Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

দুই টুকরো কাশ্মিরী শাল – ৪

: | : ২৩/১২/২০১৩

(পূর্ব প্রকাশিতের পর )

সালেহা বেগমের জন্ম বলতে গেলে হত দরিদ্র পরিবারে । গরীব কৃষক বাবার অনেকগুলো সন্তানের মধ্যে সকলের ছোট সালেহার ছোটবেলাটা বলতে গেলে কেটেছে অনেকটা নিত্য অভাব দেখেই । পরের জমিতে বর্গা চাষী হিসেবে কাজ করা বাবার পক্ষে এতো বড়ো পরিবার সামলানো ছিল কষ্টসাধ্য ব্যাপার । তারপরেও কিভাবে যে চলে যেত ওদের সংসার তা ছোট থাকতে না বুঝলেও বড়ো হয়ে যাবার যখনই ভেবেছে – ভীষণ অবাক হয়েছে সালেহা । অবশ্য সংসারের চাকা চালিয়ে নেবার পেছনে তার মায়ের অবদানও কম ছিল না । কারণ সংসারের তাগিদে মাকেও সময়ে অসময়ে মাতব্বর চাচার বড়িতে যেতে হয়েছে ফুট ফরমায়েশ খাটতে ।

আসলে তিন ভাই আর তাকে সহ পাঁচ বোন মিলিয়ে দশজনের সংসারে চাহিদাও নিতান্তই কম ছিলো না কখনোই !

যাই হোক , বাপ মা বেঁচে থাকা অবধি অভাবে থাকলেও খুব একটা অনাদরে কাটেনি সালেহার কৈশোর অবধি জীবন । যেটা প্রথম সে টের পেতে শুরু করে তাকে বারো বছরের মতন রেখে বাবা মারা যাবার পর । এরমধ্যে বাবা বেঁচে থাকতে বড় দুই বোনের বিয়ে দিয়ে যেতে পেরেছিলেন ।

বাবা মারা যাবার পর মা বেঁচেছিলেন আরো কয়েকবছর । এর মধ্যে একে একে সবার বড়ো ভাই তিনটাও বিয়ে করে বউ নিয়ে আসে ঘরে । তাদের ঘরেও এক এক করে আসতে থাকে সন্তান । যে কারনে চাইলেও মা বোনদের জন্য খুব বেশি কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না । যে কারনে মায়ের আগের মাতব্বর চাচার বাড়ীতে মাঝে মধ্যে  ফাই ফরমাস খাটতে যাওয়াটা বাধ্য হয়েই নিয়মিত হয়ে দাড়ায় ।

তবে তার মায়ের একটা ভারী জেদী আর আত্বমর্যাদাবোধ ছোটবেলা থেকেই লক্ষ্য করেছে সালেহা । আর তার সাথে কোন অবস্হাতেই ভেঙ্গে না পড়ার দৃঢ় মানসিকতা । যে কারনে শত কষ্টের মধ্যেও ছেলেদের কোন বাড়তি কিছুর জন্য চাপ দেননি। বৌদের সাথে জড়াননি কোন বিবাদে । এমনকি নিজের মেয়েদেরকে কখনো নিয়ে যাননি  নিজের সাথে কাজ করতে । বরং নিজের পরিশ্রমের পরিমান বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বহুগুন । আর আশ্চয্য , বলা যায় রীতিমতন অসাধ্য সাধণের মতনই এতো প্রতিকুলতার মধ্যেও বাকী তিনজনের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ের ব্যবস্হাও করতে পেরেছিলেন ।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । সম্ভবত টানা কয়েকবছরের অমানুষিক পরিশ্রমের কারনেই একদিন হটাৎ করেই অসুস্হ হয়ে বিছানায় পড়লেন সালেহার মা । সেই যে পড়লেন আর সুস্হ হয়ে ওঠা হয়নি তার । কয়েকমাস ভূগে একদিন চলে গেলেন জীবনকে চিরবিদায় জানিয়ে ।

পেছনে রেখে গেলেন ততোদিনে তরুনী হয়ে ওঠা সবচেয়ে ছোট মেয়ে সালেহা বেগমকে তিন ভাইয়ের জিম্মাদারীতে ।

ছোটবেলা থেকেই মুখচোরা আর গুটানো স্বভাবের সালেহা মাকে হারিয়ে যেন আরো বেশি বাকহীন হয়ে যেতে থাকেন । ভাইয়েদের সংসারে মুখবুঁজে এককোনে পড়ে থাকাটাই যেন মেনে নেন নিজের নিয়তি হিসাবে । ভাইবৌয়েদের মন জুগিয়ে চলা আর সংসারের কাজকর্ম ও তাদের ছেলেমেয়েদের দেখাশুনা করাই হয়ে দাড়ায় সালেহার জীবনের একমাত্র আরাধ্য ।

এভাবেই একে একে কেটে যেতে থাকে সালেহার দিন । দিন মাস পেরিয়ে কেটে যেতে থাকে একটি একটি করে বছর । হয়তো বা  মুখ বুজে সংসরের  ঘাণি টেনে চলা মেয়েটির অস্তিত্বই বুঝি ভুলতে চলেছিল সংসারের মানুষগুলো ! আর তাই কখন মেয়েটির বয়স বিশের কোঠা পেরিয়ে গেল তা চোখেও পড়েনি তাদের । কিংবা গ্রামের নিয়মে বিয়ের বয়স পেরিয়ে প্রায় বুড়ি হতে চলেছে মেয়েটি – একথাটি ভাইয়েদের মনে করার মতন সামর্থ্যও হয়তো বা ছিল না আসলে ।

কিন্তু না , ভাইয়েদের একদিন মনে পড়েছিল অবিবাহিত বোনটির কথা । আর তাই তারা একদিন সন্ধার পর হটাৎ করেই একসঙ্গে বাড়ীতে ঢুকে বোনকে বহুদিন পর ডেকে নিয়ে শুনিয়েছিল সুখবরটি ।

কি ? না , তারা বোনের বিয়ের ব্যবস্হা করেছে ! এবং করেছে অনেক বড় ঘরে ! পাশের গ্রামের ধনী জোতদার সুরুজ মিঞা , বয়স যার সত্তর পেরুতে চলেছে এবং সদ্যই তিনি হয়েছেন পত্নীহারা – তার সঙ্গেই সালেহার বিয়ে ঠিক করেছে ভাইয়েরা । আগামী শুক্রবার বাদ মাগরীব বিয়ে । আর মাত্র পাঁচদিন পর ।

ভাইয়েদের কথা শেষ হলে বিনা প্রতিবাদে সব শুনে ঘর ছেড়ে বাইরের অন্ধকার উঠানে এসে দাঁড়িয়েছিল সালেহা । প্রতিবাদ সে করবে কি ! প্রতিবাদ করার মতন কিছু নেইও আসলে । কারণ নিজের জীবনকে ততোদিনে ভাগ্য বলে মেনে নিতে শিখেছেন তিনি ।

সেদিন সালেহা অন্ধকারের মধ্যে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলেন আকাশের দিকে । কি দেখছিলেন তিনি সেদিন ?  নিজের ভাগ্যতারাকে খুঁজছিলেন ?? তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন এই ঘটনার সূত্র ধরে তার দিকে দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসা ধুমকেতুটিকে ?

যে ধ্রুবতারাটির নাম খন্দকার আহাদুল হক । আশেরপাশের কয়েকটা গ্রামের মানুষ যাকে দারুন শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ডাকে  ” আহাদ মাষ্টার ” নামে !! ( চলবে )

 

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top