Today 12 Oct 2025
Top today
Welcome to cholontika

উপন্যাস “প্রচ্ছায়া” (৮ম পর্ব)

: | : ১১/১০/২০১৩


প্রায় দুই মাস পর রাত্রি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছে। প্লাস্টিক সার্জারী করার পর তাকে দেখে মনে হচ্ছে না তার চেহেরায় কোনো খাঁদ আছে। টানা চোখ। ভ্রু-র উপর যেন কোনো চিত্রশিল্পি কালো রঙের তুলি দিয়ে নরম আল্পনা একে দিয়েছে। গায়ের রঙ ফর্সা। শারীরিক গঠন লম্বা, মাঝারী স্বাস্থ্যের অধিকারী। রাত্রির উপর জীবননাশী হামলার জন্য অজ্ঞাত পরিচয়ের সিরিয়াল কিলারের নামে যে মামলাটি হয়েছিল, ইতোমধ্যেই তা সিআইডি-র আন্ডারে দেয়া হয়েছে। রাত্রি দেশে ফেরার খবর পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডিআইজি সাহেবের সরকারী বাসভবণে সকাল থেকে সিআইডি অফিসার মাসুদ রানা অপেক্ষা করছেন।

সিআইডি অফিসার মাসুদ রানা। বয়স চল্লিশ উর্ধ্ব, মাথায় কাঁচা পাকা চুল। মুখে মেসতার কালো দাগ। ভদ্রলোকের ঠোঁট লাল, মনে হয় পান খান।
রাত্রি কিছুতেই এই মূহুর্তে পুলিশের সাথে কথা বলতে রাজি হচ্ছে না। ডিআইজি সাহেব এহেন পরিস্থিতিতে কিঞ্চিৎ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। এমনিতেই ধরনের জনশ্রুতি রটে গেছে রাজধানীময়। প্রশ্ন ওঠেছে, ডিআইজি সাহেব কিলারকে না ধরে মেয়েকে চিকিৎসার জন্য কেন বিদেশ পাঠিয়ে দিলেন? এর পিছনে অন্য কোন রহস্য আছে ? ডিআইজি সাহেব শুধু তার মেয়ের কথাই ভাবলেন, দেশের কথা একাবারো ভাবলেন না!
অনেক পিড়াপিড়ির পর রাত্রি বসার ঘরে গেল, যেখানে সিআইডি অফিসার মাসুদ রানা বসে আছেন। রাত্রি বসার ঘরে ঢোকা মাত্রই অফিসার দাড়িয়ে সালাম দিলেন। ডিআইজি সাহেবের মেয়ে বলে সালাম দিলেন, না সালাম দিতে হয় বলেই দিলেন, ঠিক বুঝা গেল না।
রাত্রি সোফায় বসতে বসতে বলল, আপনি কি আমাকে কিছু জিজ্ঞাস করতে চান?
অফিসার অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললেন, কিছু মনে করবেন না ম্যাডাম, অফিসিয়াল কিছু ফরমালিটিস আছে যা পুরা না করলেই নয়।
অফিসারের বিনয়ীভাব দেখে রাত্রি ভ্রু কুঁচাকালো। তারপর বিরক্তির স্বরে বলল, ও আচ্ছা, আপনাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ফরমালিটিস পুরা করা। খুনিকে ধরা না?
ডিআইজি সাহেবের মেয়ের মুখ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে অফিসার হতাশার জোয়ারে ভেসে গেলেন। তিনি বোধ হয় ভাবতেই পারেন নি তার তোষামোদকে সম্পূর্ণ রূপে অগ্রাহ্য করে ডিআইজি কন্যা তাকে এমন অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন করবে। এদিক ওদিক তাকিয়ে অফিসার অপ্রতিভ স্বরে বলল, না না, তা হবে কেন? কিলারকে তো অবশ্যই ধরা হবে।
রাত্রি মাথা নেড়ে বলল, ভালো। বলুন, আমি আপনাকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি?
অফিসার নড়েচড়ে বসে বললেন, আপনাকে কিছুই করতে হবে না ম্যাডাম। আপনি শুধু বলুন কিলারকে চিনতে পেরেছেন কি না?
আপনি আমাকে ম্যাডাম ম্যাডাম করছেন কেন ? আমার বাবা আপনাদের বস, আমি তো না। বিরক্তির স্বরে বলল রাত্রি।
মাসুদ সাহেবের ভ্রু কুঞ্চিত হল। তিনি বোধ হয় এমন প্রশ্নের জন্যও প্রস্তুত ছিলেন না। লজ্জায় তার চেহারা সংকুচিত হতে লাগলো। তারপর নিষ্প্রভ হয়ে বলল, ম্যাডামের নামটা যেন কি?
রাত্রি।
আচ্ছা মিস রাত্রি আপনি কি কিলারকে চিনতে পেরেছেন ?
শুধু চিনতে পারি নি। আমি তাকে ভালো করে চিনি।
ভালো। আরেকটা প্রশ্ন, কিলার কি আপনার পূর্ব পরিচিত?
হ্যা।
কবে থেকে চিনেন?
সেটা বলতে চাচ্ছি না।
ঠিক আছে, না বললেও অসুবিধা নেই। বন্ধুবান্ধব এই ধরনের….
তাও বলতে চাচ্ছি না।
ঠিক আছে। শেষ প্রশ্ন, সে কেন আপনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল?
আমার মনে হয় সে একজন মানসিক রোগি।
অফিসার বড় বড় চোখ করে রাত্রির দিকে তাকালেন। পর পর দুই তিনবার ঢোক গিললেন। খানিক মৌন থেকে ফের বললেন, আপনি কি জানেন সে কোথায় থাকে? আই মিন, কোথায় পাওয়া যেতে পারে এমন কোনো আইডিয়া।
রাত্রি এক টুকরা কাগজ ইন্সপেক্টরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই নিন, ওর বাড়ির ঠিকানা।
অফিসার কাগজ হাতে নিয়ে দেখে বলল, এই ঠিকানায় গেলে এখন তাকে পাওয়া যাবে?
রাত্রি বলল, আমি যদি বলি না, আপনি কি যাবেন না?
থ্যাংক ইউ মিস রাত্রি। কালো মুখে মুচকি হাসির ভান করে বললেন অফিসার মাসুদ।

রাত্রি ভিতরে চলে যাওয়ার সাথে সাথে ডিআইজি সাহেব বসার রুমে ঢোকলেন। ডিআইজি সাহেব ভিতরে ঢোকার সাথে সাথে ইন্সপেক্টর মাসুদ উঠে সালাম দিলেন। ডিআইজি সাহেব তাকে বসতে বলে নিজে সামনের সোফায় বসে জিজ্ঞাস করলেন, তোমাকে চা দিয়েছে?
ইন্সপেক্টর মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। খানিকক্ষণ চুপ থেকে ডিআইজি সাহেব ফের জানতে চাইলেন, আমার মেয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে?
জ্বি, স্যার।
ওর সাথে কথা বলে কী বুঝলে, খুনিটা কি ওর পূর্ব পরিচিত ?
ম্যাডাম এ বিষয়ে কিছু বলেন নি। তবে তার কথা শুনে সে রকম-ই মনে হল।
ডিআইজি সাহেব খানিকক্ষণ ভেবে বললেন, আমি চাই না এই বিষয়টা অন্য কেউ জানুক।
রাইট স্যার।
অফিসার ঠিকানা নিয়ে চলে গেল। ডিআইজি সাহেব মুখ কালো করে বসার ঘরে একাকী বসে আছেন।

বিকাল চারটা। ড্রয়িং রুমে বসে রাত্রি টেলিভিশন দেখছে। কিছুক্ষণ পর টেলিভিশনের স্কিনে লাল অক্ষরে লেখা ব্রেকিং নিউজ এল “চার তরুণীর হত্যাকারী কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার মিজানকে গোয়েন্দা পুলিশের একটি ইউনিট গুলশান থেকে গ্রেপ্তার করেছে।
টেলিভিশন বন্ধ করে রাত্রি তার বেড রুমে চলে গেল। মনে হল তার কিঞ্চিৎ মন খারাপ হয়েছে। রাতে কিছু খেল না।

আমাদের দেশে বড় বড় আসামীদেরকে জেলখানায় একটু বেশিই খাতির যত্ন করা হয়। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে স্পেসাল সেল টেল করা হয়। অপরাধ জগতে মিজানের উপাধিও কম না, শীর্ষস্থানীয় অপরাধীই বলা যায়, সিরিয়াল কিলার। তাই বোধ হয় মিজানের বেলাতেও তার ব্যতিক্রম হল না। একদিন পরেই মিজানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে ছিল। দুই পক্ষের যুক্তি তর্ক শুনে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

ঐ পাঁচ দিনে পুলিশ মিজানের কাছ থেকে তেমন কোনো গুরত্বপূর্ণ তথ্য বের করতে পারে নি। মিজান গ্রেপ্তার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওদের ম্যানেজার অতুল সাহা টেলিফোনে খবরটা মিজানের বাবা মসিউর রহমানকে জানিয়েছে। মিজানের মামালার জন্য দেশের নাম করা একজন আইনজীবিকে ইতোমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ব্যারিস্টার সাহেবের সাথেও মসিউর রহমান টেলিফোনে কথা বলেছেন। তার এক কথা টাকা পয়সার কোনো সমস্যা নেই, যত টাকা লাগবে তিনি দিতে রাজি আছেন, শর্ত একটাই মিজানের যাতে কিছু না হয়। পাঁচ দিন পর মিজানকে ফের আদালতে হাজির করা হল। ঐ দিন সাক্ষী দিতে রাত্রি আদালতে গেল। মিজান কেন তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল?
উকিল রাত্রিকে এই প্রশ্ন করায় বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রাত্রি বলল, আমার মনে হয় ওর মানসিক সমস্যা আছে।
রাত্রি এই কথা বলার সাথে সাথে মিজানের আইনজীবী মিজানকে বাঁচানোর বড় ধরনের রাস্তা পেয়ে গেলেন। তিনি সাথে সাথে রাত্রিকে জিজ্ঞাস করলেন সে কোথায় লেখাপড়া করে? রাত্রি যখন বলল ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ে, আইনজীবী ফের জানতে চাইলেন, কোন বিষয়ে লেখাপড়া করছে? জবাবে রাত্রি যখন বলল মনোবিজ্ঞান। মিজানের আইনজীবি উঠে পড়ে লেগে গেলেন তার মক্কেলকে পাগল প্রমাণ করার জন্যে। এছাড়া বোধ হয় মিজানকে বাঁচানোর অন্য কোনো পথ ছিল না!

লেখক সম্পর্কে জানুন |
সর্বমোট পোস্ট: ০ টি
সর্বমোট মন্তব্য: ১ টি
নিবন্ধন করেছেন: মিনিটে

মন্তব্য করুন

go_top