Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

মায়ার সংসার ৪র্থ পর্ব

: | : ২৯/০১/২০১৪

মায়ার সংসার ৩য় পর্বের পর

মায়া নান্টুকে নিয়ে মায়ের বাসায় চলে গেল । নানীর আদরে নান্টুকে বেশ গুটুস গুটুস হয়ে উঠছে।
মায়া নান্টুর মাঝে শিশিরের ছায়া খুঁজেফেরে। চার থেকে সাড়ে চার বছর খুব ভাল ভাবে কাটে শিশির হীন মায়ার একাকী জীবন।ছেলের দিকে তাকিয়ে মায়া এক সাহসী উদ্যমি মহিলা যার স্বপ্ন আকাশ ছোয়া। একদিন সকালে বের হল নান্টুকে একটি স্কুলে ভর্তি করবে। মায়া মায়ের সংসারে থেকে বেশ কিছু হাতের সেলাই ও বুটিকের কাজ শিখেছে। যাতে সে নিজেই উর্পজন করতে পারে। হাটতে হাটতে একটি সাইন বোর্ড তার নজরে আসল। একটি ই্ংলিশ মিডিয়াম স্কুল। ভিতরে প্রবেশ করে পরিবেশ দেখে তার খুবই ভাল লাগল। মায়া মনে মনে তার ছেলেকে এই স্কুলে ভর্তি করবে ঠিক করল। স্কুলে ভর্তি ফরম তুলতে গিয়ে পরিচয় হল এক ভদ্র মহিলার সাথে। নাম তার তুলি।সে তার মেয়ের জন্য ভর্তি ফরম তুলতে এসেছে। মায়ার কথা বার্তা তাকে মুগ্ধ করেছে।
পরের দিন সকালে ভর্তি ফরম জমা দেয়ার সময় অনেক আলাপ চারিতার এক ফাকে তুলি ভাবি মায়াকে তার প্রফেশন সম্পর্কে জানতে চাইল। মায়া অবলিলায় তার কথা বলে দিল।তুলি ভাবি আগামি কালকে তার বাসায় চায়ের দাওয়াত দিল।মায়া মহাখুশি। মায়া নান্টুকে নিয়ে পরের দিন তুলি ভাবির বাসায় গেল। চা নাস্তার ফাঁকে ফাঁকে মায়ার বুটিকের কাজের খোঁজ খবর নিল।
তুলি ভাবি : ভাবি আমি একটা কথা বলতে চাই যদি কিছু মনে না করেন।
মায়া: বলেন ভাবি।
তুলি ভাবি : আমার একটি বুটিক হাউস আছে । আমার একজন দক্ষ লোক দরকার।
মায়া: ভাবি আমার আমারতো সেরকম জানাশোনা লোক নেই।
তুলি ভাবি : ভাবি আমি—-
মায়া: ভাবি বলেন
তুলি ভাবি : আমি বলতে চাইছিলাম আপনি যদি সময় দিতে পারতেন।
মায়া: ভাবি আমি !!??
তুলি ভাবি : কেন আপনার না কাজ দরকার।
মায়া: হাঁ অবশ্যই দরকার কিন্তু আমি কি আপনার বুটিক হাউস চালাতে পারব ?
তুলি ভাবি : অবস্যই পারবেন। আমি ঠিক মানুষকেই ঠিক করেছি ।
মায়া : ভাবি আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।ভাবি আমার যে উপকার করলেন।
তুলি ভাবি : ভাবি গিভ এন্ড টেক,আপনি সময় দিবেন আমি টাকা দিব। আর আমি টাকা দেবার কে ? এটা উপার ওয়ালার ইশারা। আশা করি তুই বোন এক সাথে ভাল কাজ করতে পারব।
মায়া: আমি ভেবে পারছিনা আপনি আমাকে বোন ডাকছেন।
তুলি ভাবি : কেন আমাকে বোন করতে তোমার অসুবিধা ? সরি তুমি বলে ফেললাম।
মায়ার চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পড়ছে। খুশির আবেগ।
মায়ার চাকুরি হয়ে গেল। সকালে নান্টুকে স্কুলে রেখে বুটিক হাউসে আসবে আর স্কুল ছুটির সময় তার কাছে নিয়ে আসবে এবং ৫টার সময় বাসায় নিয়ে যাবে। খুব ভাল কাজ । তার উপর বোন এখন মালিক। সে যেন ভাবতেই পারছে না।
মায়া এক প্যাকেট মিষ্টি নিয়ে বাসায় হাজির। মায়া মাকে মিষ্টি মুখ করাল। মায়া তার মাকে সব খুলে বলে । মায়ার মা মহা খুশি।

মায়া না বুঝেই ছেলেকে নামি দামি স্কুলে ভর্তি করল। ত্রৈমাসিক বেতন দিতে গিয়ে বুঝল সে ভূল করেছে । এত টাকা মাসিক বেতন দেওয়া তার জন্য কষ্ট হবে। এখন দিতে পারলেও ছেলে বড় হলে অনেক খরচ হবে । মায়ার একদিন কাজে আসল না। সেই দিনই তুলি ভাবি বুটিক হাউসে এল। মায়াকে না পেয়ে ফিরে গেল আর অন্য কর্মচারীদের বলে গেল মায়া আসলে যেন তার সাথে দেখা করে।
পরের দিন মায়া কাজে এসে জানতে পারল তুলিভাবি তাকে খুঁজে গেছে । মনে মনে ভয় পেয়ে গেল । যদি বকা দেয়, না বলে কাজে অনুপস্থিত। মায়া ভয়ে ভয়ে তুলি ভাবিকে ফোন করে।
মায়া: হ্যালো ভাবি মায়া বলছি।
তুলি : হ্যা মায়া, কেন আছ ?
মায়া: ভাবি আমি ভাল, আপনি ? মৌমিতা মা মনি কেমন আছে ? (মৌমিতা তুলির মেয়ে নান্টুর একই স্কুলে পড়ে)।
তুলি : কালকে তোমার কি হয়েছিল? শরীর খারাপ ?
মায়া : না ভাবি । একটু স্কুলের কাজে আর পলাশের বিয়ে—–
তুলি : কই কালকে আমি ও স্কুলে গেলাম তোমাকে তো দেখলাম না। আর কি পলাশের বিয়ে ঠিক করেছ নাকি ?
মায়া: ভাবি অন্য স্কুলে গিয়েছিলাম।
তুলি : কেন ?
মায়া: আমি আসলে বুঝতে পারিনি মাসে মাসে এত বেতন দিতে হবে। আর পলাশ বড় হয়েছে ওকে বিয়ে দিতে হবে,ওর আলাদা সংসার হলে আমার সংসার আমাকে চালাতে হবে ।নান্টুর আলাদা টিচার লাগবে । তাই আমি চাই যে স্কুলে বেতন কম সেখানে ভর্তি করব।
তুলি: তোমার সব কথাই ঠিক।কিন্তু নান্টু ঐ সকুলেই পড়বে।
মায়া: বেতন যে বশি…।
তুলি : তোমাকে নান্টুর বেতন নিয়ে ভাবতে হবেনা। আমার বোনের ছেলে ভাল স্কুলেই পড়বে।

মায়া এক পশলা কাঁদল আর আল্লাহর কাছে তুলির জন্য দোয়া করল। এমন মানুষ ও এই সমাজে আছে ।জন্ম দাতা পিতা আজ কোথায় ! কে করে কার কাজ।

মায়া: ভাবি আপনি কালকে আমাকে কেন খুঁজছিলেন?
তুলি: আমি বুটিকে একটা শাড়ি রেখে এসেছি। ওটা পড়ে কালকে বিকেল বেল নান্টুকে নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে, রাতে আমাদের সাথে খাবে
পরে ৫ম পর্ব আসছে ….

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top