ছেলে সন্তান মেয়ে সন্তানে পার্থক্য কেন ?
আমার খুব আপন মানুষকে জিঞ্জেস করালাম যে আমার লেখার শিরোনামটা ঠিক আছে কিনা । অবাক বিষয় সে দেখেই বলল এটা বাস্তবে কোন দিন হওয়ার নয়, তাই লিখেও লাভ নেই ।প্রশ্নটা অনেক দুঃখ থেকে বলা আমিও জানি । কিন্তু যে উত্তর মেনে নিতেও আমার কষ্ট হয় তা যদি অন্য কেউ মানতে না পারে বুকের ভেতর অন্য রকম একটা জ্বালা অনুভূত হয় । আমিও তার বাইরে নয় । আমি বুঝে ফেলেছি যে সে আমার কষ্ট অনুভব করে তার মনের ভাব ওভাবে ব্যাক্ত করেছে !
জানেন সেই ছোট বেলা থেকেই আমি মনে মনে মেয়েদের অন্যরকম এক শ্রদ্ধার মধ্যে রেখেছি । হোক তা মেয়েরা সুন্দর বলে বা তাদের নমনীয়তা, কোমলতা বা মাতৃত্বের কারনে । ঐ শ্রদ্ধা থেকেই যখন বুঝতে শিখেছি চেয়েছি একজন মেয়ের বাবা হতে । অনেক বন্ধুরা বলতো মেয়ের বাবা হতে চাস, তুই বোকা । হয়ত তাই । আপেক্ষিক প্রশ্নের কোন মন যোগানো উত্তর হয় না ।
যেখানে আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগে মেয়েদের জ্যান্ত পুতে ফেলা হত, সেখানে মেয়েদের নির্যাতনের কথা বহু পুরানো ।এখনও কোন কোন অঞ্চলে মেয়েদের অপয়া হিসাবেই দেখা হয় । ভারতের অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে যাতে মেয়ে জন্ম না নয় তার জন্য ভ্রুন থাকতেই সন্তান নষ্ট করা হয় ।
এত কিছুর পরও মা না থাকলে সন্তান জন্ম দেওয়া আদৌ কি সম্ভব ?আমরা মুখ্য বিষয়টা পর্যন্ত যেতেই পারি না । যদি প্রশ্ন করা হয় সন্তানকে পিতামাতা কেমনভাবে মানুষ করে । তার মনে হয় উত্তর আর বলে দিতে হবে না । সে এক ঐশরিক ব্যপার ।সন্তানের সব ধরনের জ্বালা সহ্য করে পিতামাতা মানুষ করার চেষ্টা করে । কিন্তু পিতামাতা যখনই ভাবে যে আমরা সন্তানের কাছ থেকে এক ধরনরে নিরাপত্তা চাই । তখনই বাবা মার কাছে সন্তানের লিঙ্গের পার্থক্য বড় হয়ে দাঁড়ায় ।সবাই ধরেই নেয় একটি মেয়ে কখনই কোন ধরনের নিরাপত্তা কোন পরিবারকে দিতে পারে না ।
এই যে একটি বিষয় ধরে নেওয়া আর এ বিষয়টা ধরে নিয়ে আমাদের সমাজের এক পাশ অচল করে রাখা একটি অভ্যাস বসত ভুল হয়ে যাচ্ছে । মেয়ে হলেই তাদের বড় করা হচ্ছে এক ধরনের বন্ধ দুয়ার চাপের মধ্যে । বলা হচ্ছে মেয়ে হয়েছো তো তুমি তোমার পরিবারের বোঝা হয়ে গেছো । আর তোমাকে চলে যেতে হবে অন্যের ঘরে । তখন মেয়েটি পড়ে যায় চরম হতাশায় আর খুঁজতে থাকে যেখানে যাবে(স্বামীর বাড়ি) সেখানে সুখের এক চিলতে আশা ।
আমিও মেনে নিচ্ছি মেয়েরা অন্যের ঘরে চলে যায় । কিন্তু সে কি অন্যের ঘরে চলে যায় বলে আমরা সব দায় থেকে মুক্ত হয়ে শুধু তাদের ঘারে দায় চাপিয়ে দেই ?
সন্তান মানুষ করার জন্য একটি ছেলেকে যেভাবে করা হয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েদেরও সেভাবেই পালন করা হয় ।তারপরও এখনও অনেক শিক্ষিত মানুষ রয়েছেন যারা মেয়ে সন্তান আছে বললে একটু আড় চোখে তাকায় । কেউ কেউ এমনও বলে এইতো আর কয়েকদিন পরই মেয়েটা চলে যাবে । তাই ভালো করে লালন করে কি হবে ।
সবচেয়ে দুঃখের কারন অনেক মেয়েরাও শুধু ছেলেই আকাঙ্খা করে ।এর কারন হলো তার মত কষ্টে যেন কোন মেয়েকে পড়তে না হয় । আর যদি মেয়ে হয়েই যায় তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে পারলেই যেন বাঁচা ।
কিন্তু মেয়েরা আসলেই কি পিছিয়ে মানুষের কোন অংশ থেকে বা চিন্তা করার শক্তি থেকে । যেটুকু কোমলীয়তা তাদের বিধাতা দিয়েছেন ওটাও কি আমাদের জন্য বড় প্রাপ্তি নয় ? একটা মেয়ে বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি থাকলেই সে পর হয়ে যাবে বা বাবা মাকে ভুলে যাবে তা কি সঠিক । কখনই সঠিক নয় । তার বর্তমান সংসার হয়ত তাকে বাবা মার কাছে আসতে দিতে কিছুটা দেরী করে তাই বলে কি তার দুরন্ত শৈশব কৈশর ভুলে গিয়েছে । তারও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে ইচ্ছে করে । মন চায় বৃদ্ধ বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে দাঁড়াই অথবা মাকে গিয়ে বলি, মা তুমি বসে থাকো আজ আমি তোমাকে রেধে খাওয়াবো ।
এই আবেগটা কি শুধু আবেগই না বাবা মাকে কাছে পাওয়ার তীব্র ব্যকুলতা । শুধুকি কোন কিছু করতে চেয়েই মেয়েরা বসে থাকছে ? বাবা মাকে সব খরচও দিচ্ছে কোন কোন মেয়ে । কেউ কেউ উচ্চ শিক্ষিতও হচ্ছে । মনের দিক থেকে সঠিক শিক্ষায় মিক্ষিত হচ্ছে । যার কারনে আমরা একজন মাকেও দেখতে পাচ্ছি একজন দায়িত্ববান ছেলের বউ হিসাবে বা সন্তান হিসাবে ।
যে যে ক্ষেত্রে মেয়েদের ছেলেদের চেয়ে পিছিয়ে রাখা হয় তার সবগুলোই সমাজের তৈরীকৃত ভ্রান্ত অপ বিশ্বাস । যে বিশ্বাসের বলি হয়ে অনেক মেয়েই হতাশায় সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয় । একটি ছেলে যদি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে মা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, মেয়েটির অভিব্যাক্তি কি এক্ষেত্রে কোন অংশে কম হবে !
আশ্চর্য! আমরা মেনেই নিতে পারি না আমাদের শুধু মেয়েই থাকবে । কেন ? আমাদের সন্তান বলতে আমরা যেন শুধু ছেলে অথবা মেয়ে না বুঝি । এটা একটা সামাজিক অপরাধ । সন্তান হলো ছেলে এবং মেয়ে । দুটোই আল্লাহ-তাআলা মানুষকে দান করেন ।
আর এই সন্তানকে সঠিক পথ দেখাতে পারলে সে বাবা মার জন্যই কাজ করে । মেয়েরা যদি তাদের এতটুকু স্বামর্থ অর্জন করতে পারে তবে মাতৃত্বের আবেগীয় কারনেই অনেক বেশী দায়িত্বশীল হয় । তাই পরিবার হচ্ছে শিক্ষার সবচেয়ে বড় স্থান । কখনই সন্তানের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে একটি সন্তানকে অঙ্কুরে নষ্ট করে দেবেন না । কেউ যদি বলে মেয়েতো অন্যের ঘরেই চলে যাবে এত আদর করে কি লাভ তবে তার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করুন বা বোঝানোর চেষ্টা করুন এটা সঠিক নয় । আমরা সমাজে ছোট মনের মানুষদের পাত্তা দেই বলেই আজও একটি মেয়ের জীবন এতো বিপন্ন । কখনও কখনও ঘরের বউকে স্যান্ডেলের সাথে তুলনা করে বদলাতে চাই আবার কখনও ধর্ষন করে মেরে কাদার মধ্যে ফেলে দেই আবার কখনও দুশ্চরিত্রের অপবাদ দিয়ে মেরে ঘর থেকে বের করে দেই ! আমরা হাজার চেষ্টা করেও কি একটা মেয়ে নিজেরা বানাতে বা তৈরী করতে বা সৃষ্টি করতে পারবো? প্রশ্নের উত্তর নেই ।
আমরা সৃষ্টি করতে পারি না । কিন্তু নিমিষেই সৃষ্টি নিয়ে খেলা করতে পারি । এটা আমাদের ক্ষমতা নয় । এটা একটা ধ্বংশের খেলা ।
একটু সুযোগ আর একটু অপেক্ষা একটা মেয়েকে সুযোগ্য স্থানে তুলে নিয়ে যাবে ।সে অন্যের বউ হতে, পারে অন্যের বাড়িতে থাকতে পারে কিন্তু সেও একটি ছেলের মতই বাবা মায়ের সুযোগ্য সন্তান । তাই ছেলে মেয়েতে পার্থক্য করে ছোট মনের পরিচয় দিয়ে মানুষ জাতিকে অবমাননা করা কোন মানুষের কাজ নয় । এটাই বোঝাতেই হবে সার্টিফিকেট ধারী কিছু মূর্খ শিক্ষিতদের ।