Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উপন্যাস ” পাথরের মানুষ ” পর্বঃ ২

: | : ০৭/০১/২০১৪

মেম্বার বলল ,
মিয়া ভাই আপনার বাড়ি ভিটা খালি করতে হবে ।
কেন ?
এ কথা শুনে মনে হচ্ছে , যেন পৃথিবী গায়েব হয়ে আকাশ ভেঙ্গে পরল । বাবার জবান বন্ধ হয়ে থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন । বড় ভাই জিজ্ঞাসা করল ,
কেন আমরা এ ভিটা ছেড়ে যাব ?
মেম্বার সাহেব বিক্রির দলিল বের করে দেখিয়ে দিল তার বাবার টিপসই । স্বচোখে দেখে বাবাকে জিজ্ঞাসা করল ,
আব্বা আপনি কি টিপসই দিয়েছিলেন ?
বাবা কাঁন্নার স্বরে উত্তর দিল ,
আমি বলতে পারিনা তবে হাসপাতালে আমার একটি টিপসই নিয়েছিল ।
আইনের সীমা তো লঙ্ঘন করা সম্ভব নয় । তাই নিরুপায় হয়ে বাবা কাকুতি মিনতি করে বললো ,
আজকে আর কোথায় গিয়ে দাঁড়াব ? আমাকে তিন দিনের সময় দেন ।
একদিনও সময় হবে না , নির্দয় জ্যাঠো উত্তর দিল ।
মেম্বার সাহেব বুঝিয়ে অবশেষে একদিনের সময় দিল । আলমের বাবা চোখ বুজে এ নিঠুর অবিচার মেনে নিতে বাধ্য হলেন । পরের দিন শুক্রবার নিজের বসতভিটা ছেড়ে রিফুজী হয়ে আশ্রয় নিলেন একই এলাকার হামিদ মিয়ার বাড়িতে ।

১৯৯৮ সাল আষাঢ় মাস গত সাত দিন ধরে মুষলধারে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে । তিস্তা নদী ভরে উপচে গিয়ে মাঠ ঘাট ডুবে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে । শুধু মেম্বারের বাড়ি ছাড়া সবার ঘরে বন্যার পানি উঠেছে । কোন প্রাণির ঘরের বাইরে বেড়ানোর সুযোগ নেই । একান্ত প্রয়োজন হলে , কলা গাছের ভেলা বা ডিঙ্গি নৌকা ব্যবহৃত হয় । একটানা তিন মাস বন্যা থাকায় মানুষ কোন কাজ করতে পারেনা । তাই সারা বছরের সঞ্চয় রেখে দেয় এ দুর্দিনের জন্য ।
বড় অনুশোচনা ও কষ্টের বিষয় ৭ দিন ধরে আলমদের তোলা উনুনে কোন আগুন জ্বলার সুযোগ পায়নি । কি করে অনল জ্বলার সুযোগ পাবে ? এক পয়সাও সঞ্চয় নেই তাদের এ দুর্দিনের জন্য । আলমের বাবা ক্ষুধার চোটে বৃষ্টিতে ভিজে মেম্বারের নিকট গিয়ে বলল ,
৭ দিন ধরে সবাই অনাহারে , একটা দানাও নেই ঘরে ।
দানা নেই তো আমি কি করবো ? এক পয়সাও সাহায্য করার মত সাধ্য আমার নেই । আমার কি ধন ভাণ্ডার আছে , যা আপনাকে দিয়ে দেব । কর্কশ কণ্ঠে উত্তর দিলেন মেম্বার সাহেব ।
না ভাই আপনার সম্পদ চাচ্ছিনা । শুনলাম , দুর্দিনের জন্য সরকার থেকে রিলিফের কার্ড এসেছে ? যদি দয়া করে একটা কার্ড দিতেন আল্লাহ আপনাকে হজ্বের সওয়াব দিতো ।
তা ঠিকই শুনেছেন , এ কার্ডের জন্য এক হাজার টাকা লাগবে । এটা বার মাসি কার্ড প্রতি মাসে ত্রিশ কেজি করে চাউল পাবেন ।
আমি যতটুকু জানি , সরকার এ কার্ড বিনামূল্যে দেন ।
আরে মিয়া ভাই বেশ সুন্দর তো নীতিকথা বললেন । আমি কি মেম্বার হয়েছি বিনা পয়সায় ? লাখ লাখ টাকা ভোটের ক্যান্ভাসে খরচ করেছি । শুধু তাই না একটি করে ভোট ৫০০ টাকা দিয়ে কিনেছি । আর আপনাকে কার্ড দিব সুধা মুখে মগের মুল্লুক পেয়েছেন , তাই না ?
ভাই এখন আমার কাছে এক পয়সাও নেই । কার্ড দেন পরে আস্তে আস্তে শোধ করে দেব ।
নইলে আমার নিষ্পাপ ছেলেরা হা-ভাতে মরে যাবে ।
কার্ড বাকি দেবনা , তবে একটা বুদ্ধি দিতে পারি । বাবু ( কেডু ) সুদেরুর কাছ থেকে ১০০০ টাকা নেন পরে সুদে আসলে শোধ করবেন ।
নিরুপায় হয়ে আলমের বাবা সুদে টাকা নিয়ে মেম্বারকে দিলেন । টাকা নিয়ে সত্‍ ও সমাজ সেবক মেম্বার সাহেব বললেন ,
চলে যান আগামী কালই কার্ড পাবেন ।
বাবা ঘরে গিয়ে দেখেন নিষ্পাপ তিনটি হীরক টুকরা ক্ষুধার চোটে নয়নের জলে সিন্ধু সৃষ্টি করেছে । ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তনা দিচ্ছে ,
তোরা কাঁদিস না কালকে রিলিফ পেলেই পেট ভরে খেতে পারবি । সপ্তাহ খানেক ভাত পেটে যায় নাই শুধু দু এক মুঠো চিড়া মুড়ি খেয়ে আছে । ক্ষুধার অসহ্য জ্বালায় বড় ও মেজো ভাই অবিরাম কাঁদছে । আলম কাঁদার কোন শক্তি পাচ্ছে না গতরে । বাবা তাঁকিয়ে দেখলেন ,
বিছানায় যেন এক টুকরো শুকনো পাট খরি অপলক দৃষ্টিতে হা করে দম নিচ্ছে । কি বেদনাদায়ক ঘটনা !

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top