বিশ্রামে গেছেন মাদিবা
বিশ্রামে গেছেন মাদিবা
দক্ষিন আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা গত ৫-ই ডিসেম্বর রাতে ঘোষনা করেছেন, আমাদের প্রানপ্রিয় নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন । এদেশ, এজাতি হারিয়েছে তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে আর আমরা হারিয়েছি আমাদের পিতাকে ।
আসলে পিতার মতোই কাজ করেছেন নেলসন ম্যান্ডেলা । সাদা কালো মানুষের মধ্যকার দীর্ঘদিন ধরে চলমান সহিংসতা, খুনোখুনী বন্দ করতে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন, জীবন-যৌবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়ে দীর্ঘ সাতাশ বছর কারাগারে অন্তরীন জীবন কাটিয়েছেন তিনি । দক্ষিন আফ্রিকায় আজ সাদা-কালোর মধ্যে কোন দ্বন্দ আছে বলে শোনা যায়না, হানাহানি-সহিংসতা তো নাই-ই । অথচ কালোদের পৃথিবীর সবচেয়ে নোংরা এবং অপরিচ্ছন্ন মানুষ হিসাবে গন্য করা হত এবং তাদেরকে তা বুঝিয়েও দেওয়া হত ভালভাবেই । তখনকার সাদাদের মানসিকতাই ছিল এরকম নোংরা বলে তারা এরকমভাবে কালোদের ঘৃনা করত । সেই সাদাদের মানসিকতা কিভাবে পরিবর্তিত হোল, তা জানতে হলে ১৯৯৪ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব নেয়ার দিনকার প্রদত্ত তার ভাষনের বিশেষ একটি উক্তির দিকে নজর দিতে হবে, যেখানে তিনি বলেছিলন, আমরা সাদাদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে কালোদের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে চাইনা । এই একটি উক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার করা হয়ত যায়না, কিন্তু এটা বিরাট একটা উক্তি এবং তার চেয়েও বড় বিষয়, এই উক্তির বাস্তবায়ন তিনি ঘটিয়েছেন । ফলে সাদা-কালোর বিরোধমূক্ত আজ দক্ষিন আফ্রিকা ।
নেলসন ম্যান্ডেলা কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন, সেই স্বাক্ষ্য দেয় তাঁর ক্ষমা প্রদর্শন । একটি বিষয় তিনি মনে গেঁথে নিয়েছিলেন, তা হচ্ছে কোনভাবেই সাদা এবং কালো মানুষের বিরোধ আর বাড়তে দেওয়া যাবেনা । তাই ১৯৯৫ সালে তিনি ট্রুথ এন্ড রিকনসিলিয়েশন কমিটি গঠন করলেন সহিংসতা, হানাহানিতে জড়িতদের ক্ষমা করে দিতে । তিনি বুঝেছিলেন, ক্ষমা করে না দিলে থামবেনা এ-বিরোধ, যুগ যুগ ধরে চলতেই থাকবে ।
যেখানে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারতেন, সেখানে মাত্র একটি টার্ম, পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা থেকে সরে দাড়ান । হয়ত তিনি মনে করেছিলেন, তাঁর উপযূক্ত জায়গা এটা নয় । তাই দেশের এবং বিদেশের বিবাদ-বিসংবাদ মিটানোর মহান ব্রত নেন তিনি । দেশ ছাড়িয়ে আস্তে আস্তে পুরো বিশ্বে এভাবেই ছড়িয়ে পড়েন । সিক্ত হন পুরো বিশ্বের মানুষের শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় ।
নিজ দেশের মানুষ শ্রদ্ধা, ভালোবাসায়, আবেগে তাঁকে ‘মাদিবা’ ডাকতে ভালোবাসেন । তাঁর জীবনাবসানে তাঁর বাড়ির সামনে মানুষ নেচে গেয়ে চলেছেন । এভাবেই তাঁরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন । তাঁরা জানেন, মাদিবা বিশ্রামে গেছেন । পরম শ্রদ্ধার মাদিবা তাদের বিবেক । প্রয়োজনে আবার যেকোন সময়ে জেগে উঠবেন তিনি । ৯৫ বছর ত্যাগ-তিতিক্ষার জীবন অতিবাহিত করেছেন তিনি, আজ ভালোমত বিশ্রামের দরকার তার । জোরেশোরেই চলছে সেই আয়োজন, সেই তোড়জোড় ।