উপন্যাস ” পাথরের মানুষ ” পর্বঃ ৩
এদিকে কিভাবে যেন জ্যাঠো শুনেছে , আলমের বাবাকে মেম্বার রিলিফের কার্ড দিবে । তত্ক্ষণাত্ ছুটে গেলেন মেম্বারের বাড়িতে । বাঘের মত হুংকার দিয়ে বলল ,
ভোটের সময় আমি করি ক্যানভাস এ কার্ড আমার প্রাপ্য । আলমের বাবা কার্ড পেলে আগামীতে আমি আপনার পিছে থাকব না । ওর তিন ছেলে দু দিন পর টাকার পাহাড় গড়বে আর আমার কোন ছেলে নেই শুধু মেয়ে । এবার ভেবে দেখেন এ কার্ড কার বেশি প্রয়োজন । আমার চোখের সামনে ছোট ভাই লাখ পতি হবে , আমি মানুষকে মুখ দেখাব কিভাবে ? আমি সহ্য করতে পারব না ।
শান্ত হও গোলাম বারী ভাই , শান্ত হও ।
এই বলে মেম্বার সাহেব ঘর থেকে একটি কার্ড এনে হাতে দিয়ে বলল ,
আপনাকে মাগনায় দিলাম , আগামী নির্বাচনে একটু বেশি খাটা খাটনি করবেন ।
চিন্তা করবেন না প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেব । এ গোলাম বারীকে তো চেনেন ?
হ্যাঁ ভাই চিনি ।
জ্যাঠো কার্ড খানি পেয়ে নাচতে নাচতে বাড়িতে চলে গেল ।
কি আর বলব ?
এখনকার সময়ের আইন শৃংখলা বড় লজ্জাজনক ও জঘন্যতম । আজকাল বড় নেতা রাজনৈতিকবীদ হওয়া একেবারে পানির মত সহজ ।কোন রকমভাবে মঞ্চে উঠে বিরোধী নেতা কর্মীদের উচ্চ স্বরে গালা-গালি ও মিথ্যা বদনাম প্রচার করলে । আর মুখে মুখে দেশের জন্য প্রাণ দিবে , এ করবে সে করবে , দেশকে একেবারে আকাশে উঠাবে । এমন অনেক বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিয়ে মঞ্চে কিছুক্ষণ চিল্লা চিল্লী করে মাইক ফাটালে , আম সাধারণ সাময়িকভাবে কর তালি দিয়ে মহান নেতার মর্যাদা দিয়ে থাকেন । দু এক দিন পরেই জানা যায় দুর্নীতির দায়ে ঐ মহান নেতা রাজনীতিবীদ লোহার খাঁচায় বন্দী ।
এরাই আজ প্রকৃত নেতা রাজনীতিবীদ ও মাতা মোড়ল ! এ মহান ব্যক্তিদের সমন্ধে বলতে গেলে বড় ঘৃণা হয় । পশুরা যে কাজ কল্পনা করেনা আর এরা সেই কর্ম গর্বেরসহিত করে থাকে । এরা স্বার্থ হাসিল , অর্থ সম্পদ ও আসন দখলের মোহে মানুষকে মশার ন্যায় ভেবে নির্মম ভাবে খুন করে । আর একটা কথা না বললেই নয় , বেশির ভাগ মাতাব্বর , নেতা , রাজনৈতিকবীদ ও রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষ ব্যক্তিরা ক্ষুদ্র ও নগন্য বিষয়ের পিছনে মূল্যবান সময় নষ্ট করে ও দেশের আর্থিক অপচয় করে থাকে । আসলে তাদের মাঝে দেশ প্রেম শুন্য বললেই চলে । তারা মৌলিক উন্নয়নমূলক কাজে প্রাণপণ চেষ্টা চালায় না । সকলেই চায় দেশে শান্তি ও সুখ কিন্তু শান্তি আজ হীরক হরিণ । জনগণের শান্তির জন্য দেশকে মডার্ণ ও ডিজিটাল করা হয়েছে তবুও মানুষ শান্তির পরশ থেকে অসীম মাইল দূরে । সারা বিশ্বে সেদিনই শান্তি বন্যার পানির মত প্লাবিত হয়ে ভেসে বেড়াবে । যেদিন স্রষ্টার বিধান তথা কোরানের আইন চালু হবে । তখন সকল নেতা রাজনীতিবীদরা স্বার্থপরতা প্রতিহিংসা ভুলে সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠবে । কেননা শান্তি স্রষ্টার দান , এ পৃথিবী কারও বাপ দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি নয় । আল্লাহর জমিনে যেদিন তাঁর হুকুম জারি হবে সেদিন আষাঢ়ের বৃষ্টির মত শান্তি বর্ষিত হবে ।
পরের দিন বুক ভরা আশা নিয়ে মেম্বরের বাড়িতে গিয়ে বলল ,
ভাই আমার কার্ডটা দেন ।
নেই ।
কেন ?
সব শেষ হয়ে গেছে ।
এখন কি করব ?
আরে ভাই , হতাশ হবার কিছুই নেই । তিন মাস পর আবার নতুন কার্ড আসবে ।
মেম্বার সাব এ কি শোনালেন ? হাউ মাউ করে কেঁদে বলতে লাগল ,
ক্ষুধার্ত ছেলেদের আশা দিয়েছি আজ রিলিফের মাল দিবে । এখন আমি কি করবো । ছোট বাচ্চাটা প্রায় মরা মরা অবস্থা । এতেও কোন কাজ হলো না অবশেষে মেম্বারের পা জড়িয়ে ধরে বলল ,
একটা ব্যবস্থা করে দেন ।
কি ব্যবস্থা করব ? কার্ড তো আমি বসে বসে বানাই না । আপনি এখন চলে যান পরে দেখা যাবে । আলমের বাবা তবুও পা ছাড়ল না । মেম্বার নিজ হাতে পা ছাড়িয়ে নিয়ে বলল ,
ডিসটার্ব করবেন নাতো ,কারী পাড়ায় শালিস আছে তারাতারি যেতে হবে ।
মেম্বার পাথরের মানুষের মত নির্দয়ভাবে অসহায় লোকটিকে তাড়িয়ে দিল ।
(চলবে)