নিজেকে লেখা প্রথম চিঠি ।
প্রিয় নিজ ।
অনেক ভেবে চিন্তেও কাউকে পেলাম না যাকে তোমার মতো হরহামেশা এমন বিরক্ত করা যায় । তাই তোমাকেই লিখলাম । তুমি’তো জানো চিঠি লিখার একটা দুর্বলতা সে আমার চিরকালই ছিল । কিন্তু আমার যা ভাষাজ্ঞান তাতে আমার ভয় হয় । পাছে মানুষ পয়সা খরচ করে তেড়ে আসে । তাছাড়া হাতের লেখার যা শ্রী তাতে ডাকপিয়নের অরুচি এসে যাওয়ার কথা । প্রাপকের ঠিকানায় খোঁজ না নিয়ে হয়তো ব্যাটা আমাকেই হারিকেন দিয়ে খঁজবে । আর যদি ভুল করে প্রাপকের ঠিকানায় ঐ চিঠি পৌঁছেও যায় তাহলেও বিপওির অন্ত থাকবে না । কেননা ঘাটের পয়সা খরচ করে আমাকেই চিঠি পড়ে দিয়ে আসতে হবে । প্রাপকের অতো জ্ঞান কই যে আমার লেখা উদ্ধার করবে । আমি আবার যৎকিঞ্চিত কৃপন । এবং যথাসম্ভব অলস । তাই ঐরকম ঝুঁকি নেওয়ার নিজের কোন সুযোগ আছে কিনা সে তুমিই ভেবে দেখ ।
নিজের কাছে নিজের চিঠি লিখার যে মুক্ত স্বাধীনতা তা আর কোথায় পাবো বল ? তাছাড়া পাপ অভিশাপেরও বালাই থাকে না । সীমাহীন মুক্তির আস্বাদ গ্রহন করতে হলে মানুষকে তার নিজের কাছেই সমস্ত পাপ অভিশাপের ভান্ডার জমা রেখে উমুক্ত পৃথিবীতে দৃষ্টি রাখতে হয় । আমি অন্ধ প্রকৃতির মানুষ । দৃষ্টিশক্তি নেহায়েত স্বল্প । তবু মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি । কিছু দেখবো বলে নয় । বরং সৃষ্টির অপার রহস্য যদি আমাকে দেখে ফেলে । আমাকে আবিষ্কার করে ফেলে , এই বিশ্বাসে নিরন্তর তাকিয়ে থাকি । একবার যদি তার নজরে পড়ে যাই তবে কি অবস্হা হবে একথা ভেবেই আমি আনন্দে আতিশায্য হয়ে উঠি ।
এমন নিরীহ লেখায় পাপ অভিশাপের অনুচিত প্রবেশ নিজেকে একটু দ্বিধায় ফেলে দিলো বোধহয় । এমন দ্বিধা একেবারেই অবান্তর তা বলব না । তবে একেবারেই কারন নেই এমন দাবী স্বীকার করব না । ধরো এমন চিঠি যদি আমি কোন গুরুজনকে লিখতাম আর এরকম আকার ওকার ভুল করতাম তবে কি গুরুজনকে অশ্রদ্ধা করা হতো না । আর গুরুজনে অশ্রদ্ধা সে’তো চূড়ান্ত পাপ । গুরুজন ছাড়ো ধরো এইপ্রকার চিঠি কোন ছোট ভ্বাতৃতূল্য ভাইকে লিখলাম আর যথাযথ স্হানে তাকে আদর স্নেহ করতে ভুল করলাম । তবে কি আর আমার রক্ষে হবে ? জাত না গেলেও মান টেকানো দায় হবে । আর আদর জনিত কৃপনতার জন্য কিছু পাপ হয়ে গেলেও অবাক করার মতো কিছু থাকবে কি ?
প্রিয় নিজ । আমি বরাবরই অধম প্রকৃতির বেদম মন্দ লোক । তাই কখনোই মাথা হতে সরস জাতীয় কোন চিন্তা বাহির হয় না । নিজের এই বরাবর অযোগ্যতার কাছে তাই কখনো কখনো ন্যায় দাবীও প্রকাশ করতে লজ্জিত হই । তবু মানুষ কেমন করে যেন আমার সমস্ত জেনে যায় । আমার সকল ভাবনায় কেমন করে যে মানুষের এমন অবাধ বিচরন চলে তা আমি বুঝিনা । এমনটা বুঝি নির্বোধদের বেলায়ই হয় । অবশ্য নির্বোধ হওয়ার মধ্যেও একপ্রকার আনন্দ আছে । আমি বর্তমানে নির্বোধ আনন্দে আছি । এই নিয়ে মন্দ ভাবনার কিছু নেই । জীবনে সুখী হওয়াটাই মূখ্য । কোন উপায়ে সুখী এমন নিরর্থক ভাবনা আমার জন্য নয় ।
আমি ভাল আছি ।
……….নিঃশব্দ নাগরিক ।