উপন্যাস ” পাথরের মানুষ ” পর্বঃ ৬
মাথা ঠান্ডা হলে আলম নিজে নিজে চিন্তা করলো । মনে হয় তাকে কোন ভুত টুত আছর করেছে । তা না হলে সে হুমায়রার জন্য এত পাগল কেন ? ওকে যে বি সি এস ক্যাডার হতে হবে । সেই প্লাটফর্ম এখনো অনেক দূরে , এর আগে প্রেমে পরলে পড়াশুনা গোল্লায় যাবে । সবার স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে , ওর এ ভুল বুঝতে পেরে মনটাকে পাথরের ঢালাই দিল ।
এদিকে হুমায়রারও একই পরিস্থিতি কোনভাবেই ঘুমাতে পাচ্ছে না । সর্বক্ষণ আলমের কথা ভাবছে , এত মেধাবী , স্মার্ট , নম্র ও ভদ্র অর্থ্যাত্ অল রাউন্ডার একটি ছেলে কোটি জনেও একটি মিলবে না । আলমকে পাবার জন্য ওর মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে । শুধু হুমায়রা নয় নারী জাতি একটু বেশি লোভী হয়ে থাকে । বিশেষ করে স্মার্ট শিক্ষিত স্বামী , সন্তান , গহনা , ড্রেস ও অর্থ কড়ি পেতে অধিক পাগল । বিভিন্ন কল্পনার মাঝে ঘুমিয়ে পরল হুমায়রা । রাতে স্বপ্নে দেখল , আলমের সঙ্গে ওর বিয়ে হয়েছে , বাসর ঘরে একে অপরকে খুব আপন করে নিচ্ছে । বেশ পরম সুখ অনুভব করছে দুজন । হঠাত্ শেষ রাতে সুলতানা বেগম ডাকছে ,
হুমায়রা এখন সকাল হয়েছে মা , ওঠ ।
মায়ের ডাকে আরামের ঘুম হারাম হলো , খুব খারাপ লাগল হুমায়রার । পরে ভাবল যেভাবেই হোক আলমকে তার চাই । তাই দুর্দান্ত সাহস করে একটি চিঠি লিখলো । তারপর মাদ্রাসায় গিয়ে ছটপট করছে কিভাবে মনের মানুষকে চিঠিখানা দিবে । হঠাত্ মাথায় বুদ্ধি এলো বইয়ের কভারে করে দিবে । ঠিক তাই করলো , আলম একা মাঠের বটগাছের নীচে দাঁড়িয়ে ছিল । এ সুযোগে হুমায়রা বইটি হাতে নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ভয়ে বুকটা দুরু দুরু করে কাঁপছে । ডর ভয় কোন লাভ করতে পারেনি আলমের প্রেভ ওকে অন্ধ করে দিয়েছে । যখন আলমের সামনে গিয়ে দাঁড়াল তখন পা দুটি থর থর করে কাঁপছে আর পায়ের নীচের মাটি সরে যাচ্ছে । ভীত কম্পিত কণ্ঠে বলল ,
বইটি নাও ।
কেন ?
এর কভারে একটি কাগজ আছে ।
আলম আর জিজ্ঞাসা না করে হাত বাড়িয়ে বইটি নিল । হুমায়রা দেরি না করে দ্রুত বেগে কমন রুমে চলে গেল । তখনও বুকের কাঁপুনি বন্ধ হয়নি , তাই দুই গ্লাস পানি খেল ।
মাদ্রাসা ছুটি হলো , ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকগণ আপন আবাসে ফিরে গেল । আলমের এত আকর্ষণ না থাকায় স্মরণ ছিল না । খানা শেষে বিছানায় শুয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে , হঠাত্ কাগজটির কথা মনে পড়ল । তাই আর দেরি না করে বইয়ের কভারটি খুলে কাগজটি বের করে দেখল ; তাতে লেখা আছে –
ওগো আমার মনের রাজা ,
পত্রের শুরুতেই আমার বুকে জমানো সমস্ত ভালবাসা নিও। আশা করি তুমি ভাল আছ । তোমার ভাল থাকা আমার একান্ত কাম্য । তুমি হয়তো জাননা , ক্লাস সিক্স থেকে আমি তোমাকে পছন্দ করে মনে মনে ভালবেসে ফেলেছি ।
কতটা ভালবাসি তা কলম দিয়ে লিখে বুঝাতে পারব না । গত কালও আমি খেতে পারিনি ঘুমাতে পারিনি , তোমার প্রতিচ্ছবি আমার আঁখির সামনে দুলে দুলে বেড়ায় । ভালবাসা আর বুকে চেপে রাখতে পারছিনা , তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি আজ ব্যাকুল হয়েছি । পাঠে মন বসছেনা , যেদিকে দৃষ্টি ফেলি শুধু তোমাকেই দেখি । তোমাকে আমার হৃদয়ে খোদাই করে রেখেছি যা কখনোই মুছে ফেলা সম্ভব নয় । বিশ্বাস করো , আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তুমি যদি আমাকে ভাল না বাস ; তাহলে আমি আত্মহত্যা করবো । তোমার কাছে আমার অনুরোধ , আমার অবুঝ পবিত্র ভালবাসাকে তুমি ফিরায়ে দিওনা ,প্লীজ । আই লাভ ইউ ,আই লাভ …………. । আমার জীবনের একমাত্র চাওয়া শুধু তোমাকে পাওয়া ।
অপেক্ষায় থাকলাম ,তুমি উত্তরে জানাবে তুমি শুধু আমার অন্য কারও নয় । উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমি অস্থির থাকব । প্লীজ দেরি না করে কালই উত্তর দিবে ।
ইতি
তোমার হুমায়রা সিদ্দিকা