কেন দরকার সুশাসন
কেন দরকার সুশাসন !
বাংলাদেশ একটি অতি ঘনবসতিপুর্ন দেশ । ছোট্ট এই ভূখন্ডে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৩/৪ কোটির কম নয় । একটা চাকুরীর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে হাজার হাজার আবেদন পড়ে । দিন যত গড়াচ্ছে , তত বাড়ছে প্রতিযোগিতা । অর্থনীতিবিদরা বলেন , জিডিপি বেড়েছে , আয় বেড়েছে , বেড়েছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা । সবই ঠিক আছে । কিন্তু এর সাথে তাল মিলাতে পারছেনা বেকারের সংখ্যা । মানুষের আয় , ক্রয়ক্ষমতা যে হারে বাড়ছে , বেকারের সংখ্যা-বৃদ্ধি হচ্ছে তার থেকে অনেক বেশী দ্রুত । গ্রাম-বাংলায় স্কুল-কলেজগামী যে সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী দেখা যায় , তাতে আগামীতে এ-দেশ চলমান থাকবে কি-না সন্দেহ । আগামীতে এদেশ থেকে বিশাল সংখ্যক এই ছাত্র-ছাত্রী , তরুন-তরুনীকে সারাবিশ্বে মাইগ্রেট করতে হবে । সে প্রসঙ্গে পরে বলি ।
আজ প্রথম আলো’য় প্রকাশিত “ঘুষ দিলেই চাকরী” প্রতিবেদনে দেখা যায় , সুশাসনের কত অভাব এদেশে । অবশ্য প্রতিবেদনে উল্লেখিত কূকর্ম এবারই প্রথম হচ্ছে তা নয় । সব সরকারের আমলেই এটা হয়ে এসেছে । যা হোক , দুঃশাসনের শেষ প্রান্তে চলে এসেছে দেশ । দলীয় প্রধানের ক্যারিশম্যাটিক (?) গুন এতোই ভীত , এবং একইসঙ্গে এতোই মোহিত করে রেখেছে যে , একজন সৎ মন্ত্রী সরকারী নিয়োগে তদবীর এবং প্রচ্ছন্নে দুর্নীতিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন । হোল কি তাঁর এতোদিনের সততার ঐতিহ্যের ? সব মূল্যহীন হয়ে গেলনা কি ? সীমাহীন বেকারের এই দেশে চাকুরী দেয়া হয় ঘুষের বিনিময়ে , এর চেয়ে লজ্জার আর কিছু বিষয় হতে পারেনা । অন্য কারনে ঘুষ নেয়ার চেয়ে চাকুরী প্রদানের বিনিময়ে ঘুষ নেয়া আরো জঘন্য । সারাদেশে পৌনে তিনলাখ সরকারী পদ শুন্য । সেগুলিতে নিয়োগের কোন সিদ্ধান্ত সরকার নিচ্ছেনা । তবুও যে দু-চারটা নেয় , সেগুলিও হয় বাতিল করতে হয় অথবা দলীয় লোকদের নিয়োগ দেয়া হয় , তা-ও অর্থেরই বিনিময়ে । দলীয় লোক হলেও নিস্তার নাই । চরিত্র আমাদের কোথায় গেছে ভাবলে চরম হতাশ হতে হয় ।
চাকরী তো হতে হবে সম্পুর্ন মেধার ভিত্তিতে , আর কোন ভিত্তিতে নয় । কারন তাতে প্রশাসনে মেধা আসবে । দেশের উন্নয়ন ঘটাতে হলে মেধা দরকার , মনন দরকার । ঘুষ দিয়ে যে চাকরী পাবে তার মনন থাকবে কেমন করে ! আর মনন না থাকলে এক সময় এরাই এই আওয়ামী লীগের আমলের দুর্নাম করবে , বলবে যে ঐ আমলে আমরা ঘুষ দিয়ে চাকরী নিয়েছি । আর শুধুমাত্র মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হলে সকলে তা-ই বলবেন, আতে সরকারের সুনাম হবে । সরকারগুলির বোধহয় মেধার দরকার নাই । কারন তাতে হয়তো তারা নিরাপদ ভাবেননা নিজেদের । মন্ত্রী মহোদয় যা বলেছেন , তা হচ্ছে শক্তি । আপনি ক্ষমতায় , আপনি মৌখিক পরিক্ষার নম্বর ২০ এর স্থলে ৩০ করলেন , আপনার শক্তি আছে বলে । যাতে করে মৌখিকে ইচ্ছামত নম্বর দিয়ে গ্রহনকৃত ঘুষ বৈধ করা যায় । আপনি নেননা সেটা বিশ্বাস করি , কিন্তু আপনি এই পরিবেশ চলতে দিয়েছেন , এর দায় আপনি এড়াতে পারেননা । দেশের মানুষ ইস্পাত-কঠিন মনোবলে বলিয়ান হয়ে সরকারকে দিয়েই এসব অন্যায় অপসারন করবে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে । সেই দিন আসতে হবে ।
আমাদের নেতা-নেতৃদের ধারনা , দলীয় লোকদেরকে সুযোগ না দিলে তারা ভোট আদায় করে দিতে পারবেনা , অর্থাৎ দল ক্ষমতায় যেতে পারবেনা । অথচ কথাটা যে সঠিক নয় , তা বারবার এদেশে প্রমানিত হয়েছে । ৫ বছরের বেশী ক্ষমতায় থাকতে পারেনি কোন দলই । তবুও কোন দলই তার ছাত্র , যুব সংগঠনকে তাদের অনৈতিক কর্মকান্ডের সীমা ছাড়িয়ে গেলেও , বাতিল কিংবা কমপক্ষে কিছুদিনের জন্যও স্থগিত করেনি । বরং দলীয় লোকদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা বাতিল করে দেয়া হচ্ছে , প্রশাসনে , নিয়োগে , টেন্ডারবাজীতে , মিডিয়ায় , সবক্ষেত্রেই দলীয় লোক বসানো হচ্ছে । এগুলি করেও ৫ বছরের বেশী ক্ষমতায় থাকতে পারেনা কোন দলই । বড়ই আজব আমাদের প্রিয় এই দেশের রাজনীতি এবং অধিকাংশ রাজনীতিকগন । কিন্তু এর নামতো সুশাসন নয় , হতে পারেনা । যত কম সুযোগ/সম্পদই হোক না কেন ,তা আপনি সাধারনের মাঝে বন্টন না করে আপনার দলের লোকজনদেরকে সব সুযোগ দিবেন , আর মুখে গনতন্ত্রের চর্চা হচ্ছে বলে বলবেন , তা হয়না ।
আমাদের অর্থ-বিত্তশালী রাজনীতিবিদগনের বোঝার কথা নয় শিক্ষিত-বেকার পরিবারগুলোর যাতনা । কি নিদারূন কষ্টে যে তাঁরা দিন যাপন করেন , তা বোঝার মত বোধশক্তি তাদের নাই । ঘরে ঘরের মর্মব্যাথা , কান্না ও তাঁদের বিভীষিকাময় জীবন-যাপন , যা জীবন-যাপন তো নয় , জীবনটাকে মেরে ফেলে শেষ করা যায়না বলে নিতান্তই যাপনের জন্য জীবনটাকে শুধুমাত্র টেনে নিয়ে বেড়ানো । এসব পরিবারে ঘরে ঘরে শুধু কান্নার রোল । এরা হাসতে জানেননা । এসবের কোন মূল্য রাজনীতিবিদগনের কাছে নেই । অথচ তাদের কল্যান করার জন্যইতো সমাজ এবং এর ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র এবং রাজনীতির উদ্ভব । কিন্তু কি হচ্ছে ! আমরা তাদের কথা তো ভাবছিইনা , দলীয় লোকদের ফেভার করতে গিয়ে এই আপামর জনতার ভালো-মন্দের দিকটি পরোপুরিভাবে অগ্রাহ্য করে চলেছি নিরন্তর ।
এরশাদ সরকারের পতনের বেশ কিছুদিন পর থেকেই দেশে টেন্ডারবাজী শুরু হয়েছে । দিনকে দিন এটা বর্ধিতহারে বেড়ে চলছে । টেন্ডারবাজী হলে অধিক সংখ্যক ঠিকাদারের হাতে কাজগুলি বন্টন না হয়ে ক্ষমতাশালী , প্রভাবশালী মুষ্টিমেয় কিছু ঠিকাদার অথবা ঠিকাদারও নন এরকম কিছু দলীয় লোকের মধ্যে কাজগুলি বন্টিত হয়ে যায় । এটাও আপামর জনসাধারনের সাথে প্রতারনা করার সামিল । কারন তাকে টেন্ডারের প্রতিযোগিতা থেকে দূরে রাখা হয় এই প্রক্রিয়ায় , কিছু লোককে টেন্ডার দাখিল করতে দেয়া হয় । কাজও তারাই পান এবং লাভও । এভাবে বিশাল সাধারন কন্ট্রাক্টরগণকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত করা হয় । আজকের তরুন প্রজন্মকে বিষয়গুলি অনূধাবন করতে হবে । তাদেরকেই করে নিতে হবে সুশাসন । তারা সরকারকে চাপে রাখবেন এবং সুশাসন আদায় করে নেবেন । যে কোনরকম নিয়োগবাজী , টেন্ডারবাজীর ক্ষেত্রে এই শক্তি শুধু গর্জেই উঠবেনা , প্রতিকার করে তবেই ছাড়বে ।
আমাদের একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি আছেন , ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস । এদেশবাসীর দুর্ভাগ্য যে , তার সেবা আমরা পাচ্ছিনা । তাকে আমরা সবসময় ছোট করে রাখতে চেষ্টা করেছি । কিন্তু এটা করে আমরা নিজেরাই হয়ে গেছি ছোট । আর তাঁর মত একজন সন্দেহাতীতভাবে সৎ মানুষকে কি হেনস্থাই না করা হচ্ছে । অথচ তাঁর হাতে ক্ষমতা থাকলে তিনি অত্যন্ত দক্ষহাতে এদেশকে দ্রুত উন্নত করতে পারতেন মালয়েশিয়া , সিঙ্গাপুর এই সমস্ত দ্রুত-উন্নত হওয়া দেশগুলির মত করে । হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী , আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবর রহমান আমাদের দিয়ে গেছেন স্বাধীনতা , আর ডক্টর ইউনুস আমাদের অর্থনীতিকে দাঁড় করাতে পারতেন মজবুত ভিত্তির উপর । কিন্তু আগেই বলা হয়েছে , আমরা দুর্ভাগা ।
আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যাবস্থা পূনঃপ্রতিষ্ঠা করা । আপনার উপর আস্থা যদি কেউ না রাখতে চায় , আপনাকে যদি কেউ বিশ্বাস না করে অথবা যদি কেউ মনে করে যে আপনি ভোটের ফলাফল বদলিয়ে দিবেন , এরকম কিন্তু করা যায় , আমি সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা , প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ছিলাম , আমি জানি তা করা যায় , অবশ্য মিডিয়ার এ-যুগে করাটা খুব সহজ কাজ নয় । অবুও আপনি ক্ষমতায় , আপনার করার সম্ভাবনা কিছু আছেই বলে যদি মানুষ মনে করে এবং বিশ্বাস করে , তবে জোর করে কেন আপনি গনমানুষের বিশ্বাসের প্রতি অশ্রদ্ধা করবেন ? আপনি না রাজনীতিবিদ । আপনি কূট-কৌশল অবলম্বন করে ক্ষমতায় যাওয়ার পথে কেন যাবেন ? গনমানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ঘটানোই তো আপনার কাজ । আপনি এটা গনমানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন কি-না , তা গনভোটের মাধ্যমে যাচাই করে দেখুন । সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন , সংবিধান পরিবর্তন কেন করা হয়েছে ? আপনারা নিশ্চয় জানতেন , এমন কাজ আপনারা করছেন যার ফলে মানুষের সমর্থন আপনাদের বিপক্ষে চলে যাবে শীঘ্র । এই ভয় ছিল বলেই সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে । ছাত্রলীগ , যুবলীগ আপনারা থামাননি , পুরাতন নেতাদের , যাদের এমপি হিসেবে মনোনয়ন দিতে পারেননি , তাদের বিভিন্নভাবে সুযোগ দেয়ার চেষ্টা করেছেন । তাদের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে বসিয়ে ব্যাংকগুলোকে অর্থশূন্য করেছেন । দল তো হালুয়া-রুটি বিলানোর জায়গা হতে পারেনা । দলের নেতা-নেত্রীগন কখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহনকারীকে চ্যালেঞ্জ করেননি । একারনে দল যে আজকে ডুবতে বসেছে , এর দায় শুধু নেতৃর নয় , আপনাদেরও । কিছু করতে না পারলে পদত্যাগ তো কমপক্ষে করতে পারতেন । ত্যাগী কিছু নেতার পদত্যাগের বিনিময়ে আওয়ামী লীগকে বাঁচানো যদি যায় , তবে দলের স্বার্থে তা-ই করতে হবে ।
আমি দল ভাঙ্গার চেষ্টা করছিনা । দল শক্তিশালী হোক , তা-ই আমি চাই । কারন বিএনপি ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে , ধর্মীয় জঙ্গীগোষ্টীর অবাধ বিচরনক্ষেত্র হবে এই বাংলাদেশ । যে কাজ করা হচ্ছে , তাতে দলের ভাঙ্গন রোধ করা এমনিতেই সম্ভব হবেনা । তৃনমূলের বড় নেতারাও মনে করেন , তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যাবস্থা সরকারকে আজ হোক , কাল হোক দিয়ে দিতেই হবে , বরং আগেভাগে দিয়ে দিলেই দলের উপকার হবে । দলের নাড়ীর কথা পড়তে না পারলে যা হওয়ার তা-ই হবে ।
বিএনপি প্রধান নরসিংদীতে বলেছেন , তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যাবস্থা নিবেন । আমরাও সেটা দেখতে চাই । সাথে সাথে আপনাকে যুদ্ধাপরাধীদের সাথে সম্পর্ক ছাড়তে হবে । কারন আপনি জানেন , একাত্তরে আসলেই তারা যুদ্ধাপরাধ করেছিলেন । আপনাকে সবিনয়ে বলছি , আপনি কোন কৌশল করবেননা । জামাতে ইসলামকে খোলাখুলিভাবে বলুন যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ছাড়তে পারবেন , তারা আসবেন । না পারলে আসবেননা । ধর্মীয় নেতাদের আপনিই আহবান করতে পারেন , তাঁরা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পবিত্র কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি দেশের প্রচলিত শিক্ষার ধারায় সম্পৃক্ত করুক । তারাও ডাক্তার হবে , ইঞ্জিনিয়ার হবে , গবেষক হবে । মূলধারার শিক্ষার্থীরা যে সুবিধা পায় , একই সুবিধা যাতে এই মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও পায় , সেটা যতদুর সম্ভব নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে । এ-কাজে ইসলামী ব্যাংক , রেটিনাসহ অন্যান্য ইসলামী প্রতিষ্ঠানসহ সারা দেশের ধনী মানুষকে আহবান জানাতে হবে । অসহায় , এতিম এই মাদ্রাসা ছাত্রদেরকে দেখভাল এবং শিক্ষার দায়িত্ব মানবদরদী মানুষগন না নিলে আর কে নিবেন ! মানুষ ভালোবাসবেন আপনাকে ।
আপনি আজ আরো বলেছেন , দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে । দুর্নীতিবাজদের বিচার করা হবে । শুনতে ভালো লাগলো । আশা করি আপনি তাতে সফল হোন । দেশের মানুষ এটাই চায় । কিন্তু দুর্নীতিবাজ বলতে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের দুর্নীতিবাজদেরই বিচার করলে হবেনা । কারন ওটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে গন্য হবে । সাথে সাথে আরো অনেক দুর্নীতিবাজ রয়েছে দেশে । তাই কিছু কিছু রাঘব-বোয়াল দুর্নীতিবাজকে শাস্তি দিয়ে “এখন হতে কেউ দুর্নীতি করলে কঠোর শাস্তি” এভাবে শুরু করতে হবে । সেনা শাসকরাও তো ব্যর্থ হয়েছেন । আসলে অতীত-দুর্নীতির বিচার করাটা সহজ বিষয় নয় । এটার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হলে , কিছু করতে চাইলে , ঘোষনা দিয়েই করতে হবে বলে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় । বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় এলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্থ না করে তা বর্তমান স্বাভাবিক নিয়মে চলতে দিলে , যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করে (জামাতীদের মধ্যে যারা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করবে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা যেতে পারে) , আওয়ামী কামড়ের বদলে কামড় না দিয়ে , দুর্নীতিবাজ হয়ে না চললে , দলীয়করন না করে সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করলে , যুবদল-ছাত্রদল লালন না করলে , এককথায় একটি ভদ্র-সভ্য ভাবমূর্তি নিয়ে চললে বিএনপি অনেকদূর পর্য্যন্ত এগোবে , বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বে এবং দেশও এগোবে একইভাবে । আমরা সভ্য জাতি হওয়ার পথে এগিয়ে যাবো ধীরে ধীরে । আর ভোটের দিন মানুষই ভোট দিয়ে এগিয়ে নিবে বিএনপি-কে । ভোট আর চাইতে হবেনা । আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে , কমপক্ষে কিছুদিনের জন্য হলেও । সরকারী পৌনে তিনলাখ পদ শুন্য । এই পদগুলি সম্পূর্ন স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পূরন করলে এবং মানুষের আকাংক্ষাকে শ্রদ্ধা করে দেশ পরিচালনা করলে আওয়ামী আমল আবার দেশে কবে আসবে , বলা মুশকিল ।
বিএনপি ওরকমভাবে না চললেও তৃতীয় শক্তি এদেশে কোনদিনই হবেনা । কারন দুটি দলই মানুষের ভোট নিয়ে সরকার গঠন করে দেশব্যপী যে কীর্তিকলাপ করে , তাতে বীতশ্রদ্ধ মানুষ আর কাউকে ক্ষমতার অংশীদার করবেনা । মানুষ মনে করবে , ক্ষমতার এবং অন্যান্য হালুয়া-রুটির ভাগ নেওয়ার জন্য এটা কিছু লোকের নতুন চাল । তবে তৃতীয় শক্তি হবেনা বলে দুটি দল নিশ্চিন্তভাবে লুট-পাট চালিয়ে যেতেও পারবেনা । কারন শুধুমাত্র স্বচ্ছতা , জবাবদিহিতা , সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে চাপে রাখার মত একটি দল গঠিত হবে এদেশে ; যে দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কোন চেষ্টা করবেনা কখনই । দুঃশাসনের অবসান হলে এই সংগঠনের আর কোন কর্মকান্ড থাকবেনা । সুশীল সমাজের মধ্য থেকে এর সূচনা হবে এবং এই দলের শক্তি হবে দেশের বিশাল শিক্ষিত বেকার তরুন সমাজ , এবং সকল শ্রেনী-পেশার মানুষ , প্রশাসনসহ সকল সার্ভিসের অনুভূতিসম্পন্ন কিছু মানুষ , যারা দেশ-সমাজ নিয়ে ভাবেন এবং যারা আসলেই চান নিয়ম-নীতি মোতাবেক দেশ চলুক , কোথাও কোন অন্যায়-অনিয়ম না ঘটুক । আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধভাবে এই সংগঠনের পতাকাতলে সমবেত হওয়ার এবং সবসময় সরকারকে চাপে রেখে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আপোষহীনভাবে ইস্পাত-কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলার সংকল্প মনে পোষন করি , তবে এই সংগঠনের উদ্ভব হবে অতি-নিকট ভবিষ্যতেই । নীরোর বাঁশি বাজারই অপেক্ষা শুধু ।