আমরা করব জয় একদিন
তৃতীয় পর্ব
জেলান এবং আইমা হাটছে তো হাটছে।মাঝে মাঝে আধাঘন্টা একঘন্টার জন্য বসে জিরিয়ে নিচ্ছে।তাদের ঘড়িতে যে সময় দেখা যাচ্ছে তা হচ্ছে।২৪৮০ ঘন্টা ১৭৪৬৫ মিনিট ৮৮৮৮৩৭৫ সেকেন্ড।এই অদ্ভুত সময়ের কোন কূলকিনারা তারা করতে পারছেনা।
টানা সাতদিন পরে একটু খাওয়ার বলতে যা বুঝায় তা আজ পাকস্থলীকে দিতে সক্ষম হয়েছে।এর আগে দুইদিন দুইমুষ্টি চিনি ছিল তাদের সারদিনের খাওয়ার।এই সামান্য চিনি ছিল আইমার ব্যাকপ্যাকে চা খাওয়ার শেষ সম্বল যা বিপর্যয়ের আগে ব্যাগে নিয়েছিল। ছোট ব্যাগে ছোট এক প্যাকেট ক্র্যাকার একটু দুধ টিব্যাগ আর সামান্য চিনি যা ছিল তাদের এই কয়দিনের রসদ।
খাওয়ার বন্দোবস্ত হওয়া প্রানীর সন্ধান এটা ও একধরনের অলৌকিক মনে হল তাদের কাছে।নাহলে এত ঠান্ডা জনশূন্য বিপর্যস্ত পরিবেশে কোথ্থেকে শ্বেতহরিন ধরনের প্রানীটা আসল যেখানে তাদের আশেপাশের কোন জীবিত বা মৃত প্রানের অস্তিত্ব র সন্ধান তারা পায়নি গত কয়দিন ধরে।দুজনে আবার অদৃশ্য পালনকারী সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্যে মাথা নুইয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করল।এই হরিনটিকে কাছে পেতে তাদের বেশ বেগ পেতে হল।একপর্যায়ে বড় একটা পাথরের টুকরা তুলে সর্বশক্তিতে প্রানীদের দিকে ছুড়ে মারল জেলান।আর্তনাদ করে প্রানীটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল এবং ছটফট করতে করতে মৃত্যূবরন করল।নিজেকে তার বনমানুষের মত মনে হল।কিন্তু কিছু করার নাই।তাকে বাচতে হবে।ইমাকে বাচতে হবে।বাচতে হলে শক্তির দরকার।এই শক্তির জন্য খাদ্য গ্রহন করতে হবে।ঠান্ডা প্রকৃতিতে বাচতে হলে তাদের প্রানীজ প্রোটিন খেতে হবে মাংস খেতে হবে।
আইমা চিৎকার দিয়ে উঠল ।
এত সুন্দর প্রানীটিকে কেন তুমি হত্যা করলে জেলান আমি এর মাংস খেতে পারবনা।
ফোফাতে ফোফাতে সে বলে।
ইমা আমি খুব নিরুপায় হয়ে এই প্রানীটিকে হত্যা করেছি।অসহায়ের মত জেলানের উত্তর।
জেলান একটু দুরে প্রানীটির চামড়া ছিলে পানিতে যথাসম্ভব পরিস্কার করে আগুনের আচে দিয়ে রাখল।
ইমার কাছে এসে দেখল বেচারী মেয়েটি বমি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মায়া আর সহানুভূতিতে জেলানের মনটা ভরে গেল।কাছে এসে কাধে হাত দিয়ে তাকে আরামদায়ক ভঙ্গিতে বসানোর চেষ্টা করালো পাথরের উপরে এবং মাথাটা একটু ঝুকিয়ে ধরল বমি বের করানোর জন্য।
পেটে কোন খাওয়ার কিছু নাই তবু কেন যে বমি পাচ্ছে জেলান বুঝতে পারছিনা অসহায়ের মত বলল।
চল আমরা একটু সামনে থেকে ঘুরে আসি।অথবা তুমি একটু খানি জিরিয়ে নাও আমি আশেপাশে দেখে আসি কোন সুপেয় পানি অথবা কোন ফলমূল বা গাছ জাতীয় কিছু যদি খুজে পাই।
না আমি ও তোমার সাথে যাব জেদ ধরল আইমা।
তুমি যে দূর্বল হাটতে পারবে তো?স্নেহের স্বরে বলল জেলান।আস তুমি আমার কাধে চড়।দেখি তো তোমার কতটুকু ওজন।তোমাকে ক্যারি করে হাটতে পারি কিনা।জেলান মজা করে বলে।
ধ্যেৎ লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলল আইমা।এখন আবার তাকে অনেক সতেজ মনে হচ্ছে।একটু আগে ক্লান্তি টা মনে হয় দুর হয়ে গিয়েছে।
যত তারা সামনে এগোচ্ছে একটু গরমবোধ করতে শুরু করল।পূর্বের ঠান্ডা এখন আর তারা বোধ করছেনা।
হাটতে হাটতে তারা ছলাৎ ধরনের আওয়াজ শুনল ।দুজনে ভীষন উত্তেজিত হয়ে পড়ল ।শব্দ অনুসরন করতে করতে তারা যে জায়গায় এসে পৌছল তা একটা ঢালু জায়গায় বিশাল একটা ফলসের সামনে ।দুজন আনন্দে চিৎকার করে দুজনকে জড়িয়ে ধরল।
ঝর্ণার পানিতে অনেকক্ষন সময় নিয়ে তারা হাত পা মুখ পরিস্কার করল।দুজনে এর মধ্যে চুল ভিজিয়ে শাওয়ার এর মত করে ফেলল।গোসল করতে করতে জেলানের পায়ের নীচে কিছু পড়াতে পা দিয়ে চেপে ধরল তারপর তুলে দেখে মোটামুটি বড়সড় একটা মাছ সার্ডিন না তেলাপিয়া মাছের মত।
আনন্দে চিৎকার দিল আবার জেলান
আজকে তোমাকে মিট ফ্রাই ফিস ফ্রাই সব খাওয়াব।আসার পথে একটা জংলা মত জায়গা দেখে থামল সেখানে তারা যা পেল গাছগাছড়া তুলে নিয়ে আসল সব্জিবৎ মনে করে।
দশদিন পরে তারা আজ একটু নিশ্চিত বোধ করল ।
খাওয়ার পরে বড় দুইটা পাথর পাশাপাশি সাজিয়ে বিছানার মত বানাল তারা। নিশ্চিন্তে অতঃপর ঘুমিয়ে পড়ল তারা পাথরের উপরে।
ঘুমের মধ্যে ও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় ঠিকই সজাগ ছিল জেলানের।আশেপাশের পরিবেশে আকস্মিক কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে এটা টের পাওয়া মাত্র সতর্ক হয়ে শোওয়া থেকে উঠে বসল। তাদের চারিপাশে লাল নীল সবুজ আলোর ফুলকি উঠানামা করছে।বুঝতে অসুবিধা হলনা জেলানের তাদেরকে কোন কিছু ঘিরে রেখেছে চারিপাশ থেকে।
(চলবে)