Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

ধারাবাহিক উপন্যাস “নিয়োগ পত্র” – ষষ্ঠদশ পর্ব

: | : ০৯/১২/২০১৩

ষষ্ঠদশ পর্ব
(সতের)
তিমির কেমন আছো। মানুষজন বলছে তুমি নাকি ইদানীং অতি মাত্রায় উছৃংখল হয়ে উঠেছো। অবশ্য এখন তোমাকে সান্তনা কিংবা উপদেশ দেওয়ার অধিকার আমার নেয়। কেননা আমি অন্যের বউ। জানতো সুখের কোন মাপকাঠি থাকলে তোমাকে নিশ্চিত করে বলতে পারতাম আমি কতটা সুখে আছি। বিয়ের আগে তোমার পাশে যখন দাঁড়াতাম তখন এক ধরনের শিহরণ অনূভব করতাম। ইন্দ্রিয়ের কিছু চাওয়া পাওয়া থাকতো। তুমি পাগলের মত কি সব বলতে। আমি লজ্জায় মরে যেতাম। আমারও যে মন চায় এরকম কিছু। বলতে গিয়েও বলতে পারতাম না।
প্রবীরের সাথে বিয়ে হলো। ফুলশয্যার রাতে সমস্ত লজ্জায় মরে গিয়েও কেমন করে মরেও বেচে গেলাম। এখন আর মরতে হয় না। মনে হয় আততৃপ্তির কৌশল। প্রবীর একটা আস্ত পাগল। তুমিও পাগল ছিলে। তবে একটা সীমা ছিল। ওর কোন সীমা নেয়। অনেকটা পাবলো পিকাসো-র নারী প্রীতির মতোই। ওর সবকিছু নাকি খোলা মেলা ভালো লাগে। আমিও তথাস্তু। কারন কর্তার ইচ্ছায় কর্ম। আদিম উম্মাদনায় আমরা যখন মিলিত হই তখন তোমার মতো একজন কে প্রার্থনা করি। তুমি তো প্রবীরের মতো নও। তুমি তোমার মতো। তাই যত বারই তোমার কাছে হার মেনেছি তুমি তোমার বেকারত্বের অজুহাতে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছো। এবার ভাবতো আমি কত সুখি।
আমি ভেবে পায় না। বিয়ের পর থেকে এত স্বার্থপর হলাম কি করে ? প্রবীর যখনই আমাকে আদর করতে এগিয়ে আসে ঠিক তখনই আমি কোনো একটা কিছু চেয়ে বসি। এই মুহূর্তে রাজ মুকুট চেয়ে বসলেও রাজা কখনও না করবে না। তুমি তো জানো সুন্দরী হিসেবে আমার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। এ মুহূর্তে প্রবীরও না করবে না। আমার অবশ্য রাজ মুকুটের লোভ নেয়। আমার লোভ গহনার প্রতি। মাত্র ছয় মাসে আমার গহনার পরিমান বিশ ভরিরও বেশি। শাড়ীও পেয়েছি প্রচুর। বুদ্ধিটা নিশ্চয় মন্দ নয়।
আমার অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমানোর অভ্যাস। প্রবীরও উঠতে দেয় না। অথচ বজ্জাত শ্বাশুড়ীর জন্য পারি না। বলে কি না, ঘরের বউ এত বেলা পর্যন্ত ঘুমালে লক্ষী তো পেছন দরজা দিয়ে পালাবে। আমি মা হতে চেয়েছিলাম। ও হতে দেয়নি। বলে কিনা আরও দু’বছর পর। একটি মাত্র ননদ আর তাগড়া জোয়ান দেবরটি নিয়ে আমার সারাদিনের সংসারের কাজ কর্ম চলে। এতে শ্বাশুড়ীর চোখ রাঙ্গানি আর ভালো লাগে না। প্রবীরকে মাঝে মধ্যে অভিযোগ করি। সে সান্তনা দিয়ে বলে বুড়ো মা যতদিন আছে ততদিন। একটু মানিয়ে চলো। তারপরতো সব তোমার। আসলে কি ও আমার সুন্দরের প্রতি সবচেয়ে বেশী দুর্বল। ঈর্ষাটাও কম নয়।
যে কথাটা তোমাকে অনেকদিন আগে বলেছিলাম। আজ হঠাৎ করে আবার সেই কথাটায় মনে হলো। যদি আমার কখনও বিয়ে হয় তবে স্বামী হিসাবে হয়তো দেহটায় পাবে। মনটা নয়। আজও তাই অনূভব করছি। মনটা বুঝি এখনও অসুখী হয়েই রইলো। কলিং বেল বাজছে। আজ রাখি। ঐতো সে এলো বলে।—-চৈতী
শেলী চিঠিটা কয়েকবার পড়ে। তবুও যেন তৃপ্তি হয় না। একি হেয়ালি না অবজ্ঞা বুঝতে পারে না। চৈতীর উপর হিংসা হয়। মেয়েরা কখনও অন্যের সুন্দরের কাছে হার মানতে রাজী নয়। কোন মেয়েকে সুন্দর বললে সে সত্যি খুশী হয়। যদিও মুখ দিয়ে বলে আমি আর কি, সুন্দর তো তোমার চৈতী। শেলী চিঠিটা মাকে দিতে গিয়েও পারলো না। মা জিজ্ঞাসা করেছিল-
– কি রে, শুয়ে আছিস যে? তিমির আসবে না।
– তোমার তিমিরের এখন এখানে এসে দুঘন্টা সময় নষ্ট করার মত মানুষ নয়। তার অনেক কাজ।
– কি সব যা তা বলছিস?
– সত্যি বলছি মা। উনি খুব ব্যাস্ত।
– আমার কি মনে হয় জানিস। সেই ক’দিন আগের তিমির আর এখনকার তিমিরের মধ্যে অনেক ব্যবধান। ও কি করে এখন।
– জানি না। জিজ্ঞাসা করলে বলে, বেকারের নাকি সময়ের মূল্য অনেক বেশী।
– কিন্তু আমার একটা বিশ্বাস ছিল। আমি যখন ডেকে পাটিয়েছি ছেলেটা অবশ্যই আসবে।
– মা, তুমি এখনও আদি কালেই রয়ে গেলে। শোন এ যুগে কোন ছেলে মেয়ে গলায় বিশ্বাসের তাবিজ ঝুলিয়ে বসে থাকে না। তুমি তোমার বিশ্বাস নিয়েই থাকো।
– এসব কি বলছিস?
– হ্যাঁ মা। এটায় তো স্বাভাবিক। তুমি যতটা বিশ্বাস করো সে ততটা নাও করতে পারে। এতো অস্বাভাবিক কিছু নয়।
– কিন্তু তিমির তো অমন ছেলে নয়। নিশ্চয় কোথাও একটা ভূল হচ্ছে।
– ভালো ছেলে। এই তো। একশভাগ বিশ্বাস করি। কিন্তু মানুষের বাস্তবতা অনেক কিছু পাল্টে দেয়।
– ও হ্যাঁ। তুমি যেন কি একটা সারপ্রাইজ দেবে বলেছিলে।
– তোর বাবাকে একটা চাকরীর কথা বলেছিলাম। কার সাথে নাকি কথা হয়েছে। বলেছে তিমিরকে দেখা করার জন্য। ছেলেটাতো এলোনা। তোর বাবার কথায় মনে হলো চাকরীটা হতেও পারে।
– মা একটা সত্যি কথা বলবে?
– কি।
– তুমি ওকে খুব ভালোবাস। তাই না মা। ওর একটা চাকরী হলে তুমি খুব খুশী হবে। এইতো?
মায়ের দীর্ঘশ্বাস পরে। কষ্টের নিঃশ্বাস। কিছু একটা লুকাতে গিয়েও পারে না। শ্বাসরুদ্ধ কন্ঠে বলে-
– হ্যাঁ রে। ঠিক কথায় বলেছিস। ছেলেটাকে কখন যে এত আপন করে নিয়েছি জানি না। আমার পরাগ বেঁচে থাকলে আজ এত বড়ই হতো। পরাগ যখন মারা যায় তখন ও শুধু মা বলতে পারতো।
– মা তুমি চুপ করতো। কথায় কথায় শুধু মরা ছেলের জন্য কাঁদতে বসো। তোমার ছেলেকে আমরা দেখেনি। তাই মায়া দয়াও কম। আমি আছি, অপু আছে। তবুও তুমি কাঁদবে? দাদাকে মনে করে কেন শুধু শুধু কাঁদো।
– কেন কাঁদি সে তুই বুঝবি না। বুঝলে এ কথা বলতে পারতিস না।
শেলী মায়ের গলা জড়িযে ধরে চোখ মুছে দিয়ে বলে-
– মা, বাবাকে বলে তিমির দার চাকরীটা কনফার্ম করে দিতে বলো না।
– আমি তো প্রতিদিনই বলি। তোর বাবার তো সেই একই স্বভাব। বাসা থেকে বের হলেই আর কিছু মনে থাকে না।
কথাটা মিথ্যা নয়। শেলী কতবার চিটি পোষ্ট করতে দিয়ে দেখেছে একমাস পরেও সে চিঠি বাবার ব্যাগে ওভাবেই পরে আছে। কিছুদিন আগে শেলী নতুন জামাটার সাথে ম্যাচ করে পরার জন্য জলপাই রংয়ের একটা ওড়না আনতে বলেছিল। পনের দিন গেলেও একবারও সে কথা মনে হয়নি। মনে করিয়ে দিতেই বলে সরি। কাল ঠিকই নিয়ে আসব। সেই কাল আর আসে না। অবশেষে বন্ধের দিন বাসার সামনে থেকে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে একটা লাল টকটকে ওড়না কিনে বলেছিল-এই নে মা। তুই যে রংটা বলেছিলি ঠিক আছে তো। নইলে বদলে নিতে পারবো।
রাগে দুঃখে শেলীর খুব কান্না করতে ইচ্ছা করছিল। এই বয়সে কান্নাটা শোভা পায় না। তাই কোন ভাবে চেপে গেছে। বাবাকে তো আর বেশী কিছু বলা যায় না। তিমিরকে বলেছিল-দেখেন না বাবার কান্ড। তিমির হেসে বলেছিল – কাকা বাবু ভালোই করেছে। লাল রংটায় তোমাকে বেশ মানিয়েছে। মা কিছুক্ষন থেমে বলল-
– তুই বলতে পারিস না।
– পারি তো। কিন্তু বাবা কি না কি মনে করে. তাইতো বলি না।
– তোর স্যারের জন্য একটা চাকরীর কথা বলবি। তাতে মনে করার কি আছে।
– তোমরা আর স্যার রাখলে কোথায়। ঘরের ছেলে বানিয়ে ফেলেছো। উনাকে দেখলে তোমার ছেলের কথা মনে হয়।
অজিত বাবু দরজায় দাড়িয়ে গলা খাকারি দিয়ে জিজ্ঞাসা করল-
– মা মেয়েতে কি আলাপ হচ্ছে। বেশ জমিয়েছ দেখছি। অপু কোথায়।
– ও পড়তে বসেছে বাবা। শেলী জবাব দেয়।
শেলীর মা একটু দূরে সরে গিয়ে কিঞ্চিত ঘোমটা টেনে বলল,
– তিমিরের কথা বলছিলাম। ছেলেটার একটা চাকরী হলে ভালো হতো।
– ও হ্যাঁ। আজকে বিনোদ বাবু ফোন করেছিল।
– কি বলেছে বিনোদ কাকা। শেলীর চোখে বিস্ময়।
– বলেছে উনার ফার্মে একজন লোক খুব জরুরী দরকার। তিমির এসেছে?
– না। বলল শেলী।
– আমি আরও বলছিলাম কাল ছেলেটাকে সরাসরি বিনোদ বাবুর কাছে পাঠাবো। আপাতত: আট হাজার দেবে। তবে প্রাইভেট ফার্মে কিছুটা অভিজ্ঞতা থাকলে চাকরীর অভাব হয় না। বেতনটাও ভালো দেয়।
অজিত বাবু গায়ের জামাটা খুলতে খুলতে আফসোস করে বলল, কি করবে বাংলাদেশের ছেলেরা। কোন কাজ নাই। শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে বেকারত্ব। আজ কাল শিক্ষিত ছেলেরাই মাস্তানী, চাঁদাবাজি এসব করে বেড়াচ্ছে। তাদেরই বা দোষ কি। ডিগ্রি, মাষ্টার্স পাস করে তো আর বাপের হোটেলে বসে বসে খেতে পারে না। প্রেষ্টিজে লাগে। এইতো আসার সময় শুনলাম কোন লেনে নাকি তিনজন মাস্তান ধরা পরেছে। একজন তো গণ পিটুনিতেই শেষ। বাকী দু’জনের অবস্থা আশংকাজনক। পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। দেখতে শুনতে নাকি ভদ্র ঘরের ছেলে বলেই মনে হচ্ছে।
শেলী খুশী হয়।
– খুব ভালো হয়েছে বাবা। তিন জনেই মরে গেলে ভালো হতো। যেদিন আমাকে ধরেছিল, ইচ্ছা করছিল এক লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দিই।
– অমন চোর পালালে বুদ্ধি সবার বাড়ে। সেদিন লাথি দিতে পারলে তো একটা কাজের মত কাজ হতো।
শেলী চুপসে যায়। বুঝতে পারে, এতদিন পরে লাথি মারার বাহাদুরী দেখানোটা নির্ঘাত বোকামী হয়েছে। মা মৃদু হেসে উঠে দাড়ায়। রান্না ঘরের দিকে যেতে যেতে বলে, তুমি হাত মুখ ধুয়ে নাও। আমি চা নাস্তা দিচ্ছি।
চলবে…………………….

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top