উপন্যাস অমর প্রেম পর্বঃ ৬
দু জনে শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করল । শিক্ষক মহাশয় এসে পড়ানো শুরু করলেন । স্বয়ন মুখটি গোমরা করে বসে আছে । স্যার প্রত্যেকটি বাক্য শেষে হাত নেড়ে নেড়ে বুঝান । হঠাত্ তাঁর দৃষ্টি পড়ল স্বয়নের প্রতি । স্বয়ন গভীর ভাবনায় ডুবে আছে কেন ? নিশ্চয় ওর কিছু হয়েছে , তাই ওকে ডাকল । স্বয়ন চমকে উঠে উত্তর দিল ,
জী স্যার ।
তোমার কি হয়েছে ?
কিছু না ।
তাহলে মন খারাপ কেন ?
কই না তো স্যার , হেসে হেসে বলল যাতে কেউ বুঝতে না পারে ।
সেটা কি সম্ভব ?
আপাত দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে মন খারাপ । শাক দিয়ে মাছ ঢাকলে তো বুঝা যাবে ।
কার সাথে মন খারাপ ? স্যার জিজ্ঞাসা করল ।
এমন কে আছে যে তার জন্য মন খারাপ করব ।
একাই পৃথিবীতে এসেছি আবার একাই যেতে হবে ।
বেশ তো বুঝ ! স্যার বলল ।
এবার তবে পাঠে মন দাও ।
ক্লাস শেষে স্যার শিক্ষক কামরায় চলে গেলেন ।
চৈত্র মাস প্রচন্ড গরম পরছে ।
উষ্ণতায় দেহ হয় ভীষণ ঘর্মাক্ত হয়েছে । জাহিদ বলল ,চল দোস্ত গাছ তলায় একটু বাতাস খেয়ে আসি । স্বয়ন রাজী হল । দুই বন্ধু যখন দরজা থেকে বারান্দায় পা রাখল হঠাত্ চোখে পড়লো বৃক্ষ তলে সাথী ও বিথি বসে । জাহিদ মসকারি করে বলল ,
দেখ নায়িকা তোর জন্য অপেক্ষা করছে ।
স্বয়ন মন খারাপ করে উত্তর দিল ,
স্বপ্নের আরেক নাম যে মিথ্যা তুই বুঝি সেটা ভুলে গেছিস ।
এই বলে পুনরায় ক্লাসে প্রবেশ করল । পূনরায় ক্লাস শুরু হলো ক্রমানুসারে ৬ টি প্রিয়োড অতিবাহিত হওয়ার পর দপ্তরি সাহেব অগণিত ঘণ্টা বাজাল হয়ে গেল টিফিন । কত ছাত্র-ছাত্রী খেলায় মেতে উঠল । কতক জন পাদপ তলে বসে গল্প উপন্যাস পড়তে ব্যস্ত । কেহ কেহ মসজিদে গেল আল্লাহর হুকুম পালনের জন্য । দুই বন্ধু নামাজের জন্য চলে গেল আল্লাহর ঘরে । আর এই সুবর্ণ সুযোগে এরা দুই বান্ধবী পত্রটি রেখে দিল স্বয়নের গণিত খাতার মধ্যে । টিফিন শেষে পূর্বের ন্যায় পাঠ শুরু হলো । ঘণ্টা চারেক পর ফের অনেক ঘণ্টা বেজে উঠল এটি স্কুল ছুটির সংকেত । ছুটি হয়ে গেল যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে রহনা হলো ।
স্বয়ন ঘরে ফিরে বিছানায় চিত্ হয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে । কোন কিছুই ভাল লাগছে না ওর । এ সময় মা ডাকছে ,
স্বয়ন ভাত খেয়ে নে ।
ক্ষুধা যেন পালিয়ে গেছে উদর থেকে । কিন্তু মায়ের কথা তো অমান্য করা চলে না , তাই দুই এক বার মুখে দিলো । মা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল ,
ভাত খেলি না কেন ?
ক্ষিধে নেই মা ।
এই বলে পড়ার টেবিলে চলে গেল । প্রথমে গণিত খাতাটা হাতে নিল অংক কষার জন্য । মাত্র ৪-৫ টি পৃষ্ঠা উল্টাতেই একটি খোলা চিঠি পেল । কিন্তু বুঝতে পারল না
কে দিয়েছে ?
চিঠির ভাজ খুলে পড়তে শুরু করল –
স্বয়ন ভাইয়া ,
আশা রাখি তুমি বেশ আছ । ভাইয়া গতকালের ঘটনার জন্য তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি । তোমার ছাতা নিয়ে যে অন্যায় করেছি ক্ষমা করে দিও । যদি ক্ষমা না কর তবে আমি ভীষণ কষ্ট পাব । চির ঋণি থেকে যাব জীবন ভর । তুমি নিষ্ঠুর না হয়ে ক্ষমা করে দিও ।
আর একটি বিশেষ কথা হলো , আগামীকাল ক্লাস শুরু হবার ঘণ্টা দেড়েক পূর্বে আসবে কিন্তু । তোমার সাথে জরুরী কথা আছে । যদি না আসো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে । এটাই আমার শেষ কথা ।
ইতি
হুমায়রা সিদ্দিকা সাথী
চিঠি পড়ে বিরাট দুঃচিন্তা পরে গেল । কি কথা বলবে আমার সাথে শত চিন্তা করেও বিষয়টি বুঝে উঠতে পারল না । জাহিদের বাড়িতে ছুটে গেল । জাহিদ মহা খুশির সঙ্গে বলল ,
তুই অবশ্যই যাবি ।
নারে দোস্ত ওদের আর আমাদের মাঝে বিরাট ব্যবধান । আমি জেনে শুনে এ ভিন্ন পথে পা রাখতে পারব না ।
আরে পাগল তোকে তো প্রেম করতে বলছি না । কি জন্য ডেকেছে সেটা শুনবি তো ।
তুই না গেলে সে বলেছে আত্মহত্যা করবে । মেয়ে মানুষের কিন্তু অভিমান বেশি ।
তুই কি সাথীর মরা মুখ দেখতে চাস ?
না , কখনো না ।
তবে যেতে হবে ।
স্বয়ন কিছুক্ষণ কি যেন ভেবে বলল ,
আচ্ছা ঠিক আছে ।
এদিন রাতে স্বয়ন ঠিকমত খেতে পারল না রুচি মন্দা লাগছে পড়াশুনাও তেমন হলনা । ঘুমিয়ে পড়ল ধীরে ধীরে রাত ফুরিয়ে গেল । পাখির কিচিরমিচির আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গল স্বয়নের । দাঁত ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে সকালের নাস্তা সেরে পড়ার টেবিলে বসল । কয়েকটি অংক কষতে না কষতেই যাবার বেলা হয়ে গেল । তাড়াহুড়া করে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ,ঠিক এ ক্ষণে মা জিজ্ঞাসা করল ,
এতো আগে আগেই স্কুলে যাচ্ছিস কেন ?
স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আছে তো তাই ।
মাকে মিথ্যা বুঝ দিয়ে রহনা দিল স্বয়ন । দু বন্ধু স্কুলে গিয়ে দেখে ওরাও দুই বান্ধবী হাজির । জাহিদকে দেখে সাথী বিথিকে জিজ্ঞাসা করল ,
ছেলেটি কে ?ওর সামনে কথা বলা যাবে ?
হ্যাঁ , অবশ্যই । ছেলেটির নাম জাহিদ স্বয়নের ঘনিষ্ট বন্ধু ।
চিন্তা নেই এবার যাও তোমার মনের রাজার নিকট । যত মনের কথা আছে ব্যক্ত করো ।
এদিকে জাহিদও বলল ,
দোস্ত তোমার নায়িকা তো অগ্রসর হচ্ছে । যাও , দেরি করো না আমি এখানেই আছি ।
আমি গিয়ে কি বলব ?
কেন , জিজ্ঞাসা করবি কি জন্য ডেকেছে ।
আচ্ছা ।
এ বলে স্বয়নও সাথীর দিকট পা বাড়াল ।