চিঠি বা স্মৃতির পাতা
এভাবেই তো বলা যায়,
‘লেখা বাঁকা হবে বলে
সে প্রথম চিঠি লিখেছিল রুলটানা খাতায়।’
‘আর আমি লিখেছিলাম সবুজ পাতায়।’
এ কথা শুনে অনেকেই
আক্রমনাত্মক প্রশ্ন করে বসবেন।
তাই বলে এতো অল্প বয়সেই প্রেম,
এতো অল্প বয়সেই চিঠির আদান-প্রদান?
আমি এর কোন উত্তর দিতে পারব না।
আর কিই বা উত্তর দেব আমি তাদের,
যখন আমার হৃদয় হৃদয়ানুভূতি বিনে
আর কোন কিছুরই মুল্য দিতে জানে না।
‘সে ভোর বেলা শিউলী ফুল তুলতো
আর মালা গেঁথে দাঁড়িয়ে থাকত জানালার পাশে।
তার ভয় ছিল, এ ফুল অন্য কেউ নিয়ে গেলে
সে সারা জীবনের জন্য হারাবে তার প্রিয় মানুষেরে।’
না, সে ফুল অন্য কেউ নিতে পারে নি কোন দিন।
তবু সে হারায়েছে আমারে। অথবা যে পদ্ম বিলের ধারে
তার স্বপ্ন ছিল বাসা বাঁধার, সে বিলে ফোটে না পদ্ম আর।
সেখানে শুধু আবাস হারানো বালিরাশি আর মরীচিকা।
‘তার হৃদয় শুধু স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতো;
এই প্রজাপতি হয়ে উড়ে বেড়াতো তো একটু পরেই ভাসতো মেঘে।
আর মেঘের ডাকার গর্জনের সঙ্গে সেও চিৎকার করতো,
আমি বলতাম, ওরে আমার ময়ূরী, এবার পেখম মেলো।’
এখন আমি আর মেঘের গর্জন শুনি না।
সারাটা বাদল বেলা কাটে আমার ইটের দালানে।
কোন বা বাদল দিনে হঠাৎ-ই পড়ে যাই বৃষ্টি মাঝে
কোন না কোন ভাবে পালিয়ে যাই কোন ইটের প্রাসাদে।
‘হঠাৎ হঠাৎ সে এসে আমাকে চমকে দিত।
কখনও বা জানাতো ‘আতা গাছে বেঁধেছে টুনটুনি বাসা।’
কখনও বা বলতো, ‘লক্ষীপেঁচা তাকে দেখে চোখ মেরেছে।’
আমি বলতাম, ‘এতো সুন্দর চোখ থাকলে আর পেঁচার দোষ কী!’
তখন মুখ বেঁকিয়ে আভিমান করে চলে যেত।
সে অভিমান না ভাললাগা তখন বুঝতাম যখন সে এসে বলতো,
‘বলো না সত্যিই কি আমার চোখ সুন্দর তাই তাকিয়ে থাকে সে এমন ভাবে?’
‘যেমন হঠাৎ-ই সে একদিন এসেছিল;
সবে ফুটেছে শিউলী ফুল, তেমন গন্ধ ছড়ায় নি বাতাসে বাতাসে
সে এসে দাঁড়িয়েছিল আমার জানালার পাশে, হেরিকেনের অল্প আলোতে
দেখেছিলাম ভীত আর কান্না ভরা মুখ। চোখে নেই আর আগের তেজ।’
হাত ধরে সে ব্যাকুল কন্ঠে বলেছিল, বলো, ভুলে যাবে না আমায়।
বলো, ভুলে যাবে না আমায়, বলো, ভুলে যাবে না আমায়।
এতো আকুলতা আর দেখে নি আগে। কেন এতো সাধ স্মৃতিতে থাকার;
বুঝিনি আমি, বুঝিনি আমি, বুঝিনি আমি কারন তার এতো ব্যাকুলতার।
তারপর সে চলে গেছে, বহুদূরে
আর কোনদিন দেখা হয় নি, শিউলীতলায় বা বাদল বেলায়।
ভুলি নি তারে, কত শত লিখেছি চিঠি সবুজ পাতায়।
বলেছি, ভুলি নি, ভুলি নি, ভুলি নি আমি তোমারে।
আজও আমি বুঝিনা কেন সে চায় নি
আমি ভুলে যাই তারে, কেন সে হারাতে চায় না স্মৃতির পাতা হতে।
কেন ছিল এতো ভয় হারাতে স্মৃতির আঁধারে। কেন সে চেয়েছিল
থাকিতে হৃদয়ে, ভালবাসে আমারে-আমারে ভালবাসে বলে?
আর হয় নি দেখা, আর হবে না দেখা হয়তো কোন দিন।
স্মৃতির পাতায় তার রুপ, তার হাসি, তার প্রেম অমলিন।
তার প্রেম তার আকুলতা ভেসে বেড়ায় শিউলীর সুবাসে।
আমি বেঁচে আছি আজও নিয়ে সে সুবাস নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে।
১৯-০৪-২০১৩, ঢাকা। শুক্রবার, বেলা ১২টা থেকে ২টা।