শুধু বই পড়েই কি ভাষা শিক্ষা !
আজ যে শিশু জন্মগ্রহন করলো তার মায়ের ভাষা শিখতেও প্রায় নয়মাস লেগে যাবে । তারপর প্রথম কথা হবে “মা” । সে মা জন্মদাত্রি মাকে নির্দেশ করেই ।মায়ের আচরন, মায়ের কথা সর্বপরি মাকে অনুসরন করেই বড় হয় একটি শিশু ।তারপর একদিন শিশুটি পড়তে বসে মায়ের কাছেই । তার প্রথম পাঠ হয় বলতো বাবা “অ” দিয়ে ।আমাদের ভাষার শুরুর বর্ণ দিয়ে একটি শিশু তার ভাষা জ্ঞানের শুরু করে ।আস্তে আস্তে তার বেড়ে ওঠা ।একসময় তার বিষয় নির্বাচনের সময় অর্থাৎ সে কোন ভাষায় দক্ষতা অর্জন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে ।
আমাদের দেশের পড়াশোনা হয় মূলত দুটি মাধ্যমে । একটি হয় ইংরেজী মাধ্যম এবং আরেকটি হল নিজ দেশীয় বাংলা মাধ্যম । এই দুই মাধ্যমে যাওয়ার আগেই ছোটবেলা থেকে শিশুকে যে ভাষা শিক্ষা মা দেন তার উপর ভিত্তি করেই মূলত শিশুর নিজেকে ভাষার ব্যাক্ততায় প্রকাশ । কিন্তু এখানেই আমরা বার বার দায়ী হয়ে যাচ্ছি নিজেদের কাছেই । আধুনিকতা আর বর্তমান সভ্যতার দোহাই দিয়ে আমাদের শিক্ষিত কিছু বাবা মা-রা সন্তান যখন মা,মা…মা…ম বলতে শুরু করে তখন তাকে শেখাতে শুরু করা হয় বাবা এভাবে নয় বল মাম্মি অথবা পাপা । এই যে শিশুর এব্রো থেব্রো বলতে শেখার চরম আগ্রহভর মুখ থেকে কেড়ে নিয়ে অন্য ভাষা ঢুকিয়ে দেওয়ার প্রবনতা তার সঠিক বৃদ্ধিতে হস্তক্ষেপই নয় বরং তার মানুষিকতার উপরও প্রভাব ফেলা । সে তরুন নয়, ভালো মন্দ বুঝতে পারে না আর তাই জন্মের পরই নিজের ভাষাকে বৈপরিত্ত করে অন্য ভাষায় প্রকাশের ধরন দিয়ে জীবন শুরু করতে বাধ্য করা হয় ।শুধু তাই নয় কোন কোন পরিবারে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের দেখতে দেওয়া হয় ইংরেজী ছবি, খেলতে দেওয়া হয় ইংরেজী ভিডিও গেমস এবং আচরন শেখানো হয় ইংরেজদের মত । একদিকে যেমন শিশুর উপর ভাষার চাপ তুলে দেওয়া তেমনি শিশুকে একটি নির্দিষ্ট গন্ডিতেও বেধে ফেলা হচ্ছে ।
আমরা যতই বলছি ভাষাকে মুক্ত করা হচ্ছে । কিন্তু বড় অন্তরায় হয়ে দাড়াচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থার বিভিন্ন আঙ্গিকের নীতি । সব কোর্সই ইংরেজীকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন এবং যারা ইংরেজী মাধ্যমে পড়াশোনা করছে তাদের বাংলাকে এড়িয়ে যাওয়া একসময় ভাষায় বিস্তৃতি এবং মূল্যায়নে বড় প্রভাব ফেলবে । যদি বাংলা ভাষা শিশুর মুখে উঠতেও পরাধীনতা অর্থাৎ মায়ের আগ্রহভর অণ্যভাষার প্রতি বেশী থাকে তবে শিশুটি নিশ্চই তার বিকাশে বাংলাকে এড়িয়েই যাবে । তার হাতে যদি একটা বাংলা লিটারেচার বা গ্রামার বই তুলে দিয়ে বলা হয় যে এটা নিজের ভাষা বলে তোমার জানা দরকার তবে কি আমার মায়ের ভাষার অবমূল্যায়ন হল না !যে ভাষাটি আমি এমনিতেই বুকে লালন করি তাকে বিকৃত করে ছোটবেলা থেকে অন্য ভাষা শিখিয়ে একটা সময় এসে ফরমালিটিস রক্ষার জন্য একটি ভাষার বই তুলে দিয়ে ভাষা সম্পর্কে জানতে বলা অন্যায়েরই সামিল ।
এখন যে অবস্থা দাড়িয়েছে তাতে বাংলার সাথে অন্য ভাষার মিশ্রন শুধু নয় বরং অন্য ভাষার সাথে কিছু বাংলা শব্দ মিশ্রিত করে নিজেকে বাঙালী প্রকাশ করার প্রবনতা ভাষার হুমকিই নির্দেশ করে ।
সংস্কৃতি বিপর্জয়ের আগে ভাষার বিপর্যয়ের কারন হল অংকুরের সময় বৃক্ষে পানি না দিয়ে এসিড মিশ্রিত পানি দিয়ে গাছকে বড় করার মানুষিকতা সৃষ্টি হওয়া । হয়ত বৃক্ষ সহ্য করে বড় হবে কিন্তু তার পাতায় অক্সিজেন সৃষ্টি হবে কিনা তা খতিয়ে দেখার বিষয় !
আমাদের ভাষা সৈনিকেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে মায়ের ভাষাকে আমাদের হাতে পরম যত্নে তুলে দিয়েছিলেন তাই আজ আমরা মুক্তভাবে বলতে পারি “মা” । কিন্তু আমরা যে পরাধীনতা ভাষার ক্ষেত্রে শিশুদের মধ্যে সৃষ্টি করছি তারা কি মুক্ত ভাবে বলতে পারবে !
তারুন্য, তুমি বড়ই লাগাম ছাড়া । তাইতো আজ শাহাবাগের জন্ম । কিন্তু এই তারুন্যের জন্মের জন্য যাদের অবদান সবচেয়ে বেশী সেই বাবা মাকেই দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য একজন কল্যানকর মানুষ হিসাবে তার সন্তানকে উপহার দিতে হবে ।
Normal
0
false
false
false
MicrosoftInternetExplorer4
/* Style Definitions */
table.MsoNormalTable
{mso-style-name:”Table Normal”;
mso-tstyle-rowband-size:0;
mso-tstyle-colband-size:0;
mso-style-noshow:yes;
mso-style-parent:””;
mso-padding-alt:0in 5.4pt 0in 5.4pt;
mso-para-margin:0in;
mso-para-margin-bottom:.0001pt;
mso-pagination:widow-orphan;
font-size:10.0pt;
font-family:”Times New Roman”;
mso-ansi-language:#0400;
mso-fareast-language:#0400;
mso-bidi-language:#0400;}
যদি বোবা মানুষের কাছে গিয়েও বলা হয় তুমি যদি কথা বলতে পারতে তবে কি কথা তোমার বলতে ইচ্ছে করতো তবে সেও প্রথমেই বলতো মা আমি তোমাকে ভালোবাসি । সেই মায়েদের প্রতি আমার আকুল আবেদন শিশু যেন অন্য ভাষা দিয়ে কথা না শুরু করে । তাকে মাই-ই বলতে দিন এটা তাদের বাঙালী হওয়ার অধিকার, একটি ২১ চেতনার অধিকার যে চেতনায় মিশে আছে অনেকজন বীরের রক্ত । আপনি কি চান না আপনার সন্তান অমনই বীর হোক !