আপনার আগমন শুভ হোক-ঈদ মুবারক
এবারের ঈদে এমনই একটি ফেস্টুন দেখতে পাবে আমাদের গ্রামের প্রবেশ পথে । যেখানে লেখা আছে “আপনার আগমন শুভ হোক-ঈদ মুবারক” নির্মাণ করা হয়েছে কলাগাছের তোরণ। তোরণের ঠিক মাঝখানটাতে রঙিন কাপড়ে রঙিন অক্ষরে লেখা আছে এই কথাগুলো। আমরা ছোটরা অনেক বুদ্ধি আর পরামর্শ করে এই কাজটি করছি। আর এই আনন্দে টগবগ করছে গ্রামের শিশু আর কিশোররা। ব্যাপারটা সত্যিই খুব মজার।
গ্রামের অনেক মানুষ আছেন যারা চাকরি ও ব্যবসার কারণে ঢাকা বা দূরের কোন শহরে থাকেন। তারা সব সময় গ্রামের বাড়িতে আসতে পারেন না। কিন্তু ঈদে তারা সপরিবারে বাড়ি চলে আসেন। অনেক মজা হয় তখন।
যাদের অবস্থা ভালো ঈদের সময় তারা অনেক টাকা খরচ করে। নতুন জামা, জুতো কেনা ছাড়াও তারা প্রয়োজনের বেশি টাকা খরচ করে ঈদে। ঈদের সময় সবার মন থাকে অনেক বড় আর নরম। দু হাতে টাকা ঢালে সবাই।
ঈদের দিন আমরা সাজুগুজু করে দল বেধে বাড়ি বাড়ি ঘুরি। আর যাকে সামনে পাই পা ছুঁযে সেলাম করি। সেলাম করে দাঁড়িয়েই দেখি যাকে সেলাম করলাম তিনি হাসি হাসি মুখে পকেট থেকে কড়কড়ে নতুন টাকা বের করে বসে আছেন দেয়ার জন্য। আমরা টাকা পেয়ে অনেক খুশি হয়ে যাই। তখন আমাদের মুখে ফুটে উঠে আনন্দের হাসি। দেখা যায় এতে করে আমাদের অনেক টাকা জমা হয়ে যা্য়। আমরা টাকাগুলো কোন কাজে লাগাই না। দলবেধে আড্ডা মেরে হই চই করে এটা সেটা কিনে খেয়ে শেষ করে ফেলি।
এবার অন্যরকম একটা বুদ্ধি বের করেছি ছোটরা। ঈদের সময় সেলামী বা উপহার হিসেবে পাওয়া টাকাগুলো খালি খালি আড্ডা মেরে এভাবে আর খেয়ে ফেলব না। ভালো একটা কাজ করব আমরা।
আমরা সবাই মিলে ঠিক করেছি, আমাদের পাড়ায় যে কয়টা গরিব পরিবার আছে, যারা ঈদে নতুন জামা পরতে পারে না, ভালো কিছু খেতে পারে না, তাদের জন্য কিছু একটা করব। কয়েকজন বসে এমন কথা বলতেই সবাই রাজি হয়ে গেল।
পরামর্শ করতে করতে এবার রাস্তায় তোরণ নির্মাণ করার বুদ্ধিটা এসে গেল। আমরা তাই করছি।
ঈদে যত লোক আসবে এ পথ ধরে সবাই দাঁড়াবে তোরণের সামনে। আমরা তাদের বুকে ছোট্ট একটা টিকিট লাগিয়ে দেব সেফটিপিন দিয়ে। যে টিকিটে লেখা আছে “আপনার আগমন শুভ হোক-ঈদ মুবারক।” আমাদের শুভেচ্ছা পেয়ে বাড়ি আসা লোকগুলো খুশি হয়ে যায়। তারা হাসিমুখে পকেটে হাত দেয়। কেউ খালি হাতে যায় না। কিছু না কিছু দিয়ে যায়। আমরা তাদের দেওয়া টাকাগুলো জমিয়ে গরিব পরিবারের জন্য ভালো কিছু কাজ করব।
হিসাব করে দেখেছি, আমরা যে পরিমাণ টাকা পাব, তাতে আমাদের পাড়ায় যে কয়টা গরিব পরিবার আছে তাদের জন্য নতুন জামা কিনে দেয়া যাবে সহজেই। আর ঈদের দিন ভালো করে খাওয়ার জন্য যা কিছু লাগে তাও কিনে দেয়া যাবে।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই উদ্যোগটা নেয়ার পর থেকে আমরা অনেক হিসেবি হয়ে গেছি। এখন অপ্রয়োজনে টাকা খরচ করি না। আর টাকা জমিয়ে গরিব মানুষের জন্য কিছু একটা করার জন্য আমরা ব্যাকুল হয়ে আছি। কারণ পরের উপকার করার মাঝে অনেক আনন্দ আছে।
শুধু কি তাই? আমরা এবার ঈদে কোরবানির গোসত গরিব পরিবারগুলোতে বণ্টন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ইচ্ছা, ঈদের কয়েকটা দিনের জন্য হলেও গরিব পরিবারের সদস্যদের মনে আনন্দ দেব আর তাদের মুখে ফোটাব হাসি।
আমরা ছোট হলেও এই কথাটা বুঝতে পারছি যে, ঈদের আনন্দ একা একা করা যায় না। এই আনন্দ করতে হয় সবাইকে নিয়ে। কাউকে বাদ দিয়ে ঈদের আনন্দ হয় না।
গ্রামের মুরুব্বিরা বলছেন, ”তোমরা যেই কাজে হাত দিয়েছ, ব্যর্থ হওয়ার কোন কারণ নেই, আমরাও থাকবো তোমাদের পাশে।”
মুরুব্বিদের এই কথায় আমরা আমাদের কাজে অনেক উৎসাহ আর মজা পাচ্ছি।
বন্ধুরা ইচ্ছে করলে তোমরাও করে ফেলতে পারো এমন কিছু কাজ যা করলে অনেকের অনেক উপকারও হবে আর তোমরাও পাবে নির্মল আনন্দ।
ঈদ মুবারক। আপনার ঈদ হোক আনন্দময়।