মারাত্মক ঘাতক ইবোলা ভাইরাস
এই লেখাটি ইতিমধ্যে 3605বার পড়া হয়েছে।
ইবোলা ভাইরাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের অনেক পরাশক্তিকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এরই মধ্যে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি লাইবেরিয়া, সিয়েরালিওন, নাইজেরিয়া, গিনিসহ কয়েকটি আফ্রিকান দেশে আঘাত হেনেছে। গত মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ভাইরাসটিতে পনর সহস্রাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মৃত্যু ঘটেছে ৯ শতাধিক লোকের। পরিসংখ্যান অনুযায়ী মৃত্যুহার শতকরা ৫০ ভাগের বেশি। এই ঘাতক ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় ১৯৭৬ সালে সুদান ও কঙ্গোতে। তখন দেশ দুটিতে আক্রান্ত ৬০২ জনের মধ্যে ৪৬১ জনের মৃতু ঘটে। এরপর ১৯৯৫ সালে কঙ্গোতে, ২০০০ সালে উগান্ডায়, ২০০৭ সালে কঙ্গো ও উগান্ডায় এবং ২০১৪ সালে সিয়েরালিওন, গিনি, লাইব্রেরিয়া ও নাইজেরিয়ায় মোট আক্রান্ত প্রায় পনর হাজার এবং মৃত্যু ঘটেছে ৯ শতাধিক লোকের। তবে আশার কথা হলো—রোগটি ফ্লু ও অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগের মতো ছড়ায় না, আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না আসলে রোগটি সংক্রমিত হবার ভয় নেই।
ইবোলার লক্ষণ
ইবোলা আক্রান্ত ব্যক্তি প্রথমে নিরীহ ফ্লু’র মতো হালকা জ্বর, মাথা ব্যাথা, শরীর ব্যাথা অনুভব করে। কিছুদিন পর তীব্র মাথা ব্যথা, জ্বর, শরীর ব্যথা, ত্বকে দানা দানা উঠা, মুখে ঘা, ডায়রিয়া এবং মারাত্মক বমি শুরু হতে পারে। চূড়ান্ত পর্যায়ে শরীরের ভিতরে বাইরে রক্তপাত শুরু হতে পারে। এই ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, কিডনি, হার্ট অকেজো করে দেয় যার ফলে রোগীর মৃত্যু ঘটে।
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো সাধারণ ফ্লু’র মতোই। সর্দি কাশি, মাথা ব্যাথা, বমি, ডায়েরিয়া এবং জ্বর এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ। তাই কারো উপরোক্ত কোনো উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে! রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে এটা ম্যালেরিয়া, হ্যাপাটাইটিস, কলেরা বা অন্য কোনো রোগের জীবাণুর কারণে হচ্ছে কিনা!
কিভাবে ছড়ায়?
বলা হয়ে থাকে বাদুরের খাওয়া ফল থেকেই ইবোলা ভাইরাস মানুষের দেহে প্রথম প্রবেশ করে এবং পরবর্তীতে তা মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে শুরু করে। ইবোলা আক্রান্ত মানুষের দেহরস অপর কোনো মানুষের দেহের স্পর্শে আসলে সেই ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পরও ভাইরাসটি বেশ কয়েকদিন টিকে থাকে।
আশার কথা হলো, রোগটি ফ্লু ও অন্যান্য বায়ুবাহিত রোগের মতো ছড়ায় না, আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে না আসলে এই রোগে সংক্রমিত হবার ভয় নেই।
চিকিৎসা
রিহাইড্রেশন এবং হালকা বেদনানাশক দিয়ে করা হচ্ছে ইবোলা আক্রান্তের চিকিৎসা। খুব একটা কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। নেই কোনো প্রতিষেধক টিকাও। তথ্য মতে এই রোগে মৃত্যুর হার ৫০%-৯০%।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে এই রোগের লক্ষণগুলো অন্য আরো অনেকগুলো রোগের লক্ষণের সাথে মিলে যায়! ফলে রোগ শনাক্ত করতে সময় লেগে যায়!
তাই সঠিক রোগ শনাক্ত করা এবং সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়াটাও অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ! তবে যদি রোগ দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা যায় এবং সঠিক মেডিক্যাল সাপোর্ট দেয়া যায় তাহলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়!
আমাদের করণীয়
যেহেতু এর কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি তাই এই ভাইরাসটি যাতে আমাদের দেশে প্রবেশ করতে না পারে এই ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। বিমানবন্দরে কর্তব্যরতদের এই ভাইরাসে আক্রান্তদের শনাক্তকরণের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। যদি কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয় তবে তাকে কিভাবে পৃথক করে চিকিৎসা দিতে হবে সেই ব্যাপারেও প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন।
আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা এমন একটি দেশ যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে হাজারের বেশি মানুষ বাস করি। তাই এই ভয়াবহ ভাইরাসটি যাতে কোনোভাবেই আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেই বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন এখনই।
তারপরও সতর্কতা হিসাবে সবসময় সাবান ও গরম পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখে হাত লাগনো না হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে যাওয়ার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরের কোনো প্রকার তরল যাতে আপনার সংস্পর্শে না আসে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যদি কোনো কারণে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয় তবে সাথে সাথে নিজেকে আলাদা করে ফেলতে হবে যাতে অন্য কেউ এ রোগে আক্রান্ত না হয় এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
সরকারের করণীয়
বাংলাদেশ সরকারের উচিত এখনই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আফ্রিকার দেশে থেকে আগত যে কাউকে ইমিগ্রেশন পার হবার আগেই মেডিক্যাল চেকআপের ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে এটি খুবই সংক্রামক রোগ। তাই এই ব্যাধি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তেও বেশি সময় লাগবে না।
এ দিকে, অতি সম্প্রতি আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেছেন এমন একজন চিকিত্সক জানান, আফ্রিকার ইবোলা আক্রান্ত দেশ সমূহে বাংলাদেশিরা উদ্বিগ্ন। সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হচ্ছে ব্যাপক সংখ্যক সেনা ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যগণ ইবোলা উপদ্রুত অনেক দেশে আছেন। তাই এই মুহূর্তে ইবোলা ভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন। দেশে একটি স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো থাকলেও তারা ব্যস্ত থাকেন অন্য ধরনের প্রচারণায়। জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুারোকে কাজ করা উচিত এমন অভিমত একাধিক সূত্রের।
(সংকলিত)
৩,৫৫৭ বার পড়া হয়েছে
তথ্যবহুল প্রয়োজনীয় পোস্ট।
আন্তরিক ধন্যবাদ শেয়ায় করার জন্য।
আচ্ছা এই ভাইরাস টা নিয়ে শুনছি ইদানিং। আপনার পোস্ট টা পড়ে অনেক কিছু জানলাম।
দেখেছেন আনোয়ার ভাই আপনার পোস্ট কি অসাধারণ। এখন থেকে সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চারটা পোস্ট করবেন আমাদের জন্য বুঝেছেন। আপনার বিজ্ঞান কাহিনীর কি হল ?
অনেক ধন্যবাদ পোস্ট টির জন্য। শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ । অনেক তথ্য কথা জানলাম । ভাল থাকুন ।
অনেক কিছু জানলাম ।
অনেক ধন্যবাদ ।
খুব ভাল থাকবেন ।
সচেতনামুলক পোস্ট
ভয়ংকর এই রোগ, আমাদের দেশে শীতকালে খেজুরের রস খেয়েও ত এই
ররোগ সৃস্টি হতে পারে।
শুনলেই ভয় লাগে। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আসলেই, মারাত্মক ঘাতক ’ইবোলা’ ভাইরাস। কিছু জানলাম।
অনেক ধন্যবাদ মাননীয় ব্যাবস্থাপনা সম্পাদককে বিষয়টি নিয়ে লিখার জন্য।
অনেক কিছু জানলাম ইবোলা ভাইরাস সম্পর্কে। মহান আল্লাহ আমাদের সহায়হোন।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।