দাদুর কিছু কথা…
দাদুর কিছু কথা…
আজ তোকে একটা গল্প বলি তোর হয়তো মনে নাই। তুই অনেক ছোট। তুই তখন হাঁটিস খুব বেশী কথা বলিস, ছোট বেলাতে কিছু বাচচারা থাকে না, খুব বেশী কথা বলে তুই ছিলি তাদের দলের। তবে বড় হয়েও তোর অভ্যাসটা বদলায় নাই। এখনও তুই বড় বেশী কথা বলিস। তোর স্বভাব অনেকটা মার মতো বেশী কথা বলা। আল্লাহ তাই তোকে তোর পেশাও দিয়েছেন একবারে ঠিক যায়গাতে। বলুনতো বেশী কথা বলতে হয় কোন প্রফেশনে । না আপনাদের চিন্তায় ফেলতে চাচিছ না। ওকালুতিতে। মানে আমার আদরের ছোট বোন (খোন্দকার নাজমুন নাহার, লাবনি) ও এইবার ওয়েষট লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ল শেষ করে, ব্যারিস্টারি পরার জন্য, নির্বাচিত হয়েছে। বরত৲ মানে ব্যারিস্টারি পড়তে হলে একটা মার্ক পেয়ে কুয়ালিফাই করতে হয়। তাই যেকেও ইচেছ করলেও এইটা পরতে পারবেননা। এর জন্য আমারা অনেক খুশি। যদিও ও জানে কিনা যে আমি খুশি কি না। কারন আমার প্রকাশ অনেকের চেয়ে একটু আলাদা। অনেকই বুজতে পারে না। আশি মুল গল্পে , হটাত করে মা খুব অসুস্ত হলো। মাকে ঢাকা নিতে হবে। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। তুই তখন অনেক ছোট, কথা বলিস হাঁটিস। মাকে ঢাকা নেওয়া হল। ঢাকা আমাদের বাড়ি নাই। আমারা উঠলাম বড়মার বাসায়। বড়মা মানে বড় খালাকে আমারা বড়মা বলি। মাকে হসপিটাল এ ভর্তি করা হল। আব্বা , আমি তুই, বড়মা, মেঝ মামা সবাই ছিল। তুই ছিলি আমার হাতধরে। সবাই খুব ব্যাস্ত। মার অবাস্তা মনে হয় ভালো না। আব্বা ডাঃ এর সাথে কথা বলল। ডাঃ মনে হয় তাই বলছিল অপারেশান লাগবে খুব তারাতারি। তুই আমার হাত এমন ভাবে ধরে ছিলি যেন আমি তোকে না ছেড়ে যাই। কারন আমাকে তুই হারিয়ে ফেললে তুই হারিয়ে যাবি। কিন্তু তুই জানিষনা তোর ক্লাস ফাইভে পড়া দাদু নিজেই ঢাকা শহরে নুতুন। কিন্তু তোকে আমি কিছু বুজতে দেই নাই, যে আমি কিছুই চিনি না। কারন সবাই খুব ব্যাস্ত আমি আর তুই বশে আছি মিটফোর্ড হসপিটালের করিডরে। তুই বার বার বলছিস দাদু লজেঞ্চ খাব। মা কোথায় মার কাছে যাব। আমি বললাম দারা মা একটু পরে আসবে। মা আর আমি ছাড়া তখন তোর কোন আপন মানুষ ছিল না। এর মধ্যে আমার ধরলো বাথরুম আমি বাথরুমে যাব। তুই আমার সাথে যাবি হাত ছারবি না। আমি বড়মার কাছে তোকে রেখে যাব তুই আমার হাত ছারবিনা। কারন বড় মাকেও তুই ভাল ভাবে বিশ্বাস করতে পারছিস না। তোর ধারনা বড়মা তোকে এই বিশাল বিশাল বিল্ডিং এর মধ্যে হারায়ে ফেললে তুই আমাকে হারিয়ে ফেলবি। মাকে অন্য ঘরে নেয়া হয়েছিল । ভর্তি করা হল। আমরা চলে আসলাম মালিবাগে । আমার মন খুবই খারাপ, মাকে আর বাবাকে হসপিটালে রেখে আসছি। তুই তেমন কিছু বললি না। শুধু একবার মনে হয় মার কাছে যাব বলছিলি। তারপর তোর জন্য আমি কিছুই করতে পারতাম না। আমি যদি বাথরুমে যেতাম তুই থাকতি বাথরুমের বাইরে দাড়িয়ে। তুই যখন শুধু ঘুমাতি আমি তখন আমার খালাতো ভাই, আরযু, রাজুর সাথে খেলতে পারতাম। অন্য সময় গেটের বাইরে গেলেও তোর কান্না কাঁটিতে সারা বাড়ী মাথাই তুলতি। তুই মাঝে মাঝে মালাই আর লগেঞ্ছে খাবি বলে বল ধরতি। বাবা যে টাকা দিয়েছিল তা দিয়ে তোকে মাঝে মাঝে কিনে দিতাম। দুই দিন পরে মাকে দেখার জন্য খুব মন খারাপ হল বড়মার সাথে গেলাম মাকে দেখতে। মার অপারেশান হয়েগেছে। মা ভালো আছে। আমি জানলাম মা ভালো আছে, তোকে বাড়িতে ঘুম পারায়ে রাখা হয়ে ছিল। তুই ঘুম থেকে উঠে দেখিস আমি নাই, সারা বাড়ি কান্না কাটি করে অস্থির। আমার মন অনেক ভালো হল, কারন আমার সবচে ভালোবাসার মানুষটা সুস্ত আছে। মানে মা ভালো হয়ে গেছে ,আমি তোর জন্য বরমার কাছ থেকে ২ টাকা নিয়ে অনেক গুলো লজেঞ্চ কিনলাম। । আমি বাড়ি আশা মাত্র তুই আমাকে ধরে কি কান্না। তারপর তোকে লজেঞ্চে দেওয়া মাত্র তুই ঠাণ্ডা। বললি তুই কই গেছিলি, মা কনে। আমি বললাম মা আসবে। আল্লার কাছে অনেক সুক্রিয়া মাকে সেদিন আল্লাহ ভালো করে দিয়েছিল। তানা হলে হয়তো আমার ডাঃ হয়ও হতনা তোর ব্যারিস্টারি পড়াও হতো না। আমি যত বার দেশে যাই ভাবি মারকাছে জানতে চাইবো মা, তোমার কিসের অপারেশান হয়েছিল। কিন্তু জানা হয় নাই। মা বাবা অনেক সুস্থ ,আর লাবনি এখন একাই থাকে পৃথিবীর ব্যাস্ত শহরের একটাতে। সে এখন একাই চলতে শিখেছে, নিজেকে সেভ করা শিখেছে, এখন দাদুর হাত ধরার কথা হয়তো চিন্তা করে না। আমি থাকি পৃথিবীর অন্য ব্যাস্ত শহরে। দেখা হয় না অনেক বছর কথা হয়, মাঝে মাঝে, আসলে সময় , বাব্স্তবতা, ব্যাস্ততা, জীবিকার সন্ধানে, কোন কোন সময় অনেক কাছের মানুষকে অনেক দুরের মানুষ মনে হয়। মানুষকে অনেক দূর করে দেয়।
ইতি
দাদু
ডাঃ খোন্দকার পারভেজ আহমেদ।।
Km_parvez@yahoo.com