Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

দুই টুকরো কাশ্মিরী শাল – ৩

: | : ২১/১২/২০১৩

( পূর্ব প্রকাশিতের পর  )

– দীদাআআআ ! আমি এসে গেছিইইই !!

যে  মধুর মতন  মিষ্টি  কচিকন্ঠের রিনিঝিনি ধ্বণি শোনার জন্য গত কদিন  প্রতিটা মুহুর্ত ব্যাকুল হয়ে ছিলেন  , বহুল প্রতিক্ষিত সেই কন্ঠের উচ্ছসিত ডাক কানে যেতেই বুকের ভেতর কোথাও একফোঁটা রক্ত বুঝি ছলকে উঠে সালেহার । আধ শোয়া অবস্হা থেকে উঠে বসতে বসতেই দেখতে পান এরই মধ্যে চঞ্চল  পায়ে তার বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে  কচি কন্ঠের অধিকারীটি ।

– ও দীদামনি . তুমি কি ঘুমাচ্ছিলে নাকি !

আসলেই বুঝি চোখ লেগে এসেছিল সালেহার । যদিও আজকাল রাতেরবেলার ঘুমটা দিনদিন যেভাবে কমতে শুরু করেছে , তাতে দিনের বেলা পারতপক্ষে বিছানায় শরীর লাগাতেই ভয় পান । তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করেন এই ছোট্ট ঘর আর পাশের লাগোয়া এক চিলতে বারান্দায় ঘুরে ফিরে সময় কাটানোর । কিন্তু দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়া শেষে এই সময়টায় যেন রাজ্যের যত ক্লান্তি  আর  অবসাদ এসে ঘিরে ধরে তাকে । শত চেষ্টা করেও কিছুতেই যেন পারেন না মাথাটাকে সোজা রাখতে ।

আজও তেমনি  দুপুরের খাবার পর একটা পান মুখে নিয়ে নিজের বিছানায় একটু কাৎ হয়েছিলেন । পান চিবুতে চিবুতেই কখন দুচোখ বুঁজে এসেছিল টেরও পাননি । এই অবস্হার মধ্যেই হৃদয় তোলপাড় করা ডাকটি মুহুর্তের মধ্যে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার করে তার কালের আঁচড়ে অবসন্ন হতে চলা  দেহমনে । আর বুকের সাথে সুতোয় ঝুলানো চশমা চোখে লাগানোর পর যখন পরিষ্কার দেখতে পান নিজের বিছানার সামনে দাঁড়ানো ফুটফুটে দেবশিশুটিকে , তখন সত্যিই যেন স্বার্থক মনে হয় তার এই অনন্তকাল ধরে বেঁচে থাকা !

মনে হবে নাইই বা কেন ? এ যে সালেহার একমাত্র নাতি । তার স্বামীর রক্তধারা যে প্রবাহমান এই দেবশিশুর মধ্য দিয়ে ! এ কি তার জন্য কম আনন্দ আর গর্বের !

– নাগো দাদুভাই , আমি তো দুইফর ওয়াক্তে ঘুমাই না সোনা । এমনেই একটু পাশ ফিরা ছিলাম । তুমি আসো ! আসো দাদা … আমার এই পাশটায় আরাম কইরা বসো !

পরম মমতা ভরে একটু সরে গিয়ে নিজের পাশে জায়গা করে দেন সালেহা নাতির জন্য ।

দাদীর নির্দেশিত জায়গাতেই আরাম করে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে  দেবশিশুটি ।

আট বছর বয়সী ফুটফুটে সুন্দর ছেলেটার নাম অভিক । জিন্সের শর্টস আর হালকা আকাশী রঙের ফুলহাতা গেন্জি  পরিহিত ধবধবে ফর্সা অভিককে সত্যি সত্যি দেবশিশু বলেই বুঝি মনে হয় । সব ভুলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন সালেহা নাতির মুখের দিকে  । আবার ঐ অবস্হাতেই হঠাৎ করে যেন তার মনে পড়ে এভাবে নাতির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকা ঠিক হচ্ছে না মোটেও । নজর লেগে যেতে পারে তার সাত রাজার ধনের । নিজের নজর কাটাতেই বুঝি তাড়াতাড়ি অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে অদৃশ্য অপশক্তিদের উদ্দেশ্যে থুতু ছেটান !

– নানুর বাড়ী থিকা আসলা কখন দাদুভাই ?

যেন বেশ কদিন পর ফিরে পাওয়া মহামূল্যবান সম্পদের মাথায় সস্নেহে হাত বুলান যেন সালেহা ।

– মাত্রই তো আসলাম দীদা । এসেই তো সোজা তোমার কাছে !

বাসায় ফিরেই নাতি সবার আগে তার সঙ্গে দেখা করতে চলে এসেছে  – একথা জেনে সালেহা বেগমের হৃদয় আরেকবার ভরে ওঠে অবর্ণনীয় এক সুখানুভূতিতে ।

– আর কয়টা দিন নানীর বাড়িতে বেড়ায়া আসলেই পারতা দাদা !

– আর কতো থাকবো বলো ? পাঁচদিন তো থাকলাম । আর নানা – নানী তো কাল চেকাপের জন্য সিঙ্গাপুর যাচ্ছে ।

বয়সের তুলনায় কথাবার্তা দারুন গুছিয়ে বলতে শিখেছে অভি ।

– তা তুমি কার সাথে আসলা দাদু ?

– মাম্মীর সাথে । তা বলে মাম্মী কিন্তু বাসায় এসেছে বলে ভেব না । আমাকে গেটে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে কি কাজে যেন !

– তুমি তাইলে উপরে আসলা কার সাথে ?

– কেন ? ওয়াচম্যান আংকেলের সাথে !

তথ্যটা দিয়েই কি যেন একটা দুষ্টু বুদ্ধি চাপে অভির । মিচকে হাসি দিয়ে তাকায় দাদীর দিকে ।

– আচ্ছা দীদা , ওয়াচম্যান মানে কি বলো তো ?

ছোট্ট অভির আচম্বিত প্রশ্ন শুনে সালেহা বেগম বুঝতে পারেন পাজি নাতিটা তাকে শেখানো বিদ্যার পরীক্ষা নিতে চাইছে । আজকাল নাতির কাছ থেকে অনেক কিছু শিখছেন সালেহা । তাকে শেখানোর ব্যাপারে নাতির ভীষণ উৎসাহ । মাঝে মাঝে এরকম আচম্বিত পরীক্ষাও দিতে হয় তাকে । ব্যাপারটা নিজেও বেশ উপভোগ করেন সালেহা ।

শুধুই কি বর্তমানকেই উপভোগ করেন সালেহা  ? অভির তাকে নতুন কিছু শেখানোর যে ভীষণ আগ্রহ – তার সঙ্গে কি নিজের অতীত জীবনের কোন ঘটনার মিল দেখতে পান না সালেহা ?

পান ! ভীষণভাবে পান !

অভির এই ছেলেমানুষী খেলার মধ্যে সালেহা খুঁজে পান এই দুনিয়ায় তার দেখা সর্বশ্রেষ্ঠ  ভালমানুষটির প্রচ্ছন্ন ছায়া । যে মানুষটি তার জীবনে এসেছিল অনেকটা ঘটনাচক্রেই ।বলা যায় এক অতি উজ্জল ধুমকেতুর মতন । আবার ধুমকেতুর মতনই চিরতরে হারিয়ে গেছে  তার জীবন থেকে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ! কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই তার জন্য রেখে গেছেন জীবনের সর্বশ্রেষঠ স্মৃতিগুলো । আসলে সালেহা বেগমের সংগ্রামী জীবনের ঐ সময়টুকুই ছিল অনাবিল সুখের । পরম স্বস্তির ।

 

– ও দীদা বলছো না যে ! তারমানে ওয়াচম্যান অর্থ ভুলে গেছো তুমি এরমধ্যেই !

ভাবনার সুতো ছিঁড়ে বর্তমানে চলে আসেন সালেহা ।

– নাগো দাদুভাই ! আমি ভুলি নাই গো । ওয়াচম্যান মাইনে হইলো দারোয়ান ! ইয়া বড় বড় মোচ অলা রুস্তম পালোয়ানের মতন দেখতে দারোয়ান । কি পারছি না !

নাতির সাথে সাথে নিজেও শিশুসুলভ দুষ্টুমিতে মেতে ওঠেন সালেহা !!  ( চলবে )

 

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top