খানভবন হরর
শেষপর্ব
আধাঘন্টা কাটল খানভবনের সবার এক প্রলয়ন্করী যুদ্ধ যা মনে হল কেয়ামতের মত কিছু কাক শকুনী জাতীয় পাখীর তাড়া খেয়ে।দশবারটা শকুন টাইপের পাখী পুরা ভবনের ভিতরে জুড়ে তীক্ষ স্বরে কাকা ডাকতে ডাকতে তাড়া করতে লাগল খানভবনের ভীত মানুষগুলিকে।চিরদিন সবাই দেখেছে শকুন মরা মানুষ খেতে আসে আর এই শকুন না কাক টাইপের পাখী সব জীবন্ত মানুষগুলিকে তাড়াতে লাগল।দুইটা শকুন তাক করল এবার পুলিশের লিডারটিকে।একটা শকুন কামড় দিয়ে তার হাতের একচিমটি মাংস তুলে নিল।কাটা জায়গা দিয়ে রক্ত বের হতে লাগল ।
এ কোন পিশাচের বাড়ী ? শূন্যে গুলি করতে করতে চিৎকার করতে করতে পুলিশের লিডারটি বলল।
সাবধান রেদোয়ান ভাই আপনার পিছনে আর দুইটা শকুনী।পুলিশের লিডারটির নাম রেদোয়ান।
সে পড়ে গিয়েছে চার রক্তভূক বাদুড় না শকুনীর মাঝখানে।
একটা পাখী তার গলনালী কামড়ে ধরল।তার হাত থেকে পিস্তল ছিটকে আরেক কোনায় চলে গেল।
আহ বলে চিৎকার করছে ।হাতের বাড়ি দিয়ে সরানোর চেষ্টা করছে।আর ও তিনটা হাত আর পা কামড়ে বসে আছে।
পুলিশের চারজন মিলে ছুড়ে মারল বিছানার চাদর তুলে ।চারজন চারদিকে চাদরটা টেনে গিট্টু মেরে দিল।ভিতরে পাখীগুলো ডানা ঝাপটে উড়ার চেষ্টা করল পাগলের মত।
রেদোয়ান পুলিশের অব্স্থা বেশ গুরুতর।তার গলনালী কেটে গিয়েছে বেশ খানিকটা।তা থেকে রক্ত বের হয়ে আসছে।ব্যাথায় সে অনেকটা সংজ্ঞাহীনের মত হয়ে আছে।গলার ভিতর থেকে গড়গড় আওয়াজ বেরিয়ে আসছে।
একজন খুব দ্রুত তার মাফলার দিয়ে রক্তের জায়গা চেপে ধরে লাগল কিছুক্ষন।তারপর ঘুরিয়ে এনে মাফলারটা গলার সাথে বেধে দিল।
আরেকজন পুলিশ নির্দয়ের মত চাদরের ভিতরে পাখীগুলিকে গুলি করতে লাগল যতক্ষন না নিশ্চিত হল এগুলি মরেছে।পাখীগুলি মানুষের জন্য বিপদজনক।এগুলোকে মারা ছাড়া উপায় নাই।
এতক্ষন পরে পুলিশের আরেক জীপ এসে উপস্থিত হল।
তাদের বক্তব্য তিনচার ঘন্টা ধরে রাস্তা খোজার পর বাসা পেল।
একজন বলল কি অলুক্ষুনে জায়গা রে বাবা।
সবাই উঠে পড় তাড়াতাড়ি।এক্ষুনি বেরিয়ে পড়তে হবে এই পিশাচের বাড়ী থেকে।এতক্ষনে রহমান সাহেব গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়ালেন।
আর কতক্ষন পরে সকাল হবে।সূর্যের আলো ফুটবে।কিন্তু সামান্য সময়টা তাদের আর নিরাপদ মনে হচ্ছেনা এই ভবনে।
ড্রাইভার শীঘ্রই গাড়ীর কাছে যাও।আমরা এখন ই রওনা করব।
ড্রাইভারের নড়াচড়ার লক্ষন দেখা যাচ্ছেনা।সে পুতুলের মত দাড়িয়ে আছে।
এতক্ষনে রহমান সাহেব ধৈর্যহারা হয়ে একটা চিৎকার করে উঠলেন।
যে যে যেতে চাও চল আমার সাথে আমি গাড়ী চালাব।তাছাড়া এই আহত দুজনকে অতি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।আমাদের বের হওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।বলে সামনের দরজা খুলে অকূতভয়ের মত বের হলেন ঘর থেকে।
গাড়ী সামনে পার্ক করা। ঘরের আলোতে গাড়ীগুলিকে ও ভৌতিক মনে হচ্ছে।আশেপাশের প্রকৃতিতে এখন নিকষ কাল অন্ধকার।
আশেপাশের জংলা রাস্তার অস্তিত্ব টের পাওয়া যাচ্ছে।
প্রথমে ধরাধরি করে দুই আহত পুলিশদের গাড়ীতে তুলল।দুইজনের অবস্থা অনেকটা মৃতের মত।
সর্বমোট চারটা গাড়ী দুইটা বড় বাস আর পুলিশের দুই জীপ।সবাই গাদাগদি করে বসে নিল।পরে আাসা দশজন পুলিশ সহ এখন সর্বমোট আঠারজন পুলিশ চল্লিশজন রহমান সাহেবের আত্মীয় স্বজন।বিশাল গ্রপ।কোন বড়দলের সাথে মোকাবেলা করার মত মনোবল শক্তি সাহস সবই তাদের থাকতে পারত।কিন্তু এই অজানা শত্রুর অবয়ব না জানা পর্যন্ত তারা এই ভরসা করতে পারলনা।
আপাতত নিরাপদে সবাই গাড়ীতে উঠে বসল।প্রতির গাড়ীর চারকোনায় চারপুলিশ পিস্তল হাতে সবার তত্বাবধানে আছে।
গাড়ী চলতে শুরু ঢাকা শহরের দিকে।
দশমিনিট নির্বিঘ্নে চলল গাড়ী।যদি ও তারা গাড়ী চালাচ্ছে হেডলাইটের আলোয় অনেকটা অন্ধের মত।চালাতে চালাতে থেমে যেতে বাধ্য হল আচমকা ব্রেক কষে।নাহলে গছের সাথে সংঘর্ষ হওয়ার আশংকা ছিল।পুরা পথ জুড়ে বিরাট একটা গাছ ভেঙ্গে পড়ে আছে ।
সম্ভবত ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে পড়েছে রাতে বলল পুলিশের ড্রাইভার।
গাছটা সরানোর জন্য চারজন পুলিশ নামল গাড়ী থেকে।
গাছ তো না যেন পাথরের গুড়ি।অনেক কষ্ট করে সরিয়ে নিচের দিকে তাকাতে যা দেখল অতি সাহসী হৃদয়ের পিলে চমকে যাবে।
লাফ দিয়ে পুলিশ চারজন পিছনে সরে গেল
চারজনে একসঙ্গে আঁতকে প্রভূকে স্মরণ করল
হলি ক্রাইষ্ট একজন বুকে ক্রশ কাটল
আরেকজন বলল রাম রাম ভগবান একি দেখছি।
লা হাওলা ওয়ালা কুআতা।ইন্নালিল্লাহ আল্লাহ মাবুদ এ কি দেখাচ্ছ।
সত্যি এক বিভৎস দৃশ্য।একজন মানুষ যার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন।চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে।বুকের মাঝখানে গভীর গর্ত তলপেটে।বুঝা যাচ্ছে প্রচন্ড মৃত্যূযন্ত্রনা ভোগ করার পর অসহায় লোকটি মারা গিয়েছে।
পাশবিক যন্ত্রনা দিয়ে লোকটাকে মারা হয়েছে এনরিখ।দাতে দাত চেপে রেগে বলল আরেক পুলিশ রামপাল যার নাম।
মনে হচ্ছে এরা অরগান কালেক্ট করছে বলছে ইসমাইল নামের আরেকজন পুলিশ।কি মনে করছ তোমরা।
যেটা করুক যেই উদ্দেশ্যে করুক এগুলো কে ছাড়া তো আমি যাবনা ইসমাইল বলল রামপাল নাম্নী পুলিশ প্রচন্ড উত্তেজনায়।
গাড়ীর ভিতরে বাকীরা উসখুস করছে দেরী কেন? এই ভুতুড়ে পরিবেশ থেকে তাড়াতাড়ি সরে যেতে চাচ্ছে।
ভিতর থেকে একটা কাপড় এনে লাশটা ঢেকে গাড়ীতে উঠাল।
গাড়ী স্টার্ট দিতে যাবে চোখে পড়ল একটু দুরে আলোর আভাষ।
এখন কেও গাড়ী ষ্টার্ট করোনা।কোন একটা শব্দ এদিকে এগিয়ে আসছে আলোসহ।
সবাই নিশ্বাড় হয়ে দম বন্ধ করে গাড়ীর সিটের আড়ালে ঢুকে রইল।পুলিশরা শুধু জানালা একটু খুলে রেখে পিস্তল তাক করে বসে রইল।
আবার দেখা যাচ্ছে সেই ভয়ন্কর মুখোশধারী মানুষগুলোকে।
সামনে দুইজনকে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।টেনে হিচড়ে নেওয়া মানুষ টির কন্ঠ থেকে ভেসে আসছে যন্ত্রনাকাতর ধ্বনি।
সেলুকাস পিশাচ মনে হচ্ছে এগুলোকে।একেবারে শব্দ করোনা কেও।এখন ওদের হাতে ধরা পড়া চলবেনা।
বিশাল লম্বা লাইনে সারি বেধে চলছে কিছু নরকের পিশাচ। সবার হাতে মশাল অদ্ভুত কালো আলখেল্লা ধরনের পোষকে সবার ই আপাদমস্তক ঢাকা বিচিত্র মন্ত্র জাতীয় ধ্বনি করতে করতে আগাচ্ছে।
এরমধ্যে রহমান সাহেবের ড্রাইভার ভয়ে তার ব্রেকে চাপ পড়ে গেল।গাড়ী শব্দ করে উঠল।
গাড়ীর শব্দে সব মশালধারীদের মুখ একসঙ্গে ঘুরে গেল তাদের দিকে।সবাই আতকে উঠল মশালের আলোয় এদের মুখোশ পরা চেহারা দেখে।
আর লুকিয়ে থাকার সুযোগ নাই ।পালানোর কোন স্কোপ নাই।
মশালধারীরা তাদের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল।
অনন্যোপায় হয়ে পুলিশ রা এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষন শুরু করল পিশাচের দলকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য। তারপর ও পিশাচ গুলি যখন গাড়ী লক্ষ্য করে আসতে শুরু করল তখন তারা অপারগ হয়ে এগুলোর হাত পা লক্ষ্য করে আহত করার উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়তে লাগল।
কিছু কিছু আর্তনাদ ভেসে আসতে শুনল।
একটা মশাল ছুড়ে মারল তাদের গাড়ী লক্ষ্য করে কোন শয়তান।সঙ্গে সঙ্গে এনরিখদের গাড়ীতে আগুন ধরে গেল।
দৌড় দিয়ে দরজা খুলে গাড়ী থেকে নামতে বাধ্য হল তারা।নেমে পিশাচ গুলিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করল।এবার গুলি ছুড়ছে তারা শয়তানগুলিকে খুন করার উদ্দেশ্যে নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য।
এখন দুইপক্ষ সামনাসামনি দুইপক্ষকে দেখছে।
শেষমূহূর্তে তারা গাড়ীর চারপাশে মশাল নিক্ষেপ করে আবার ভোজভাজীর মত চোখের পলকে উধাও।
বনের চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে দেখে বাকী তিনটা গাড়ীতে সবাই ভাগ ভাগ করে উঠে বসল।
গাড়ী চলতে শুরু করল দ্রতগতিতে।
কতক্ষন তারা গাড়ী চালাচ্ছে এভাবে জানেনা।একপর্যায়ে দেখা গেল রাতের অন্ধকার আর দেখা যাচ্ছেনা।পূর্বের আকাশে লাল সুর্যকে দেখা যাচ্ছে।
তারা হাফ ছেড়ে বাচল।পুলিশের কোয়ার্টারে থাকার সময় ভোরের সূর্যের আলো দেখে মন খারাপ হয়ে যেত পুলিশদের ।কেননা এখন ই উঠতে হবে ডিউটিতে দৌড়াতে হবে।
সামিয়ার কিছু ভাই বোনের ক্লাস থাকে সকালে।উঠতে হয় সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে।প্রতিদিন সূর্যের দিকে তাকিয়ে মুখ ভেংচি কাটা যাদের অভ্যাস ছিল আজ সবাই সূর্যের আলো থেকে লাপ দিয়ে উঠল ।দিনের আলোয় এমন একটা মহাত্ব্য আছে সবার মন থেকে ভয় দুর হয়ে গেল।এমনকি মেয়েরা ও উঠে বসল ।জানালা খুলে বাহিরে দেখতে লাগল।
আরও একঘন্টা ড্রাইভের পর সকাল সাতটা ঢাকা কাঁচপুর ব্রীজ অতিক্রম করল।ক্যান্টনমেন্টের কাছে আসতে নেমে আহত পুলিশদের হসপিটালে নেওয়া হল।
রহমান সাহেব তার পরিবারর সবাই সুস্থ দেহে তার পুরাতন ভবনে পৌছতে সক্ষম হলেন।তারা ভূলে এই খানভবন সংক্রান্ত বাড়ীর দুঃসহ স্মৃতি আর মনে আনতে চায়না বা কারও সাথে এ নিয়ে কথা ও বলতে চায়না।সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব তারা দিতে প্রস্তুত ছিলেন না।পরেরদিন হাজারের মত পুলিশের এক বাহিনী আট দশটা গাড়ী কুকুর এবং স্মোক বোমাসহ পুরা ওই এলাকা ঘিরে ফেলল।সঙ্গে ছিল টিভির ক্যামেরা মিডিয়া প্রেস।আজব ঘটনা হল সারদিন তল্লাসী করার পর না মিলল কার ও মৃতদেহ না কোন জীবিত মানুষ না কোন কুকুর শকুনী নেকড়ের দল।
এরা কোথায় গেল?পুলিশদের মনে প্রশ্ন।সব মিডিয়াম্যানদের হাসির পাত্র হল পুলিশের বাহিনী।কেননা ঘরের ভিতরে তারা ঢুকে দেখে সবরুম নিখূঁত পরিপাটি করে গোছানো ঠিক বাড়ী কেনার আগে রহমান সাহেব যেরকম বাড়ী দেখেছেন তদ্রুপ।ক্যামেরাম্যান রা স্পষ্টত ই হতাশ কোন দজ্ঞযজ্ঞ এর ছবি তুলতে না পেরে।তারা পুলিশদের নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রপ করতে লাগল।
এই হল আমাদের দেশের পুলিশ।তাদের পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব না কতটা প্রান হাতে নিয়ে তরুন পুলিশের দল খানভবনের অসহায় মানুষগুলোকে নিরাপদে তাদের বাসস্থানে পৌছে দিয়েছে।
বাড়ীর আগের মালিক খানসাহেব এখন লাপাত্তা।
পরিশিষ্ট:ঠিক রাত দুইটা বাজে। খানভবনের সব বাতি জ্বলে উঠল।কিছু মশালধারী মানুষের কর্মতৎরতা আবার শুরু হল।ভবনের নীচে বেসমেন্টে এক গোপন কুঠুরীতে তাদের বৈঠক হচ্ছে।যাক পুলিশের চোখে ধুলা দিতে সক্ষম হয়েছি আমরা।তবে এখন থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।একজন একটা বাক্সে প্যাকেট প্যকেট করে সাজিয়ে নিল কতদিনের কালেকশন করা হার্ট লিভার কিডনী আই।প্রতিটি জিনিস যেমন অমূল্য একজন রোগীর জন্য তেমনি জীবন্ত মানুষের জন্য তেমনি মূল্যবান এই খানভবনের মানুষ নামধারী পৈশচিক ক্রিমিনাল গুলোর কাছে।তারা দেশবিদেশে বড় অর্গান ডোনার হিসাবে পরিচিত।কিছু হসপিটালের ডাক্তার রা এই ব্যবসায় জড়িত।যে মরনাপন্ন রোগীটির শরীরে যখন সংযোজিত হয় নুতুন হৃদপিন্ড সে নুতুন জীবন লাভ করে আনন্দিত হয়।তার পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব কত পৈশাচিক প্রক্রিয়ায় একজনের মৃত্যূ যন্ত্রনার কাতর ধ্বনিসহ সংগৃহিত এই হৃদপিন্ড।
কিছুক্ষনের মধ্যে হতে যাচ্ছে তাদের পরবর্র্তী অপারেশন।
(সমাপ্ত)