উপন্যাস ” পাথরের মানুষ ” পর্বঃ ৪
এমন নিঠুর আচরণে আলমের বাবা চোখ ভর্তি জল আর শুন্য হাত নিয়ে ফিরে এলো ঘরে । বাবার চোখের জল পবিত্র দাড়ি ভিজে ভিজে মাটিতে পড়ছে । বাবার অশ্রু দেখে ছেলেদের ক্ষুধা অচিন দেশে হারিয়ে গেছে । কারণ এই প্রথম বাবার চোখে জল দেখতে পেল । বাবার গলা ধরে বলছে ,
তুমি কেঁদনা আমাদের ক্ষুধা পায়নি । এই দেখ , পেট ভরা আছে ।
আলমের মা শান্তনার স্বরে বললো ,
আর কেঁদনা , আমি বুঝে গেছি । এ গ্রামে কোন মানুষ নেই , সব হিংস্র পশু । এরা আমাদের বাঁচতে দিবেনা , এ গাঁয়ে আর এক মূহুর্ত থাকবনা ।
বেদনার্ত হৃদয়ে বাবা জিজ্ঞাসা করল ,
কোথায় যাবে ?
আমার বোনের বাড়িতে ।
যেই কথা সেই কাজ , সেদিনই স্বপরিবারে ঠাঁই নিল বামনাছড়া এলাকায় খালার বাড়িতে । সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ঘর তৈরী করে শান্তিতে বাস করতে লাগল ।
কিছু দিন পর বড় ভাই এস এস সি পাশ করল । সে খুবই মেধাবী ছাত্র সংসারের শোচনীয় অবস্থার ফলে কলেজ স্টুডেন্ট হবার সুযোগ তার কপালে জুটলো না । তাই পরিচিত কোন এক চাচার সাথে ঢাকায় গেল চাকুরীর খোঁজে । চাচা চাকরীর সন্ধানে হন্যে হয়ে ছুটছে কিন্তু কোথায় ভাল একটা চাকরী পেলনা ।
শহর বড় কষ্টের জায়গা শহরের মানুষও বেশ পাষাণ ও স্বার্থপর । পাশা-পাশি বাসায় থাকে কোন পরিচয় নেই , গায়ে গায়ে ধাক্কা লাগলেও কথা বলেনা । সবাই সবার কর্মে মহা ব্যস্ত । কে খেয়ে আছে কে না খেয়ে আছে আবার কে সুখে কে দুঃখে আছে কেউ খবর রাখেনা । এক জনের সামনে অন্য জনের টাকা ছিনতাই করছে তবু কেউ প্রতিবাদ করছেনা বরং নিজের পকেট চেপে ধরে দৌড়ায় আত্মরক্ষার জন্য । কি আশ্চার্য !
শত শত লোকের সামনে ক্যাডাররা খুন করছে আর সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখে । যদি একতা থাকতো তবে এই খুনিদের বুকে বিন্দুমাত্র সাহস পেত না । অর্থের বিনিময়ে মানুষ খুনের ব্যবসা চিরতরে বিদায় নিত ।
মাস খানেক পর হঠাত্ একদিন আল্লাহপাক বড় ভাইয়ের দিকে কুদরতি নজরে তাঁকালেন । তার চাকরী হয়ে গেল একটি নাম করা বেকারীর ম্যানেজার পদে । মাস শেষে ৫০০০ টাকা বেতন পেল । এতগুলো টাকা এক সঙ্গে কখনো দেখেনি বিধায় আনন্দের চরম সীমায় পৌছে নাচতে লাগল । তার কাছে মনে হচ্ছে পাঁচ হাজার নয় যেন পাঁচ কোটি টাকা । শৈশব থেকে অসহ্য কষ্টের মাঝে বড় হয়েছে বাবার মুখেও কোন দিন হাজার টাকার নাম শুনেনি । পুরো টাকাই বাড়িতে পাঠালেন , এ টাকা পেয়ে মা বাবা আনন্দে কেঁদে ফেললেন ।
প্রাণ খুলে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এতে আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হলেন । কেননা তিনিই কুরআনে বলেছেন ,
” যারা আমার নেয়ামত ভোগ করে আমি তাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেই আর যারা নেয়ামতকে অস্বীকার করে আমি তাদের নেয়ামত কেড়ে নেই ” ।
কিছু দিন পর বড় ভাই মেজো ভাইকে ঐ বেকারীতে চাকরী নিয়ে দিলেন । দুই ভাই মিলে মাসে ৮-১০ হাজার টাকা আয় করে । মা বাবা এ টাকা জমায়ে অনেক জমি কিনলো , আধা পাকা বাড়িও করলো । সুখের সংসার সাঁজালো আর্থিক অবস্থা বেশ সচল হলো সংসারে অভাবের চিহ্ন রইলনা । আলমের পড়ালেখার চাকা আবার ঘুরতে শুরু করল , মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিল । সে খুব মনযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে এর জন্য পরমাণুতম কষ্ট হচ্ছে না । যা যা প্রয়োজন সাথে সাথেই আলাদীনের জাদুর প্রদীপের মত হাজির হয় । আলম অত্যন্ত নম্র , ভদ্র ও মেধাবী ছাত্র বরাবরই ওর এক রোল হয় । পরিবারের সবার ইচ্ছা ওকে বি সি এস ক্যাডার বানাবে । এক বুক আশা আলম হবে একজন সরকারী উর্ধ্বতন কর্মকর্তা । ইনশাআল্লাহ , আলম তাদের নেক আশা পূরণ করতে পারবে । কেননা তার নজির পাওয়া যায় চাল চলন ও মেধায় ।