অগ্নিদগ্ধতা-২
সারাদিনের খাটাখাটুনির পর বাসের মধ্যে ঘুমটা গভীরই হয় আলমগীর শেখদের। তখনই দেয়া হয় তাদের শরীরে আগুন। আলমগীর শেখ হয়ত নদী-ভা্গংনের শিকার কোন অসহায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনোক্ষম কিশোর, হয়ত স্বামী-পরিত্যক্তা অসহায় কোন নারীর একমাত্র অবলম্বন, হয়ত হতে পারে সে বখে যাওয়া কোন তরুন। যাই হোক না কেন সে, ঘুমন্ত অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ হবে কেন সে? কে কাকে অধিকার দিয়েছে তাকে অকথ্য যন্ত্রনা দিয়ে পুড়িয়ে মারার?
আলমগীর শেখদের মত কিছু তরুন এদেশের যাত্রীবাহী বাসগুলির হেলপার। তারা যাত্রীদের ভাড়া কাটেন। পেছনে,বাঁয়ে কোন কিছুর অবস্থান সম্পর্কে ড্রাইভারকে সচেতনও রাখেন তারা। মাঝে মাঝে যাত্রীদের সাথে বচসাও হয় তাদের, প্রধানত:ই যা ভাড়া নিয়ে। বাড়তি ভাড়া কেউ কেউ নেননা, এমনও নয়। তবে তার ক্ষুদ্র অংশই ভাগ্যে জোটে তাদের, মালিক এবং ড্রাইভারই হয় এই বাড়তির বিরাট অংশের মালিক। কিন্তু কাজটা করতে হয় তাদেরকেই।
অপরিচিত এই মহানগরে গ্রাম থেকে আসা অসহায় অনেক মানুষকে তারা পথ বাতলিয়ে দেন, সিগন্যালবাতির সামনে পরম মমতায় হাত ধরে রাস্তা পার করে দেন তারা অনেক বয়স্ক এবং নারীকে। হাঁ, কিছু অসৎ কিশোর নাই তা নয়, যারা সুযোগ বুঝে নারীদের গায়ে হাতও দেন, যা ক্ষমার অযোগ্যও বটে। কিন্তু সমাজের কোন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে নাই সেই একইরকম অপরাধী মানুষ ? অসহায়ভাবে অগ্নিদগ্ধতার সাথে তার কোন সম্পর্কও নাই। সে প্রশ্ন অন্যত্র। মনে প্রশ্ন জাগে, রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার কেন হবে শুধুমাত্র অসহায় এই বাসের হেলপাররা, ইজিবাইকের এবং সিএনজি চালকরা, দিনশেষে যারা কিছু না আনলে পরিবারকে অভূক্ত হয়ে থাকতে হয় ? সংশ্লিষ্ট সকলে নাহয় অন্ধ হয়ে গেছেন এবিষয়ে, কিন্তু নোবেল বিজয়ী আছেন এদেশে শান্তিতে, আছে মানবাধিকার নামধারী একটা কমিশন, জানি আপনারা কিছু বলতে পারবেননা, কিন্তু পানি ফেলেছেন চোখের দু’ফোঁটা, সেটাও কেন আমরা দেখিনা ?