Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

রিকশাওয়ালা ভাইয়ের রাজনীতি জ্ঞান…..

: | : ২৯/১২/২০১৩

রিক্সার ভাড়া শুনে মেজাজই খারাপ হওয়ার যোগাড়… আইজি গেইটে আসতেও রাজী হচ্ছিল না কোনো রিকশা। শেষে একশ টাকা দিয়ে আইজিগেইটে আসতে রাজী হইছিল এক রিকশা ওয়ালা…

(রাজনীতি সম্বন্ধে তার জ্ঞান দেখি আমার চেয়ে বেশি)

আমরা তিনজনের মধ্যেই আলাপ করতেছি দেশের পরিস্থিতি নিয়ে… আমাদের কথা শুনে রিকশা ভাইই কথা বলতে শুরু করলো…. দেশটার যে কি হাল নিজের চোখে দেখতেছি। সকালে রিকশা নিয়া বাইর হইছি কত ঘটনা চোখের সামনে ঘটতে দেখছি কি বলব। পুলিশরাও অত্যাচারী হয়ে উঠেছে, পল্টনে হোটেল খুলছিল কর্মচারীরা, পুলিশ এসে কর্মচারীদের এমন পিঠানি দিল কি আর কমু আপা। মারে আর বলে দোকানে ঝাপ দে (সাটার টানা) । আচ্ছা কন, এই যে তোরা দোকান বন্ধ করলি হেরা সংসার চালাইব কেমনে। দোকান বন্ধ করতে কইলেই পারতি মারলি কেন তাদেরকে। আর একটা সভার জন্য দোকান পাঠ বন্ধ করতে হবে কেন। আজকে সভা নিষেধ করে তারাই মিছিল বের করছে।

শুনেন সরকার যা উন্নয়ন করছিল এইবার সব ডুবাই দিছে। কিছুদিন আগে ক্ষমতা ছাড়লে আমিই ভোট দিতে যাইতাম, এখন আর ভোট দিতে যাইমু না। এরশাদের আমলে আন্দোলন ছিল কিন্তু দোকানপাঠ বন্ধ হয় নাই আপনারাই নৌকায় ভোট দিবেন, হের লাইজ্ঞাই এরা পাশ করবো,

-নৌকায় ভোট দিমু এই ধারণা কেনো হলো?

– আপনারা সরকারী চাকরী করেন, আর যারা সরকারী চাকরী করে তারাই ভোট দিব এই সরকারকে।

মাঝখান থেকে আমাদের মত গরীব জনগণ মারা যাইতাছে। আর এরশাদের কথার কোন ঠিক নাই। আপনার দেইখেন ভোটের একদিন আগে সে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে।

আমরা কইলাম- আরে না না, এরশাদ তার নীতিতে এখনো অটল মানে তার কথা সে এখনো নড়চড় করে নি

-আরে এইটা তো তার দেখাইন্যা কথা, সে এমনি এমনি চুপ আছে নি, যেই শুনছে ঢাকায় তার দলের চাইরটা সীট ছাইড়া দিছে হেই সময়ই রওশনরে দিয়ে কাম চালাইতাছে।

আপা আমরা ঢাকা আছি অনেক শান্তিতে আছে, ঢাকার বাইরে ত অনেক খারাপ অবস্থা। মানুষের দিন রাইত ডরে কাটে। ঢাকা নিরাপত্তা বেশি দিছে তাই খারাপ ঘটনা ঘটে কম।

-ঠিক কইছেন ভাই। আল্লাহ আমরারে শান্তিতে রাখছে। ভোটে এরা পাশ করলে এমন আন্দোলন সারা বছর ধইরা হইব। আজকে ভাড়া দিছেন ষাইটের জায়গায় একশ, কাল দিবেন দেরশ পরশু দিবেন দুইশ। দিতেই হইব এছাড়া উপায় নাই। সমস্যা আপনাদেরই বেশি হইব, চলাফেরায় কষ্ট হইব। আর আমরা মেইন রাস্তায় চালাইত না দিলে গলির ভিতর চালামু বুচ্ছেন আপারা।

এখন সেনাবাহিনী নামাইছে। সেনাবাহিনীদেরকে সরকার এক্সট্রা টেকা দেয় হেইডা বেতন না বাড়তি টাকা বুচ্ছেন। তাইলে সেনাবাহিনি কি আমারে আপনারে দেখব, না, সরকারের পক্ষে কাম করব। সেনাবাহিনী যদি জনগনের লাইজ্ঞা কাম করতো তাইলে হেফাজতের সময় তারা রাস্তায় নামতে পারতো। কিন্তু তারা তা করে নাই…

(আমরা তিনজনে ফিসফিস করে বললাম সর্বনাশ বেটা কয় কি, এত কিছু মাথার মধ্যে তার আসে কিভাবে)

ফরিদাবাদের কাছে আসলে কয়, …. পার্টির …. লোকের কথা, এই বেটা এক নম্বর সন্ত্রাসী, আমি ওয়ারীতে থাকি হের সম্বন্ধে আমি অনেক জানি। হেই দাঁড়াইছে ভোটে, পাশ করবো সন্ত্রাসী কাম করবো , তাতে কি! জনগণের উপকার কি করবো হেয়। আমি ভোট দিতাম না কিন্তু আমার ভোট মাইনষে দিয়া দিব, আর হেরাই পাশ করব।

তার চাইয়া ভালা আপনারা চাকরী করতাছেন, বেতন পাইয়া ঘরে বইসা খান, রাজনীতি আর দেশ দিয়া কি অইব, আর আমরাও রিকশা চালাই, যা পাই তাই দিয়া খাইয়া বাইচা থাকুম। আমরা তিনজন ছিলাম রিকশায়। আমি, আমার ছোট বোন আর এক দিদি।

ব্যাংক গেইট থেকে তিনজন রিকশা করে আইজি গেইট আসার পথে রিকশাওয়ালা ভাইয়ের রাজনীতিক আলাপ শুনতে শুনতে আসছি। শেষে বল্লাম

– ভাই আপনি দেখি আমাদের চেয়ে রাজনীতি বেশি বুঝেন।-

-হ আপা দেখি, বুঝি কিন্তু কই না কিছু। আরও অনেক কথা বলেছিল, সব কথা ইয়াদ নাই।……

একজন রিকশাওয়ালা সব বুঝে, সব জানে আর আমরা দেখেও দেখি না, বুঝেও না বুঝার ভান করি। আজিব জাতি আমরা।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top