নারীর স্বত্তা বিনিয়োগ ।
পুরুষ করে কায়িক শ্রম আর নারী করে সন্তান উৎপাদন । এই একটি নীতি পুরুষকে সামাজিক প্রশাসক হিসাবে নারীর উপর কতৃত্বের সব অধিকার দিয়ে দিয়েছে । বেশীর ভাগ পুরুষ যারা নিজেদেরকে শুধুই কর্তা ভেবে নারীর উপর কতৃত্ব বজায় রাখতে চায় তারা কি আদৌ সংসার নামক সামজিক প্রতিষ্ঠানটিকে গনতান্ত্রিক করতে পেরেছে ?
হ্যা, গনতন্ত্র সবার আগে সংসারেই প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন । যে কায়িক শ্রমের কথা উল্লেখ করে পুরুষীয় আচরন করতে গিয়ে অনেক পতি-ই আজ নারীদের চোখে অত্যাচারিত তারা তো জানেন না যে তারা পুরুষদের কতটা ঘৃন্য হিসাবে নারীদের কাছে নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করছেন !একক শাসনে পরিবার পরিচালনা করতে গেলে তা আর পরিবার থাকে না । তা হয়ে যায় ভয়ে কাতর শোষনের রাজ্যে ভীত জনসাধারনের চুপ করে অধিকার বঞ্চনার কান্না বুকে চেপে রাখার মত । কায়িক শ্রম বলতে যেভাবে অর্থনৈতিক শ্রমকে বোঝানো হয় তা এখনও আমাদের দেশে এবং পৃথিবীর অনেক বড় দেশেও শুধু পুরুষ ভিত্তিক পরিকল্পনার উৎস ।
যদি একজন সন্তানের জন্য কোন নারীকে বলা হয় তুমি নিঃস্বার্থভাবে আমার সন্তান গর্ভে ধারন কর তবে কি কোন নারী তা করতে চাইবে ?নিশ্চই না ।
কারন এখানে তার সংসারের নিশ্চয়তাও নেই বা কোন ভবিষ্যতের আকাঙ্খাও নেই । তবে যখন কোন স্ত্রী একটি সন্তানকে বড় করছে, মানুষ করছে তখন কেন তাকে অর্থনৈতিক কাজ বলা হচ্ছে না । এই বিদ্বেষটা কোথা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে ? যে সন্তান বড় হবে সে ছেলে হোক বা মেয়ে হোক তাকে নিয়ে বাবারও আশার ফুলঝরি শোনা যায় কিন্তু বড় হলে যখন মেয়ে সন্তান সংসার করতে যায় তখনই সে ঘরের অনর্থনৈতিক মানুষ হিসাবে গন্য হয় ।
নারী একদিকে তার কায়িক শ্রম দেয়, মানুষিক শ্রম দেয় আবার অন্য দিকে সংসার সামলানোর মত বড় প্রশাসনিক শ্রমও দেয় । এই যে নারীর স্বত্তা বিনিয়োগ –তা একটি সংসারকে শুধু গোছানোই করে না তা পুরুষকে শক্তিশালী করার জন্য একটি বড় অনুপ্রেরনা ।
আজ খুবই দুঃখ হয় যখন দেখি নারীর মুক্তি বলতে শুধুই নারীর অর্থনৈতিক মুক্তির কথাই বার বার বলা হয় এবং এও বলা হয় যে নারীর উন্নয়ন শুধু প্রাতিষ্ঠানিক কাজের উপর বিবেচ্য । একজন নারী সে শিক্ষিত, সে গৃহিণী, সে ঘর সামলায়, সে স্বামীকে, সন্তানকে পরিবারকে সময় দিয়ে একটি পরিবারকে আগলে রাখে কিন্তু তবুও সে পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ন সদস্য বলে বিবেচিত হতে পারে না কারন তার কোন চাকুরি নেই বা সে কোন প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমের সাথে নেই ।
হায়রে! আধুনক সমাজ, অর্থনীতি মুলত পরিবার থেকে শুরু হলেও পারিবারিক কাজকে অর্থনৈতিক কাজের মধ্যে না এনে শুধু অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলে নারীদেরকে কি অসম্মানও করা হচ্ছে না ? আরেকটা ব্যপার লক্ষনীয় যে নারীরা চাকুরিও করবে আবার বাড়িতে এসে ঘরও সামলাবে তবেই সে আধুনিক নারী !
আমরা কাজ চাপিয়ে দিয়ে আধুনিকতার সঙ্গা দাঁড় করে দিতে চাই । একক মুখী চিন্তার কারনে নারীদেরকে নিয়ে বার বারই সামাজিক হেয়তারই বঃহিপ্রকাশ করা হচ্ছে । বিশেসজ্ঞরা একদিকে বলছেন বাবা মায়ের সন্তানকে সময় দিতে হবে, স্বামী বা স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে আবার আরেকদিকে বলছেন অবশ্যই দুজকেই অর্থনৈতিক কাজ তথা চাকুরি নামের বন্ধ দুয়ারে পা দিতে হবে । প্রাচীন প্রবাদের কথা এক হাতে দুই শোল ধরা যায় না । তেমনি যারা স্বামী স্ত্রী দুজনই কর্পোরেট তারা কিভাবে সাংসারিক কর্তব্য এবং অফিসের দায়িত্ব সমান ভাবে পালন করবেন ? আর এটা করতে না পারলেই সেটা আদর্শ সংসার হবে না এবং আদর্শ কাজও হবে না !
আমি নারীদের কাজকে তীব্রভাবে সম্মান জানাই, শ্রদ্ধা জানাই সেসব নারীদের যারা কঠোর পরিশ্রম করে সংসারের জন্য উপার্জন করছেন কিন্তু মেনে নিতে পারি না যারা গৃহিণী তাদেরকে হেয় করে চলাকে । আমাদের শিক্ষিত সমাজে একটি ব্যধি হিসাবে ছড়িয়ে পড়ছে যে এই শিক্ষার কোন দাম নেই যে শিক্ষা একটি চাকুরী যোগাতে পারে না !
আশ্চর্য, শিক্ষা যে শুধু চাকুরির জন্যই নয় তা কে বোঝাবে এ সব মানুষদের । আমি দৃঢ় চিত্তে বলতে চাই নারীদের যেমন আত্ন নির্ভরশীল হওয়ার জন্য শিক্ষা প্রয়োজন তেমনি শিক্ষিত গৃহিণী হয়ে সংসারকে সঠিক কাঠামো দেওয়ার জন্য, সন্তানকে সঠিক দিক নির্দেশনা দেওয়ার জন্যও শিক্ষা প্রয়োজন । তবে এ কথা নয় যে চাকুরি করলেই শিক্ষার সঠিক বহিঃপ্রকাশ হয় নইলে তা সংসারের কোন কাজেই আসে না !
নারীর যে সম্মান তা সব সংসারে, কর্মক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করাই হোক নারী দিবসের সবচেয়ে বড় প্রতিজ্ঞা আর গৃহিণী পেশাই হোক সবচেয়ে সম্মানের পেশা । আমি সব নারী সংগঠন, সরকার এবং আণ্তজার্তিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কাছে আবারও দাবী করছি গৃহিণীকে সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা হিসাবে ঘোষনা করা হোক । তবেই নারীকে সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করা আরো সহজ হবে কারন নারী সংসারে তার কায়িক শ্রমতো দেয়-ই তার সাথে সে করে তার স্বত্তা বিনিয়োগ ।