আমরা করব জয় একদিন
সপ্তম পর্ব
আইমা দাড়িয়ে আছে তার বিশাল আকারের স্কয়ারাকৃতি বাসার ব্যালকনিতে। পুরা বাসাটি চারিদিকে থেকে শক্ত অ্যাটমিক বুলেট প্রফ গ্লাস দিয়ে ঢাকা।নোয়ার নিরাপত্তা দিতে নাসার কেন্দ্রীয় অফিসের এই আয়োজন।নোয়া নাসার মহাকাশ গবেষনাগার এর সর্বাধিক বেতনভূক্ত সর্বকনিষ্ঠ বিজ্ঞানী।যদিও জ্যোতির্বিদ্যার সর্বজ্ঞেত্রে তার বিচরন বিজ্ঞানের অন্য শাখার চেয় বেশী অবাধ ।নোয়ার জন্ম যেন হয়েছে বিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃত হিসাবে।বিজ্ঞানের যে শাখায় তার হাত পড়ে সেখানে অসামান্য কোন আবিস্কার পেয়ে যায় পৃথিবী।মাত্র বার বছর বয়সে মহাজগতের সকল ঘূর্ণায়মান গ্রহমন্ডলীর মধ্যে অবিচ্ছিন্ন গতির সূত্র আবিস্কারের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে।সে প্রথম বিজ্ঞানী যে আইনষ্টাইনের পর তার থিয়োরী অব রিলেটিভিটির নুতুন ভার্সন উদ্ভাবন করে।E=Mc2 প্রত্যেক ক্রিয়ার বিরীতমূখী প্রতিক্রিয়া আছে। অপরপক্ষে ক্রিয়ার একই শক্তি আছে প্রতিক্রিয়ার গতিপথ পরিবর্তন করার নোয়ার এই অ্যাডভান্সড সূত্রটিকে সে গানিতিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমান করল ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যেমন রিভারসিবল হতে পারে তেমনি একমূখী হতে পারে তা সম্পূর্ন নিয়ামকের উপর নির্ভর করবে।
সে সূত্রটিকে একটু পরিবর্তিত করে লিখল এইভাবে E ডাবল অ্যারো কি প্লাস =Mc2। ছেলের বিশাল এক ছবি ঝুলানো আছে ষ্টাডি রুমে।ছবির দিকে তাকাতে তাকাতে আইমার বুক গর্বে ভরে উঠে।তার ছেলে মাত্র আঠার বছর বয়সে পৃথিবী মহাশূন্যের নামী দামী বিজ্ঞানীতে পরিনত হয়েছে।সরকার তার কার্য্যালয় দুইজায়গা থেকে তার কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।অবশ্য নোয়া এসব নিরাপত্তা বডিগার্ড নিয়ে বিন্দুমাত্র মাথা ঘামায়না।যখন তখন সে নিরাপত্তাহীনভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় আইমাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলে।তাদের এই বাড়ীটি দেওয়া হয়েছে নাসা থেকে স্পেশাল অ্যালোটমেন্টে।বাড়ীর মেঝে সম্পূর্ন পারদ এর আস্তরের উপর প্লাটিনাম এবং গ্রানাইটের বিশাল আস্তরনে তৈরী।বাসার একমাইলের মধ্যে স্মোক ডিটেকটরের সাথে পাওয়ারফুল অনুবীক্ষনিক যন্ত্র সহ ক্যামেরা লাগানো আছে।
আইমা তার ষ্টাডিরুমে বসে সার্বক্ষনিক তার আশেপাশের সবকিছুর গতিবিধি পর্যবেক্ষন করে। এমনকি অতিক্ষুদ্র প্রজাতির পিপীলিকা পাওয়ারফুল মাইক্রোস্কোপকে ফাকি দিয়ে এই বাসায় ঢুকতে পারেনা।বাসা সবদিকে অত্যন্ত সিকিউরড।কোন শত্রু তাদের কিছু করতে পারবেনা এটা ঠিক কিন্তু আইমার ভয় অন্য জায়গায়।নোয়া এসব জিনিসকে একেবারে পাত্তা না দিয়ে আগ্নেয়াস্র ছাড়া যখন তখন ঘরের বাহিরে চলে যায়।
আইমা যদি বলে গান সাথে রাখ বাবা।সে সঙ্গে মাথা নেড়ে নিষেধ করবে।আমি যদি গান নেই তার অর্থ আমি বিপদের আশংকা করছি আম্মি ।আমি কেন হিংসার পথ উম্মূক্ত করে দিব ।
এটা হিংসার পথ উম্মূক্ত করা নয় আব্বু।তোমার আত্মরক্ষার জন্য।যখন তোমাকে কেও আক্রমন করতে আসবে তখন ই শুধু তার ব্যবহার করবে।আইমা হতাশার সরে ছেলেকে বুঝানোর চেষ্টা করে।
মাম্মি আমি তো ভবিষ্যত দেখতে পারি নিয়ন্ত্রন করতে পারি।দুঃশ্চিন্তা করনা তো।মাকে সান্তনা দিয়ে ঝটপট ঘর থেকে বের হয়ে যায়।
সন্ধা নেমে আসছে এখন প্রকৃতিতে।আইমা অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে থাকে নোয়ার। ব্যালকনি তে পায়চারি করতে করতে বাহিরে দেখতে থাকে।ঠিক সেইসময়ে নোয়াকে আর একজনের সঙ্গে দেখা গেল।আইমা চমকে উঠল অস্বাভাবিকভাবে।
নোয়ার সাথে ছেলেটিকে দেখে স্মৃতির পাতা হাতড়ে চলে গেল বিশবছর আগে।
নোয়া ঘরে ঢুকে মাকে খুজতে থাকে।
দুজনে আইমাকে পেল ব্যালকনিতে ঠায় দাড়িয়ে আছে দুর আকাশের দিকে তাকিয়ে।
বলেছিনা তোমাকে এই হল মা আমার নোয়া পরিচয় করে দিল হাসিমুখে। আর এ হল আমার ক্লোন মজার ভঙ্গিতে বলল আরিয়ানকে দেখিয়ে।
হাই বলল আইমা ঠিক যেন বিশবছর আগে সেই জেলান আবেগের সাথে আইমা দেখতে থাকে আইমা আরিয়ানকে।কিন্তু এটা সেই নিশ্চিতভাবে ভাবে এ কিছুতে জেলান হতে পারেনা।এর বয়স কত হবে বিশ বাইশ।
ওহ মাই মাম গেটস ইমোশনাল।ইউ সি।তুমি দেখতে আমার মত তাই। আরিয়ান বলল।হাই ম্যাম অর মাম হোয়াট শুড আই কল ইউ বাই ইয়োর নেম?
আইমা তার কোন প্রতুউত্তর না করে নিশব্দে তাকিয়ে থেকে যে প্রশ্ন করে বসল তা অনেকটা বোকার মত ইডিয়টিক প্রশ্ন। তোমার বয়স কত?
আরিয়ান নোয়া দুইজনে হেসে ফেলল।নোয়া কৃত্রিম অনুযোগের স্বরে বলল মা কি হল তোমার?
আমার বয়স ছিল আঠার।বুঝতে পারছিনা আমার এজ ওয়াচে দেখাচ্ছে বত্রিশ।সম্ভবত আমি চৌদ্দ বছর পরের পৃথিবীতে চলে এসেছি।বলল আরিয়ান হেসে।কিন্তু তোমাকে আমার বেশ চেনা মনে হচ্ছে কেন বলতো? আগ্রহে সে ঝুকে এল আইমার দিকে।তুমি কি কখন মঙ্গলগ্রহে বেড়াতে গিয়েছ?সে সম্পূর্ন ভূলে গিয়েছে তার পিসিতে কিছুক্ষন আগে লষ্ট ওয়াল্ড নামের মূভিতে সে আইমাকে দেখেছিল।অবশ্য তার পক্ষে সেই আইমা আর বর্তমান আইমাকে মেলানো কষ্টকর হবে।সেই আইমা ছিল ষোল বছর বয়সী উচ্ছল সুন্দরী তরুনী।এই আাইমা মধ্যবয়সী এক ভদ্রমহিলা। তারপর ও দুজন দুজনের প্রতি অনুরাগ বোধ করল।
এইসময়ে তাদের সামনে কম্পিউটার স্ক্রীনে ধাতব আকৃতির মেশিনে এক যান্ত্রিক অবয়ব ভেসে উঠে। বিচিত্র ভাষায় নোরাকে মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে।
জনাব আপনি মঙ্গলগ্রহের নীতিমালা ভঙ্গ করেছেন।এক ভয়ন্কর ক্রিমিনালকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন।যা মহাশূন্যের নীতিমালা ভঙ্গের অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
ট্রান্সমিট হয়ে সবকথা তার ডিভাইসে দৃশ্যমান হচ্ছে।
আপনি অবিলম্বে তাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করুন নতুবা অপারগ হয়ে আপনাদের কে বন্দী করতে বাধ্য থাকিব।
নোয়া অবিলম্বে তাদের সাথে কথা না বলে সব ডিভাইসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিল।
তুমি আমার বাসায় সম্পূর্ন বিপদমূক্ত বন্ধু।এই মেসেজগুলিকে ইগনোর কর।তোমার ভাগ্য আমি পরিবর্তন করতে যাচ্ছি মঙ্গলগ্রহের মানুষ বলল আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে।তোমার কোন ক্ষতি কেও করতে পারবেনা।
আরিয়ান আইমা দুইজনে কৃতক্ষতার চোখে তাকিয়ে থাকে নোরার দিকে।
এদিকে ধাতব স্ক্রীনে একই মেসেজ আবার ভেসে উঠেছে।
(পরবর্তীতে)