি ছিল একটি অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ব্যবস্থা এবং এটা বাতিল করাকে মানুষ আসলেই ভালোভাবে দেখেনি । এজন্যই দাবীটার পক্ষে মানুষ, বিএনপিকে সমর্থন করে দাবীটার পক্ষে, তা কিন্তু নয়।
আওয়ামীপন্থী এক সাংবাদিক রাগতঃভাবে প্রশ্ন করেন, আপনি শুধু আওয়ামী দুঃশাসন দুঃশাসন করছেন, বুঝিয়ে বলতে হবে । সরকারর করনীয় কি ছিলো এগুলির প্রেক্ষিতে ?
তবে ধৈর্য ধরে শুনুন, বলে শুরু করেন আজিজ । ছাত্রলীগের উল্লেখিত কূকর্মগুলো যখন শুরু হল, তখন আওয়ামী নেতৃত্বের উচিত ছিল, সংগঠনটির সকল কার্যক্রম স্থগিত করা; তাতেও কাজ না হলে আইনানূগ ব্যবস্থা গ্রহন করা, প্রশাসনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া । শাস্তি দেয়া শুরু হলে অবশ্যই টেন্ডারবাজী, ভর্তিবাজীসহ সকল দুষ্কর্ম বন্দ হয়ে যেত । এরপর শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রে সরকার যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার সুপারিশ মোতাবেক কঠোরভাবে ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারত সরকার । তা করলে শেয়ারবাজারের অবস্থা ভালো হয়ে যেত অথবা ভালো না হলেও মানুষের মনে এরকম একটা আস্থার জায়গা তৈরী হত যে, সরকারের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিলনা । বিপরীতে সরকার, বিশেষ করে সরকারের অর্থমন্ত্রী ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের উপহাস করেছেন । মানুষ তাতে দুঃখ পেয়েছে, ক্ষুব্ধ হয়েছে, হয়তো মুখও ফিরিয়ে নিয়েছে । পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অর্থাৎ অবৈধ অর্থগ্রহন হয়নি; কারন পরামর্শক নিয়োগইতো হয়নি । তবে তদন্তে বলা হয়েছে, দুর্নীতির চেষ্টা করা হয়েছে । একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আমার ধারনা, এটাই ঠিক । পরামর্শক নিয়োগে এরকমটি হয়ে থাকে প্রায়শঃই । তবুও বিষয়টি ফিফটি-ফিফটি ধরে নিয়ে, অর্থাৎ সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী জনাব আবুল হোসেনের অপরাধ ৫০% সত্য ধরে নিয়ে তাকে যোগাযোগ মন্ত্রনালয় থেকে সরিয়ে দেয়া উচিত ছিলো । জানি উনি একজন বিদ্যানুরাগী ব্যক্তি এবং নিজ এলাকায় উনি শিক্ষাক্ষেত্রে যা করেছেন, তা বাংলাদেশে আর কেউ করেছেন বলে আমার জানা নাই । তবুও সন্দেহাতীতভাবে সৎ বলে অন্য মন্ত্রীগন, যেমন কৃষিমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, ইনাদের যে ভাবমূর্তি, তা জনাব আবুল হোসেনের নয় । আর গত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের যেসমস্ত কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় দুর্নীতি করার কথা স্বীকার করেছিলেন, তাদেরকে তিনি বাঁচিয়েছেন হয়তো একারনে যে, তখনকার বিধান ছিলো স্বীকার করলে মাফ পাওয়ার । তবে স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ হিসেবে তাদের পদোন্নতিতো তিনি দিতে পারেননা । সেটাও হয়েছে তারই হাত দিয়ে । এরকম বিতর্কিত লোকের জন্য সরকার মানুষকে ভুগালেন পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংক, জাইকা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মাধ্যমে ।
একটু থামতেই রাগতঃভাবে আবার তিনি বলে উঠেন, থামলেন কেন ! ঠাট্টার সুরে একদিকে ঠোঁট বাঁকিয়ে আবার বলেন, বিশ্লেষনতো ভালোই দিচ্ছেন ; চালিয়ে যান, ছাড়ছিনা ।
দম নিতে দিন একটু মাননীয় সাংবাদিক । কারো পছন্দ হোক বা না হোক, আমি যা বিশ্বাস করি, তা আমি বলবই । হলমার্ক, বিসমিল্লাগ্রুপ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ লুট-পাট কেমন করে ঘটলো এবং এটার কি জবাব দিবে সরকার ! আমরা মনে করি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বকে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে বসানো সরকারের একেবারেই উচিৎ হয়নি । কারন ঊনারাতো ব্যাংকিং সেক্টরের অভিজ্ঞ ব্যক্তি নন । তাহলে এ-সংক্রান্ত বিষয়গুলি তারা বুঝবেন কেমন করে ? না বুঝলে ব্যাংকারগনের হাতের পুতুলে তাদের পরিনত হওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকেনা কি ? হয় সেটা হয়েছে, মানে ব্যাংকারগন যেভাবে বুঝিয়েছেন, সেভাবেই তারা চলেছেন অথবা তাদের অগোচরে সবকিছু হয়েছে অথবা তারা দুর্নীতি করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা লুটপাটের সুযোগ করে দিয়েছেন । প্রথম দুটির যেকোনটি হলে বুঝতে হবে, তারা অযোগ্য ছিলেন এবং যেহেতু তারা সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত এবং এই লুটপাটের ঘটনা দীর্ঘদিন যাবত ঘটেছে, যা পরিচালনা পর্ষদ বা সরকার কারো নজরে আসেনি, তাই এটা প্রকারান্তরে সরকারেরই অদক্ষতা । আর তৃতীয়টি হয়ে থাকলেতো কি বুঝতে হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।
একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি এতোবেশী সতর্কতার সাথে মন্তব্য করছেন কেন ?
আমার এ-সংক্রান্ত কথা শেষ হয়নাই । আমি কি সোজা বলে দিব যে দুর্নীতি করেছে সরকার ও পরিচালনা পর্ষদ ? এখানে দুর্নীতি যে হয়েছে, সেটাতো দিবালোকের মত পরিষ্কার । আর সেটা যে ব্যাংকের কর্মকর্তারা করেছে, সেটাও দিবালোকের মতই সাফ । তবে দুদক কিন্তু বলেছে, পরিচালনা পর্ষদ জড়িত, সেরকম কোন তথ্য তারা পায়নি । প্রমান যখন নাই, তখন নিশ্চিন্তভাবে এসম্পর্কে কিছু বলা যায়না । তবে এটা এবং টাকাটা উদ্ধারতো দুরের কথা, টাকার কোন খোঁজ এপর্যন্ত সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছে, একারনে নিশ্চিন্তভাবে এটা বলা যায় যে, এগুলি সরকারের চরম অদক্ষতা । আর আমাদের অধিকাংশ মানুষের ধারনা যে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থাৎ পরিচালনা পর্ষদ দুর্নীতিগ্রস্থ না হলে দীর্ঘসময় ধরে এতো বিশাল বিশাল দুর্নীতি করা শুধুমাত্র ব্যাংকারদের দ্বারা সম্ভবপর হোতনা ।
দুদকের উপর চাপ সৃষ্টি করে পরিচালনা পর্ষদকে বাঁচানো হয়েছে বলে মনে করেন অধিকাংশ মানুষ, এটা সম্পর্ক কি বলার আছে ?
হতে পারে ।
আরেকজন প্রশ্ন করেন, মানুষ এই সরকারকে দুর্নীতিবাজ সরকার মনে করে কেন ?
একটু ভেবে নিয়ে আজিজ বলতে শুরু করেন, দেখেন আমি বুঝি যার সম্পর্কে মানুষ বলেনা যে, লোকটি সততা নিয়ে চলে, তার মধ্যে কিছু না কিছু গলদ থাকে অর্থাৎ তিনি সম্পুর্ন সৎ নন । সেহিসেবে এই সরকার সম্পর্কে মানুষের ধারনা যদি হয়ে থাকে দুর্নীতিবাজ, তবে এসরকার তা-ই । এর স্বপক্ষে এই সরকার সম্পর্কে আমার উপরোক্ত বক্তব্যসমূহের সাথে আর সামান্য কিছু যোগ করতে চাই । তা হোল, সরকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবী করে । অর্থব্যয়ের ক্ষেত্রে তা সত্যও । তবে সরকারী এই অর্থের যথার্থ ব্যবহার হয়েছে কি-না, সরকার সে-বিষয়ে নিশ্চিত হয়নি । বরাদ্দকৃত অর্থ জলে ভেসে গেছে না আসলেই কাজ হয়েছে, তার হিসেব নেয়নি সরকার । এই অর্থের উল্লেখযোগ্য অংশ যে জলে গেছে, সেটার প্রমান আপনি দেখতে পাবেন নির্মিত কাজের মান দেখে । রাস্তা-ঘাটের বিভিন্ন অংশের পুরূত্ব মাপলেই এটার প্রমান পাওয়া যাবে । আর আশ্চর্য্য, নির্মানের ১/২ বছরের মধ্যেই রাস্তাগুলি পুনঃরায় নির্মান/মেরামত করতে হয় । কোন ইঞ্জিনিয়ারকে তো এজন্য দায়ী করে শাস্তিপ্রদান করা হয়নি । এছাড়াও মিডিয়াতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতির খবর এসেছে, কয়টার তদন্ত হয়েছে এবং শাস্তিপ্রদান হয়েছে ? মাননীয় এমপিদের সম্পর্কে বিভিন্ন সময় গম, চাল, কাবিখা, কাবিটা ইত্যাদি বিভিন্ন নামীয় বরাদ্দ তছরূপ করার প্রচুর সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে । কোনটারই কোন তদন্ত হয়নি । এসমস্ত কারনে এই সরকারকে মানুষ দুর্নীতিবাজ সরকার মনে করে ।
আপনি বিএনপির পক্ষে বলছেন, নাহলে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে এতো বলতেননা । এভাবেই মন্তব্য করলেন একজন ।
আপনি ভুল বুঝছেন, বলেন আজিজ, যার কর্ম যেরকম, সেরকমই কিন্তু মানুষ তার সম্পর্কে বলবে । আপনি বিএনপি সম্পর্কে আর কি জানতে চান বলুন ।
বিএনপি সম্পর্কে আর কি জানতে চাইবো! আপনি প্রেশারগ্রুপ করবেন, আপনার মূল্যায়ন কি, সেটা জানতে চাই ।
দেখেন, আওয়ামী লীগের মতোই বিএনপিও একই ধরনের রাজনৈতিক দল । দেশের ক্ষমতায় থাকা এবং ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য দুটি দলেরই কার্যক্রম এক এবং অভিন্ন । এর প্রমান খুঁজতে হলে আমাদেরকে ২০০২ হতে ২০০৬ সন পর্যন্ত সরকারে থাকাকালীন দলটির কার্যক্রমের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে । দুর্নীতি, লুটপাট ছাড়াও ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্টী লালন দলটির ভয়াবহ দিক । নিজেদের ক্ষমতাকে সংহত করতেই তারা এটি করেছিল । আবার বর্তমানের আওয়ামী আমলেও এই সরকার যখন একাওরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম চালাচ্ছে, তখন এই বিচারিক কার্যক্রমের শুরু থেকেই দলটি বিচারকাজ আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছেনা, এই জিকির তুলে বিচারকাজ বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে সবসময় । একাত্তরে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর শিকার হয়েছিলেন, চরম দুঃখ, হতাশায় যারা এই বিয়াল্লিশটি বছর পার করেছেন নিদারূন কষ্টের পাথর বুকে চেপে ধরে, সেই অসহায় মানুষগুলোর কথা একটুও ভাবলেননা তাঁরা । হায়রে ভোটের রাজনীতি! অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবীদার বিএনপির উচিত ছিলো জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করা । আর পুরো জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করতেও হোতনা । শুধু যদি দলটি ঘোষনা দিত, ‘আমরা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করবো । জামাতের যেসমস্ত নেতা-কর্মী আমাদের এই সিদ্ধান্তের সাথে আছেন, তারা আমাদের সাথে থাকবেন; আর যারা যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে থাকবেন, তাদের সাথে আমাদের কোন সংস্রব থাকবেনা’, তাহলে বিএনপির পক্ষে বর্তমানে জামাত-হেফাজত মিলে যত সমর্থন রয়েছে, সেই সমর্থন অর্ধ্বেকে নেমে আসতো হয়তো । কিন্তু বিপরীতে এভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করার কারনে দলটির প্রতি অন্য অনেক মানুষের বিশাল সমর্থন নুতন করে সৃষ্টি হোত ।
আবারো প্রশ্ন আসে, আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় এলে বর্তমান সরকারের আমলে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেকি এবং না হলে আপনাদের ভূমিকা কি হবে ?
আজিজের উত্তর আসে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সাজাপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হবেনা । এটা হবে অতি দুর্ভাগ্যজনক বিষয় । আর আমাদের ভূমিকা হবে তাদেরকে বুঝানো, অর্থাৎ সর্বোচ্চভাবে বুঝিয়ে সাজা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা আমাদেরকে চালিয়ে যেতে হবে । জানি, কাজ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শুন্য । তবুও এছাড়া কোন উপায় নাই ।
কেন, চাপ দেয়া সম্ভব নয় কেন ? আপনারা তাহলে কি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে ?
সেটা মোটেই নয় । আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দৃঢ়ভাবে লালন করি এবং দৃঢ়ভাবেই চাই, যুদ্ধাপরাধীদের সাজা বাস্তবায়িত হোক । কিন্তু আমরা যদি এই ব্যাপারে চাপ দিতে যাই, তবে দুই প্রজন্মের মধ্যে অর্থাৎ মাদ্রাসা ছাত্রদের প্রজন্ম এবং এই মাদ্রাসা ছাত্র বাদে বাকী তরুন প্রজন্ম, এই দুই প্রজন্মের মধ্যে বিবাদ বেধে যাবে । এটা আমরা চাইনা । আমরা চাই এদেশের অসহায়, দরিদ্র মাদ্রাসাছাত্ররাও যেন অন্য প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রীদের মত একই মানের শিক্ষা লাভ করে, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-গবেষক হয়ে দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করে এবং সেজন্য আমরা মাদ্রাসা শিক্ষার ধারক-বাহকগনসহ ধর্মীয় ধনী প্রতিষ্ঠানসমূহের নিকট এই বিষয়ে নিশ্চিতভাবে ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য জোরালোভাবে আহ্বান জানাবো । আর আগেও বলেছি, এখনও বলছি, যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকর করার আহ্বান বিএনপিকে জানাতে আমরা কখনও পিছপা হবোনা । এ-আহ্বান জানানো অব্যহত রাখবো । একাত্তরের ঘৃনিত যুদ্ধাপরাধীদের সাজা কার্যকর করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রয়াস আমরা চালিয়ে যাবো, এটা নিশ্চিত ।
এতে কাজ হবে ?
চাপ দিয়েই বা কতটুকু হবে ? এটা আমার ব্যক্তিগত মত, বিস্তারিত প্রেশার গ্রুপের মূল বডি সিদ্ধান্ত নিবে ।
২/৩টা সেকেন্ড পিনপতন নিরবতা নেমে আসে । দীর্ঘ আলোচনার পর অনেকেরই হয়তো মনে হচ্ছে, আর কতো!
মুরুব্বিগোছের একজন সম্পাদক, সম্ভবতঃ শেষ করতে চান, বলেন, দেখেন আপনি যেটা বললেন যে, অহিংসভাবে আপনারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন, এরকমভাবে কতদুর কি করতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ, এমনকি আপনারও কি নাই ?
না! আমাদের কোন সন্দেহ নাই। গনমানুষের সন্মিলিত শক্তির উপর আমাদের পূর্ন আস্থা আছে। আসলে শুরুতো করতে হবে এবং জানবেন যত বাধাই আসুকনা কেন, আমরা পিছপা হবোনা কখনও । মৃত্যুর কোন ভয় আসলে আমাদের নাই । একাজে আমাদের জীবন গেলে সে-জীবনের বীজ থেকে আরো এরকম অনেক জীবনের বীজ তৈরী হবে । ফলে আরো অনেক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে আমরা সেই শক্তিকে আহ্বান জানানো অব্যহত রাখবো, যেশক্তির জন্য এদেশে সুশাসন প্রয়োজন সবচেয়ে বেশী এবং আমাদের এই আহ্বানের সাথে তারা একাত্ম হবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ।
তবুও অহিংসই থাকবেন আপনারা ?
হাঁ, আমরা অহিংসই থাকবো এবং অহিংসভাবেই আমরা সরকারকে জনগনের নায্য অধিকার প্রদান করতে বাধ্য করবো । জনগনের সন্মিলিত শক্তি কিন্তু অপরিসীম, যার ফলে আমাদেরকে সহিংসতার পথে যেতে আসলে হবেইনা ।
আপনাকে ধন্যবাদ ।
আপনাদেরকেও ধন্যবাদ এতোক্ষন ধৈর্য ধরে আমার কথা শোনার জন্য ।
মোঃ আজিজুল ইসলাম
ঢাকা, ১৫/১০/২০১৩।