Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

সোহাগের সুন্দর বন পরিবহন এক্সপ্রেস

: | : ২১/০১/২০১৪

চতুর্থ পর্ব

মনের দূঃখ মনে রইল রে
বুঝলিনা রে সোনার চাঁদ।
চন্দ্র সূর্য যত বড়
আমার দূঃখ তার সমান।

আহা ঠিক যেন সিনেমার সিন।সোহাগ ভাইজান বড় মান্দার গাছটার নীচে ঢেলান দিয়ে বসে আছেন। মাশাআল্লাহ ভাইজানের চেহারা গানের গলা সিনেমার নায়ক গোরে হার মানাইব ।মনে মনে রশীদ ভাবে।ভাইজান রে ব্যাপক উদাস দেখাইতেছে ।সরেজমিন তদন্ত করি দেখি ব্যাপার খানা কি?

কইবার যদি মানুষ না পাস রে
কইস কথা তুই আমার সনে।রশীদ ও গলা মেলায়।

কি হইছে ভাইজান ?আপনারে ব্যাপক উদাস দেখাইতেছে।ভাবীর উপর গোস্সা না তো?

দূর মাইয়াছেলের কথা বন্ধ।পাত্তা দেইনা মাইয়ার জাতরে।সারাদিন আছে এগুলান কুটকাচালী আর ঝগড়া নিয়া।একশটা মাইয়ার মধ্যে একটা মেয়ারে তুই ভাল পাবিনা রশীদ।অখন রাগে নিজের হাত কামড়াই কেন যে এই জাতটারে বিয়া করলাম।দূঃখে হতাশায় সোহাগ ভ্যাজর ভ্যাজর করতে থাকে।

রশীদ প্রথমে একটু দূঃখ পায় মনে মনে। এত সুন্দর ভাবীটারে নিয়ে ভাইজানের মনে এত দূঃখ।পরে হেসে পেলে ভাইজানের খেদোক্তিতে। ছবির মত ভাবীসাব।দেখতে শুনতে কতকিছু খাওয়াইছে রশীদরে।ভাইজানের বাস কিনায় টাকা দিছে নিজের গহনা বেইচা।

না ভাইজান ভাবীসাবের সঙ্গে ভূল চিন্তা করে মনে মনে সে ভাবে।আমারে যদি আল্লাহ পরদেওয়ার দেগার এরকম একটা বউ দিত মাথায় কইরা রাখতাম।সে হইত আমার রাজরানী।

তো ভাইজান আপনার কি ছেলে গোরে বিয়ের শখ।আমি রাজী আছি ভাইজান।আমার একটা থাকার জায়গা দরকার ভাইজান।রশীদ মজা করে বললেন।

হাঃ হাঃ করে হেসে রশীদের কাধ আকড়ে ধরল সোহাগ ।

তুই আমার সঙ্গে থাকবিরে রশীদ।আমি খাইলে তুই ও খাবি।এটা আমার ওয়াদা তোর লগে।

একটু আগে বানরের সাথে নাচা পাবলিক টি দেখা যাচ্ছে বিষন্ন মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।বমি টমি করে কান্ড করে ফেলছিল বেচারা বানরের থাপ্পড় খাইয়া।রশীদের এখন বেচারার লাইগা মায়া লাগতাছে।

রশীদরে দেখ তো ওইলোকটারে কি হইছে? এত চুপচাপ হইয়া বইয়া আছে কেন সোহাগ বলে। তার গাড়ীর সিটের তলা থেকে একটা টিফিন ক্যারিয়ার বের করে রশীদ কে দিল।

এটার মধ্যে তোর ভাবী কিছু খাওয়ার দিছে।ওই ব্যাটা তুই মিলা খাইয়া ফেল।

রশীদ খুশী হয়ে গেল।ওহ ভাইজান বেজায় ভোক লাগছিল।

খুলে দেখে ভূনা মাংস একবাটিতে আর দুইবাটিতে খিচুড়ি । ভাইজান আপনি খাইবেন না? আসেন তিনজন মিইলা খাই।অনেক খাওন দিছে ভাবী।

তিনজন তিনবাটিতে ভাগ ভাগ করে খাওয়ার নিল ।তৃপ্তি করে খেয়ে নিল সারাদিনপরে।লোকটা এখন আবার হাসিখুশী হয়ে ট্রানজিষ্টার বাজান শুরু করেছে।

শুকরিয়া ভাইাজান।সারাদিন কিছু খাওয়ার সুযোগ পাইনাই।এখন খাইলাম সারাদিন পরে ভাইজান।আপনার পরিবারের রান্না অতি ভাল।ঠিক আমার মায়ের রান্না। বলে সে রশীদকে।

আমার বউ নাই।ভাইজানের বউ বলে সোহাগকে দেখিয়ে দেয়।

বা বা ভাইজানের চেহারাখান তো মাশাআল্লাহ লোকটি বলে উঠল।

কেও সোহাগের প্রশংসা করলে রশীদ খুব উৎফুল্ল বোধ করে।সে উচ্চসিত হয়ে বলতে থাকে হ্যা ভাইজানের তো নায়ক হওয়ার অফার ও আসে।উনি তো পরহেজগার মানুষ সেইজন্য সিনেমায় যাইবনা।আবেগের আতিশয্যে সে ডাহা মিথ্যা কথা বলে ফেলল।

পরে নিজে মনে মনে তওবা কাটতে থাকে আল্লাহ আর মিথ্যা কথা না।ভাইজানরে ভালবাইসা বেশী মিথ্যা বইলা ফেলি।মাপ করি দিও আল্লাহ।

রেষ্টরুমের ভিতরে রান্না হচ্ছে।এখন রাত ।সবাই গাড়ী বন্ধ করে ভিতরে এসেছে।ঠিক হয়েছে পরের দিন সকালে দুইঘন্টা ঘুরাঘুরি করে ঢাকার পথে রওয়ানা করবে।

রশীদের একটা মেয়েরে খুব মনে ধরছে।যতবার তাকাইতে যাচ্ছে দজ্জাল মা না কে সারাক্ষন পাহারা দিয়ে রাখে।

সে এখন মেয়ের দিকে আর না তাকানো সাব্যস্ত করল।ট্রানজিষ্টার আবার গান ছাড়ছে।

হায়রে মানুষ রঙীন ফানুস
দম ফুরাইলে ঠুস
তবু তো ভাই কারো রি নাই
একটু খানি হুশ।

হায়রে মানুষ রঙীন ফানুস ।

রশীদ মাথা নাড়তে থাকে গানের তালে তালে।

আহা কি কথা গানের।খাটি কথা।

রান্নাঘর থেকে ঝগড়া ফ্যাসাদের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।সবাই কান পেতে শোনার চেষ্টা করতেছে।

চুপ কর মরার বেটি।একমিনিটের জন্য তরকারী টা নাড়তে দিলাম।বেক্কল বেটি মশলা পুইড়া লাইছে।অখন সাব মেমরা তোর ওই স্বাদের তরকারী খাইব? স্তীলোকটি মিনমিন করে কি জবাব দেওয়ার চেষ্টা করল প্রবল প্রতাপে থামিয়ে দিল পুরুষ কন্ঠটি।

এই অভাগীর বেটি রে বিয়া কইরা জীবন টা জ্বইলা গেল।বেটি প্রত্যেক দিন তরকারী ফোড়ায়।

বুঝা গেল স্বামী হেড বাবুর্চী স্ত্রীটি হেল্পার।

কিছুক্ষনের মধ্যে দুইজনের ঝগড়া সপ্তমে উঠল।

স্ত্রীটি চিৎকার করে কাদছে আর অভিশাপ দিচ্ছে।

আই আন্নার লাইন বুড়া বেটার ঘর কইতারনো।আরে এখনি বাপের বাড়ীত পাঠাই দেন।বলে দুম করে তরকারীর কড়াই নিচে নামিয়ে রাখল।

ক্ষিধায় বাহিরের রুমে সবার নাড়ীভূড়ি জ্বলে যাওয়ার জোগাড়।

দুই রাধুনী যেই ফাইট দিতাছে ভাইজান আজকে রাতে মনে হয় খাওন নাই কপালে।রশীদ হেসে বলে।

দেখছিস তুই মেয়াদের কান্ড।সোহাগ উত্তেজিত হয়ে বলল।

ভাইজান আপনি একতরফা বলতাছেন আমাগো মন্ত্রীর মত।জামাই চিৎকার করতেছে বেশী অসহায় বউটার লগে ।আপনি বদ জামাই র পক্ষ লইলেন ছেলে বইলা।

অবশেষে জামাই বউ কুস্তি শেষে সন্ধি হল রান্না শেষ হল ।সবাই খেতে বসল।

রাধুনী বউ সবার প্লেটে ভাত বেড়ে দিচ্ছে।একলোকমা খাওয়ার পর রশীদ বউটির তাকিয়ে বলল

ভাবীসাব আপনার পাক তো অনেক স্বাদের।শুনে স্বামীর মেজাজ আবার চড়াও।

ওই মাথাত ঘোমটা দে বউটারে কড়া ধমক দিয়ে দিল।বেটির কাজ কাম নাই খালি রং ঢং।

তুমি না মিঞা বদের মত চেচাইতেছ।ভাবীজান রান্না করছে কষ্ট কইরা তুমি এনারে ধমকাইতেছ।রশীদ রাগে ধমক দেয় বাবুর্চীকে।

ইনি তোমার কাকিজান ভাবী না।আমার পরিবাররে আমি যা খুশী কমু।তুমি এদিকে নজর দেও কেন পোলা।

ভিতরের বনথেকে তীক্ষ হাহা হাসির শব্দে সবার পিলে চমকে গেল এইসময়।

ভয় পাইয়েন না চৌকিদার বলল।হায়নার হাসি অনেক দুর এ আছে।

জানালার বাহির থেকে জলজলে চোখ দেখে কয়েকজন চিৎকার দিয়ে উঠল ভয়ে ।এটা কি?

এটা বাগদাস।ভয়ের কিছু নাই।আমরা পাহারায় আছি বাস আর ঘরের দরজা আটকাই ঘুমাই যান।

সবার চোখ থেকে ঘুম উবে গিয়েছে হায়না র হাসি শোনার পর।সবাই ভাবছে কোনরকমে রাতটা পার হলে বাচে।

রাতের অন্ধকারে সব কিছু ভয়ন্কর মনে হয়।ভরসার কথা শুনলে ও ঠিক ভরসা আসেনা মনে।দেখা যাক আল্লাহ ভরসা।মনে মনে ঘুমের দোয়া পড়ে সোহাগ ঘুমিয়ে পড়ল নিশ্চিন্তে তার পরিবহন বাসটিকে আল্লাহ পরওয়ারদেগারের জিম্মায় রেখে।এখন ও ভোর হওয়ার অনেক দেরী।

(পরবর্তীতে)

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top