Today 10 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

নতুন উপন্যাস “স্বপ্ননীল”

: | : ০৩/০২/২০১৪

প্রকাশিত হল এ হুসাইন মিন্টু’র উপন্যাস “স্বপ্ননীল”। এবারের মেলায় এসেছে রহস্য ও ফ্যান্টাসি উপন্যাস স্বপ্ননীল। আফসার ব্রাদার্সের স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।
shopno nil cover
স্বপ্ননীল থেকে-মাসুদ সাহেবের কাছে খুশির সাথে ঘটে যাওয়া রোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা শোনার পর থেকে নিজেকে মানুষ হিসেবে ভাবতে লজ্জা লাগছে। নিজেকে পুরুষ হিসেবে ভাবতে, নিষ্ঠুর এই সমাজের একজন ভাবতে বড় ঘৃণা লাগছে। আমরা আসলেই কি মানুষ? মানুষ এত নিষ্ঠুর হয় কীভাবে? নারী পুরুষের ভেদাভেদ ভুলে, সকল বৈষম্যকে পেছনে ফেলে, কবে আমরা নিজেকে শুধু মানুষ ভাবতে পারবো? খুব ইচ্ছে করছে জেলখানায় বন্ধী সেই মানুষরূপি জানোয়ারের সাথে দেখা করে জিজ্ঞেস করি, একটি মেয়েকে, একজন নারীকে ভোগের সামগী ব্যতীত তোরা কি আর কিছুই ভাবতে পারিস না? তোদের ঘরের নারীরা কি তোদের মতো পশুদের হাত থেকে রেহাই পায়? খুশির নিষ্পাপ মুখ দেখে তোদের কি একটুও মায়া লাগে নি? মন কি একবারের জনেও কেঁদে ওঠে নি? চার পাঁচজন মিলে কীভাবে একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে? মেয়েটির সম্ভ্রম বাঁচানোর আকুতি ও আর্তনাদ কি ধর্ষকের কানে পৌছায় না? তখন কি তারা কানে তুলা দিয়ে রাখে? খুশিকে যারা নিষ্ঠুর ভাবে মৃত্ত্যুর দোয়ারে ঠেলে দিয়েছে, আমার খুব ইচ্ছে করছে ওদের সবাইকে ধরে ধরে উচিৎ শিক্ষা দেই। ছোট একটি ধারাল করাত দিয়ে ধীরে ধীরে অনেকটা সময় নিয়ে ওদের একটার একটার গলা কাটি। কিন্তু তা করতে পারছি না। সমাজে বাস করতে হলে কখনো কখনো ইচ্ছের বিরুদ্ধেও আমাদেরকে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য, নিজেদেরকে সভ্য বলে প্রমাণ করার জন্য, আমাদেরকে আইনের উপর ভরসা রাখতে হয়। আইনের প্রতি নতজানু থাকতে হয়। ময়মনসিংহ থেকে ফুলবাড়ীয়ার বাস বন্ধ হয়ে যায় রাত বারোটার আগেই। মাসুদ সাহেবের ওখান থেকে বের হতে হতে রাত্রি প্রায় দ্বিপ্রহর হয়ে গেল। মাসুদ সাহেব কিছুতেই আসতে দিতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু আমাকে আসতেই হল, কারণ আমি কাওসার ভাইকে বলে দিয়েছি, যত রাতই হোক না কেন আমি বাড়ি ফিরবো-ই। এই কথা শোনার পর মা মোটেও ঘুমাবে না। মা ভালো করেই জানে তার ছেলে যখন একবার বলেছে আসবে, তখন কারো সাধ্যি নেই তাকে আটকে রাখে। আর কেউ জানুক বা না জানুক, মা জানে তার ছেলের হাজারটা মন্দগুনের মধ্যে একটি মাত্র ভালোগুন হল, তার ছেলে কখনো অঙ্গিকার ভঙ্গ করে না। আর সে জন্যেই মা সারা রাত জেগে থেকে আমার জন্য অপেক্ষা করবে। লেবুর পাতা দিয়ে পানি গরম করে রাখবে, আমার অতি অপছন্দের সেই লেবুর শরবত বানিয়ে রাখবে। বাড়িতে পৌছার সাথে সাথে আমাকে গরম পানিতে গোসল করতে হবে। তারপর লেবুর শরবত খেতে হবে। আমি শুয়ে পড়ারও প্রায় আধা ঘন্টা পর মা ঘুমাতে যাবে। মায়ের এইসব ছেলে মানুষি আমি প্রায় কৈশর কাল থেকেই দেখে আসছি। সেই কৈশরেও খেলধূলা করে বা অন্য যে কোনো কারণেই বাড়ি ফিরতে যদি আমার রাত হত, মা আমাকে বিনা গোসলে ঘরে ঢুকতে দিতো না।
বাসস্ট্যান্ডে পৌছতে পৌছতে রাত একটার উপরে বেজে গেল। প্রায় পৌনে ঘন্টা বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকার পর এক ট্রাকে ওঠে বসলাম। ফুলবাড়ীয়া নামার পর ভ্যান রিকশা কিছু না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে পায়ে হেটেই রওনা দিয়েছি। ফুলবাড়ীয়া থেকে পায়ে হেটে আমাদের বাড়ি যেতে প্রায় ঘন্টা খানেকের মতো সময় লাগে।
এখন সময় তিনটা কুড়ি মিনিটি। আমি হেটে চলছি সড়ক দিয়ে। কাঁচা রাস্তা, দুইপাশ দিয়ে সবুজ মাঠ আর জঙ্গলের ছড়াছড়ি। আশেপাশে বাড়িঘর কম। সন্ধ্যার আগে হালকা বৃষ্টি হলেও এখন পুরো রান্তা শুকিয়ে গেছে। হেমন্তের অর্ধ চাঁদ ডুবে গেছে বহু আগেই। আকাশে মেঘের আনাগোনা। প্রকৃতি তলিয়ে গেছে ঘোর অন্ধকারে। আমার চারপাশে কালো আধারের ঘনঘাটা হলেও অনেকক্ষণ ধরে অন্ধকারে পথ চলায় চোখে সয়ে গেছে বলে হাটতে তেমন কষ্ট হচ্ছে না। আমি মোটামোটি দ্রুত পায়ে হেটে চলছি। বাড়ি পৌছতে হলে আমাকে প্রায় আরো দুই কিলোমিটার হাটতে হবে। মোটামোটি আড়াই মাস পর বাড়ি ফিরছি, তাও আবার কারাবাসের পর। এতবড় একটা অপবাদ মুছে নির্দোষ হয়ে বাড়ি ফেরার আনন্দ যেমন একদিকে মনের ভেতর বিরাজ করছে, অন্যদিকে সারাটা পথ মনের ভেতর বার বার উঁকি দিচ্ছিল খুশির সেই মায়াবী মুখখানি। জগতময় তন্নতন্ন করে খোঁজে বেড়ালেও যেই মুখ আর কখনো দেখা সম্ভব হবে না । জগৎ সংসারের যতটুকু সুপ্ত রহস্য তার অনেকটাই আমাদের মানব সমাজকে ঘিরে, মানুষের মৃত্ত্যুকে ঘিরে! যে রহস্য এখনো পর্দার আড়ালেই রয়ে গেছে। বড়ই অদ্ভুদ মানব জীবন! আমরা মানুষেরা কতই না অসহায় এই সংসারে! আমাদের চারপাশ থেকে প্রতি দিন হারিয়ে যাচ্ছে কত চেনা মুখ, কত প্রিয়জন। মানুষ হয়ে, সৃষ্টির সেরা হয়েও, আমাদের হা তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না!
আজ খুব বেশি বেশি খুশির একটি কথাই মনে পড়ছে। ঢাকা থেকে বাড়ি আসার পর কুসুম যখন হাত পাখা দিয়ে আমাকে বাতাস করত, কুসুমের হাত থেকে পাখা নিতে নিতে খুশি তখন বলত, আমি মিনু দা-কে বিয়ে করবো। এই কথাটি খুশি অনেকবার আমার সামনেই বলেছে। খুশি কেন এমনটি বলত? তাহলে কি খুশি মনে মনে আমাকে ভালোবাসত? খুশি কি আমার প্রতি দুর্বল ছিল? প্রাণী জগতে আমরা মানুষেরা-ই বোধ হয় সবচেয়ে বেশি বিচিত্র প্রকৃতির। কখনো কখনো অব্যক্ত কথার অর্থও দাড় করাতে পারি। আবার অনেক কথা দুই কানে অসংখ্যবার শোনার পরও তার অর্থ বুঝতে পারি না বা বুঝতে চেষ্টাও করি না!
ভালোবাসাও বড় অদ্ভুত অনুভূতির নাম। কেউ অতি সহজেই প্রকাশ করে ফেলে, আবার কেউ শত চেক্টা করেও পারে না। ভালোবাসার প্রকাশেও রয়েছে ভিন্নতা। একেকজন একেক ভাবে প্রকাশ করে। কেউ প্রকাশ করে মায়া মমতা ভরা নরম কোমল সুরে, আবার কেউ প্রকাশ করে মান অভিমান, ক্রোধ ও শাসনের মাধ্যমে। কারো কাছ থেকে পাওয়া এক মূহুর্তের ভালোবাসা কারো জন্যে হয়ে যায়, জীবনের শ্রেষ্ট উপহার। আবার কারো কারো সারা জীবনের ভালোবাসাও মন কাড়তে পারে না। মিনু দা, মিনু… দা।
আমি থমকে দাড়ালাম। কেউ একজন আমাকে পেছন থেকে হঠাৎ ডেকে ওঠল। অত্যান্ত সুপরিচিত এই কন্ঠ। ঠিক যেই ভাবে খুশি আমাকে ডাকত। আমি ডানে বাঁ-এ দেখে পেছন ফিরে তাকালাম। ওঃ মাই গড! আমার থেকে প্রায় আট দশ গজ পেছনের রাস্তা ঝকঝকে আলোকজ্জ্বল হয়ে গেছে! একটু আগেই আমি এই দিক দিয়ে এলাম, তখনো তো ঘুটঘুটে অন্ধকার ছিল। আর এখন দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ হাজার ওয়ার্ডের বাতি বা টর্স জ্বালিয়ে রেখেছে আকাশে, যার মুহুর্মুহু আলোক ছটা এসে সরাসরি জমিনে পড়ছে । সেই আলোক রশ্মি অতিব নীল। আমার চারপাশ ক্রমশ নীলাভ হয়ে ওঠছে। পৃথিবী যেন সেই নীল আলোয় স্নান করছে। আশেপাশে দল বেঁধে অসংখ্য জোনাকী জ্বলছে, অথচ একটি জোনাকীও এই আলোর ভেতর প্রবেশ করছে না। এক ধরনের শীতলতা বিরাজমান এই আলোর ভেতর। আমার সারা অঙ্গে এক ধরনের শান্তির স্রোত বইতে শুরু করেছে। খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে বলি, কে! কে ওখানে? কিন্তু মুখ খুলতে ইচ্ছে করছে না কিছুতেই!
কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিলাম ঠাঁয়, আর কতক্ষণ চলেছে নীল জ্যোতির খেলা, তা ঠিক নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। একবার মনে হচ্ছে নিতান্তই কয়েক মূহুর্ত। যেই ভাবে বিজলী চমকায়, ঠিক সেই ভাবেই আকাশ ভেদ করে পৃথিবীতে নেমে এল নয়ন ধাঁধানো এক ঝলক নীল রশ্মি, আবার খনিকেই হারিয়ে গেল। আবার মনে হচ্ছে, আমি নেমে ছিলাম ভিন্ন এক জ্যোৎস্না গঙ্গায়, যার জল নীলনদের চেয়েও গাঢ় নীল। সেই নীল জলে আমি স্নান করেছি হাজার বছর ধরে। এক সময় সেই জ্যোৎস্না গঙ্গার জল শুকিয়ে গেল নিমিষেই। আমি ফের হাটতে শুরু করলাম পরিচিত সেই ডাঙ্গার পথ ধরে। কিছুদূর এগুতেই বাতাসে ভেসে এল সেই মধুর ধ্বনি, ‘আল্লাহু আকবার’।

http://ebarta24.com/column/03/details/02/20142419.php

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top