উপন্যাস ” পাথরের মানুষ ” পর্বঃ ১
ডিসেম্বর মাস সমগ্র বাঙ্গালি জাতির বিজয় ও গৌরবের মাস । সকলের চিত্ত মহা আনন্দ উল্লাসে কাটে এ সাফল্যের মাসে । কেননা দীর্ঘ নয়টি মাস মরণ পণ রণ করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে লাখো লাখো বাঙ্গালি বীর সৈনিকেরা পাকিস্তানের জুলুম অন্যায়-অত্যাচারের কবল থেকে ছিনিয়ে এনেছে মায়ের দেশ , মাটি ও ভাষাকে । কেড়ে নিয়েছে বিজয় এনেছে স্বাধীনতা । তাই এ মাসে বাঙ্গালির মনের উত্ফুল্লের কথা কলম দ্বারা লিখে সমপন্ন করা অসম্ভব । আর ছাত্র-ছাত্রীদের মনও ভরে যায় এ মাসে ।কারণ হলো , এ মাসেই বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়ে থাকে । এস আলম নামে একটি ছোট ছেলে প্রথম স্থান অধিকার করে চতুর্থ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে । এ শুভ বার্তা মাকে জানানোর উদ্দেশ্যে বাড়ির পানে দিল ভোঁ দৌড় । পৌছে দেখে দরদী মা ঘরে বসে অঝোড় নয়নে কাঁদছে । এ দৃশ্য তার মনের খুশির স্থানে ভাটা পড়ে কাঁন্নার জোয়ার ভেসে উঠলো । কাঁন্নার স্বরে জিজ্ঞাসা করল ,
মা তোমার কি হয়েছে ?
মা কোন উত্তর দিলনা । পর মূহুর্তে বড় ও মেজো ভাই স্কুল থেকে এসে জিজ্ঞাসা করল ,
আলম , মা কাঁদছে কেন ?
মা নিজেই উত্তর দিল ,
এখন টাকা পাব কোথায় ?
কি জন্য মা ? বড় ভাই জিজ্ঞাসা করল ।
তোরা স্কুল যাবার পর তোদের বড় জ্যাঠো আবার বাড়ি ভিটা বণ্টন করে দিয়েছে । এ নিয়ে সাত বার ভিটা বাড়ি বণ্টন করল এটা যেন তার মজার খেলা । আগামী কালই ঘর সরিয়ে জায়গা খালি করতে হবে । তোরা তো জানিস , তোর বাবা পেট ভরে তিন বেলা খাওয়াতে পারেনা ; নুন আনতে পান্তা ফুরায় । এর মাঝে তোদের অত্যাচারী জ্যাঠোর জ্বালা যন্ত্রণায় মরছি । আর ঝগড়া ফ্যাসাদের তরে কোনদিন তৃপ্তি মনে খানা খেতে পারিনা । আল্লাহ্ কি নারাজ হয়েছে ? এ অত্যাচারীর বিচার কি হবে না ?
তিস্তা নদীর তীরে আলমদের বসত বাড়ি । এ নদীর তীরবর্তী যত লোক বসবাস করে তার মধ্যে একমাত্র নিরীহ ও নিত্যান্ত গরীব আলমের বাবা । তিনি একজন সাধারণ দিন মজুর । তিন ছেলে ও স্ত্রীকে কোন বেলা পেট পুরে খাওয়ানো তার পক্ষে সম্ভব হয়নি । বসত ভিটা ছাড়া তিল ঠাঁই জমি নেই তার । বড় দুঃসহ কষ্টে দিন অতিবাহিত হয় এ পরিবারটির । এ চরম দুঃখের মাঝে বড় জ্যাঠো বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে । সকল অত্যাচার মাটির মত নীরবে সহ্য করে আসছে এ পরিবারটি ।
একদিন হঠাত্ আলমের বাবা পেটের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে বিছানায় গড়াগড়ি করছে ।