Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

মায়ার সংসার ২য় পর্ব

: | : ২৭/০১/২০১৪

মায়ার সংসার ১ম পর্বের পর.

মায়া অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে কখন শিশিরের খোঁজ পাবে। বার বার পলাশকে ফোন করছে কিন্তু ফোন রিসিভ করছেনা। মায়ার ভিতর নতুন ভয় কাজ করছে। ছোট ভাই কখনো ঢাকার বাইরে একা যায় নাই, তার যদি আবার কিছু হয়। বোনের কষ্ট অনুভব করছে পলাশ।ফোনে কি জবাব দিবে এই ভেবে ফোন রিসিভ করছেনা।পলাশ গাড়িতে উঠে তার মাকে সব জানালো। মায়ের পরামর্শ এখনই কিছু মায়াকে জানানো দরকার নেই ।
মায়ার আবার ফোন। এবার ফোন ধরলো পলাশ। হ্যালো আপু বল।
মায়া: তুই ফোন ধরিসনা কেন? আমি খুব ভয়ে আছি।তোর ভাইয়ার সাথে দেখা হল ?
পলাশ: আপু আমি আসতেছি। গাড়িতে কথা বুঝা যাচ্ছে না।
মায়া: আচ্ছা। এই বলে মায়া পলাশের জন্য খাবার তৈরি করতে রান্না ঘরে ঢুকলো ।
একটু পরেই মায়ার মায়ের ফোন।
মায়া : হ্যা মা বল।
মায়ার মা : পলাশ ফোন করেছিল ?
মায়া : করেছিল কিন্তু কোন খবর দিল না । আমার অনেক ভয় হচ্ছে মা।
আমি কাল সকালে তোর বাসায় আসতেছি। এই বলে ফোনটা রেখে দিল।
মায়া যেন আরও ঘোরের মধ্যে ডুবে গেল। কিছুই বুঝে উঠতে পারছেনা।
রাত আনুমানিক ৮টা। পলাশ এসে হাজির। মলিন বদনে ভীরু পায়ে ঘরে ঢুকল,ক্লান্ত শরীর।
ড্রইং রুমে ডুকেই – আপু এক গ্লাস পানি দাও।
মায়া দৌড়ে পানি নিয়ে হাজির।এক নিমিশেই এক গ্লাস পানি দাড়িয়ে পান করে ফেললো।
সোফায় চুপ হয়ে বসে আছে পলাশ। মায়া পলাশের মুখ দেখে অনুমান করছে কিছু একটা খারাপ খবর আছে । তার পরও মন মানেনা। বার বার জিজ্ঞেস করে পলাশ নিশ্চুপ।
পলাশ: আপু আমার মাথা খুব ব্যাথা করছে আমি তোমাকে সব পরে বলব।
মায়া পলাশের মাথার পাশে ফ্লোরে বসে পড়ল।সে কি করুন চেহারা। খাওয়া যায়না মুখে,শুধুই প্রতিক্ষা।
ছিমছাম পরিপাটি মায়ার সাজান সংসার।শিশির আর মায়ার ভালবাসায় গড়া ৭ মাসের সংসার যেন ভালবাসায় পূর্ণ কিন্তু আজ মায়া যেন অসহায় এক নারীর উপমা।
পলাশে দু’চোখ যেন কান্নার জলে ছল-ছল কিন্তু বোনকে বুঝতে দিত চায়না। বাথ রুমে গিয়ে বার বার চোখ ধোয় তবুও কান্নার জল যেন থামেনা। একমাত্র আদরের বোনের এই অবস্থা যেন কোন মতেই সহ্য করতে পারছেনা।
মায়া পলাশের জন্য রাতের খাবার টেবিলে সাজিয়ে খেতে ডাকল।
পলাশ: আপু আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা।
মায়া : আমার লক্ষি ভাই অল্প খা, আর বলনা কি হয়েছে ওর।
পলাশ: ভাইয়া আর বাড়ির সবাই ওর এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেছে তাই কাউকে পাইনাই ।
মায়া: এই কথা বলতে তোর এত সময় লাগে । তুই সত্যি কথা বল।
পলাশ : কি সত্যি বলব আমি তো সত্যি কথাই বলছি । মা কাল সকালে তোমাকে নিতে আসবে, তোমার কাপড়-চোপড় ঘুচাও। সকাল সকাল যাব। আমার বাসায় অনেক কাজ আছে।
মায়া : তোকে যে কাজে পাঠালাম সে কাজটা তুই করতে পারলিনা আর তুই পাকা পাকা কথা বলছিস। বলনা ভাই কি শুনেছিস।
পলাশ : আপু আমি এখন ঘুমাব ।
মায়া : কিছু খেয়ে নে।
পলাশ : না কিছু খাব না।
দুই ভাই বোন দুই রুমে চলে গেল । কারো পেটে আহার নেই । সারা রাত ছটফট,পানি পান আর বাথ রুম করে রাত পার করলো।
সকালে মায়ার মা এসে হাজির। আযানের পর পলাশ ঘুমিয়ে পড়েছে । মা ডাকতে গেলে মায়া নিষেধ করল। মা ও সারা রাত ঘুমায়নি।কেন যেন ছটফট করছে।
মায়ার মা : তাই নাকি ? কি ওর কোন অসুখ করছে নাকি ?
(মনে মনে ভাবে -বোনের এই দু:সংবাদ দিতে না পেরেই সারা তার ছটফট করেছে)।
কাজের বুয়া এসে দেখে সব খাবার টেবিলে নষ্ট হয়ে আছে ।আফা রাতে খাবার খান নাই কেন ?
সব নষ্ট হয়ে আছে ।
মায়া: বুয়া ওগুলো তুমি নিয়ে যাও আর যদি নষ্ট হয়ে যায় তা হলে ফেলে দাও ।
বুয়া: আচ্ছা, এখন কি রুটি বানাবো ?
মায়া: বানাও।
পলাশ ঘুম থেকে যেগে দেখে মা তার পাশে বসা। মা কখন এলে ?
মা: এই কিছুক্ষণ আগে। (চুপে চুপে)- তুই মায়াকে কিছু বলেছিস,
পলাশ : না মা, কিছু বলিনি ।
মায়া সকালের নাস্তা রেডি করে ডাকছে -মা পলাশকে নিয়ে এসো,চা খাবে ।
পলাশ ও তার মা খাবার টেবিলে । মা ছেলে একে অন্যের দিকে তাকায় ।
মায়া : মা তোমরা আমার কাছ থেকে কিছু একটা লুকোচ্ছো।
মা : তোর আর শিশিরের কোন সমস্যা আছে ? মানে ঝগড়া !
মায়া: না।কেন মা ?
মা: তা হলে এমন হলো কেন ?
পলাশ: মা চুম কর। আপু রেডি হও ।
মায়া: কেন ? কোথায় যাব।
মা: আমাদের বাসায় যাবি ।
মায়া: কি বল । পলাশ যে কোন সময় এসে পরবে ।
মা: আসবেনা।
মায়া : তুমি বললেই হল, আসবেনা।
মা: আমি যা বলছি তা শোন। আমাদের কথা শুনলে আজ এরকম হতো না।
মায়া : আমি তোমাদের কথা কিছু বুঝতে পারছিনা।
মা: বোঝার দরকার নেই,পরে বুঝবি। যদি আগে বুঝতি তা হলে…. ।
মায়া: মা তুমি একই কথা বার বার বলছ কিন্তু পরিষ্কার করছোনা।
মা: তুই যখন একা এক বিয়ে করলি তখন তো আমাদের কথা ভাবলিনা।শিশিরই তখন তোর আপন কিন্তু এখন সে কোথায় ?
পলাশ : মা তুমি কেন এখন এসব কথা বলছো ।
মা: কেন তোর ও কি একই রকম ইচছা আছে নাকি ।
পালাশ: চুপ থেকে মা তোমাদের কারনেই ছেলে মেয়েরা বিপথে যায়। তোমাদের অতি আদর আর অতি শাসন দুটো ই খারাপ।
মায়া: তুই পাকনামি রাখ । বল,কি জেনে এসেছ আমি সব শুনতে চাই।
মা: শিশির বিয়ে করেছে । সে এখন তার নতুন শ্বশুর বাড়িতে গেছে । তোরা আমাদের কথার দাম দিসনা তাই এই পরিনতি।
পলাশ: মা তোমাদের পছন্দের পাত্র যদি এরকম করতো তখন কি হত ?
মা: বড়দের সাথে র্ত্ক করতে হয়না।
পলাশ: আপু রেডি হও।
মায়া: না , বাসা ভাড়া বাকি, বুয়ার বেতন বাকি তাছাড়া শিশির এলে ঘরে ডুকবে কি করে।
মা: আমি পলাশকে দিয়ে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিব। মা-বাবা কখনো সন্তানের অমঙ্গল চায়না।তোর বাবার কত সখ ছিল মেয়েকে বড় ঘরে বিয়ে দিবে তা হলোনা। তোর ফুফুরা কথায় কথায় আমকে টিপ্পুনি কাটে,খোটা দেয় আর যদি এই খবর শোনে তা হলে তো আর কথাই নেই।
মায়া হাউমাউ করে কেঁদে দিল । বুঝতে পারলো তার সখের সুখের সাজানো সংসার তছনছ হতে চলছে। বোনের কান্না সহ্য করতে না পেরে পলাশ ও কাঁদত শুরু করল। পাশে দাড়ানো বুয়াও ওয়ালে হেলান দিয়ে চোখের জল ছাড়ছে । এ যেন এক করুণ দৃশ্য ।
হঠাৎ মায়া জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। সবাই হাতে হাতে ধরে বিছনায় তুললো । মাথায় পানি ঢালতে লাগল। কিন্তু জ্ঞান ফিরছেনা। পলাশ দৌড়ে গিয়ে পাশের ফার্মেসী থেকে একজন ডাক্তার ডেকে নিয়ে এল। ডাক্তার দ্রত হাসপাতালে নেওয়ার পরমর্শ দিলেন। পলাশ মায়াকে হাসপাতালে ভতি করল।
৩য় পর্ব আসছে …

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top