শান্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অনশন
শান্তির জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অনশন
আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধের ভয়াবহতা ও নির্মমতা দেখেছি । আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি আত্মঘাতী যুদ্ধে নিপতিত হোক আমরা তা চাইনা । আমরা আজকে সেই দুযোগের দ্বারপ্রান্তে । আর এই অবস্থা সৃষ্টির মূল কারন হচ্ছে লুন্ঠনকারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি অগনতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা । আমরা চাই একটি সত্যিকার জবাবদিহিতামূলক দুর্নীতি মূক্ত ও যুদ্ধাপরাধী রাজাকার মূক্ত গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র । সেই লক্ষ্যে আসুন আমরা সকলে সন্মিলিতভাবে সকল ধরনের সন্ত্রাস – কি রাষ্ট্রিক কি দলীয় প্রতিহত করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই । সেই উদ্দেশ্যে আগামী ২রা ডিসেম্বর সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পালাক্রমে তিন দিনব্যপী আমরা অনশন করব । সকলে অংশগ্রহন করুন ।
রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা
———————————————
গিয়েছিলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গত তিন তারিখে, এই পোষ্টারটি সেখনকারই । মাননীয় সম্পাদক, আপনার এই পত্রিকার নীতিমালা বিরুদ্ধ কোন কিছু এই লিখা হলে আপনি এটা ব্যান্ডও করতে পারেন । তবে আপনি এটা প্রকাশকে চলমান সহিংসতা বন্দের কোন এক ক্ষুদ্রপ্রয়াস এবং সেই প্রয়াসের একজন সামিল হিসেবে নিজেকে মনে করলে, দেশ-সমাজের জন্য এটা ভালোই হবে ।
যাহোক, সেখানে কথা বললাম গনস্বাস্থের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর জাফরুল্লা চৌধুরীর সাথে । টকশোতে তিনি সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে মন্তব্য করে থাকেন, অনেক বছর থেকে আমি উনার নাম শুনে আসছি, প্রথম থেকেই উনাকে আমার একজন অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ বলেই মনে হোত এবং আজও তাই-ই হয় । প্রথমে গনস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সেখান থেকে তিনি আজ গণবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে তিনি, এমনকি মেডিক্যালের ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পযর্ন্ত গ্রামে-গঞ্জে সাধারন মানুষের সাথে মিশে তাঁদের জীবনধারা সম্পর্কে অবগত হওয়ার ট্রেনিং গ্রহন করা বাধ্যতামূলক করেছেন । ওখানে আসলে তিনি প্রচলিত শিক্ষার সাথে সাথে ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে মানবদরদী হয়ে ওঠে, সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন । এরকম ব্যক্তিত্বকে সামনে পেয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার উপায় সম্পর্কে তাঁর কথা শুনতে চাইলাম ।
সরাসরি-ই জানতে চাইলাম, স্যার, প্রতিটি সরকারকে শুধুমাত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রচন্ড চাপে রেখে কোন রাজনৈতিক দল গঠন করলে তা ফলদায়ক হবে কিনা ?
সদা হাসি-খুশী মানুষ উনি, কিছু না বলে একটু যেন চুপ-ই থাকলেন ।
আবার আমি বললাম, স্যার, ছাত্রলীগ-ছাত্রদল-যুবলীগ-যুবদল ছাড়া অসংখ্য বিরাট-বিশাল যে ছাত্রসমাজ রয়েছে এদেশে, তারা আপনাদের মত জ্ঞানীগুনীজনের ডাকের অপেক্ষায় কিন্তু আছে । ঐরকম শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন করে সেই দল এদেরকে ন্যায়ের পথে, উদারনৈতিক মানবিক একটি দেশ গঠন করার উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানালে তারা আসবেনা ? এলে তো এভাবেই সরকারকে সকল প্রকার দুঃশাসনে বাধা দেওয়া যায় । এটা হবে সেরকম একটি দল, যে দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোনধরনের কায্যর্ক্রম গ্রহন করবেনা কখনও এবং যে দলে থাকবেনা কোন দুর্নীতিবাজ ও এমনকি সন্দেহজনক কোন দুর্নীতিবাজও । হয়না এভাবে ?
দেখেন, আমাদের এই সমাবেশেই অনেকে বলেন, আমার নামটা তো আগে বল্লেন না, অনেকে অনেকরকম মাইন্ড করে – হবেনা –
কিন্তু স্যার, আপনারা যদি জোর দিয়ে উনাদেরকে বলেন, দেখেন রাজনীতি, সমাবেশের চিরাচরিত এ-ধারা বাদ দিন । বলি আমি ।
হাসিমুখে উনি আবার বলেন, দেখেন আসলে সময়ের সাথে সাথে রাজনীতি, সমাজ সবটাতে পরিবর্তন আসবে । কিছু কিছু পরিবর্তন আসছে তো ।
আসছে, কিন্তু পাল্লা দিয়ে পারছেননা আপনারা রাজনীতিবিদদেরকে । আপনারা বলেই যাচ্ছেন, আর তারা করেই যাচ্ছেন তাদের মত করে সবকিছু । এভাবে হবেনা স্যার । সরকারকে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাধ্য করতে আপনাদের একটা বিরাট শক্তি লাগবে এবং বিশাল নিরপেক্ষ এই ছাত্র সমাজই হবে সেই শক্তি ।
উনার সেই সদা হাস্যজ্জ্বল মুখ । খুব একটা কিছু বল্লেননা আর । কিছুক্ষন ওখানে দাঁড়িয়ে থেকে চলে এলাম, উনি আসলে অনশনে । আর কিছু বললামনা ।
ফিরে এলাম জাতীয় যাদুঘরের সামনে ‘জাগ্রত জনতা’-র ওখানে । এর সঞ্চালক কুতুবুদ্দীন উঠে এলেন আগের দিনের সামান্য পরিচয়ের সূত্র ধরে । কিছু বলতে শুরু করতেই তিনি বললেন, আসলে কি হবে বলেন ; আমাদের মন-মানসিকতা নষ্ট হয়ে গেছে । টিভি ক্যামেরা এলেই কিছু লোক সামনে এসে পড়েন, কিছু বলবেন বলে । ধরেন ক্যামেরার সামনে আমি বা আমাদের কেউ কথা বলছে, কিছু লোক একেবারে ঘাড়ের কাছে মাথা নিয়ে আসে যাতে টিভিতে তাদেরকে দেখা যায় । কাজে বাধা হয় এতে, বিরক্তিও লাগে ।
বললাম, কি করবেন! ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে । বিরাট ঘনবসতিপূর্ন এই দেশে এ-সমস্ত মেনে নিতে হবে কিছুটা, তবে বিরক্তি আসাটা —
কথাটা শেষ করতে দিলেননা তিনি, প্রায় সারাদিন প্রোগ্রাম ছিল সেদিন তাদের । কথাও নিশ্চয় তাকে বলতে হয়েছে বেশী । তাই আজ তিনি বলতেই চাচ্ছেন । আমিও শুনে যাচ্ছি, বলুক আজ ও ।
উচ্চস্বরে ছেলেটা বলেই চলেছেন, আমরা তরুনরা বেরিয়ে এসেছি, আমাদের গাইড করার মত কেউ নেই । গণজাগরণ মঞ্চের সময়কার ডা ইমরানের আন্দোলনের মত এখনও পরিচিত জ্ঞানীগুনিজনেরা, সন্মিলিতভাবে অথবা কেউ এগিয়ে এলোনা, যারা আমাদেরকে এগিয়ে নিতে পারতেন ।
‘জাগ্রত জনতা’-রই আরেকজন, সম্ভবতঃ ঘনিষ্টভাবে সংস্লিষ্ট, বললেন, মিডিয়াতো ব্যস্ত শুধু ঐদিকে, হাসিনা-খালেদাকে নিয়েই তাদের ব্যস্ততা বেশী । মিডিয়া যদি প্রচার করতো, তবে এই সংগঠনটির পরিচিতি বাড়ত । আমি বলি, হাঁ, সংগঠনটির কায্যর্ক্রমের বিস্তৃতি ঘটতো মিডিয়ার প্রচার বেশী হলে এবং এভাবেই সারা দেশেও একই কায্যর্ক্রম শুরু হলে বর্তমানের অগ্নিদগ্ধতা, সহিংসতা কিছুটা হলেও কমতো ।
কুতুবুদ্দিন আবার তাঁর কথাগুলির পুনরাবৃত্তি করতে থাকেন । একসময় আমি বলি, ভালো আচরন, দয়ালুতা এসমস্ত গুন কিন্তু মানুষে মানুষে সঞ্চারিত হয় । আপনাদের এসমস্ত সৎ গুনাবলী অন্য তরুনদের ভিতরও সঞ্চারিত হবে । ধরতে হবে যা, তা হচ্ছে ধৈয্য, এবং শুধুই ধৈয্য । লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, ভিশান যত বড় হবে, ধৈয্য-ও তত বেশী হবে আসলে ।
ফেরার সময় হয় একসময় এবং চলে আসি । বাস ধরার আগের সময়টুকু হাঁটতে হাঁটতে ভাবি, ডক্টর জাফরুল্লা এবং আজকের এই প্রজন্মের একজন এই কুতুবুদ্দিন, এঁরা একই জিনিস চান এই মুহুর্তে, তা হোল অগ্নিদগ্ধতা, সহিংসতার অবসান । কুতুবুদ্দিনরা চান, জ্ঞানীগুনিজনরা তাঁদের পথ দেখাক, আর ডক্টর জাফরুল্লাদের প্রজন্ম, কমপক্ষে সেরকমভাবে জানেননা আজকের এই প্রজন্মের বিরাট-বিশাল এই শক্তির কথা এবং তাদের চাহিদা কি ।