Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

যেভাবে আসবে শুদ্ধতা

: | : ২৯/১২/২০১৩

আমাদের দেশে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, রাজনীতিবিদরা ক্ষমতা খুবই পছন্দ করেন, সাথে আবার অবৈধ অর্থও। যদি এরকম হোত, ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, তবে অবৈধ অর্থ পাওয়া যাবেনা, তখন দেখা যেত, কেউ আর ক্ষমতায় যেতে চাচ্ছেননা। দেশের অধিকাংশ মানুষের সাথে আজ আমারও এটাই চাওয়া, কেমন করে আসবে সেই পরিস্থিতি, সেই অবস্থা, যাতে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে, তবে পাওয়া যাবেনা অবৈধ অর্থ।

অবৈধ অর্থের ছড়াছড়ির দুটি অসুবিধা। একটি হোল, এটাতে অর্থ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে কিছু মানুষের হাতের মুঠোয়, বঞ্চিত হয় দেশের অধিকাংশ মানুষ। আর দুই হচ্ছে, দেশ পরিচিত হয় একটা চরিত্রহীন দেশ হিসেবে।

কিভাবে বঞ্চিত হয় দেশের অধিকাংশ মানুষ, সংক্ষেপে তার কিছুটা আলোকপাত করা যেতে পারে। ইঞ্জিনিয়ার-কণ্ট্রাকটর খারাপ কাজ করে, বঞ্চিত হয় এলাকাবাসী, কষ্টের লাঘব হয়না তাদের। নিয়োগবাজী করে পকেট ভর্তি করে এক শ্রেণীর অমানুষ, বঞ্চিত হয় মেধাবী তরুন। ভর্তিবাজী করে যারা, তাদের পকেট ভারী হয়, বঞ্চিত হয় সাধারন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা। টেন্ডারবাজী করে একশ্রেনীর ঠিকাদার / ঠিকাদার নামধারী মাস্লম্যান লাভবান হয়, বঞ্চিত হয় অসংখ্য প্রকৃত ঠিকাদার। সেই অর্থে অবৈধ না হলেও গার্মেন্টস মালিকগনের হাতে প্রচুর অর্থ সঞ্চিত হয়, মরে গরীব গার্মেন্টসকর্মী। তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের পক্ষ থেকে অতি দরিদ্রদের জন্য যে খাদ্য-শস্য-অর্থ বরাদ্দ প্রদান করা হয়, অধিকাংশই তার মেরে দেয়া হয়, বঞ্চিত হয় অতি দরিদ্ররা।  আরো অনেক ক্ষেত্র আছে, কিন্তু স্থানাভাবে আর উল্লেখ করা হোলনা। বরং বলা যায়, কোন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নাই, দু:শাসন নাই ?

স্বয়ংক্রিয়ভাবে কি এগুলি বন্দ হয়ে যাবে, প্রিয় পাঠক ? রাজনীতিবিদ-সরকারী কর্মকর্তাগন পরিবর্তিত হওয়া পর্যন্ত কি সেজন্য আমরা অপেক্ষা করব ? তারও আগে প্রশ্ন, পরিবর্তিত কি হবেন তারা আদৌ ?

কিন্তু রাজনীতিতে তো অবশ্য, অবশ্যই স্বচ্ছতা থাকতে হবে, থাকতে হবে জবাবদিহিতাও। দেশে তো অবশ্যই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতেই হবে। এর প্রধান কারণ, আমাদের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়াতে হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়বেনা, কর্মসংস্থান হবেনা। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত হলেই কেবলমাত্র এগিয়ে আসবেন, নতুবা কেন তাঁরা ঝুঁকিপূর্ন বিনিয়োগে এদেশে আসবেন ? আরো আছে দেশীয় অর্থ খুবই অল্প লোকের হাতে সঞ্চিত হয়ে যাওয়ার বিষয়টা, যা পুর্বে বলা হয়েছে।

রাজনৈতিক একটা তৃতীয় ধারার অপেক্ষায় এবং চেষ্টায় আছেন অনেকে। কিন্তু পারছেননা তাঁরা। কারণ স্বাধীনতার পর বিয়াল্লিশ বছর ধরে ক্ষমতায় যাওয়ার রাজনীতিকে দেখে ও এর প্রত্যক্ষ শিকার হয়ে হয়ে মানুষ এতো ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে উঠেছে যে, সে-উদ্যোগ দেশের সচেতন অংশ আসলেই অপছন্দ করে।  মনে করে যে, এটা ক্ষমতার হালুয়া-রুটি লাভের কারো নতুন উদ্যোগ।

এজন্যই আমার মনে হয়, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সকল সময় সরকারকে চাপে রাখা প্রয়োজন। দেশের ক্ষমতায় যারাই থাকুন, যদি তাঁরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশ পরিচালনা করে তো ভাল। যদি তারা তা না করে, তবে সরকারকে সবসময় চাপে রাখার মতো অত্যন্ত শক্তিশালী একটি অরাজনৈতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা হওয়া দেশে অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। দেশের স্বনামধন্য নিরপেক্ষ ব্যক্তিগন সমন্বয়ে গঠিত হতে হবে এই দল। দেশের ক্ষমতায় যাওয়ার কোন উদ্যোগ এই দল কখনই গ্রহণ করবেনা এবং দুর্নীতি অথবা অন্যকোন কারনের সন্দেহভাজন কোন ব্যক্তি এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবেনা।

আমাদের একটি বিশাল ছাত্র-যুবসমাজ আছে, যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ছাত্রদল, যুবদল কিছুই করেনা। অধিকাংশই এরা দরিদ্র, মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। নিজ পরিবারের দু:খ-দুর্দ্দশা-হতাশা-কান্না অতি কাছ থেকে দেখেছে এরা, পারিপার্শিকতায় আবার এরা দেখেছে কিভাবে অল্পসময়ের মধ্যে একশ্রেণীর মানুষ ফুলে-ফেঁপে উঠেছে এবং উঠছে প্রতিনিয়ত:। সরকারী যেকোন চাকরীতে নিয়োগের ক্ষেত্রটা তারা দেখে, যেখানে তারা দেখে ঘুষ এবং দলীয় ব্যক্তি ছাড়া কেউ চাকরী পায়না ।

সকলেই এরা চায় সুশাসন, চায় সুষ্ঠু, ন্যায়ানূগভাবে চলুক দেশ। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতেও দেখা যায় বিস্তর তরুন সংবাদকর্মী রয়েছেন, সংবাদের সাথে ছুটতে ছুটতে যারা দেখতে পান যে, না! এভাবে আর চলতে পারেনা রাষ্ট্র-সমাজ। স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরও এরকম অশুদ্ধ রাজনীতি দেশে চলতে পারেনা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক আছেন, এরকম একইভাবে ভাবেন তাঁরাও । কিন্তু সংগঠিত কোন প্ল্যাটফর্ম না থাকায় তারা এগিয়ে আসতে পারছেননা। সরকারী-বেসরকারী সব সার্ভিসেই কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন, যাঁরা চাননা দেশ যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক। এককভাবে কিছু করা যায়না বলে তারাও কিছু করতে পারছেননা আসলে। তাই চাকরী যাওয়ার ভয়ে মুখ বুঁজে সবকিছু মেনে নিয়ে চাকরী বাঁচিয়ে রাখছেন তারা। দেশে প্রেশারগ্র“প বা অন্যকোন নামে এধরনের কোন সংগঠনের উদ্ভব হলে উক্ত সংগঠন যদি তাদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরী করতে পারে, তবে গোপনে হলেও তাঁরা অবশ্যই সংশ্লিষ্ট হবেন তাতে, না হয়ে তাঁরা আসলে পারবেননা। একইভাবে সকল শ্রেনী-পেশার মানুষের, এমনকি রাজনীতিবিদগনের মধ্যেও অনেকের এবং যেকোন দলীয় প্রভাবের আওতায় রয়েছেন এমন ব্যক্তিদেরও সমর্থন পাওয়া যাবে বলেও আমি বিশ্বাস করি।

অস্বচ্ছতা, দু:শাসনের যে কোন ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে এই সংগঠন শুধু গর্জেই উঠবেনা, প্রতিকার করেই তবে ছাড়বে। যতক্ষন এই ঘটনার প্রতিকার না হবে, ততক্ষন পর্যন্ত থামবেনা এই দল। প্রতিবাদ এবং শেষ পর্যন্ত প্রতিকার করেই তবে  ছাড়বে। অন্যায়কাজ, দু:শাসনের পরিমানের উপর নির্ভর  করে ঠিক হবে আন্দোলনের ধরন। কোন পথ অবলম্বন করে এই আন্দোলন, সংগ্রাম পরিচালিত হবে, তা সংগঠন বসে ঠিক করবে। তবে এগুলির সফলতা নির্ভর করবে প্রথমত: জনগনের কাছে দলটির নেতা-কর্মীদের ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার উপর এবং দ্বিতীয়ত: আন্দোলন-সংগ্রামের তীব্রতার উপর।

সংগঠনটির কেন্দ্রে বিভিন্ন বিভাগভিত্তিক কমিটি থাকবে, যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং কমিটি, আইন-শৃংখলা সংক্রান্ত কমিটি, নিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি ইত্যাদি। কমিটিগুলির কাজ হবে সেক্টরভিত্তিক যে দুর্নীতির, যে দুঃশাসনিক কাজগুলি দেশে ঘটবে, সেগুলির পুংখানুপুংখ তদন্ত করা এবং কি করতে হবে, সে সুপারিশ প্রদান করা। টেন্ডারবাজির একটা উদাহরন দেখতে পারি আমরা। যে স্থানে টেন্ডারবাজি সংগঠিত হবে, সেখানকার জেলা কমিটি তদন্ত করে তদন্ত-প্রতিবেদন কেন্দ্রে পাঠাবে। কেন্দ্র মনে করলে কেন্দ্রের ইঞ্জিনিয়ারিং কমিটি দিয়ে পূনঃরায় তদন্ত করাবে এবং তদন্ত-প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে। সংগঠন তখন সেগুলি মানতে সরকারকে বাধ্য করবে বিশাল এই তরুন সমাজের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। যেকোন উপায়েই হোক না কেন সরকারকে বাধ্য করতেই হবে। তবে উপায় আর যাই হোক, কোনমতেই সহিংস হবেনা কখনও। শক্তির সন্মিলন যদি ব্যপক হয়, তবে অহিংস পথেই সরকারকে বাধ্য করা যাবে, এমনকি বাধ্য করা কোন বিষয়ই হবেনা।

বর্তমানে জাতীয় সংসদ নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারকে বাধ্য করা যাচ্ছেনা বলে অনেকে ভাবতে পারেন প্রেশারগ্রুপ দিয়ে হবেনা, মানে সরকারকে বাধ্য করা যাবেনা। এসম্পর্কে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামাত আসলে জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দল এইঅর্থে যে, জনগনের আকাঙ্ক্ষা কি, কি চায় গনমানুষ, তা তারা বুঝেও বুঝেনা ইচ্ছা করেই। কারন জনগনের চাহিদা বুঝলে যে তাদের অবৈধ চাহিদা পুরন হবেনা। জনগনের জন্য ভাবেনা যে দল, কেবল আখের গোছাতে ব্যস্ত থাকে, তার পেছনে কেন থাকবে মানুষ?এইজন্যই এদেশে কোন পার্টির আন্দোলন দানা বেধে ওঠেনা।

প্রশ্ন উঠবে, তবে ভোট পায় কেন দলগুলি? আসলে ভোটের একটা উত্তাপ আছে এবং ভোট দেয়ার বিভিন্ন কারনও আছে। সেগুলির মধ্যে ভোট প্রয়োগের অধিকারবোধ, গনতান্ত্রিক ধারা অব্যহত রাখার মানসিকতা, উতসবমূখর পরিবেশের উপস্থিতি, এগুলি অন্যতম। তবে মানুষ কিন্তু তার আকাঙ্ক্ষা, তার চাহিদা, সুশাসনের বাস্তবায়ন ঘটবে মনে করে ভোট দেয়না।

সবশেষে বলি প্রিয় পাঠক, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কেবলমাত্র এভাবেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এবং আমি আরো মনে করি সুশাসন প্রতিষ্ঠার আর কোন পথ নাই, নাই এবং অবশ্যই নাই ।

এই আন্দোলন শুরু এবং এগিয়ে নিতে পারে , এরকম দশ/বারজন প্রথিতযশা ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা যেতে পারে । (নামগুলির ক্রম গুরুত্বপুর্নতার ক্রমানুসারে নয়)

১। Jonab Motiur Rahman, সম্পাদক, প্রথম আলো।

২। Professor Abdullah Abu Saeeyid, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র।

৩। Dr. Hossain Zillur Rahman, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।

৪। Dr. Iftekharuzzaman, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি।

৫। Dr, Zafor Iqbal, অধ্যাপক, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

৬। Mr. Rubayet Ferdous, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

৭। Mr. Nurul Kabir, সম্পাদক, নিউ এজ।

৮। Dr. Zafrullah, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।

৯। Mr. Anisuzzaman, এমিরেটাস প্রফেসার।

১০। Dr. Muhammod Yunus, নোবেল ল’রিয়েট।

১১। Advocate Sultana Kamal.

১২। Mr. Monjurul Ahsan Bulbul, সাংবাদিক নেতা।

 

আমাদের সকলেরই সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এভাবে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন বলে একান্তভাবেই আমি মনে করি ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top