আমরা করব জয় একদিন
দ্বিতীয় পর্ব
সম্ভবত প্রকৃতিতে এখন সন্ধা নেমে আসছে।চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার তাই বলছে।ইমা এতক্ষনে অন্যভূবনের দরজায় পৌছে গিয়েছে।
অনেকক্ষন বৈরী প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে করতে এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিল প্রায় জেলান।ইমার অবস্থা দেখে সে অস্থির হয়ে পড়েছে।কোনভাবে কোথাও থেকে যদি আগুন পাওয়া যেত।এই অবস্থা চলতে থাকলে বরফের সমুদ্রে সমাধি হয়ে যাবে তাদের।খুব বেশী হলে আর এক দুই ঘন্টা টিকতে পারবে তারা।ইমা অনেকটা অচেতনতা মৃতের অবস্থায় চলে গিয়েছে।সে বারবার ঝাকুনি দিয়ে চেপে ধরে শরীরের উত্তাপ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে ইমার।
না না জেলান জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগল।আমাকে কোন রাস্তা দেখাও আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল।তার বাকী কাপড় খুলে ভাল করে ইমাকে ঢেকে বড় পাথর টাতে শুইয়ে দিল।আশেপাশে চারিদিকে দৌড়ে দেখল।আবার চেষ্টা করল পাথরের ঘর্ষনে আগুন তৈয়ারীর। কোন কিছুতে সফলকাম হলনা।
সে নিজে ও অত্যন্ত অবসন্ন বোধ করল ঠান্ডা ক্ষুধা তৃষ্ণায়।নিশ্চয় কোন উপায় আছে যা এই মূহূর্তে ক্লান্তির কারনে চোখে পড়ছেনা। অস্থির হয়ে হাহাকার করতে লাগল।
দৌড়োতে দৌড়াতে এক পর্যায়ে হোচট খেয়ে পড়ে গেল।পানি পেল এতক্ষনে।গর্ত বা ডোবা টাইপের কিছু একটাতে সম্ভবত সে উল্টে পড়েছে।অসম্ভব ঠান্ডা ফিজিং ওয়াটার।দাতে ঠকঠক করে কাপতে কাপতে উঠে দাড়াল। ঠান্ডা হলে ও পানির সন্ধান পাওয়াতে খুশী সে।আগুনের ব্যবস্থা করতে পারলে পানি গরম করতে পারবে।নিশ্ছিদ্র অন্ধকার এখন জায়গাটাতে।অনেকটা হাতড়ে হাতড়ে আন্দাজে স্টেপ গুনে গুনে ইমার কাছে আবার ফিরে আসতে সক্ষম হল।
তাদের অফিস ভৌগলিক সপ্তম প্রকোষ্ঠের কি অবস্থা কে জানে।মঙ্গল বুধ ইউরেনাস শুক্র শনি ইউরেনাস প্লুটো সব অক্ষত আছে তো? প্রতিটি গ্রহের চারিদিকে সাতবার বিভিন্ন যাত্রায় প্রদক্ষিনে তাদের প্রকোষ্ঠে পৌছতে হয় তাই এই নামকরন তাদের কার্য্যালয়ের।
আর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে সম্ভবত তাদের ব্রেদিং ও থেমে যাবে যদিও এখনও তার থিন্কিং জগত চলছে বিপর্যস্ত প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে।শরীরের বিভিন্ন অংশ আস্তে আস্তে অসাড় হতে শুরু করেছে।
কিন্তু ঠিক শেষ মূহূর্তে ঘটল অলৌকিক ঘটনা।মনে হল পালনকারী প্রভূ এই যাত্রায় বাচিয়ে দিতে চাইছেন এই দুইটি প্রান।
খুব বড় বিজলী চমকের শব্দের মত একটা বিষ্ফোরন যেন হল তাদের কাছে পিঠে।প্রচন্ড একটা আগুনের গোলা এসে আঘাত করল জেলানের সামনে পাথরটার গায়ে।সঙ্গে সঙ্গে বড় পাথরটাতে আগুন ধরে গেল।আশেপাশে কোন কাঠখড় বা দাহ্য পদার্থ না থাকাতে আগুন ছড়িয়ে গেলনা।শুধু পাথরটা জ্বলতে থাকল অনেকটা সৌর চুল্লীর মত।তাদের চারিপাশ সহসাই দিনের মতই আলোকিত হয়ে উঠল।
চিৎকার করে আনন্দে হেসে ফেলল জেলান।তার ইচ্ছে হচ্ছিল সাত আসমানের উপরে গিয়ে পালনকারী প্রভূর পায়ের কাছে বসে(যদি সম্ভব হত) কৃতজ্ঞতা ভালবাসার স্পর্শ করে আসে।
দ্রত ইমাকে কোলে করে আগুনের কাছে এনে বসাল।তার হাত পা ম্যাসাজ করে তাকে সচল করার চেষ্টা করল।আস্তে আস্তে তাদের দুজনের দেহে সাড়া আসতে শুরু হল।রক্ত চলাচল শুরু হল।
আগুনের আলোয় ইমাকে অপার্থিব সুন্দর মনে হচ্ছে জেলানের।
আস্তে আস্তে আইমা চোখ খুলে তাকাল।আগুনের আচ পেয়ে উত্তেজিত হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসল।
ওহ জেলান তুমি অসাধারন ।তুমি আমাকে বাচিয়ে রেখেছ।আগুন তৈরী করতে পেরেছ।আমি তোমাকে নিয়ে খুব গ্রেট ফীল করছি জেলান।
আমি না আগুন এসেছে পরম প্রভূর কাছে থেকে হাত ইশারা করে জেলান আকাশের দিকে ঈঙ্গিত করল।
তবে আমি বুঝেছি সুইটহার্ট যে কোন কিছু প্রাপ্তির জন্য তুমি যদি শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ চেষ্টা কর তিনি কোনদিন তোমাকে একা যুদ্ধের ময়দানে ফেলে যাবেন না।তিনি প্রথমে দেখতে চান তোমার সর্বোচ্চ এফোর্ট।তারপর যদি তুমি সফলকাম না হও তিনি তোমাকে সফলতার দরজায় পৌছে দিবেন।
দুজন দুজনকে গভীর আবেগে দেখতে লাগল।সেই দৃষ্টি যা অতি প্রাচীন অতি নবীন যা একান্ত মানব মানবীর পরস্পরের ভালবাসার।