ধারাবাহিক বিজ্ঞান-কল্পকাহিনি: পঞ্চম স্বীকার্য (পর্ব – ২)
পরবর্তী কিছুদিন আলিমের সময় খুব ব্যস্তভাবেই কেটে যায়। একটা বড় কাঠ কারবারীর কিছুলোক হাতে নাতে ধরা পড়ে। সেটা নিয়ে থানা পুলিশ করতে করতে আলিমের সময় কেটে যায়, এর মধ্যেই জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের দু’তিনজন অফিসিয়াল আসেন প্রকল্প পরিদর্শনে। তাদের থাকা ঘোরাফেরা খাওয়া দাওয়া সবকিছুর দিকে আলিমকেই নজর দিতে হল। এই দুই ঝামেলা শেষ না হতে হতেই মৌমির ছোটখালা আলিমকে ফোন করেন,
– কী খবর আলিম, আছ কেমন?
– জ্বী খালা ভালো আছি। আপনি কেমন?
– আমি ভালো। তোমার অফিস কেমন চলছে?
– হ্যাঁ খালা ভালো।
– তা খালি অফিস করলেই হবে। ছুটি ছাটা নিয়ে কয়েকদিনের জন্য ঘুড়ে যাও। মৌমিও আছে।
– দেখি খালা।
– কোন দেখাদেখি নাই। পরশু শুক্রবার। তুমি কালই হাফ অফিস করে সোম-মঙ্গল দুইদিন ছুটি নিয়ে এখানে ঘুরে যাও।
– জ্বী আচ্ছা দেখি।
– দেখাদেখি নাই তুমি আসছ।
কথা বলার পর আলিমের মনে হলো আসলেই তার কিছুদিন বাইরে থেকে ঘুরে আসা উচিত। বনে থাকতে থাকতে তার স্বভাবে হয়তো কিছুটা বুনোভাব চলে এসেছে।
বৃহস্পতিবার তিনটার দিকে আলিম রওনা দিল। ছোটখালার বাসায় সে যখন পৌঁছায় তখন মাঝরাত। এত রাতে গ্রামের কেউই জেগে থাকে না। অনেক কষ্ট করে এক রিকসাওয়ালাকে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে তারপর রাজী করাতে পারল।
সে যখন খালাবাড়িতে পৌঁছায় তখন অবাক হয়ে দেখল মৌমি বারান্দায় বসে আছে। সাথে মৌমির খালাতো বোন সুমি। সুমি দুলাভাই দুলাভাই করতে করতে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলল। পরবর্তী তিনদিন আলিমের কীভাবে যে কেটে গেল বুঝতেই পারল না।
বুধবারে আবার সে নিজের আস্তানায় ফিরে আসে। সাথে মৌমিও। পরদিন যখন সকালবেলা আলিম অফিসের জন্য বের হয় তখন মৌমি বলে ইন্টারনেটে টাকা নাই। একটু লোড দিওতো। কিছু মেইল করব। আলিম মাথা নেড়ে জানায় সে লোড করে দিবে। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে সে সন্ধ্যায় বাড়ির বারান্দায় বসে মৌমির সাথে গল্প করছিল।
মৌমি বলে জানো আমাদের রত্নার মেয়ে হয়েছে। কী সুন্দর! ফেসবুকে দেখলাম।
– রত্নার? কোন রত্নার?
– আরে ঐযে আমাদের ক্লাসের। বিয়েরদিন যে তোমাকে বোকা বানাল।
– ও হ্যাঁ মনে পড়েছে। কেমন আছে সে?
– ভালো। আমাকে একটা মেইলও করেছে।
আলিম কিছু বলে না। মাথা নাড়ে। মৌমি বলে, সিডনী নাকি অনেক সুন্দর শহর। ছবির মতো সাজানো। কিন্তু রত্না কী বলে জান?
-কী?
– ও বলে। ছবির মতো সাজানো এই জন্যই তার ভালো লাগে না। ওখানকার মানুষ গুলোর মাঝে নাকি প্রাণের স্পন্দন নাই।
আলিম বলে ওঠে, তোমার রত্না কি আবার সাহিত্যিক ছিল নাতো?
মৌমি হালকা হেসে আলিমের হাত থেকে খালি চায়ের কাপটি নিয়ে ভিতরে চলে যায়।
তখন সন্ধ্যা নামি নামি করছে। বনে জঙ্গলে সন্ধ্যা কিছুটা আগেই নামে। হরেক রকম পাখির কিচির মিচির শব্দ তার মাঝেও কোথায় জানি একটা অদ্ভুত নীরবতা।
আলিম উঠে দাঁড়ায়। ঠিক তখনই তার প্রহীর মেইলের ব্যাপারটা মনে পড়ে। সে আশ্চর্য হয়ে পড়ে এই কয়দিনে সে ব্যাপারটা ভুলেই ছিল। ভুলে থাকাই স্বাভাবিক। কে না কে তাকে অদ্ভুত মেইল করেছে সেটা নিয়ে ভাবার কোন মানে আছে?
তারপরও আলিম ল্যাপটপটা নিয়ে বসে। ওদিক থেকে মৌমি বলে ওঠে, আমি দুই ঘন্টার মধ্যে রান্না শেষ করব। তারপর আমরা একসাথে খাব।
আলিম বলে, আচ্ছা!
মৌমি বলে, অনেক মুভি আর নাটকও আনছি।
আলিম জবাব দেয়, গুড। তুমি তাড়াতাড়ি রান্না শেষ কর।
রান্না ঘরের হালকা আওয়াজ শোনা যায়। আর এদিকে আলিম জিমেইলে লগইন করে। লগইন করে সে কিছুটা অবাক হয়ে পড়ে। সেই সেন্ডারের দুটো মেইল।
আলিম প্রথমটা ওপেন করে।
শুভেচ্ছা নিবেন।
আমি আসলেই জানি না আমার প্রথম মেইলটা সত্যিকারের আলিম পড়েছে কিনা? সত্যিকারের আলিম আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বোধকরি পৃথিবীর জন্য তারচেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম।
শুভেচ্ছান্তে
প্রহী।
আলিম আগের মেইলের মত এখানেও দেখল তারিখ ছয়শ বছর পরের।
সে দ্বিতীয় মেইলটা ওপেন করে।
শুভেচ্ছা নিবেন
আমি ইতিপূর্বে আপনাকে দুটি মেইল করেছিলাম। আমার ক্যালকুলেশন অনুযায়ী এটা সত্যিকারের আলিমের পাওয়ার কথা। আপনি যদি মেইলটা পড়ে থাকেন তাহলে দ্রুত উত্তর দিন। আমাদের সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
অনুগ্রহ করে সাড়া দিন।
শুভেচ্ছান্তে
প্রহী
আলিম দেখল এখানেও ছয়শ বছর পরের তারিখ, কোন এক রহস্যময় ব্যক্তি তাকে মেইল দিচ্ছে যাকে কিনা সে চিনে না। নাম পর্যন্ত শুনেনি। তারপরও আলিম মেইলটার উত্তর লিখল-
জনাব প্রহী
আমি আলিম, আপনি আমাকে তিনটি মেইল করেছেন যার অনেক কথাই ঘোলাটে। অস্পষ্ট। আপনি কী অনুগ্রহ করে আপনার পরিচয় দিবেন? না দিলে আর মেইল করে ধাঁধাঁয় ফেলবেন না। আমি আপনাকে স্প্যাম করে দিব।
বিনীত
আলিম।
আলিম সেন্ড করা মাত্রই নতুন একটি মেইল হাজির। প্রহী দিয়েছে। তার মেইলের উত্তর। এত দ্রুত। কীভাবে সম্ভব!
আলিম পড়তে শুরু করে।
আলিম শুভেচ্ছা নিবেন।
আমার মেইলের কথাগুলো আপনার কাছে অস্পষ্ট মনে হতে পারে। আমি খুব ব্যাকুল হয়েই আপনাকে মেইল করেছি। যেহেতু আপনি উত্তর দিয়েছেন সেহেতু আমি ধরে নিচ্ছি বিজ্ঞান আজ এক বিশাল আবিস্কারের দাঁড়প্রান্তে। বিজ্ঞানের এক চির রহস্যের দরজা আপনি খুলে দিলেন। বিজ্ঞানের ইতিহাসে আপনার নাম অমর হয়ে থাকবে। আপনি হয়তো ভাবছেন আমি পাগলের মত কথা বলছি। আসলে ব্যাপারটা ঠিক তা নয়। সময়ের অপক্ষেপের তৃতীয়সূত্রের ব্যবহারিক প্রমাণে আপনাকে আমরা পেলাম। আমি আপনার সময় থেকেই ছয়শ বছর সামনে, আপনারই এক উত্তরপুরুষ বলছি। আমার মান প্রহী।
উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম।
শুভেচ্ছান্তে
প্রহী
আলিম মেইলটা একবার না তিন তিনবার পড়ল। কিছুই বুঝল না।
হঠাৎ করে পিছনে সে মৌমিকে দেখতে পেল। মনোযোগ দিয়ে কী করছিলা দেখছিলাম। আমি মেইলটাও পড়লাম। এর মানে কী?
আমি জানি না। আলিম উত্তর দেয়।
চলবে —-