Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

অবৈধ ব্যকিং করে টাকাকে একমুখী করছে হুন্ডী ব্যবসায়ী স্বরুপ মাল্টিপারপাস কোম্পানিগুলো ।

: | : ০৯/১০/২০১৩

 

কিছুদিন আগেও গ্রামের মোড়ল নামের কিছু লোক গ্রামের মানুষকে প্রতারিত করে জীবনের সব উপার্জনকে হাতিয়ে নিত । অভাবের তাড়নায় যারাই জমি বা কোন জিনিস বন্ধক রেখে কারো কাছ থেকে টাকা নিত তারাই এই হুন্ডিনীতির মধ্যে পড়ে তার জমিজমা বা জীবনের সবকিছু হারাত । এখন দিন পাল্টেছে । আধুনিতা আর মানুষের শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় একচ্ছত্রভাবে এখন আর প্রভাব বিস্তার করা কঠিন হয়ে যায় কোন ব্যক্তির পক্ষে । তাই বলে কি মানুষের প্রতারিত বা ভোগান্তির হার কমে গেছে ? মানুষ কি এখন আর ঋনগ্রস্থ হয় না ?

আমাদের দেশের মানুষ বেশীরভাগই এখনও তাদের জীবন শুরু করে ঋনগ্রস্থ হয়ে এবং আমৃত্যু চলে এই ঋনের বোঝার দায় মাথায় নিয়ে । আর এই সুযোগটাই নেয় সমাজের কিছু টাকাওয়ালা মানুষ । সবচেয়ে সোজা উপায়ে টাকার বিনিময়ে টাকা  উপার্জনে এই টাকা বাড়তে আপনার সময় আর কতই লাগে !

অবিশ্বাসও হলেও সত্য যারা একেবারে নিম্ন পর্যায়ের মানুষ বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের ঋনদানের জন্যই গড়ে তোলা হয় সমবায়ের নাম করে মাল্টিপারপাস কোম্পানি নামে ব্যকিং এর মত এই সব ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ।কয়েকজন মিলে গঠিত সামাজিক সংগঠন নাম দেওয়া ক্ষুদ্রঋন কার্যক্রম পরিচালনার এ প্রতিষ্ঠানগুলো এত বেশী পরিমানে গড়ে উঠছে যে, প্রতিটি রাস্তার বা বাজারের মোড়েই এদের সাইনবোর্ড দেখা যায় । আবার সাইনবোর্ডে এও লেখা থাকে সরকার অনুমোদিত এবং রেচিস্টার্ড প্রাপ্ত ।

এদের নিয়মানুযায়ী এরা কোন মানুষকে তাদের মাল্টিপারপাস কোম্পানির সদস্য করে তারপর তাদের ঋনদান করে । এই সদস্যভুক্তির চার্য ৫০০-১৫০০ টাকা । আর ঋনদানের জন্য আগে আপনাকে সদস্য হতে হবে তারপর ঋনের জন্য আবেদন করতে পারবেন ।

এতো গেল সদস্যভুক্তি তারপর ঋন দানের নিয়মের ক্ষেত্রে সাধারনত ৫০০০ হাজার থেকে শুরু করে কোন কোন প্রতিষ্ঠান ৫০০০০০ টাকা পর্যন্ত ঋন দিয়ে থাকে । এই ঋন দেওয়ার পর তারা সাপ্তাহিক ভাবে কিস্তি হিসাবে গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা তুলে নেয় । ৫০০০ টাকার জন্য সপ্তাহে তাদের কিস্তি দিতে হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত । আবার এর মধ্যে প্রতিদিনের কিস্তও থাকে । ৮-১০% হারে সুদ নিয়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ঋন দাতা প্রতিষ্ঠান হিসাবে ভালোভাবেই সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ।

এনজিও এবং ক্ষুদ্র ঋন পরিচালনার নামে যদি কেউ বা কয়েকজন ১০,০০০০০ টাকা দিয়ে ব্যবসার নামে এই হুন্ডি ব্যবসা চালু করেন তবে তার টাকা উপার্জন করতে আর কত দিন লাগে ?

সাধারন মানুষকে বাধ্য করে এই টাকা নেওয়ার কৌশলের নাম দেওয়া হয় মাল্টিপারপাস কোম্পানি । শুনলে অবাক লাগে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় সমাজের উঁচু স্তরের মানুষদের ।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারা যে শুধু হয়রানিই হচ্ছে তা নয় কখনও কখনও টাকার প্রয়োজন মেটানোর কারনে কেউ কেউ উপকৃতও হয় কিন্তু উচ্চসুদ এবং চক্রবৃদ্ধি সুদের কারনে মানুষ নিশ্ব হওয়ার পথও উন্মোচিত হয় ।

সমবায়ের নাম করে এই রকম মাল্টিপারপাস দেশের বিভিন্ন বাজার এবং মার্কেটে ক্ষুদ্র ঋন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । কোন নিয়ম নীতি না মেনে এই মাল্টিপারপাস জাতীয় ক্ষুদ্রঋন প্রকল্প মানুষকে ঋনের জালে যেমনি আবৃত করছে তেমনি টাকাকে হুন্ডী ব্যবসায়ীদের মত এক মুখী করে ফেলছে ।

যদি সাধারন মানুষ এভাবে দিন দিন ঋনের জালে আবৃত হয় তবে এক শ্রেনী নিস্ব হয়ে সরকারের ঘারে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে আর এটাই এই ঋনদান কর্মসূচীগুলোর সবচেয়ে বড় ক্ষতিকর প্রভাব । এই অবস্থা থেকে পরিত্রানের জন্য সরকারের কয়েকটি পদক্ষেপ জরুরী হয়ে গেছে ।

-মাল্টিপারপাস এবং সমবায়ের জন্য যে নীতিমালা রয়েছে সে অনুযায়ী প্রতিটি বাজার এবং গ্রামে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তদারকি বাড়ানো ।

-এই সব অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানের সুদের হার কমানো

-সরকারের বেজিস্ট্রিকৃত প্রতিষ্ঠান গুলোতে সরকারের নিজস্ব বিলবোর্ড স্থাপন করে দেওয়া

-জনসাধারনকে এই সমস্ত প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অবগত করা ।

-অবৈধ ব্যকিংয়ের জন্য শাস্তি প্রদান করা ।

তবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোও জনসাধারনের উপকারে আসতে পারে যদি ঋনদানের আগে ঋনের পরিমান এবং ঋন গ্রহন করে যে কাজে অর্থ ব্যয় হবে তার একটি সুর্নিদিষ্ট তথ্য নিয়ে তারপর কার্যপরিচালনা করা হয় এবং সুদের হার কমিয়ে দেওয়া হয় ।

  এর সাথে যেটা সবচেয়ে উদ্বেগজনক তা হল ঋন পরিশোধের জন্য যে কিস্তি সপ্তাহে বা মাসে দেওয়া হয় তা যদি মধ্যে এসে হঠাবাদ পড়ে যায় তার উপরও সুদ ধরা হয় । এই জমে যাওয়া সুদই দিতে ব্যর্থ হয়ে মানুষ হতাশাগ্রস্থ হয় । এই হতাশা কখনও কখনও মৃত্যুরও কারন হয় । কারন এখান থেকে যারা ঋন নিয়ে থাকে তারা অধিকাংশই নিম্নবিত্ত অথবা নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষ ।আমি এ বিষয়ে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষন করছি ।  

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top