সোহাগের সুন্দর বন পরিবহন এক্সপ্রেস
তৃতীয় পর্ব
নিথুয়া পাথারে পড়ে গেছি বন্ধুরে।
ধর বন্ধু আমার কেহ নাই।
ধর বন্ধু আমার কেহ নাই।
ট্রানজিষ্টারধারী ব্যকূল গলায় আহাজারির ভঙ্গিতে কাওকে উদ্দেশ্য করে গান গেয়ে যাচ্ছে।
ওই ব্যাটা শুদ্ধ করি গান গা ।সকালের প্লাষ্টিকের সাপে ভয় খাওয়া লোকটা ধমক মেরে বলল।
নির্ধারিত রেষ্ট হাউসে সবাই রাতের রেষ্ট নিবে এবং সোহাগ আর রশীদ মিঞা তারা বাসে রেষ্ট নিবে ঠিক করল।
বেদ্দব পুরা বেদ্দবের দল বিড়বিড় করে রশীদ মিঞা দুইজনের উদ্দেশ্যে গালাগাল করতে লাগল।
রশীদ মিঞার এমনিতে একটু মন খারাপ।সারাবাসে কোন মহিলা যাত্রী নাই।এটা একটা হইল মেয়েশূন্য পৃথিবী।
ভাইজান কেমন হই গেল প্রথম যাত্রায় মায়ের জাতি নাই।গনতন্ত্র হইলনা ভাইজান।শুধু একদল স্বৈরাচার যা ইচ্ছে তাই করতেছে ট্রানজিষ্টার এর দিকে ঈঙ্গিতে দেখায়।
মুখে আনিসনা সর্বনাশগো নাম।মাইয়া থাকলে দেখতি চুলাচুলি কামড়াকামড়ি করি জান শেষ করি দিত।দেশের অবস্থা দেইখা তোর শিক্ষা হয়নো রশীদ।দুইটা মাইয়া একলগে কোনসময় থাকত দেখছ।খুবই হিংসুটা জাতি।
ভাইজান হুশ কইরা কথা কন।আপনের মা আমার মা মাইয়া মানুষ।সব মাইয়া কি খারাপ?
রশীদ মিঞা মেয়ে মানুষ ছাড়া নিঃসঙ্গ বোধ করতে লাগল।আল্লাহ তার মনোবেদনা টের পেলেন।অনতি বিলম্বে একটা বাস এসে দাড়াল সোহগের সুন্দরবন এক্সপ্রেসের পাশে যেটার ড্রাইভার সহ সব মেয়ে যাত্রী।সম্ভবত কোন মেয়ে কলেজ এক্সকারশনে এসেছে।
এখন ও অন্ধকার নেমে আসেনি প্রকৃতিতে।বাসটা থামিয়েছে সোহাগ হিরন পয়েন্ট এর কিছুটা আগে এক খোলা মাঠে আর ও কিছু গাড়ী আর বাসের সাথে।অনেকক্ষন গাড়ী চালিয়ে সোহাগ ভীষন ক্লান্ত।আড়মোড়া কেটে ক্লান্তি দুর করার চেষ্টা করল।রশীদের মুখোমুখি আরেক বাসের জানালা দিয়ে কুড়ি বাইশের একটা অল্পবয়সী মেয়ে চারিদিকে গাছপালা প্রাকৃতিক দৃশ্য অবলোকন করছিল সম্ভবত।রশীদ অপলক নেত্রে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।মনে মনে আল্লাহর বানানো সুন্দর ছবির তারিফ করতে লাগল।
মেয়েটির পাশে একজনকে দেখা গেল দশাশই শরীরের মহিলা আত্মীয় শ্রেনী মা বুয়া শ্রেনীর।ঝট করে এসে জানালা লাগিয়ে দিল।লাগানোর আগে ভাল করে শাসিয়ে দিয়ে গেল।
ওই পোলা মাথা নীচু।আমার মাইয়ার দিকে আরেকবার তাকাইলে চোখ কানা করি দিমু বেত্তমীজ কোনাইকার।
রশীদ ও ভয়ে জানালা লাগিয়ে দিল।জীবনে ওই চোখ তুইলা ওই মেয়ের দিকে তাকাইবনা মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল।বাপরে আমার চোখ অনেক মূল্যবান।
সবাই বাস থেকে নামল।আশেপাশে ঘুরে দেখছে তার সাথে ছবি তুলছে।
রশীদ হাটতে হাটতে জঙ্গলে র ভিতরে ঢুকল।একগাছের নীচে দাড়াল কিছুক্ষনের জন্য।আয়েশ করে তার প্রথম সিগারেট ধরালো।
চারিদিকে শোরগোল চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে যা দেখল মুখ দিয়ে বের হল আবার বেক্কল টা জ্বালাই খাইব দেখতেছি।
এবার সাপ না বানরের সাথে বানরের ভয়ে দৌড়াদৌড়ি করতাছে সকালের ভয় খাওয়া গাধা।
বানরটা এখানে কোথ্থেকে জোগাড় হল কে জানে।কিন্তু এখন সে ওই লোকের কাধে চড়ে কান ধরে বসে আছে।লোকটা যতই মাথা নেড়ে ঝাকুনী নিয়ে বানরটারে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে অনুকরণপ্রিয় বানর ও একই জিনিস করছে। বানর একই ভঙ্গিতে দাত মুখ ভেংচি কেটে মাঝে মাঝে লোকটার গালে থাপ্পড় মেরে যাচ্ছে।
ও আল্লাহ গগনবিদারী চিৎকার করছে দৌড়ের সঙ্গে লোকটা।
এটারে সরা সরা সরা ।
সর তুই মরা মরা মরা।
(পরবর্তীতে)