Today 11 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

বাল্য বিবাহ কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না ।

: | : ২৪/০১/২০১৪

 

অনেক চেষ্টা করেও আমার ছাত্রীর বিয়েটা আমি বন্ধ করতে পারলাম না । তার বাবাকে আমি অনেক বুঝিয়েছি । বলেছি এতদিন যে মেয়েটাকে বুকে আগলে ধরে মানুষ করলেন এত তাড়াতাড়ি ওকে অন্যের ঘরে দিয়ে দিতে আপনার খারাপ লাগবে না । সবে এস.এস.সি পাশ করলো এবার । আমি এও বলেছি যদি যৌতুকের কারনে আপনার মেয়ে ফিরে আসে তবেতো আবার আপনারই লালন পালন করতে হবে । তার চেয়ে বরং আপনার আদরের মেয়েটা যদি ডিগ্রিও পাশ করে তার চিন্তাতো আপনার করতে হবে না । শেষ পর্যন্ত আমি পারলাম না । হয়ত অনেকে আমাকে ব্যর্থ ভাবছেন, হয়ত আমি ব্যার্থও কিন্তু বাল্য বিবাহের পিছনে যে কতগুলো কারন রয়েছে তা নিয়ে যদি আমরা না ভেবে শুধু বাল্য বিবাহ বন্ধ করার উদ্যোগ নেই তবে কোন দিনও এ ক্ষেত্রে সফলতা আশা সম্ভব নয় । এর ক্ষতিকর দিক গুলোর চেয়েও মানুষ এর ভালো দিকগুলো মনের মধ্যে যেভাবে গেথে নিয়েছে তা অনেকটা পুথি পড়ার মতই মনে ধারন করে ।

আমি এখানে বিয়েটা বন্ধ না করতে পারলেও যে কারনগুলো এর পেছনে দায়ী হিসাবে পেয়েছি তা তুলে ধরছি এ কারনে যে নীতি নির্ধারকেরা যাতে এ বিষয়গুলো বিস্তর গবেষনা করে এ বিষয়ে কার্যকরী এবং যুগোপযুগী উদ্যোগ নিতে পারে ।

কারন ১ : যারা বাল্য বিবাহে ইচ্ছুক তারা যে কোন উপায়ে জন্ম নিবন্ধনে মেয়ের বয়স টাকার বিনিময়ে বৃদ্ধি করে নেয় ।এর ফলে আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে ।  

কারন ২: এক্ষেত্রে কিছু কাজীও দায়ী থাকে এবং এরা মেয়ের বয়স বৃদ্ধি দেখিয়ে বিয়ে দিতে বর এবং কনে পক্ষকে সহায়তা করে ।

কারন ৩: সাধারনত মেয়েদের অর্থনৈতিক অবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাল্যবিবাহে উসাহিত করে ছেলেদের পরিবার ।

কারন ৪: কখনও কখনও তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়ার প্রবনতা থেকেও বাল্য বিবাহের দিকে ঝুকে পড়ে গ্রাম্য পরিবার গুলো ।

কারন ৪: বাল্য বিবাহ যৌতুক নেওয়া এবং দেওয়ারও বড় কারন ।

  

উল্লেখযোগ্য এই কারনগুলো ছাড়াও আরও অনেক কারনেই বাল্য বিবাহ দেওয়া হচ্ছে । যার প্রভাব মেয়ে স্বাস্থ, শিশু স্বাস্থ এবং শিক্ষার প্রসারে বিরাট আকারে পড়ছে । যে মেয়ের এত অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এবং সন্তানও তাড়াতাড়ি চলে আসছে সন্তান সঠিকভাবে লালন পালনে তার অনভিজ্ঞতা দোষের কিছু নয় । বরং সব কিছু ছোট বয়সে ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে আকুল পাথারে পড়ে কখনও কখনও নিজের জীবনও বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে ।শিক্ষা ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে ৯ম ১০ শ্রেনীর মধ্যে ঝড়ে পড়ছে অনেক মেয়ের শিক্ষা জীবন ।এভাবে চলতে থাকলে গ্রাম্য শিক্ষা ব্যবস্থা, যৌতুক প্রথার নির্মমতা এবং স্বাস্থ্য ঝুকি থেকে বের হয়ে আশা খুব কঠিন হয়ে পড়বে ।

আইনকে কার্যকর করার সাথে সাথে মেয়ে শিক্ষার সুফল প্রকাশ্যে দেখানোর জন্য যে কোন ভাবে সরকারের আরো উদার নীতি গ্রহন করার প্রয়োজন । গ্রাম্য কৃষি উন্নয়নে শিক্ষিত মেয়েদের সংশ্লিষ্টতা বাড়ানো, স্বাস্থ্যখাতে মেয়েদের আরো সম্পৃক্ততা এবং শিক্ষার হার বাড়ানোতে মেয়েদের মেধা কাজে লাগিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধ করায় মানুষকে উসাহিত করতে হবে ।  মেয়েদেরকে এবং অসহায় পরিবার সমুহকে বাল্য বিবাহ থেকে মুখ ফেরাতে হলে অবশ্যই মেয়েদের আত্ন নির্ভরশীল করার প্রতি জোর দিতে হবে । এজন্য গ্রামে গ্রামে কারিগরি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষন পদ্ধতি চালু করা খুবই কার্যকরি পদক্ষেপ হতে পারে । ইলেক্ট্রনিক পন্যের প্রসারে কারিগরি শিক্ষা সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হতে পারে মেয়েদের আত্ন নির্ভরশীলতার ক্ষেত্রে ।    

আমি চাই বাল্য বিবাহের কারনে মেয়েদের স্বাস্থ ঝুকি, শিক্ষা না পাওয়া, যৌতুকের বলি হওয়া এবং পরাধিনতার শৃক্ষখলে আর বদ্ধ না হোক । জীবনকে উপভোগ করুক নির্মল আনন্দে ।

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top