বাজী ( শেষ পর্ব )
৫ .
এখন আর জীবু একা টানছে না । ওদের কল্কি এখন চলছে স্বাভাবীক নিয়মে হাত বদল করে । একটার শেষের মাঝখানে বেশ খানিকটা সময় বিরাম দিয়ে । এভাবে ওরা সারারাত ধরে চালিয়ে যেতে পারে । এতোটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে কারোর কোন অসুবিধা হয় না । এবং প্রায় সময়ই তা করেও । হয়তো আজকেই তা করবে । বেশ কদিন পর জীবুর প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ।
– জীবু , তর মনে অয় একবার বাড়ীত যাওন দরকার !
কল্কিটা তখন জীবুর হাতে ধরা । এমন সময় কথাটা বলে হাশু ।
কথা শুনেও টান দেয়াতে বাঁধা পড়ে না জীবুর । কষে টান দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ধরে রাখে ধোঁয়াটা বুকের খাঁচার মধ্যে । তারপর সময় নিয়ে উগড়ে দেয় আস্ত আস্ত । বেশ আয়েশের সাথে ।
বোঝাই যায় পুরো ব্যাপারটা দারুন উপভোগ করছে জীবু ।
– ক্যান ? আৎখা বাড়ীত যাওনের কথা উঠতাছে ক্যান ?
– মাসীমার খুব খারাপ অবস্হা হুনলাম ।
– সেতো জানি অই । ম্যালা দিন ধইরাই মায় বিছানে পড়া !দিনদশেক আগেই না গিয়া দেইখা আইলাম ? তা তরাও জানস তো ?
– হ জানি । কিন্তুক মনে অয় অহন অবস্হা এক্কবারেই খারাপ ।
– হুম । তা তরা জানলি কেমনে ?
– কাইল পবা তরে দুই তিনবার খোঁজ করতে আইছিল এইদিকে ।
– পবা ? মানে আমাগো পবন !এইদিকে ?
ছোট ভাইয়ের তাকে খোঁজ করতে আসা শুনে বেশ অবাক হয় জীবু । খানিকটা বিচলিতও বুঝি ! কারণ তাকে বলতে গেলে একেবারে বাতিলের খাতায়ই ফেলে দিয়েছে বাড়ীর সবাই । ঐ বাড়ীতে আর তার কোন গ্রহণযোগ্যতা অবশিষ্ট নেই । বরং নিজেই মাঝেমাঝে বাড়ীর বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরে খবর পাঠায় মায়ের কাছে । মা এসে তার সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলে যায় খানিকটা সময় । যদিও ইদানিং আর তাও হচ্ছে না । কারণ ওর মা বেশ কিছুদিন হলো বিছানা ছেড়ে উঠতেই পারছে না ।
এই অবস্হায় আজকাল ঐ বাড়ীতে গেলে প্রায়ই ওকে ফিরে আসতে হয় মায়ের সঙ্গে দেখা না করেই । যেহেতু মা বিছানা ছেড়ে উঠে বাইরে এসে তার সঙ্গে দেখা অবস্হায় নেই । আর ওর বড়দাও যেহেতু বাসায় থাকে – তাই বাড়ীতে ঢোকার প্রশ্নই আসেনা । কারণ শিবুদা আজকাল ওকে প্রায় সহ্যই করতে পারে না । তারউপর আছে শিবুর বউ মানে জীবুর মিনতি বৌদি । সে হলো আবার জীবুর ব্যাপারে আরো বেশি ভয়ানক মনোভাবের অধিকারী । জীবুকে দেখলেই এমনভাব করে যেন সামনে কোন ভয়ংকর সাপ দাঁড়িয়ে আছে । সুযোগ পেলেই যে কিনা ছোবল মারবে ।
তবু এরমধ্যেও দুই তিনবার ওদের স্বামী স্ত্রীর না বাসায় না থাকার সুযোগে বাড়ীর ভেতরে গিয়ে মায়ের সাথে দেখা করে আসার সুযোগ পেয়েছে জীবু । এই যেমন শেষবার দিন দশেক আগেই যখন গিয়েছিল তখনও ওরা কেউ বাসায় ছিল না । এই ফাঁকে পবন এসে ওকে নিয়ে গেছিল ভেতরে ।
– হ ।
– তা কি কইলো পবায় ?
– কইলো মাসীমার অবস্হা খুব খারাপ । কওয়া যায় এক্কেবারে যহন তহন । যদি পারস শেষবারের মথন একটু চোখের দেহা দেইহা আসতে । আর পারলে মাসীমার মুখে ইকটু জল দিয়া আসতে । মাসীমার মুখের জবান নাকি হইরা গ্যাছে গা ।
কথাগুলো স্হির হয়ে শুনলো জীবু । কিন্তু খুব বেশি অবাক হলো না বুঝি । আসলেই হলো না । কারন শেষবার যখন মায়ের সাথে দেখা হলো তখনই মার কথা প্রায় জড়িয়ে যাচ্ছিল । ওর দিকে ঘোলা দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধু চোখের জল ফেলছিল । আর সারা শরীরে হাত বুলিয়ে দোহাই দিচ্ছিল তাকে এবার অন্তত ভালপথে ফিরে আসার জন্য । ওই অবস্হায় মায়ের সাথে তেমন কোন কথা বলতে পারেনি জীবু । আসলে মুখ দিয়ে কোন কথাই বেরোচ্ছিল না তার । মায়ের নয় , বরং যেন তারই বাকরোধ হয়ে গেছিল ঐ মুহুর্তে ।
শেষকালে রীতিমতন বলা যায় পালিয়েই এসেছিল জীবু মায়ের কাছ থেকে ।
কোন কথা না বলে একে একে বন্ধুদের দিকে কিরকম অদ্ভুদ একটা দৃষ্টি মেলে তাকায় জীবু । অদ্ভুদ বিষাদের একটা হাসিও বুঝি ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোনে । যদিও অন্ধকারের কারনে সামনে বসে থাকা মানুষগুলোর চোখে বুঝি খুব পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে না সেই ম্লান হাসিটুকু ।
– হ যামু ! মায়রে শ্যাষ দ্যাহা তো দেখতে যাইতেই অইবো । কিন্তুক এই রাইত কইরা তো যাওন যাইবো না রে । বিয়ানবেলায় সুযুগ বুইজা যাইতে অইব !অহন গেলে আমারে কেউ বাড়ীত ঢুকতেই দিব না রে ! কওন যায় না , হয়তো চোর ডাকাইত কইয়া চিল্লায়া গেরামের মানুষজনরে দিয়া পিডানও খাওয়াইয়া দিতে পারে !
শেষ কথাগুলো বলার সময় কি যে করুন শোনায় জীবুর ধরে আসা কন্ঠস্বর !
————————————— **** ———————————————-
৬ .
প্রায় মাঝরাত এখন ।
শ্মশানে চারজনের বসা আসরটিও এখন আর শুরুর দিকের মতন সতেজ অবস্হায় নেই । একটানা অনেকক্ষণ ধরে নেশা করার ফলে ওদের সবার মধ্যেই এসে গেছে স্বাভাবীক শৈথিল্য । ষ্পষ্ট ভর করেছে আসর ভাঙ্গার সুর । এমন অবস্হায় ওরা যা করে সচরাচর এখনও তাই করছে । নেশায় আচ্ছন্নবস্হায় ঝিমুতে ঝিমুতে হাঁড়িয়া আর হাশু সটান শুয়ে পড়েছে নিজের বসে থাকা জায়গাতেই । অন্যদিকে জীবু আর কালু পাশাপাশি বসে আছে চোখ বন্ধ করে গাছের গায়ে হেলান দিয়ে ।
এমন অবস্হায় মৃদু একটা গুঞ্জণ ধ্বণি শোনা গেল বহু দূর থেকে । মনে হলো যেটা আসলে এগিয়ে আসছে এদিকেই । খুবই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকা সেই গুঞ্জণ এক এক করে ধরা পড়তে লাগলো ওদের নেশাগ্রস্ত কানেও । যত আচ্ছন্নবস্হাতেই থাকুক বহুদিনের অভ্যাসের কারণে ওরা কেউই এখন আর চেতনা হারানোর অবস্হায় পৌঁছায় না খুব একটা । একেবারে বাড়াবাড়ি হয়ে না গেলে ।
তবে তারচেয়েও মনে হয় বড় কারণ হলো ,ওদের সার্বক্ষনিক সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তা । আসলে যে ধরনের পেশায় ওরা জড়িত তাতে স্নায়ুকে সর্বদা সজাগ রেখে চলতে না পারলে যে কোন সময় যে কোন বিপদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ওদের প্রবল । আর সেই নিজেদের নিরাপত্তার প্রয়োজনেই বোধ করি ওরা অভ্যস্হ হয়ে গেছে যে কোন পরিস্হিতিতে সতর্ক থাকতে । হয়তোবা বহুদিনের গড়ে তোলা অভ্যাসের কারনেই ওদের ঝিমিয়ে পড়া ইন্দ্রিয়গুলোকে ঝাঁকুনি দিয়ে যেতে ভুল করলো না এবারেও ।
ওদিকে আস্তে আস্তে আরো কাছে এগিয়ে আসছে শব্দের উৎস । যেটা এখন গুঞ্জনধ্বণি থেকে অনেকটাই রুপ নিচ্ছে বহুমানুষের মিলিত কন্ঠস্বরে । বোঝা যাচ্ছে , বহু মানুষ এগিয়ে আসছে এদিকেই সমস্বরে চিৎকার করতে করতে । ঘোর লাগা দৃষ্টিতে চারজনই প্রথমে খুব অবাক হয় সে আওয়াজে । মুখ চাওয়াচাওয়ি করে একে অপরের দিকে তাকিয়ে ।
– চলতো আগায়া দেহি কারা আহে !
বলতে বলতে সবার আগে উঠে দাঁড়ায় হাসু । প্যান্টের পেছনে লেগে থাকা ধুলোবালি হাত দিয়ে ঝারতে ঝারতে এগিয়ে যায় শ্মশাণের খোলা চত্বরের দিকে । একে একে বাকী তিনজনও অনুসরণ করে তাকে ।
ততোক্ষণে মানুষের মিছিলটা গ্রামের পথ ছেড়ে ঢুকে পড়েছে শ্মশানের একমাত্র পথটায় । মানুষগুলোকে দেখা না গেলেও অন্ধকারে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে আসতে থাকা আলোর নাঁচন আর তাদের পাশে ছায়া ছায়া মানুষের অবয়ব এখন অনেকটাই কাছে চলে এসেছে । সেইসাথে অনেকবেশি ষ্পষ্ট এখন সেই সুর তোলা কন্ঠধ্বণি । আর সেটা যে ” হরিবোল ” ধ্বণি সেটাও এতদূর থেকে বুঝতে কোন অসুবিধা হলো না ওদের ।
-কেডায় মরলো রে আবার ? কোন গেরামের মানুষ ?
– কেডায় জানে ? কিন্তুক এত্তো রাইতে ক্যান ? আর কয়ঘন্টা বাদেই তো বিয়ান !
– মনে অয় সন্ধার আগে আগে মরছেরে । যেই গরম পড়ছে তাইতে বেশিক্ষণ আগলায়া রাখনের তো রাস্তা নাই । পঁইচা যাইব
– তোমরা আর নজর লাগায়ও না তো দাদারা ! এই রাইত দুইফরে যাই অউক কিছু ধান্দাপানির রাস্তা তো অইলো আমার ! যাই , আমি চিতার লিগা কাঠ জোগাড় করি গিয়া ।
শেষ কথগুলো হাঁড়িয়ার । বলেই আর অপেক্ষা করে না সে । ঘুরেই সোজা এগোয় উঁচু করে রাখা কাঠের স্তুপের দিকে ।
– হালার হের লাইগাই কয় কারুর পৌষ মাস তো কারুর সর্বনাশ । অই যে বাড়ীর মানুষটা মরছে তাগো কি অবস্হা । আর এর মধ্যেই হাঁড়িয়া কি সোন্দর ধান্দার চিন্তা করে দ্যাখ ।
– ওই দোষের কি করলো রে ? এইডাই তো অর কাম ।
-হ । তা ঠিক । তয় কতাটা মনে আইলো তাই কইয়া ফেল্লাম ।
-যাউকগা । অহন আমরা আয় কিছু ধান্দা করি !
জীবুর কথা শুনে এবার হাসু আর কালু দুজনেই বেশ অবাক হয় ।
– ধান্দা ? কিয়ের ধান্দা ?
-অনেকদিক ধইরা আমি আছিলাম না । একলা একলা সব মজা লইছো দুইজনে । আইজ তো দেখলাম আমারে লইয়াও হেব্বি একখান বাজি ধইরা সারছো ! অহন আহো , আমি একটা বাজি ধরি !
-কি বাজী রে দোস্ত ?
অধীর আগ্রহ প্রকাশ পায় হাসুর কন্ঠে ।
-আয় অই মরা লইয়া বাজি অয়া যাউক !
– মরা লইয়া বাজী ? কিমুন ? কিমুন ? জলদি ক দোস্ত ।
-ওই যে মরা নিয়া আইতাছে মাইনষেরা ,অহনও কিন্তুক বুঝা যাইতাছে না ওইটা কিয়ের মরা ? বেডা না বেডি মরা – কে কইতে পারবি তরা ? আমি কইতাছি ওইডা বেডি মাইনষের মরা । তগো অন্যকিছু মনে অইলে বাজী ধরতে পারস ! কাইল সকালে ভর প্যাট বিরানী খামু হাইক্কার হোডেলে !যে বা যারা হারবো – বিল তারা দিব ! কি কস ?
কৌতুকের স্বরে কথাগুলো বলা হলেও জীবুর প্রস্তাবে রীতিমতন লাফিয়ে ওঠে বাকী দুজন । এই তো চাই ওদের !টাকা পয়সা বড় কথা নয় , আচমকা যে কোন জিনিসের উপর বাজী ধরে বসার যে রোমাঞ্চ – তা ওরা প্রত্যেকেই তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে । সারাদিনে দুই চারবার নিজেদের মধ্যে এমন বাজী ওরা যখন তখন ধরে বসে । যারমাঝে বহু অভিনব ধরণের বাজী ধরার ইতিহাসও ওদের রয়েছে । কিন্তু এবারের বাজীটা যেন রীতিমতন রোমাঞ্চকর মনে হয় দুজনের কাছেই । ভারী পছন্দ হয় বিষয়বস্তু । তাই আর দেরী করে না ওরা দুজনের কেউই । একজন অন্যজনের দিকে একবার তাকিয়েই মনস্হির করে ফেলে ।
– ঠিকাছে । তুই যহন বেডি মরা লইছস আমরা দুইজনই লইলাম বেডা । যা বে জীবা , তুইও কি ইয়াদ করবি । যা তই জিতলে আমরা খালি কাইল বিয়ানেই না , তিনবেলাই তর যা মন চাইবো প্যাট ভইরা খাওয়ামু !
প্রথম মুখ খোলে হাসু ।
– হ যা হারাদিনভর তর গলা তরি খাওয়াইয়া যামু বে জীবা ।
হাসুর কথায় সায় দিতে ভুল হয় না কালুরও ।
-ওরে আমার লাট সাবের আওলাদেরা রে ।
বলে বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে মনখুলে হাসে জীবু । আসলে বন্ধুরা যে তাকে বেশ কদিন পর ফিরে পেয়ে যে কোন ভাবে ওকে খুশী করতে চাইছে – এটাও সে ঠিক বুঝতে পারে ।
যাই হোক , আর কোন কথা না বাড়িয়ে এবার তিনজনেই একসাথে মনোযোগ দেয় দূর থেকে ওদের দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসা বাজীর বিষয়বস্তুর দিকে ! প্রত্যকের দৃষ্ট ওদের ক্রমশ তীক্ষ্ন থেকে তীক্ষনতর হয় । যতোই শববাহী দলটা তাদের দিকে এগিয়ে আসতে থাকে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পেতে থাকে ওদের ভেতরকার উত্তেজনা ।
একে একে কেটে যেতে থাকে তীব্র উত্তেজনায় ঠাসা মুহুর্তগুলো । নাচতে নাচতে এগিয়ে আসা আলোর বিন্দুগুলো ক্রমান্বয়ে বড় আর স্হির হতে থাকে । সেই ছায়া ছায়া মূর্তিগুলো ক্রমশ ধারণ করতে শুরু করে মানুষের অবয়ব ।
একসময় আরো কাছাকছি এগিয়ে আসা অবয়বগুলোও পেতে থাকে পরিষ্কার চেহারা ।
সর্বপ্রথম দৃষ্টিগোচর হয় সাদা বস্ত্র পরিধান করা নাদুসনুদুস মাঝারী গড়নের একটি পুরুষকে । রাতের আলোয় মাঝে চারপাশের বয়ে আনা লন্ঠনের আলোয় এই দূর থেকেও চিকচিক করে ওঠে তার ন্যাড়া মাথাটি ।বোঝাই যায় তা সদ্যই কামানো হয়েছে । লোকটার স্লথ হেঁটে চলার ভঙ্গিতেই স্পষ্ট এই মুহুর্তে শোকে মুহ্যমান হয়ে আছে মানুষটা ।
আর একটু এগুতে মানুষটার হাতে একটা কিছু ঝুলে আছে যে তাও বোঝা যায় । আর সেটা যে একটা হাঁড়ি তা অবশ্য তিনজনের কাউকেই আর বলে দিতে হয় না ।
কিন্তু মানুষটাকে যে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে !
কে ? কোন গ্রামের ? ওদের অতি পরিচিত কেউ নয়তো ?
-হে খোদা !শীবুদা !
সর্বপ্রথম লোকটাকে চিনতে পেরে অষ্ফুটস্বরে বলে ওঠে হাসু ।
-মাসাইইইই মাআআআআআ !
ততোক্ষণে কালুও চিনতে পেরেছে মানুষটাকে । এবং এক মুহুর্তে বুঝে গেছে ব্যাপারটা । আর বুঝতে পেরেই নিজেদের মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছা করে ওদের । সন্ধা থেকে জীবুর মায়ের অসুস্হতা ,জীবুর ভাইয়ের এসে খুঁজে পেতে খবর দিয় যাওয়া এবং তারপর এই মাঝরাতে শবযাত্রীর আগমন – ওদের তো সবকিছু আন্দাজ করা উচিৎ ছিল আগেই । অথচ তা না করে ওরা কিনা উল্টো বাজী ধরে বসলো !
নেশা কি মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাচেতনাকে এভাবেই গ্রাস করে ফেলে অসূরের মতন !
নিজেদের প্রবল ধাক্কা খানিকটা সামলে ওরা দুজনই ফিরে তাকায় জীবুর দিকে !
কিন্তু কোথায় জীবু ? একটু আগেই সে ওদের পাশেই দাড়িয়ে ছিল !
জীবুর খোঁজে ওরা ভালভাবে চায় চারপাশে । এবং একটু ভালো করে তাকাতেই চোখে পড়ে খালপাড় ধরে ক্রমশ অন্ধকারে হারিয়ে যেতে থাকা দ্রুত ধাবমান একটি ছায়া মূর্তিকে !
ওরা বুঝতে পারে জীবু ওদের আগেই চিনতে পেরেছে তার ভাইকে । বুঝতে পেরেছে , তার ধরা বাজী মোতাবেক সে জিতে গেছে ! ওটা আসলেই এজন নারীর শবদেহ ! নিজের মায়ের শবদেহ !
আর বাজি ধরে জিতে যাওয়া জীবু এখন জীবনের কাছে কঠিনভাবে হেরে গিয়ে নিজের মুখ লুকাতেই এখন প্রবলবেগে ছুটে চলেছে অন্ধকারের মধ্যে !
অজানা কোন অচেনা আড়ালের খোঁজে নিজের কাছ থেকে বাঁচার জন্যই বুঝি শুরু হয়েছে জীবুর এই রুদ্ধশ্বাস প্রয়াস !
( সমাপ্ত )